বাংলাদেশের কর্মক্ষম জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক শ্রমশক্তির বাইরে রয়ে গেছে। দেশের ৪৯ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ বর্তমানে শ্রমবাজারে নেই। বিদ্যমান জনশক্তির মধ্যে আবার নারী-পুরুষ বৈষম্য প্রকট। মোট শ্রমশক্তির ৭৮ দশমিক ৫ শতাংশই পুরুষ। বাকি ২১ দশমিক ২৫ শতাংশ নারী। 

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলওর প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আইএলওর সদরদপ্তর থেকে ‘বৈশ্বিক কর্মসংস্থান এবং সামাজিক আভাস: ২০২৫’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। 

দেশে ১৫ বছর ও তার চেয়ে বেশি বয়সী কর্মী ও বেকার জনগোষ্ঠীর সমষ্টিকে শ্রমশক্তি হিসেবে বিবেচনা করে থাকে বিবিএস। সংস্থার সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, দেশে এ ধরনের জনগোষ্ঠী ৭ কোটি ২২ লাখ ৮০ হাজার। বিবিএসের সর্বশেষ জনশুমারি অনুযায়ী, দেশের জনসংখ্যা এখন ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ৯১১ জন।

আইএলওর প্রতিবেদনে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বলা হয়, বেকারত্বের বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে তরুণ-তরুণীরা। উৎপাদনশীলতার ক্ষেত্রে তারা তুলনামূলক বেশি পিছিয়ে আছে, যা অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও সামাজিক সুবিচার ব্যাহত করছে। এর চেয়েও বেশি উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, এনইইটি (নট ইন এমপ্লয়মেন্ট এডুকেশন ট্রেনিং), অর্থাৎ কোনো রকম কর্মসংস্থান, শিক্ষা, প্রশিক্ষণে নেই– এ হার ৩০ দশমিক ৯ শতাংশ। এনইইটির মোট হারের মধ্যেও তরুণীদের হার বেশি। 

প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে বাংলাদেশে আইএলওর কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পুটিআইনেন এক বিবৃতিতে বলেন, বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে সক্রিয় শ্রমবাজার নীতি নিতে হবে। বিশেষ করে, তরুণ, নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য শোভন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

বিশ্ববাজার ও কর্মসংস্থান প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়, সদ্য সমাপ্ত ২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী বেকারত্বের হার ছিল ৫ শতাংশ। আগের বছরও একই হার ছিল। কাজের ইচ্ছা ও সুযোগের ব্যবধান, অর্থাৎ কেউ কাজ করতে চায়, কিন্তু পাচ্ছে না– এ রকম মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪০ কোটি ২০ লাখ। এর মধ্যে ১৮ কোটি ৬০ লাখ বেকার; ১৩ কোটি ৭০ লাখ কাজ করতে আগ্রহী নন। এ ছাড়া ৭ কোটি ৯০ লাখ মানুষ আছেন, যারা কাজ করতে চান। পারিবারিক দায়িত্বের কারণে যোগ দিতে পারেন না। মহামারি করোনা-পরবর্তী সময়ে কর্মসংস্থান, কাজের ইচ্ছা ও সুযোগের ব্যবধান কিছুটা কমে আসছে। তবে স্বাভাবিক হতে আরও দু’বছর লেগে যেতে পারে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজ ও কাজের দারিদ্র্য করোনাকালের আগের অবস্থায় ফিরে গেছে। স্বল্প আয়ের দেশগুলো নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বেশি বেকায়দায় আছে। এতে বলা হয়, শ্রমবাজার পুনরুদ্ধারের কাজটিও প্রায় অসম্ভব। কারণ, বিশ্ব অর্থনীতিই এখনও মন্থর গতি কাটিয়ে উঠতে পারেনি।

আইএলও’র প্রতিবেদনে বলা হয়, নতুন বছরেও বিশ্বব্যাপী বেকার মানুষের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। কারণ হিসেবে উৎপাদনশীলতার মন্থর গতিকে দায়ী করা হয়। উৎপাদন কাঠামোয় দ্রুত গতির প্রযুক্তির একচ্ছত্র ব্যবহারকেও এ জন্য দায়ী করা হচ্ছে। বিশেষ করে, শ্রম বাজারে যুক্ত হওয়া নবীন শ্রমিকদের ক্ষেত্রে প্রযুক্তির প্রতিবন্ধকতা মারাত্মক আকার নিতে পারে। বেকারত্বের কারণে আয় বৈষম্যও উদ্বেগের বড় কারণ হতে পারে। 

 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

সত্য মিথ্যা যাচাই না করে শেয়ার করবেন না, মেসেজটা তৃণমূলে ছড়িয়ে দিন: সিইসি

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, 'আমাদের একটা অভ্যাস হয়ে গেছে একটা নেতিবাচক সংবাদ দেখলেই যাচাই-বাছাই না করে শেয়ার করে দেওয়া হয়। অত্যন্ত ভিত্তিহীন সংবাদও আমরা শেয়ার করে দেই।'

সিইসি বলেন, 'দয়া করে সত্য মিথ্যা যাচাই না করে শেয়ার করবেন না। এই মেসেজটা তৃণমূলে ছড়িয়ে দিন। তথ্যটা যেন আগে যাচাই করে তারপরে শেয়ার করেন।'

আজ সোমবার রাজধানীর ভাটারায় আনসার গার্ড ব্যাটালিয়নে (এজিবি) এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন সিইসি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ভুয়া সংবাদের প্রচার ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপপ্রয়োগ রোধে করণীয় সম্পর্কে তিনি এসব কথা বলেন।

থানা আনসার কোম্পানি/প্লাটুন সদস্যদের আনসার মৌলিক প্রশিক্ষণের (৪র্থ ধাপ) সমাপনী উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিইসি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো সংবাদ দেখা মাত্রই নাগরিকদের যাচাইবাছাই করতে আহ্বান জানান সিইসি। নিশ্চিত হওয়ার আগে শেয়ার না করতে বলেন তিনি।

জাতীয় নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে আনসার ভিডিপির ভূমিকাকে মূল শক্তি বলে উল্লেখ করেন সিইসি। তিনি বলেন, 'এনারাই অধিক সংখ্যায় নিয়োজিত থাকেন। এবং আমাদের হিসেব করতে গেলে প্রথম এদেরকেই হিসেব করতে হয় যে, কতজন আনসার ভিডিপি সদস্য আমরা মোতায়েন করতে পারব। মূল কাজটা আঞ্জাম (সম্পাদন) দিতে হয় কিন্তু আনসার এবং ভিডিপির সদস্যদের।'

অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ। নির্বাচনকালীন জনগণের নিরাপত্তা, ভোট কেন্দ্রের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা এবং সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণে আনসার বাহিনী সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করছে বলে জানান তিনি। নির্বাচনে দেশজুড়ে প্রায় ৬ লাখ আনসার ও ভিডিপি সদস্য দায়িত্বপালন করবেন বলেন মহাপরিচালক।

অনুষ্ঠানে মহড়ায় ঢাকা মহানগর আনসারের চারটি জোনের অধীন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৩২০ জন আনসার ও ভিডিপি সদস্য অংশ নেন।  আনসার গার্ড ব্যাটালিয়নের সদস্যরা টহল, দায়িত্ব বণ্টন ও জরুরি প্রতিক্রিয়া অনুশীলনে অংশ নেন।

মহড়ায় ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জামাদি নিরাপদে পৌঁছে দেওয়া, ভোটারদের শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে ভোট প্রদানে সহায়তা, জাল ভোট প্রতিরোধ, প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা এবং সেনা, বিজিবি, র‍্যাব ও পুলিশের সঙ্গে দ্রুত সমন্বয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন জোনের অধিনায়ক এবং প্রশিক্ষণ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ