ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলে মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক তোফাজ্জল হোসেনকে পিটিয়ে হত্যা মামলায় ২১ জনের নামে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পুলিশ। তাদের মধ্যে গ্রেপ্তার ছয়জন আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ওই যুবককে চোর সন্দেহে নৃশংসভাবে মারধরের বিশদ বর্ণনা দিয়েছেন। এক দফা পেটানোর পর ভাত খাইয়ে আবারও বেধড়ক পিটিয়ে হত্যার সেই বর্ণনা অভিযোগপত্রেও যুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া পলাতক ১৫ জনের অপরাধে সম্পৃক্ততা নিশ্চিত হওয়ায় তাদেরও অভিযুক্ত করা হয়েছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো.

আসাদুজ্জামান সমকালকে বলেন, গুরুত্ব দিয়ে আলোচিত এ হত্যা মামলার তদন্ত শেষ করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত সবার অপরাধের প্রমাণ মিলেছে। তবে জড়িত অপর ১৫ জনকে এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা যায়নি।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে ঢাবির ফজলুল হক মুসলিম হলের অতিথি কক্ষে তোফাজ্জলকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ঘটনার পরদিন সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে হল প্রশাসন। সেদিন রাত ১১টার দিকে কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়। এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় মামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেই মামলায় প্রক্টরিয়াল টিমের সহযোগিতায় হলের ছয় ছাত্রকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রায় সাড়ে তিন মাসের তদন্ত শেষে গত ১ জানুয়ারি এ মামলার অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়েছে।

অভিযোগপত্রে নাম থাকা গ্রেপ্তার ছয়জন হলেন– জালাল মিয়া, আহসান উল্লাহ ওরফে বিপুল শেখ, আল হোসাইন সাজ্জাদ, মোত্তাকিন সাকিন শাহ, সুমন মিয়া ও ওয়াজিবুল আলম। পলাতক আসামিরা হলেন– ফিরোজ কবির, আব্দুস সামাদ, সাকিব রায়হান, ইয়াছিন আলী গাইন, ইয়ামুজ্জামান ইয়াম, ফজলে রাব্বি, শাহরিয়ার কবির শোভন, মেহেদী হাসান ইমরান, রাতুল হাসান, সুলতান মিয়া, নাসির উদ্দিন, মোবাশ্বের বিল্লাহ, শিশির আহমেদ, মহসিন উদ্দিন সাফি ও আব্দুল্লাহিল কাফি।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, গত ১৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে ঢাবির ফজলুল হক মুসলিম হল মাঠে ক্রিকেট খেলা চলাকালে ছাত্রদের ছয়টি মোবাইল ফোন চুরি হয়। এর পর সন্ধ্যায় ওই মাঠে ফুটবল খেলা শুরু হয়। খেলা পরিচালনা করছিলেন সুলতান মিয়া। রাত পৌনে ৮টার দিকে তাঁর পাশে গিয়ে বসেন তোফাজ্জল। সুলতান মিয়া তাঁকে মোবাইল ফোন চোর সন্দেহে মারধর করেন। খেলার মাঠে থাকা ওয়াজিবুল, মেহেদী হাসান ইমরান, ইয়ামুজ্জামান ওরফে ইয়ামও সেখানে জড়ো হন। তারা তোফাজ্জলকে ধরে হলের মূল ভবনের অতিথি কক্ষে নিয়ে যান। সেখানে তাঁকে এলোপাতাড়ি চড় ও ঘুসি মারা হয়। কিছুক্ষণ পর সেখানে সুমন মিয়া গিয়ে মারধর করেন। ভুক্তভোগী খুবই ক্ষুধার্ত থাকায় কিল ঘুসি খাওয়ার পরও আসামিদের কাছে ভাত খেতে চান। এক পর্যায়ে আসামিরা তাঁকে হলের ক্যান্টিনে নিয়ে ভাত খাওয়ান। ওই সময় ক্যান্টিনে সামাদ হোসেন, মোত্তাকিন সাকিন শাহ, সাকিব রায়হান, রাতুল হাসান, ফিরোজ কবির, ফজলে রাব্বি ও নাছির উদ্দিন যান। তারা ভুক্তভোগীকে ক্যান্টিন থেকে হলের দক্ষিণ ভবনের অতিথি কক্ষে নিয়ে যান। সেখানে রাতুল স্টাম্প, ইয়ামুজ্জামান ও সাকিব লাঠি নিয়ে যান। এর পর মোত্তাকিন তোফাজ্জলের কাছ থেকে তাঁর মামা আবদুর রব মিয়ার ফোন নম্বর নিয়ে কথা বলেন। রব জানান, তাঁর ভাগনে মানসিক ভারসাম্যহীন ও ভবঘুরে প্রকৃতির, তবে চোর নয়। মোত্তাকিন তাঁর ফোনের দাম বাবদ ৩৫ হাজার টাকা দাবি করলে তিনি তা দিতে পারবেন না বলে জানান। এতে আসামিরা ক্রুদ্ধ হয়ে তোফাজ্জলের কাঁধে ও পিঠে বেধড়ক পিটিয়ে গুরুতর জখম করেন। 

খবর পেয়ে হলের হাউস টিউটর ড. জহির রায়হান, ড. মাহবুব আলম, ড. শফিউল আলম ও ড. আলমগীর হোসেন গিয়ে আসামিদের থামানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। ততক্ষণে নিস্তেজ হয়ে পড়া তোফাজ্জলকে আবারও হলের মূল ভবনের অতিথি কক্ষে নিয়ে এলোপাতাড়ি পেটানো হয়। শেষে হাউস টিউটররা ভুক্তভোগীকে গাড়িতে করে শাহবাগ থানায় নিয়ে যান। ভুক্তভোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন দেখে পুলিশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

সিলেটে টিলা কাটার অভিযোগে বিএনপি নেতা, ইউপি সদস্যসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা

সিলেট সদর উপজেলার জাহাঙ্গীরনগর গ্রামে টিলা কাটার অভিযোগে বিএনপি নেতা, ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্যসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সিলেট মহানগরের বিমানবন্দর থানায় মামলাটি করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের সিলেট জেলা কার্যালয়ের পরিদর্শক মামুনুর রশিদ।

পরিবেশ অধিদপ্তরের সিলেট জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক বদরুল হুদা প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলাটি করা হয়েছে। তদন্ত শেষে পরিবেশ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা এ বিষয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করবেন।

মামলার আসামিরা হলেন সিলেট সদর উপজেলার জাহাঙ্গীরনগর গ্রামের আবদুর রাজ্জাক খান (৩৫), পূর্ব পাঠানটুলা এলাকার আজিজ খান সজীব (৩৪), জাহাঙ্গীরনগরের মো. হাফিজুর রহমান (৪১), গিয়াস মিয়া (৪৫), মানিক মিয়া (৪৩) ও জুয়েল মিয়া (৩৫)। মামলায় আরও চার থেকে পাঁচজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।

আসামিদের মধ্যে আবদুর রাজ্জাক খান সিলেট সদর উপজেলা বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক। আজিজ খান সজীব সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক এবং হাফিজুর রহমান টুকেরবাজার ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি দল ব্রাহ্মণছড়া চা-বাগান মৌজার ৫৬ নম্বর খতিয়ানের ৩২ নম্বর দাগের একটি টিলা কাটার প্রমাণ পায়। টিলাটি আবদুর রাজ্জাক খানের মালিকানাধীন বা দখলাধীন বলে উল্লেখ করা হয়।

এজাহারে আরও বলা হয়, আসামিরা পরস্পরের যোগসাজশে আনুমানিক ৭৫ ফুট দৈর্ঘ্য, ৩৩ ফুট প্রস্থ ও ২৩ ফুট উচ্চতার টিলা কেটেছেন। ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের না পাওয়ায় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। টিলা কাটার বিষয়ে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। আসামিরা রাতের বেলায় টিলা কেটে মাটি সরিয়ে আশপাশের প্লট ভরাট করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।

অভিযোগের বিষয়ে যোগাযোগ করলে মামলার প্রধান আসামি হিসেবে থাকা আবদুর রাজ্জাক টিলা কাটার বিষয়টি অস্বীকার করে প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, তিনি তো ননই, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কেউ টিলা কাটায় জড়িত নন। টিলার জায়গা কিংবা দখল—কোনোটাই তাঁর নয়। সম্পূর্ণ মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শরীয়তপুরের পালং মডেল থানার পরিদর্শক ‘আত্মগোপনে’
  • সিলেটে টিলা কাটার অভিযোগে বিএনপি নেতা, ইউপি সদস্যসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা