গোপালগঞ্জে হুইল চেয়ার পেয়ে আনন্দিত ১৪ প্রতিবন্ধী
Published: 17th, January 2025 GMT
জন্ম থেকেই হাঁটতে অক্ষম গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার চিংগড়ি গ্রামের ভ্যান চালক সুধাংশু মন্ডলের ছেলে সংগ্রাম মন্ডল (১৫)। ভাড়ায় ভ্যান চালিয়ে উপার্জন করা টাকা দিয়ে কোনো রকমে সংসার চালান সংগ্রামের বাবা সুধাংশু মন্ডল। নুন আনতে পানতা ফুরায়। সংসারের এ অবস্থায় ছেলেকে একটা হুইল চেয়ার কিনে দেওয়ার সামর্থ্য হয়নি তার।
শুধু সংগ্রাম মন্ডলই নয়, তার মত হাঁটাচলা করতে অক্ষম ও দরিদ্র এমন আরও ১৪ জনকে খুঁজে হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.
শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) সকালে উপজেলা পরিষদ চত্বরে এসব হুইল চেয়ার বিতরণ করা হয়। হুইল চেয়ার বিতরণ অনুষ্ঠানে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা দেবাশীষ বাছাড়, প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্যে কেন্দ্র, জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের কনসালটেন্ট ডা. নাজমুল ইসলাম, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী প্রদীপ মজুমদারসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
বিনামূল্যে ও অপ্রত্যাশিতভাবে এসব হুইল চেয়ার পাওয়ায় আনন্দে আত্মহারা হাঁটাচলা করতে না পারা প্রতিবন্ধীরা।
পাটগাতী গ্রামের আমিনুর শেখ বলেন, “জন্ম থেকেই হাঁটতে পারে না আমার ১৩ বছর বয়সী মেয়ে সোহারা খানম। পরের জমিতে কামলা খেটে নিজের সংসারই কোনো রকমে চলে, হুইল চেয়ার কিনবো কীভাবে! সাংবাদিকদের মাধ্যমে বিষয়টি জেনে ইউএনও স্যার আমার মেয়েকে একটি হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।”
কাকইবুনিয়া গ্রামের রিপন কুমার রায় (বিবেক) বলেন, “উপজেলার পাটগাতি বাজারে দীর্ঘদিন আর্ট শিল্পী হিসেবে কাজ করেছি। প্রায় পাঁচ বছর ধরে প্যারালাইজড (পক্ষাঘাতগ্রস্ত) হয়ে ঘরেই পড়ে ছিলাম। স্ত্রী ও মেয়ে বাড়িতে আর্ট শিল্পীর কাজ করে সামান্য কিছু রোজগার করে, যা দিয়ে কোনোমতে চলে সংসার। কয়েকদিন আগে একটি হুইল চেয়ার পাওয়ার জন্য উপজেলায় আবেদন করি। আজ হুইল চেয়ার আমি অনেক খুশি। এখন একটু চলাফেরা করতে পারব।”
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মঈনুল হক বলেন, “মানুষের দুঃখ কষ্ট দূর করতে সরকার থেকে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু অনেক সময় প্রকৃত অসহায় ও দরিদ্র মানুষেরা সরকারি সেবাগুলো পায় না। সরকারের একজন কর্মচারী হয়ে আমার দায়িত্ব মানুষের জন্য কিছু করা। তাই হাঁটাচলা করতে অক্ষম ও প্রকৃত দরিদ্র মানুষদের বাছাই করে হুইল চেয়ার দেওয়া হয়েছে।”
ঢাকা/বাদল/এস
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক
অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।
বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক।
আরো পড়ুন:
রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী
‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত
সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।
প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।
জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।
আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।
লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড
ঢাকা/লিপি