দাবানল যত ব্যাপকই হোক না কেন, তাকে একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলেই মেনে নিতে হয়। তবে এবার দেখা যাচ্ছে, যে বিশাল দাবানলে ছাই হয়ে গেছে লস অ্যাঞ্জেলসের হাজার হাজার বাড়িঘর, তার পেছনে কিছুটা হলেও মানুষের হাত রয়েছে। ভেঙে বলতে গেলে, মানুষের তৈরি পরিবেশ দূষণের কারণেই বহুগুণে ভয়াবহ হয়ে উঠেছে এই দাবানল। 

লস অ্যাঞ্জেলস দাবানলের পেছনে দোষ কার, তা খুঁজতে গিয়ে এই তথ্য পান ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, লস অ্যাঞ্জেলসের বিজ্ঞানীরা। 

পৃথিবীতে যদি কোনো দূষণ না থাকত, এর পরেও দাবানল হতোই, বিজ্ঞানীরা স্বীকার করেন। কিন্তু দূষণের ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের ভয়াবহতা বেড়ে গেছে। লস অ্যাঞ্জেলসের দাবানলটা খুব দ্রুত ছড়িয়েছে ওই এলাকায় ঝড়ো হাওয়া এবং প্রচুর শুকনো ঘাস ও গাছপালা থাকার কারণে। এসব দাহ্য পদার্থের ২৫ শতাংশই পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে তৈরি হয়েছে। এ থেকে বিজ্ঞানীরা মত দিয়েছেন, দূষণ না থাকলে হয়তো এই দাবানলের ভয়াবহতা কম হতে পারত। 

জানুয়ারির ৭ তারিখ থেকে লস অ্যাঞ্জেলসে অন্তত ১২টি আগুন লাগে। দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার খরাপীড়িত এলাকার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া অপ্রত্যাশিত সান্টা আনা বায়ুপ্রবাহে এসব আগুন ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত। এখন পর্যন্ত অন্তত ২৪ হাজার একর এলাকায় ছড়িয়েছে এই আগুন, অন্তত ১২ হাজার অবকাঠামো হয়েছে ভস্মীভূত।  দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার ইতিহাসে এ ছিল সবচেয়ে বিধ্বংসী দাবানল। 

বিগত কয়েক বছরে শীতকালেও অনেক বেশি আর্দ্রতা ছিল দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার বাতাসে। ফলে অনেক বেশি করে ঘাস জন্মেছে এই সমতল এলাকায়। ঠিক এর পরেই গ্রীষ্ম এবং শরৎকাল দুটোই ছিল অতিরিক্ত শুষ্ক এবং উত্তপ্ত। শুধু তাই নয়, বর্ষা আসতে দেরি হচ্ছিল বলে লম্বা এক খরায় পড়ে এলাকাটি। এতে শীতকালে জন্মানো ঘাস ও গুল্ম শুকিয়ে খড় হয়ে যায়। একরের পর একর জুড়ে পড়ে থাকে এসব শুকনো ঘাস। দাবানলের মৌসুম এলে এসব শুকিয়ে থাকা ঘাস আগুনের জ্বালানীর মতো কাজ করে, এ কারনেই আগুন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। 

এক মৌসুমে খুব ভেজা আবহাওয়া, পরের মৌসুমের আবার খরা- এমন ঘটনা ঘন ঘন দেখা যাচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকায়। এই পরিস্থিতির জন্য বৈশ্বিক উষ্ণায়ন এবং জীবাশ্ম জ্বালানী পোড়ানোর কারনে সৃষ্ট দূষণই দায়ী, সিএনএনের একটি প্রতিবেদনে দেখা গিয়েছিল। এমন চরমভাবাপন্ন পরিস্থিতিতে একদিকে যেমন বাড়ে দাবানলের ভয়াবহতা, অন্যদিকে কয়েক ঘন্টার মধ্যে প্রবল বৃষ্টিতে দেখা দেয় বন্যা। 

শুধু যে শুকনো ঘাস এবং খড়কুটোর কারনে লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানল ভয়ংকর হয়ে উঠেছিল, তা নয়। এর পাশাপাশি সান্টা আনা বায়ুপ্রবাহেরও দায় রয়েছে। 

বিজ্ঞানীরা জানান, দূষণের ফলে পৃথিবী যত উষ্ণ হয়ে উঠবে, ততই ভয়াবহ আকার ধারন করবে এসব দাবানল। দূষণ না কমালে দাবানলের ভয়াবহতা কমবে না, আর দূষণ কমানো মুখের কথা নয়- এর জন্য প্রয়োজন পুরো পৃথিবীর মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। তবে দাবানলে ক্ষয়ক্ষতি কমাতে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। দাবানলের ঝুঁকি আছে এমন এলাকায় আবাসিক এলাকা স্থাপনা না করা এবং ঘরবাড়িতে যেন দ্রুত আগুন না লাগে এমন ব্যবস্থার কথা বলেন তারা।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: লস অ য ঞ জ ল স

এছাড়াও পড়ুন:

সবকিছু সহ্য করে তিনি আজীবন আমার পাশে থেকেছেন: বাঁধন

মানুষ বছরের একটি দিন বাবার জন্য আলাদা করে রাখতে চায়, যেমনটা রাখা হয় মায়ের জন্য। এই বিশেষ দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, জীবনের প্রতিটি ধাপে বাবার অবদান কতটা গভীর। আজ বাবা দিবসে বাবা প্রকৌশলী আমিনুল হককে নিয়ে কিছু না বলা কথা বলেছেন অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন।

তিনি লিখেছেন, “আমার বাবা আমার সুপারহিরো। তিনি আমাকে ভালোবাসা আর বিশ্বাসে এমনভাবে বড় করেছেন যে, আমি যদি কখনো চাঁদ চাইতাম, তিনি বলতেন, ‘অপেক্ষা কর-আমি নিয়ে আসছি।’ আমি তার মূল্যবোধ, শক্তি এবং অটল সাহসের মাঝে বড় হয়েছি।”

তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমার জীবনের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ মানুষ তিনি-যিনি আমাকে নিঃশর্তভাবে ভালোবাসেন। তার মতো সৎ এবং দেশপ্রেমিক মানুষ আমি আর কখনো দেখিনি।’

বাবার সঙ্গে তার মতের পার্থক্যও আছে বলে জানালেন এই অভিনেত্রী। তার কথায়, ‘আমাদের মাঝে মতপার্থক্য আছে-সবসময় একমত হই না। তবু আমাদের সম্পর্কে যে জিনিসটি কখনো বদলায়নি, সেটা হলো পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা।’

শৈশব থেকে আজ পর্যন্ত বাঁধনকে নিয়ে অনেক কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে তার বাবাকে। তবুও সব মেনে নিয়ে পাশে থেকেছেন তিনি।

বাঁধনের ভাষ্য, ‘আমি কখনোই একেবারে নিয়মমাফিক বা আদর্শ মেয়ে ছিলাম না। শৈশব থেকে আজ অবধি আমি জানি, আমার কারণে তাকে অনেক কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। আমি ছিলাম একগুঁয়ে, আবেগপ্রবণ, কখন কী করি বলা যায় না-তবুও সবকিছু সহ্য করে তিনি আজীবন আমার পাশে থেকেছেন।’

সব শেষে বাবাকে ধন্যবা জানিয়ে বাঁধন লিখেছেন, ‘তুমি যেমন, তেমনি থাকার জন্য ধন্যবাদ আব্বু। আমি তোমাকে এত ভালোবাসি-যা ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ