দাবানল যত ব্যাপকই হোক না কেন, তাকে একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলেই মেনে নিতে হয়। তবে এবার দেখা যাচ্ছে, যে বিশাল দাবানলে ছাই হয়ে গেছে লস অ্যাঞ্জেলসের হাজার হাজার বাড়িঘর, তার পেছনে কিছুটা হলেও মানুষের হাত রয়েছে। ভেঙে বলতে গেলে, মানুষের তৈরি পরিবেশ দূষণের কারণেই বহুগুণে ভয়াবহ হয়ে উঠেছে এই দাবানল। 

লস অ্যাঞ্জেলস দাবানলের পেছনে দোষ কার, তা খুঁজতে গিয়ে এই তথ্য পান ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, লস অ্যাঞ্জেলসের বিজ্ঞানীরা। 

পৃথিবীতে যদি কোনো দূষণ না থাকত, এর পরেও দাবানল হতোই, বিজ্ঞানীরা স্বীকার করেন। কিন্তু দূষণের ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের ভয়াবহতা বেড়ে গেছে। লস অ্যাঞ্জেলসের দাবানলটা খুব দ্রুত ছড়িয়েছে ওই এলাকায় ঝড়ো হাওয়া এবং প্রচুর শুকনো ঘাস ও গাছপালা থাকার কারণে। এসব দাহ্য পদার্থের ২৫ শতাংশই পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে তৈরি হয়েছে। এ থেকে বিজ্ঞানীরা মত দিয়েছেন, দূষণ না থাকলে হয়তো এই দাবানলের ভয়াবহতা কম হতে পারত। 

জানুয়ারির ৭ তারিখ থেকে লস অ্যাঞ্জেলসে অন্তত ১২টি আগুন লাগে। দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার খরাপীড়িত এলাকার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া অপ্রত্যাশিত সান্টা আনা বায়ুপ্রবাহে এসব আগুন ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত। এখন পর্যন্ত অন্তত ২৪ হাজার একর এলাকায় ছড়িয়েছে এই আগুন, অন্তত ১২ হাজার অবকাঠামো হয়েছে ভস্মীভূত।  দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার ইতিহাসে এ ছিল সবচেয়ে বিধ্বংসী দাবানল। 

বিগত কয়েক বছরে শীতকালেও অনেক বেশি আর্দ্রতা ছিল দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার বাতাসে। ফলে অনেক বেশি করে ঘাস জন্মেছে এই সমতল এলাকায়। ঠিক এর পরেই গ্রীষ্ম এবং শরৎকাল দুটোই ছিল অতিরিক্ত শুষ্ক এবং উত্তপ্ত। শুধু তাই নয়, বর্ষা আসতে দেরি হচ্ছিল বলে লম্বা এক খরায় পড়ে এলাকাটি। এতে শীতকালে জন্মানো ঘাস ও গুল্ম শুকিয়ে খড় হয়ে যায়। একরের পর একর জুড়ে পড়ে থাকে এসব শুকনো ঘাস। দাবানলের মৌসুম এলে এসব শুকিয়ে থাকা ঘাস আগুনের জ্বালানীর মতো কাজ করে, এ কারনেই আগুন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। 

এক মৌসুমে খুব ভেজা আবহাওয়া, পরের মৌসুমের আবার খরা- এমন ঘটনা ঘন ঘন দেখা যাচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকায়। এই পরিস্থিতির জন্য বৈশ্বিক উষ্ণায়ন এবং জীবাশ্ম জ্বালানী পোড়ানোর কারনে সৃষ্ট দূষণই দায়ী, সিএনএনের একটি প্রতিবেদনে দেখা গিয়েছিল। এমন চরমভাবাপন্ন পরিস্থিতিতে একদিকে যেমন বাড়ে দাবানলের ভয়াবহতা, অন্যদিকে কয়েক ঘন্টার মধ্যে প্রবল বৃষ্টিতে দেখা দেয় বন্যা। 

শুধু যে শুকনো ঘাস এবং খড়কুটোর কারনে লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানল ভয়ংকর হয়ে উঠেছিল, তা নয়। এর পাশাপাশি সান্টা আনা বায়ুপ্রবাহেরও দায় রয়েছে। 

বিজ্ঞানীরা জানান, দূষণের ফলে পৃথিবী যত উষ্ণ হয়ে উঠবে, ততই ভয়াবহ আকার ধারন করবে এসব দাবানল। দূষণ না কমালে দাবানলের ভয়াবহতা কমবে না, আর দূষণ কমানো মুখের কথা নয়- এর জন্য প্রয়োজন পুরো পৃথিবীর মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। তবে দাবানলে ক্ষয়ক্ষতি কমাতে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। দাবানলের ঝুঁকি আছে এমন এলাকায় আবাসিক এলাকা স্থাপনা না করা এবং ঘরবাড়িতে যেন দ্রুত আগুন না লাগে এমন ব্যবস্থার কথা বলেন তারা।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: লস অ য ঞ জ ল স

এছাড়াও পড়ুন:

মৌলিক সংস্কারের সব বিষয়ে মতৈক্য হয়নি

এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মৌলিক সংস্কারের সব প্রস্তাবে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হয়নি। এর মধ্যে দলগুলোর ঐকমত্যের দলিল বা জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া কী হবে, তা নিয়েও আলোচনা করার দাবি উঠেছে। ফলে আজ বৃহস্পতিবার সংস্কার প্রশ্নে জাতীয় সনদ চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।

রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার আনার লক্ষ্যে ছয়টি কমিশনের যেসব প্রস্তাবে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হবে, সেগুলো নিয়ে জুলাই জাতীয় সনদ তৈরি করা হবে। ৩১ জুলাইয়ের (আজ বৃহস্পতিবার) মধ্যে এই সনদ তৈরি করার লক্ষ্য রয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের। গত সোমবার দলগুলোকে সনদের একটি খসড়াও দেওয়া হয়েছিল। তবে সে খসড়ায় সনদ বাস্তবায়নের যে পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে, তা নিয়ে জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) বেশ কিছু দলের আপত্তি আছে। গতকাল বুধবার ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি তুলেছে জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি।

আপনারা যে দায়িত্ব আমাদের দিয়েছেন, তার মধ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। আমরা চেষ্টা করছি এসব বিষয়ে দ্রুত ঐকমত্যে পৌঁছাতে।আলী রীয়াজ, সহসভাপতি, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন

গতকাল দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে ছিল সাতটি বিষয়। সেগুলো হলো ১. সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ চারটি প্রতিষ্ঠানের নিয়োগপদ্ধতি; ২. দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠন, উচ্চকক্ষের নির্বাচনপদ্ধতি ও ক্ষমতা; ৩. সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব (সংরক্ষিত নারী আসন বাড়ানো ও নির্বাচনপদ্ধতি); ৪. রাষ্ট্রপতির নির্বাচনপদ্ধতি; ৫. রাষ্ট্রের মূলনীতি; ৬. সংবিধানে নাগরিকের মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ এবং ৭. রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব। মৌলিক সংস্কার প্রস্তাবগুলোর মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা নিয়েও এখনো ঐকমত্য হয়নি।

এর মধ্যে গতকাল পুরোপুরি ঐকমত্য না হলেও রাত নয়টার দিকে সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব নিয়ে একটি সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে ঐকমত্য কমিশন। আর রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা নিয়ে দলগুলোকে একটি ধারণাপত্র দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে এখন পর্যন্ত নিষ্পত্তি হয়নি, এমন কয়েকটি বিষয়ে আজ ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করার কথা রয়েছে।

৩১ জুলাইয়ের (আজ বৃহস্পতিবার) মধ্যে এই সনদ তৈরি করার লক্ষ্য রয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের। গত সোমবার দলগুলোকে সনদের একটি খসড়াও দেওয়া হয়েছিল। তবে সে খসড়ায় সনদ বাস্তবায়নের যে পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে, তা নিয়ে জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) বেশ কিছু দলের আপত্তি আছে।সংস্কার নিয়ে ১০ মাস

গত বছরের অক্টোবরে সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রশাসন ও পুলিশ সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। গত ফেব্রুয়ারিতে কমিশনগুলো প্রতিবেদন দেয়। পরে সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য তৈরির লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়। এরপর ছয়টি সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করে ঐকমত্য কমিশন। এর মধ্যে আইনবিধি সংস্কার করে বা প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে বাস্তবায়ন সম্ভব, এমন অনেক সুপারিশকে ‘আশু বাস্তবায়নযোগ্য’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সেগুলো বাস্তবায়নের কাজ চলছে। অন্যদিকে ১৬৬টি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ঐকমত্য কমিশন।

প্রথম পর্বে ৩৩টি দল ও জোটের সঙ্গে ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পৃথক আলোচনা করে কমিশন। প্রথম পর্বে ঐকমত্য হয়নি, এমন ২০টির মতো মৌলিক সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে গত ৩ জুন থেকে সব দলকে একসঙ্গে নিয়ে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা শুরু করে ঐকমত্য কমিশন। সংস্কারের ক্ষেত্রে এই প্রস্তাবগুলোকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। দ্বিতীয় পর্বে এখন পর্যন্ত ১৩টি বিষয়ে ঐকমত্য ও সিদ্ধান্ত হয়েছে।

গতকাল প্রথম পর্বে যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, তার একটি তালিকা দলগুলোকে দেওয়া হয়। সেখানে মোট ৬২টি বিষয় এবং কোন প্রস্তাবে কয়টি দল একমত হয়েছে, তা উল্লেখ করা হয়েছে। যেগুলোর বেশির ভাগই বিচার বিভাগ ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ রয়েছে ৬টি।

এ ছাড়া সংবিধান সংস্কার কমিশনের ১৮টি সুপারিশ রয়েছে। যদিও এর মধ্যে কয়েকটি বিষয় আছে, যেগুলো নিয়ে এখনো আলোচনা চলছে। যেমন দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠন। এ বিষয়ে ৩০টি দল প্রথম পর্বে একমত হলেও গঠনপ্রক্রিয়া নিয়ে এখনো ঐকমত্য হয়নি।

গতকাল রাতে বৈঠকের বিরতিতে কমিশনের প্রধান ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করেন কমিশনের সদস্যরা। পরে আলী রীয়াজ সাংবাদিকদের জানান, প্রধান উপদেষ্টাকে অগ্রগতি জানানো হয়েছে। তিনি কিছু পরামর্শও দিয়েছেন। দ্বিতীয় পর্বের আলোচনায় ১৪টি বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে।

গতকাল প্রথম পর্বে যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, তার একটি তালিকা দলগুলোকে দেওয়া হয়। সেখানে মোট ৬২টি বিষয় এবং কোন প্রস্তাবে কয়টি দল একমত হয়েছে, তা উল্লেখ করা হয়েছে। যেগুলোর বেশির ভাগই বিচার বিভাগ ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ রয়েছে ৬টি।যেসব বিষয়ে ঐকমত্য ও সিদ্ধান্ত

দ্বিতীয় পর্বে ঐকমত্য ও সিদ্ধান্ত হয়েছে, এমন বিষয়ের মধ্যে রয়েছে এক ব্যক্তি জীবনে সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন; সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ পরিবর্তন; সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিত্ব; নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ; রাষ্ট্রপতির ক্ষমা-সম্পর্কিত বিধান; হাইকোর্টের বিকেন্দ্রীকরণ ও পর্যায়ক্রমে উপজেলা পর্যায়ে নিম্ন আদালত স্থানান্তর; সংবিধান সংশোধন পদ্ধতি; জরুরি অবস্থা জারিসংক্রান্ত; প্রধান বিচারপতি নিয়োগ; ইসি গঠনপদ্ধতি সংবিধানে যুক্ত করা হবে; পুলিশ কমিশন গঠন; প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধান। এ ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত হয়েছে, একই ব্যক্তি একসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান থাকতে পারবেন না, এ প্রস্তাবে তিন-চতুর্থাংশ দল একমত এবং সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব। এগুলোর মধ্যে সেসব বিষয়ে বিএনপিসহ যারা একমত হয়নি, তারা জাতীয় সনদে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিতে পারবে।

ন্যূনতম ৩৩ শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়নের লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে প্রতিটি সাধারণ নির্বাচনে ন্যূনতম ৫ শতাংশ বর্ধিত হারে নারী প্রার্থী মনোনয়ন অব্যাহত থাকবে। এটিও সংবিধানে যুক্ত হবে। সংরক্ষিত নারী আসন ২০৪৩ সাল পর্যন্ত বহাল থাকবে।নারী আসন নিয়ে যে সিদ্ধান্ত

সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন ৫০টি থেকে বাড়িয়ে ১০০টি করা এবং সেখানে সরাসরি ভোটের প্রস্তাব করেছিল সংস্কার কমিশন। এ বিষয়ে দফায় দফায় আলোচনা হলেও সিদ্ধান্ত হয়নি। পরে ঐকমত্য কমিশন ৫০টি আসন বহাল রাখা এবং ৩০০ সাধারণ আসনের মধ্যে ৫-৭ শতাংশ আসনে দলগুলো নারী প্রার্থী দেবে, এমন প্রস্তাব দেয়। গতকাল দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আলোচনা হলেও এ বিষয়ে মতৈক্য হয়নি।

পরে রাতে নারী আসন নিয়ে একটি সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ সাংবাদিকদের জানান, সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব ক্রমান্বয়ে ১০০ আসনে উন্নীত করার বিষয়ে প্রায় সব দল একমত হয়েছে, যদিও দু-একটি দলে এতে দ্বিমত রয়েছে। কিছু দল সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে ১০০ আসনে উন্নীত করার পক্ষে, আবার কিছু দল সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচনের পক্ষে।

সিদ্ধান্তের বিষয়ে আলী রীয়াজ জানান, সংবিধানে প্রয়োজনীয় সংশোধনী এনে বিদ্যমান ৫০টি সংরক্ষিত আসন বহাল রাখা হবে। জুলাই সনদ স্বাক্ষরের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে বিদ্যমান ৩০০ সংসদীয় আসনের জন্য প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৫ শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে। পরবর্তী নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো ন্যূনতম ১০ শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেবে। এটিও সংবিধানে যুক্ত হবে।

ন্যূনতম ৩৩ শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়নের লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে প্রতিটি সাধারণ নির্বাচনে ন্যূনতম ৫ শতাংশ বর্ধিত হারে নারী প্রার্থী মনোনয়ন অব্যাহত থাকবে। এটিও সংবিধানে যুক্ত হবে। সংরক্ষিত নারী আসন ২০৪৩ সাল পর্যন্ত বহাল থাকবে।

রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব

রাতে আলী রীয়াজ জানান, কমিশন রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব বিষয়ে একটি সাধারণ ধারণাপত্র রাজনৈতিক দলগুলোকে বিবেচনার জন্য দিয়েছে। কমিশন প্রস্তাব করেছে যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি যেন প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ছাড়াই নিয়োগ দিতে পারেন। আজ আলোচনার মাধ্যমে এটি নিষ্পত্তি হবে বলে তিনি আশা করেন।

মৌলিক সংস্কার প্রস্তাবে এখনো যেখানে আপত্তি

সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সরকারি কর্ম কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে জোরালো আপত্তি আছে বিএনপির। তারা এ–সংক্রান্ত বিধান সংবিধানে যুক্ত না করে আইনের মাধ্যমে নিয়োগ করার পক্ষে।

দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠনের বিষয়ে দলগুলো একমত হলেও উচ্চকক্ষের নির্বাচনপদ্ধতি নিয়ে মতভিন্নতা আছে। সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব ছিল, সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে অর্থাৎ সারা দেশে একটি দল যত ভোট পাবে, তার অনুপাতে তারা উচ্চকক্ষে আসন পাবে। জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ বেশির ভাগ দল এই প্রস্তাবে একমত। তবে বিএনপিসহ কয়েকটি দলের এতে আপত্তি আছে। উচ্চকক্ষের ক্ষমতা কী হবে, তা নিয়েও মতভিন্নতা আছে। এমন পরিস্থিতিতে এ বিষয়ে কমিশনকে একটি সিদ্ধান্ত দেওয়ার ভার দেওয়া হয়েছিল। তবে গতকাল পর্যন্ত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়নি।

রাষ্ট্রের মূলনীতি প্রশ্নেও দলগুলো মোটাদাগে বিভক্ত। সংবিধানে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ করার প্রস্তাব নিয়েও এখন পর্যন্ত সেভাবে আলোচনা হয়নি। রাষ্ট্রপতির নির্বাচনপদ্ধতি নিয়ে কয়েক দফা আলোচনা হলেও সিদ্ধান্ত হয়নি।

অবশ্য গতকাল দুপুরে আলোচনার শুরুতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, বৃহস্পতিবার (আজ) একটি সমন্বিত ও গ্রহণযোগ্য খসড়া সনদ সব দলের কাছে তুলে দেওয়া সম্ভব হবে বলে তাঁরা আশা করছেন।

দলগুলোর উদ্দেশে আলী রীয়াজ বলেন, ‘আপনারা যে দায়িত্ব আমাদের দিয়েছেন, তার মধ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। আমরা চেষ্টা করছি এসব বিষয়ে দ্রুত ঐকমত্যে পৌঁছাতে এবং আগামীকালের মধ্যেই আপনাদের অবহিত করতে পারব।’

বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনার দাবি

গত সোমবার দলগুলোকে জুলাই জাতীয় সনদের একটি খসড়া দিয়েছিল জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সেখানে বলা হয়েছে, এই সনদের অন্তর্ভুক্ত সংস্কার প্রস্তাবগুলো আগামী জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের দুই বছরের মধ্যে সম্পন্ন করতে অঙ্গীকার করবে রাজনৈতিক দলগুলো।

গতকাল ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, খসড়ায় জুলাই সনদ বাস্তবায়নের যে পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে, তা দেখে তিনি বিস্মিত ও খুব হতাশ হয়েছেন। তিনি জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দেওয়া এবং এ বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনে আলাদাভাবে আলোচনা করার দাবি জানান। তিনি বলেন, যদি জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি না থাকে, তাহলে এসব সিদ্ধান্তের এক পয়সা দাম আছে বলে তিনি মনে করেন না। সে ক্ষেত্রে এত দিন যা হয়েছে, তা সময়ের অপচয়।

এ বিষয়ে আরও কয়েকটি দলের পক্ষ থেকে কথা বলার চেষ্টা করা হলে ঐকমত্য কমিশন অনুমতি দেয়নি। অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, এ বিষয়ে কমিশনের প্রধান ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আলোচনা করে জানাবেন।

রাতে আলোচনার শেষ পর্যায়ে এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন আবারও এ বিষয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, সংস্কার বাস্তবায়নের ছয়টি পদ্ধতির কথা বলা হয়েছিল। এটা গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা। তবে আলী রীয়াজ বলেন, কমিশন আগে সনদের প্রক্রিয়া শেষ করতে চায়। বাস্তবায়নের পথ নিয়ে এখন আলোচনায় যাচ্ছে না কমিশন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ