মামলার ভয় দেখিয়ে বিএনপি নেতার চাঁদা দাবি
Published: 17th, January 2025 GMT
গোপালগঞ্জে মামলার ভয় দেখিয়ে এক নারীর কাছে আড়াই লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে কাশিয়ানী উপজেলা বিএনপির এক নেতার বিরুদ্ধে। তার নাম নিয়ামুল হোসেন মিলন। তিনি উপজেলা বিএনপির সহ-যুববিষয়ক সম্পাদক।
চাঁদা দাবি করা পাঁচ মিনিটের একটি কলরেকর্ড ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (১৭ জানুয়ারি) ভুক্তভোগী শিল্পী বেগম ওই বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
স্থানীয়রা জানান, গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর কাশিয়ানী উপজেলার মহেশপুর ইউনিয়নের বাথানডাঙ্গা-রামপুর গ্রামের মৃত জাকির মিয়ার ছেলে ইজিবাইকচালক মাহাবুর মিয়ার বাসার সামনে থেকে একটি প্রাইভেটকার উদ্ধার করা হয়। ওই বিএনপি নেতা নিজে পুলিশের সঙ্গে থেকে প্রাইভেটকারটি মাহাবুর মিয়ার বাসার সামনে থেকে উদ্ধার করেন। পরে প্রাইভেটকারের মালিক খুঁজে না পাওয়ায় পুলিশ নিয়মানুযায়ী আইনানুগ প্রক্রিয়া শেষে প্রাইভেটকারটি জব্দ দেখিয়ে আদালতে পাঠায়। তবে, কারো বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি। পরে জানা যায় প্রাইভেটকারটি মাহাবুর মিয়ার কাছে নিয়ে এসেছিল তার এক বন্ধু। এ ঘটনার পর থেকে ভয়ে পলাতক রয়েছেন ইজিবাইকচালক মাহাবুর মিয়া। ঘটনার পর থেকে বিভিন্ন সময় মাহাবুর মিয়ার মা শিল্পী বেগমের কাছে গিয়ে মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা দাবি করেন বিএনপি নেতা নিয়ামুল হোসেন মিলন।
ফাঁস হওয়া কলরেকর্ডে ওই বিএনপি নেতাকে বলতে শোনা যায়, দারোগার কাছে আমি আপনার ছেলেসহ দুজনের কথা বলছি। আড়াই লাখ টাকা লাগবে। বিষয়টি ওসি-এসপি স্যারের নাকি নজরে গেছে। তারা অ্যাকশনে যাইতে বলছে। তিন জনকে আড়াই লাখ টাকা ছাড়া হবে না। আজ সকাল ১০টার ভেতর না দিলে তোমার ছেলের নামেও মামলা হয়ে যাবে। এ সময় অপর প্রান্ত থেকে মাহাবুর মিয়ার মা শিল্পী বেগমকে বলতে শোনা যাচ্ছে, কাকা আমার ছেলে তো নির্দোষ। আমি আড়াই লাখ টাকা কোহানে (কোথায়) পাবো। আমার ভিটাবাড়ি বেঁচলেও লাখ টাকা হবে না। তুমি আমার ছেলের একার বিষয়টি দেখো। আমি এক লাখ টাকা দিতে পারব। এ সময় ওই বিএনপি নেতা বলেন, মোবাইল এত কথা না বলে আপনি আমার বাড়ি আসেন।
মাহাবুর মিয়ার চাচা সৈয়দ মিয়ার বলেন, ‘‘নিয়ামুল হোসেন মিলন রাজনীতি করে আমরা জানি। প্রাইভেটকার উদ্ধারের সময় তিনি পুলিশের সঙ্গে ছিলেন। উদ্ধারের পর থেকে নিয়ামুল হোসেন মিলন মাহাবুবের মাকে মামলা হবে বলে বিভিন্ন ভয় দেখিয়ে আসছেন।’’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি নেতা নিয়ামুল হোসেন মিলন বলেন, ‘‘প্রতিদিন ওই নারী আমার বাড়িতে এসে কান্নাকাটি করত। পরে মানবিক কারণে তাদের জন্য সুপারিশ করতে গেছি। আমাকে দারোগা গৌতম বাবু বলছে, ওরা তো ওই সময় বলছিল তিন চার লাখ টাকা যা লাগুক তাই দিবে মামলা যেন না হয়। সেইটা দিতে বলেন মামলা তাদের নামে হবে না। আমাকে কাশিয়ানী থানার দারোগা গৌতম বাবু যা বলছে আমি তাই তাদের কাছে বলছি। আমি নিজের কথা বলিনি।’’
এ বিষয়ে কোটালীপাড়ার থানার এসআই (সাবেক কাশিয়ানী থানা) গৌতম কুমার সেন বলেন, ‘‘মিলন সাহেবকে আমি চিনি। তবে তার সঙ্গে মামলা সংক্রান্ত বিষয় বা টাকার কোনো বিষয় নিয়ে আমার কথা হয়নি। সে হয়তো নিজে ফেঁসে গিয়ে আমার ওপর দোষ চাপাচ্ছেন।’’
কাশিয়ানী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো.
এ ঘটনায় নিয়ামুল হেসেন মিলনের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শেখ মো. সেলিম বলেন, ‘‘মামলা যেহেতু হয়েছে। আমরা সাংগঠনিকভাবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব।’’
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-আইন সম্পাদক অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন মেসবাহর বলেন, ‘‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে মামলা করতে বলেছেন। একটি চাঁদাবাজ গোষ্ঠী বিএনপির লেবাসে গোপালগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি করছে। মূলত এরা বিএনপির প্রকৃত লোক না। পুলিশ প্রশাসনের নজরদারি রাখা প্রয়োজন। কারণ পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে এরা চাঁদা দাবি করে যতটা জেনেছি। এরা দল ও দেশের শত্রু। এর পেছনে কোনো গডফাদার আছে কি না সেটাও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। চাঁদাবাজ যেই হোক তাদের আইনের আওতায় আনার জন্য পুলিশ সুপারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। এরা পুলিশেরও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে।’’
ঢাকা/বাদল/রাজীব
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ভয় দ খ য় ব এনপ র উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
শুধু ঘোষণা নয়, বাস্তবে প্রতিফলিত হোক
রাজধানী শহরসহ দেশের বড় শহরগুলোয় শব্দদূষণের অসহনীয় মাত্রার বিষয়টি কারও অজানা নয়। এটি এখন শুধু শব্দদূষণ নয়, শব্দসন্ত্রাস বলেও অভিহিত হচ্ছে। অতীতে ও বর্তমানে সরকারগুলো বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও কার্যকর হচ্ছে না। অতীতের ধারাবাহিকতায় রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধারা ও নিকেতনকে ‘নীরব এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। সিদ্ধান্তটি নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য। এখন এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করাই হচ্ছে বড় চ্যালেঞ্জ।
শহরের শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে নীরব এলাকা ঘোষণা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি অবশ্যই সরকারের সদিচ্ছার প্রকাশ। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই ঘোষণা বাস্তবে কার্যকর হবে, নাকি এটিও অতীতের মতো কেবল কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকবে? এর আগে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং এর আশপাশের এলাকাকে নীরব এলাকা ঘোষণা করা হয়েছিল, কিন্তু তার ফল তেমন একটা ভালো পাওয়া
যায়নি। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ঘোষণার পর কিছু এলাকায় শব্দ কিছুটা কমলেও সার্বিকভাবে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। এই অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা যায়, শুধু ঘোষণা যথেষ্ট নয়, বরং এর কঠোর বাস্তবায়ন অপরিহার্য।
শব্দদূষণের ক্ষেত্রে আগের তুলনায় সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলতেই হয়। যার কারণে সাউন্ডবক্স বা মাইক বাজানোর বিষয়গুলো তুলনামূলকভাবে কমে এসেছে। তবে গাড়ির হর্ন এতটা বিভীষিকাময় পরিস্থিতি তৈরি করছে, যা অকল্পনীয়। এটিই এখন রাজধানীসহ বড় শহরগুলোর শব্দদূষণের সবচেয়ে বড় আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, অতিরিক্ত শব্দ হৃদ্রোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। চিকিৎসকেরা বলছেন, এটিতে শ্রবণশক্তি হ্রাস পায়, মেজাজ খিটখিটে হয়, মানুষ অনিদ্রায় ভোগে এবং শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় বিঘ্ন ঘটায়। তাই শুধু অভিজাত এলাকা নয়, পুরো শহরে ধাপে ধাপে কীভাবে নীরব এলাকা ঘোষণা করা যায়, সেই লক্ষ্যে পরিকল্পিতভাবে এগোতে হবে।
তবে এ উদ্যোগ সফল করতে হলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে কঠোর হতে হবে। হর্ন বাজানোর বিরুদ্ধে আইন আছে। তা যদি আইনভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে প্রয়োগ না করা হয়, এ ঘোষণা কখনোই সফল হবে না। কেবল প্রশাসনের ওপর নির্ভর না করে নীরব এলাকা–ঘোষিত এলাকাগুলোর বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, যেমন মসজিদ, মন্দির এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকেও এখানে গণসচেতনতার কাজে যুক্ত করতে হবে।
গাড়ির হর্ন বাজানো সীমিত করতে পরিবহনের বিভিন্ন ধরনের সমিতি–সংগঠনগুলোর যুক্ততাও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। গাড়ির চালকদের অভ্যাসগত পরিবর্তনের জন্য শব্দদূষণের ক্ষতিকর দিকটি নিয়মিতভাবে তাঁদের কাছে উপস্থাপন করতে হবে। হাইড্রোলিক হর্নসহ উচ্চমাত্রার যেকোনো হর্ন উৎপাদন, আমদানি ও ব্যবহারের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে। এ ব্যাপারে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।