দাবানলে ছারখার লস অ্যাঞ্জেলেস, দূষণের ওপর দায় চাপাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা
Published: 17th, January 2025 GMT
দাবানল যত ব্যাপকই হোক না কেন, তাকে একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলেই মেনে নিতে হয়। তবে এবার দেখা যাচ্ছে, যে বিশাল দাবানলে ছাই হয়ে গেছে লস অ্যাঞ্জেলসের হাজার হাজার বাড়িঘর, তার পেছনে কিছুটা হলেও মানুষের হাত রয়েছে। ভেঙে বলতে গেলে, মানুষের তৈরি পরিবেশ দূষণের কারণেই বহুগুণে ভয়াবহ হয়ে উঠেছে এই দাবানল।
লস অ্যাঞ্জেলস দাবানলের পেছনে দোষ কার, তা খুঁজতে গিয়ে এই তথ্য পান ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, লস অ্যাঞ্জেলসের বিজ্ঞানীরা।
পৃথিবীতে যদি কোনো দূষণ না থাকত, এর পরেও দাবানল হতোই, বিজ্ঞানীরা স্বীকার করেন। কিন্তু দূষণের ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের ভয়াবহতা বেড়ে গেছে। লস অ্যাঞ্জেলসের দাবানলটা খুব দ্রুত ছড়িয়েছে ওই এলাকায় ঝড়ো হাওয়া এবং প্রচুর শুকনো ঘাস ও গাছপালা থাকার কারণে। এসব দাহ্য পদার্থের ২৫ শতাংশই পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে তৈরি হয়েছে। এ থেকে বিজ্ঞানীরা মত দিয়েছেন, দূষণ না থাকলে হয়তো এই দাবানলের ভয়াবহতা কম হতে পারত।
জানুয়ারির ৭ তারিখ থেকে লস অ্যাঞ্জেলসে অন্তত ১২টি আগুন লাগে। দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার খরাপীড়িত এলাকার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া অপ্রত্যাশিত সান্টা আনা বায়ুপ্রবাহে এসব আগুন ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত। এখন পর্যন্ত অন্তত ২৪ হাজার একর এলাকায় ছড়িয়েছে এই আগুন, অন্তত ১২ হাজার অবকাঠামো হয়েছে ভস্মীভূত। দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার ইতিহাসে এ ছিল সবচেয়ে বিধ্বংসী দাবানল।
বিগত কয়েক বছরে শীতকালেও অনেক বেশি আর্দ্রতা ছিল দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার বাতাসে। ফলে অনেক বেশি করে ঘাস জন্মেছে এই সমতল এলাকায়। ঠিক এর পরেই গ্রীষ্ম এবং শরৎকাল দুটোই ছিল অতিরিক্ত শুষ্ক এবং উত্তপ্ত। শুধু তাই নয়, বর্ষা আসতে দেরি হচ্ছিল বলে লম্বা এক খরায় পড়ে এলাকাটি। এতে শীতকালে জন্মানো ঘাস ও গুল্ম শুকিয়ে খড় হয়ে যায়। একরের পর একর জুড়ে পড়ে থাকে এসব শুকনো ঘাস। দাবানলের মৌসুম এলে এসব শুকিয়ে থাকা ঘাস আগুনের জ্বালানীর মতো কাজ করে, এ কারনেই আগুন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
এক মৌসুমে খুব ভেজা আবহাওয়া, পরের মৌসুমের আবার খরা- এমন ঘটনা ঘন ঘন দেখা যাচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকায়। এই পরিস্থিতির জন্য বৈশ্বিক উষ্ণায়ন এবং জীবাশ্ম জ্বালানী পোড়ানোর কারনে সৃষ্ট দূষণই দায়ী, সিএনএনের একটি প্রতিবেদনে দেখা গিয়েছিল। এমন চরমভাবাপন্ন পরিস্থিতিতে একদিকে যেমন বাড়ে দাবানলের ভয়াবহতা, অন্যদিকে কয়েক ঘন্টার মধ্যে প্রবল বৃষ্টিতে দেখা দেয় বন্যা।
শুধু যে শুকনো ঘাস এবং খড়কুটোর কারনে লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানল ভয়ংকর হয়ে উঠেছিল, তা নয়। এর পাশাপাশি সান্টা আনা বায়ুপ্রবাহেরও দায় রয়েছে।
বিজ্ঞানীরা জানান, দূষণের ফলে পৃথিবী যত উষ্ণ হয়ে উঠবে, ততই ভয়াবহ আকার ধারন করবে এসব দাবানল। দূষণ না কমালে দাবানলের ভয়াবহতা কমবে না, আর দূষণ কমানো মুখের কথা নয়- এর জন্য প্রয়োজন পুরো পৃথিবীর মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। তবে দাবানলে ক্ষয়ক্ষতি কমাতে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। দাবানলের ঝুঁকি আছে এমন এলাকায় আবাসিক এলাকা স্থাপনা না করা এবং ঘরবাড়িতে যেন দ্রুত আগুন না লাগে এমন ব্যবস্থার কথা বলেন তারা।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: লস অ য ঞ জ ল স
এছাড়াও পড়ুন:
শিশু শিক্ষার্থীকে উত্ত্যক্ত, থানায় অভিযোগ করায় নানাকে কুপিয়ে হত্যা
মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলায় তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করার ঘটনায় কয়েক বখাটের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেন তার স্বজন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই ছাত্রীর নানা আজগর আলীকে (৬০) কুপিয়ে হত্যা করেছে স্থানীয়ভাবে বখাটে হিসেবে পরিচিত আল-আমিন নামে এক যুবক ও তার সহযোগীরা। গত মঙ্গলবার রাতে উপজেলার জয়মন্টপ ইউনিয়নের রায়দক্ষিণ গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত আজগর আলী রায়দক্ষিণ গ্রামে একটি চায়ের দোকান চালাতেন। অভিযুক্ত আল-আমিন একই গ্রামের মৃত কালু প্রামাণিকের ছেলে।
পুলিশ, নিহতের পরিবার এবং স্থানীয় সূত্র জানায়, যে শিশুটিকে উত্ত্যক্ত করত বখাটেরা, তার মা পাঁচ বছর আগে মারা যান। মেয়েটি নানা আজগর আলীর বাড়িতে থেকে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে পড়ত। বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার পথে শিশুটিকে প্রায় উত্ত্যক্ত এবং অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করত আল-আমিন। এ নিয়ে আজগর আলীসহ মেয়েটির স্বজন বেশ কয়েকবার প্রতিবাদ করলেও কোনো কাজ হয়নি। গত সোমবার মেয়েটির নানা আজগর আলী সিংগাইর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। মঙ্গলবার অভিযোগটি তদন্ত করার পর তা মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়।
এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয় আল-আমিন। মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আল-আমিন চার থেকে পাঁচটি মোটরসাইকেলে করে সহযোগীদের নিয়ে আজগর আলীর চায়ের দোকানে যায়। তারা বৃদ্ধ আজগর আলীকে দোকান থেকে বের করে নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও লাটিসোঠা দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। হামলাকারীরা চলে গেলে স্বজন ও প্রতিবেশীরা আজগর আলীকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখান থেকে রাতেই তাঁকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা আজগর আলীকে মৃত ঘোষণা করেন।
আজগর আলীর শ্যালক নজরুল ইসলাম জানান, মাদক সেবন, মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধে জড়িত বখাটে আল-আমিন।
সিংগাইর থানার ওসি তৌফিক আজম বলেন, নিহতের বড় ছেলে আইয়ুব খান বুধবার আল-আমিনকে প্রধান আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন। ঘটনার পর থেকে আল-আমিন ও তার সহযোগীরা পলাতক। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।