Samakal:
2025-08-02@07:59:17 GMT

পাখির নেই কোনো সীমানা

Published: 17th, January 2025 GMT

পাখির নেই কোনো সীমানা

দুটি দেশ যেখানে মিলিত হয়, সেখানে থাকে আন্তঃদেশীয় সীমানা। গবেষণা বলে, এই আন্তঃদেশীয় সীমানাগুলো বন্যপ্রাণী তথা জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। পৃথিবীর মোট জীববৈচিত্র্যর ৫৭ শতাংশের খোঁজ মেলে এ এলাকাগুলোতে। মানুষের চলাচল কিংবা মানবসৃষ্ট কর্মকাণ্ড কম থাকায় এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং এ পরিবেশের গুণগত মান জীববৈচিত্র্যের আবাসস্থল হিসেবে খুবই অনুকূল। এ কারণে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর আনাগোনা তূলনামূলক বেশি।  ইন্দো-চায়না এবং ইন্দো-বার্মা জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ অঞ্চলের মিলনস্থলে অবস্থানের কারণে বাংলাদেশে রয়েছে বন্যপ্রাণীর এক সমৃদ্ধ ভান্ডার; যার মধ্যে রয়েছে সাত শতাধিক প্রজাতির পাখি। এ পাখির মধ্যে ৩৩৭টি প্রজাতি আমাদের দেশের আবাসিক পাখি, ২০৮টি শীতকালীন পরিযায়ী, ১২টি গ্রীষ্ম পরিযায়ী, ১৪টি পান্থ পরিযায়ী এবং ১১৯টি প্রজাতি ভবঘুরে।

বাংলাদেশের স্থল সীমান্তরেখার দৈর্ঘ্য ৪ হাজার ২৪৬ কিলোমিটার, যার মধ্যে ৯৪ শতাংশ ভারতের সঙ্গে এবং বাকি ৬ শতাংশ মিয়ানমারের সঙ্গে। এই সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো ঘিরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, মেঘালয়, আসাম, ত্রিপুরায় রয়েছে অসংখ্য সংরক্ষিত এলাকা। এ ছাড়া মিয়ানমারের সঙ্গে পুরো সীমানাই পাহাড়ি বনে আচ্ছাদিত; যার ফলে বন্যপ্রাণীরা এ এলাকাগুলোকে কেন্দ্র করে বিচরণ করে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলোতেও। বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের এলাকা, হিমালয়কন্যা তেঁতুলিয়া তিন দিক থেকে ভারতীয় সীমানা দ্বারা বেষ্টিত হওয়ায় এখানে রয়েছে অসংখ্য পাখির সমাহার।
সম্প্রতি তেঁতুলিয়ায় পাখির ওপর করা আমাদের একটি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয় ‘স্প্রিঙ্গার’ নামক একটি জার্নালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড.

মোহাম্মদ ফিরোজ জামানের তত্ত্বাবধানে গবেষণাটি হয়। গবেষক হিসেবে ছিলাম আফসানা ইমরোজ আর আমি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক মো. মাহাবুব আলম ও মো. ফজলে রাব্বি ছিলেন সহ-তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে। ২০২১ সালের নভেম্বর থেকে ২০২২ সালের অক্টোবর পর্যন্ত চালানো গবেষণায় রেকর্ড করা হয়েছে ১৭৪ প্রজাতির পাখি। এর মধ্যে ১২২টি প্রজাতি স্থানীয়। বাকি ৫২টি শীতকালে অতিথি হয়ে উড়ে আসে খাদ্য ও আশ্রয়ের সন্ধানে। এলাকাটিতে সবচেয়ে বেশি দেখা সাত ভাই ছাতারে, বনছাতারে বা ক্যাচক্যাচিয়া। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য পাখির মধ্যে আছে– ঘুঘু, ফিঙে, কোকিল, মুনিয়া, খঞ্জন, ছাতিঘুরানি, শ্বেতাক্ষী, কাঠঠোকরা, প্যাঁচা, পানকৌড়ি,  ঈগল, বাজ, গাংচিল,  মাছরাঙা ইত্যাদি। এখানে আমরা বনভূমিকেন্দ্রিক পাখিদেরই তূলনামূলক বেশি দেখা পাই। এ ছাড়া চা বাগানের পরিমাণ বেশি থাকায় এখানে দেখা মেলে বিভিন্ন প্রজাতির বৈচিত্র্যময় পাখির। যেমন হলদে চোখ ছাতারে, চুকটি, দামা, শ্যামা, কোয়েল, কাঠঠোকরা।
পুরো বছরকে আমরা তিনটি মৌসুমে ভাগ করে সরাসরি মাঠ পর্যায়ের অনুসন্ধানের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করি। গ্রীষ্ম, বর্ষা ও শীত। শীতে এই এলাকা অতিথি পাখির আনাগোনায় পরিণত হয় পাখির স্বর্গে। চাতক, বউকাও, নীললেজ সুইচোর এখানকার গ্রীষ্ম পরিযায়ী পাখি। বিভিন্ন প্রজাতির বুনোহাঁস, সৈকত পাখি, ঘাসবনের পাখি, আশটে দামা, পরিযায়ী গায়ক পাখি এখানকার উল্লেখযোগ্য পরিযায়ী পাখি। এখানে আরও দেখা মেলে লাল ঘার কাস্তেচরার।

এ গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যমতে, বেশ কিছু ঝুঁকিপূর্ণ প্রজাতির পাখির দেখা মিলেছে এখানে। এর মধ্যে দেশি গুটি ঈগল, চারটি সংকটাপন্ন প্রজাতির হলদে চোখ ছাতারে, বড় গুটি ঈগল, শেখ ফরিদ, মদনটাক, কালা মাথা কাস্তেচরা অন্যতম। পাশাপাশি এখানে সম্প্রতি দেখা মিলেছে বাংলাদেশ থেকে হারিয়ে যাওয়া সবুজ ময়ূরের। তাহলে বলাই চলে এ এলাকা জীববৈচিত্র্যের জন্য, বিশেষ করে পাখির জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। উল্লেখ্য, আমরা পাখির পাশাপাশি জলাভূমির সুস্থতার নির্দেশক ফড়িং নিয়েও গবেষণা করি। আমরা মোট ৪৭ প্রজাতির ফড়িংয়ের সন্ধান পাই, যা দেশের মোট ফড়িং প্রজাতির অর্ধেক। পাওয়া যায় কিছু দুর্লভ প্রজাতির ফড়িং।

এ এলাকার বৈচিত্র্যে ঘেরা পাখিদের আবাসস্থল যেমন মানব বসতিকেন্দ্রিক বন, ঝোপঝাড়, নদী, ঝিরি, চা বাগান, জলাভূমি, প্লাবন ভূমি, ফসলের মাঠ, সবুজে ঘেরা অরণ্যের বৈচিত্র্যময়তার কারণে জীববৈচিত্র্য এতটা বেশি সমৃদ্ধ।
তেঁতুলিয়ার পাখিবৈচিত্র্য এবং আমাদের দীর্ঘমেয়াদি  এই গবেষণা এটাই প্রমাণ করে, আমাদের আন্তঃসীমানা এলাকাগুলো জীববৈচিত্র্যে ভীষণ সমৃদ্ধ।  সংরক্ষিত এলাকার বাইরে এ এক পাখির স্বর্গ। তেঁতুলিয়াসহ আন্তঃদেশীয় সীমানায় অবস্থিত এলাকাগুলোতে আমাদের পাখি সংরক্ষণে আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া সময়ের দাবি। দরকার বিস্তৃত গবেষণা এবং সংশ্লিষ্টদের আন্তরিক সহযোগিতা। v

লেখক: বন্যপ্রাণী গবেষক ও পরিবেশবিদ 
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এল ক গ ল এ এল ক পর য য়

এছাড়াও পড়ুন:

যে কারণে এক সপ্তাহে তিন ব্যাংক এমডির পদত্যাগ

গত সপ্তাহে বেসরকারি খাতের তিন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদত্যাগ করেছেন। এর মধ্যে সাউথইস্ট ব্যাংকের এমডিকে আগে থেকেই ছুটিতে পাঠিয়েছিল ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ। আর মেঘনা ও কমার্স ব্যাংকের এমডি হঠাৎ করেই পদত্যাগ করেছেন।

জানা গেছে, পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হওয়ায় মেঘনা ও কমার্স ব্যাংকের এমডিদের পদত্যাগ করতে হয়। হঠাৎ করে দুই এমডির পদত্যাগ নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকও। গত বছরের ৫ আগস্টের পর এই তিন ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে কমার্স ব্যাংক ছিল এস আলমের নিয়ন্ত্রণে ও মেঘনা ব্যাংক ছিল সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর পরিবার ও তাঁদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ন্ত্রণে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর গতকাল মুদ্রানীতি অনুষ্ঠানে বলেন, ‘কয়েকজন এমডি কেন পদত্যাগ করেছেন, আমরা তা খতিয়ে দেখছি।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ব্যাংকিং নিয়মে কোনো এমডি পদত্যাগ করলে বাংলাদেশ ব্যাংককে তার কারণ জানাতে হয়। তাঁর পদত্যাগ কার্যকর হবে কি না, এরপরই এ নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়। পদত্যাগ করা এমডিকে কাজে ফিরিয়ে দেওয়ার উদাহরণও আছে।

জানা যায়, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকে ৪৮ কোটি টাকা সুদ মওকুফের সিদ্ধান্ত ঘিরে সৃষ্ট বিতর্কের জেরে পদত্যাগ করেছেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন। গত মঙ্গলবার পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে মোশারফ হোসেনের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন পর্ষদের কয়েকজন সদস্য। পরদিনই তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন।

তবে ব্যাংকটি লিখিতভাবে প্রথম আলোকে জানিয়েছে, এমডি লক্ষ্য পূরণ করতে না করায় তার ব্যর্থতা স্বীকার করে নেন, এরপর ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন। মোশারফ হোসেন চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি কমার্স ব্যাংকের এমডি হিসেবে যোগ দেন।

এদিকে গত সোমবার সাউথইস্ট ব্যাংকের এমডি নুরুদ্দিন মো. ছাদেক হোসেন পদত্যাগ করেন। অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান বরাবরে পদত্যাগপত্র জমা দেন। এর আগে চলতি বছরের ৪ মে তাঁকে তিন মাসের ছুটিতে পাঠিয়েছিল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ।

গত রোববার পদত্যাগ করেন মেঘনা ব্যাংকের এমডি কাজী আহ্সান খলিল। গত বছরের এপ্রিলে ৩ বছরের জন্য তিনি ব্যাংকটির এমডি হিসেবে যোগ দেন। তবে ১৫ মাসের মাথায় এসে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন।

জানতে চাইলে কাজী আহ্সান খলিল প্রথম আলোকে বলেন, ‘নতুন পর্ষদ কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ করে আমাকে ছুটিতে পাঠানোর উদ্যোগ নেয়। আমি সেই প্রস্তাবে রাজি না হয়ে নিজেই পদত্যাগ করেছি। বাংলাদেশ ব্যাংক তদন্ত করলেই আরও অনেক কিছু জানতে পারবে।’

চলতি বছরের মার্চে মেঘনা ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকটির শেয়ারধারী পরিচালকের পাশাপাশি স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়। যাঁদের দুজন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ