জবানবন্দিতে ঘটনার বর্ণনা, ২১ জনের নামে অভিযোগপত্র
Published: 16th, January 2025 GMT
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলে মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক তোফাজ্জল হোসেনকে পিটিয়ে হত্যা মামলায় ২১ জনের নামে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পুলিশ। তাদের মধ্যে গ্রেপ্তার ছয়জন আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ওই যুবককে চোর সন্দেহে নৃশংসভাবে মারধরের বিশদ বর্ণনা দিয়েছেন। এক দফা পেটানোর পর ভাত খাইয়ে আবারও বেধড়ক পিটিয়ে হত্যার সেই বর্ণনা অভিযোগপত্রেও যুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া পলাতক ১৫ জনের অপরাধে সম্পৃক্ততা নিশ্চিত হওয়ায় তাদেরও অভিযুক্ত করা হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো.
গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে ঢাবির ফজলুল হক মুসলিম হলের অতিথি কক্ষে তোফাজ্জলকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ঘটনার পরদিন সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে হল প্রশাসন। সেদিন রাত ১১টার দিকে কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়। এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় মামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেই মামলায় প্রক্টরিয়াল টিমের সহযোগিতায় হলের ছয় ছাত্রকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রায় সাড়ে তিন মাসের তদন্ত শেষে গত ১ জানুয়ারি এ মামলার অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগপত্রে নাম থাকা গ্রেপ্তার ছয়জন হলেন– জালাল মিয়া, আহসান উল্লাহ ওরফে বিপুল শেখ, আল হোসাইন সাজ্জাদ, মোত্তাকিন সাকিন শাহ, সুমন মিয়া ও ওয়াজিবুল আলম। পলাতক আসামিরা হলেন– ফিরোজ কবির, আব্দুস সামাদ, সাকিব রায়হান, ইয়াছিন আলী গাইন, ইয়ামুজ্জামান ইয়াম, ফজলে রাব্বি, শাহরিয়ার কবির শোভন, মেহেদী হাসান ইমরান, রাতুল হাসান, সুলতান মিয়া, নাসির উদ্দিন, মোবাশ্বের বিল্লাহ, শিশির আহমেদ, মহসিন উদ্দিন সাফি ও আব্দুল্লাহিল কাফি।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, গত ১৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে ঢাবির ফজলুল হক মুসলিম হল মাঠে ক্রিকেট খেলা চলাকালে ছাত্রদের ছয়টি মোবাইল ফোন চুরি হয়। এর পর সন্ধ্যায় ওই মাঠে ফুটবল খেলা শুরু হয়। খেলা পরিচালনা করছিলেন সুলতান মিয়া। রাত পৌনে ৮টার দিকে তাঁর পাশে গিয়ে বসেন তোফাজ্জল। সুলতান মিয়া তাঁকে মোবাইল ফোন চোর সন্দেহে মারধর করেন। খেলার মাঠে থাকা ওয়াজিবুল, মেহেদী হাসান ইমরান, ইয়ামুজ্জামান ওরফে ইয়ামও সেখানে জড়ো হন। তারা তোফাজ্জলকে ধরে হলের মূল ভবনের অতিথি কক্ষে নিয়ে যান। সেখানে তাঁকে এলোপাতাড়ি চড় ও ঘুসি মারা হয়। কিছুক্ষণ পর সেখানে সুমন মিয়া গিয়ে মারধর করেন। ভুক্তভোগী খুবই ক্ষুধার্ত থাকায় কিল ঘুসি খাওয়ার পরও আসামিদের কাছে ভাত খেতে চান। এক পর্যায়ে আসামিরা তাঁকে হলের ক্যান্টিনে নিয়ে ভাত খাওয়ান। ওই সময় ক্যান্টিনে সামাদ হোসেন, মোত্তাকিন সাকিন শাহ, সাকিব রায়হান, রাতুল হাসান, ফিরোজ কবির, ফজলে রাব্বি ও নাছির উদ্দিন যান। তারা ভুক্তভোগীকে ক্যান্টিন থেকে হলের দক্ষিণ ভবনের অতিথি কক্ষে নিয়ে যান। সেখানে রাতুল স্টাম্প, ইয়ামুজ্জামান ও সাকিব লাঠি নিয়ে যান। এর পর মোত্তাকিন তোফাজ্জলের কাছ থেকে তাঁর মামা আবদুর রব মিয়ার ফোন নম্বর নিয়ে কথা বলেন। রব জানান, তাঁর ভাগনে মানসিক ভারসাম্যহীন ও ভবঘুরে প্রকৃতির, তবে চোর নয়। মোত্তাকিন তাঁর ফোনের দাম বাবদ ৩৫ হাজার টাকা দাবি করলে তিনি তা দিতে পারবেন না বলে জানান। এতে আসামিরা ক্রুদ্ধ হয়ে তোফাজ্জলের কাঁধে ও পিঠে বেধড়ক পিটিয়ে গুরুতর জখম করেন।
খবর পেয়ে হলের হাউস টিউটর ড. জহির রায়হান, ড. মাহবুব আলম, ড. শফিউল আলম ও ড. আলমগীর হোসেন গিয়ে আসামিদের থামানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। ততক্ষণে নিস্তেজ হয়ে পড়া তোফাজ্জলকে আবারও হলের মূল ভবনের অতিথি কক্ষে নিয়ে এলোপাতাড়ি পেটানো হয়। শেষে হাউস টিউটররা ভুক্তভোগীকে গাড়িতে করে শাহবাগ থানায় নিয়ে যান। ভুক্তভোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন দেখে পুলিশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচন: বিএনপির যে প্রার্থীদের সঙ্গে লড়বেন এনসিপির শীর্ষ নেতারা
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২৩৭ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শীর্ষ নেতাদের যেসব আসনে নির্বাচন করার কথা রয়েছে, সেখানেও প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি।
সোমবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ২৩৭ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আরো পড়ুন:
বিএনপির প্রার্থী তালিকায় নেই তারকারা
কুষ্টিয়ায় মনোনয়নবঞ্চিত সোহরাব- সমর্থকদের বিক্ষোভ
বিএনপির ঘোষিত আসনভিত্তিক তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ঢাকা-১১ (বাড্ডা-ভাটারা-রামপুরা) আসনের তাদের প্রার্থী এম এ কাইয়ুম। এই আসনে নির্বাচন করতে পারেন এনসিপির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম।
রংপুর-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী মোহাম্মদ এনামুল হক ভরসা। এই আসনে নির্বাচন করতে পারেন এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন।
পঞ্চগড়-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী মোহাম্মদ নওশাদ জমির। এই আসনে নির্বাচন করার সম্ভাবনা রয়েছে এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের।
কুমিল্লা-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী মঞ্জুরুল আহসান মুন্সী। এই আসনে নির্বাচন করতে পারেন এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ।
চাঁদপুর-৫ আসনে বিএনপির প্রার্থী করা হয়েছে মো. মমিনুল হককে। এই আসনে নির্বাচন করতে পারেন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিপির মিডিয়া সেলের সম্পাদক মুশফিক উস সালেহীন রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “এখন পর্যন্ত আমাদের দলের আসনভিত্তিক মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়নি। যখন চূড়ান্ত করা হবে, আপনাদের জানানো হবে।”
এর আগে রবিবার (৩ নভেম্বর) সমসাময়িক রাজনৈতিক প্রসঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমরা ৩০০ আসন ধরে এগোচ্ছি। ঢাকা থেকেই আমি দাঁড়াব। আর কে কোন আসনে দাঁড়াবেন, আমরা প্রার্থী তালিকা এ মাসেই দিতে পারি।”
অবশ্য বিএনপি ও এনসিপি চূড়ান্ত মনোনয়ন না দেওয়া পর্যন্ত যে কোনো আসনে যেকোনো সময় পরিবর্তন আসতে পারে বলে তারা ঘোষণা দিয়ে রেখেছে।
ঢাকা/রায়হান/রাসেল