মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান একজন অর্থনীতিবিদ, সরকারি কর্মকর্তা ও সাবেক সচিব। তিনি যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর ও দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার পাশাপাশি বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকা, ইউএনডিপিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছেন।
উপদেষ্টা গত ১৬ আগস্ট বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দায়িত্ব গ্রহণের পরই তিনি নিজ জন্মস্থান সন্দ্বীপের উন্নয়নে একাধিক প্রকল্প গ্রহণ করেন। দীর্ঘদিনের নৌ যাতায়াত সমস্যা সমাধানে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। তাঁর এ উদ্যোগে জামায়াত ও বিএনপি ঐক্যবদ্ধভাবে সাড়া দিয়েছে। উদ্যোগ সফল করতে উভয় সংগঠন যৌথভাবে কর্মসূচিও পালন করেছে।
উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খানের উদ্যোগে সন্দ্বীপের  গাছুয়াতে ল্যান্ডিং স্টেশন হচ্ছে। যেখানে স্টিমার সরাসরি ভিড়তে পারবে। বাঁশবাড়িয়াতে ফেরির অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। বাঁশবাড়িয়া থেকে কুমিরা ঘাটে আসার জন্য বেড়িবাঁধের ওপর দিয়ে সড়ক নির্মাণকাজ শুরু হবে।
কুমিরা জেটির মাথায় ভেঙে যাওয়া অংশের বন্ধ হয়ে যাওয়া পুনর্নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। গুপ্তছড়া ঘাটে ফেরির অবকাঠামো নির্মাণকাজ দৃশ্যমান হয়েছে। ঘাট উন্মুক্ত হওয়ার কার্যক্রমও বাস্তবায়িত হচ্ছে তাঁর নির্দেশে। এরই মধ্যে সন্দ্বীপ মেরিন সার্ভিস, আদিল এন্টারপ্রাইজ ও আরআর এন্টারপ্রাইজ নামের তিনটি প্রতিষ্ঠান স্পিড বোট পরিচালনা করার অনুমতি নিয়েছে।
সন্দ্বীপবাসীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এবার নৌপথ নিরাপদ হবে বলে মনে করছেন দ্বীপের বাসিন্দারা। গত শুক্রবারের বিক্ষোভ সমাবেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান মিল্টন ভূঁইয়া বলেন, নৌঘাটে অরাজকতা চলছে যুগের পর যুগ। বর্তমান উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খানের উদ্যোগে এখন ঘাট উন্মুক্ত করার সুযোগ এসেছে। যারা এটিকে বানচাল করতে চান, তাদের সম্মিলিতভাবে প্রতিহত করবে সন্দ্বীপবাসী।’
সন্দ্বীপ থেকে আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী জামায়াত নেতা আলাউদ্দিন সিকদার বলেন, নৌ ঘাট নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম হয়েছে। সাবেক ক্ষমতাসীন দল এটার ন্যায্য সমাধান করেনি। ন্যায্য ভাড়া নির্ধারণ করেনি। সিন্ডিকেট করে তারা এটিকে টাকা কামানোর হাতিয়ার বানিয়েছে। এখন আর এ সুযোগ নেই। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করব।’
সন্দ্বীপ মেরিন সার্ভিসের অন্যতম উদ্যোক্তা ওমর ফারুক বলেন, নানা ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আমরা এ পর্যন্ত এসেছি। আদালতের মাধ্যমে আমাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। আমাদের একটি স্পিড বোটকে পরিকল্পিতভাবে দুর্ঘটনায় ফেলা হয়েছে। তার পরও আমরা হাল ছাড়ব না। আমরা নিরাপদ নৌরুটের কার্যক্রম এগিয়ে নেব।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট উপদ ষ ট

এছাড়াও পড়ুন:

নওগাঁর ছয় আসনে ঈদের ছুটিতে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের গণসংযোগ

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নওগাঁয় সক্রিয় হয়ে উঠেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। ঈদুল আজহার ছুটিকে তাঁরা গণসংযোগের সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়েছেন।

ঈদ উদ্‌যাপন করতে কর্মজীবী মানুষ নিজ নিজ এলাকায় ফিরেছিলেন। সেই সময়ে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। তবে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের তুলনায় বিএনপি ও জামায়াতের নেতাদের তৎপরতাই বেশি ছিল।

নওগাঁর ১১টি উপজেলা নিয়ে গঠিত ছয়টি সংসদীয় আসনে এখনো বিএনপি দলীয়ভাবে কোনো প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি। তবে জামায়াতে ইসলামী আগেভাগেই প্রতিটি আসনে তাদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে। বিএনপি ও জামায়াত উভয় দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা ঈদের ছুটিতে গ্রামে গিয়ে ভোটারদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, ঈদের শুভেচ্ছা জানান ও নিজেদের বিষয়ে জানান দেন।

নওগাঁ–১ (নিয়ামতপুর, পোরশা ও সাপাহার)

এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেতে মাঠে আছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও নিয়ামতপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ছালেক চৌধুরী, ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান ও পোরশা উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোজাম্মেল হক চৌধুরী।

মনোনয়নপ্রত্যাশীরা ঈদের আগে শাড়ি, লুঙ্গি, পাঞ্জাবি, সেমাই ও চিনি বিতরণ করেছেন। ঈদের ছুটিতে পুনর্মিলনী ও সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। এ আসনে জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী মাহবুবুল হকও বিভিন্ন মসজিদে দোয়ার অনুরোধ জানানো ও সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে গণসংযোগ করেছেন।

বিএনপি নেতা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘দলের পক্ষ থেকে যখন যেভাবে নির্দেশনা আসছে, সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছি।’ তিনি জানান, দলের ঘোষিত রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা প্রচার ও লিফলেট বিতরণ, ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় ও খাওয়াদাওয়া, নারী ও তরুণদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন।

নওগাঁ–২ (পত্নীতলা ও ধামইরহাট)

এই আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী তিনজন—কেন্দ্রীয় বিএনপির কৃষিবিষয়ক সম্পাদক সামসুজ্জোহা খান, জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি খাজা নাজিবুল্লাহ চৌধুরী ও ধামইরহাট উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মাহবুবুর রহমান চপল চৌধুরী।

মনোনয়নপ্রত্যাশীরা ঈদের ছুটিতে এলাকায় ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়, পুনর্মিলনী, ফুটবল ও ক্রিকেট টুর্নামেন্টের পুরস্কার বিতরণসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী এনামুল হকও সক্রিয় ছিলেন।

খাজা নাজিবুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই আমার এলাকার মানুষের সুখে–দুঃখে পাশে থাকার চেষ্টা করে আসছি। ঈদের ছুটির সময়টাতে চেষ্টা করেছি আমার নির্বাচনী এলাকার সব গ্রামে সব মানুষের কাছে পৌঁছাতে। মানুষের ভোটের জন্য অধীর অপেক্ষায় আছি। আগামী নির্বাচনে আমি দলের মনোনয়ন চাইব।’

নওগাঁ–৩ (মহাদেবপুর ও বদলগাছী)

এই আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বদলগাছী উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফজলে হুদা, মহাদেবপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি রবিউল আলম ও সাবেক সংসদ সদস্য আখতার হামিদ সিদ্দিকীর ছেলে পারভেজ আরেফিন সিদ্দিকী। জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী মাহফুজুর রহমানও তৎপর ছিলেন।

বিএনপি নেতা ফজলে হুদা বাবুল বলেন, ‘শুধু এবার নয়, প্রতি ঈদেই চেষ্টা করি এলাকার গরিব–অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। ঈদের আগে দুই উপজেলায় ৩০ হাজার মানুষের মধ্যে শাড়ি, লুঙ্গি ও পাঞ্জাবি বিতরণ করেছি। ঈদের ছুটিতে নারী ও তরুণদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি। বিএনপির ঘোষিত রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। মানুষ ভোট দিতে অপেক্ষা করছেন। ভোট মানে, তাঁদের কাছে একটা উৎসব। দেড় দশকের বেশি সময় ধরে মানুষ সেই উৎসব থেকে বঞ্চিত।’

নওগাঁ–৪ (মান্দা)

এই আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক ছাত্রদল নেতা আব্দুল মতিন, উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মোকলেছুর রহমান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইকরামুল বারী ও আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম। জামায়াতের প্রার্থী জেলা আমির খন্দকার মুহাম্মদ আব্দুর রাকিব।

আব্দুল মতিন বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ নির্বাচন দেওয়া। কিন্তু তারা নির্বাচন রেখে অন্য কাজে ব্যস্ত। কেউ দেশের মানচিত্র পরিবর্তন করতে চায়, কেউ সংস্কারের নামে নানা কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত। যে কারণে জনগণের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু আমরা যাঁরা রাজনীতি করি, গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, তাঁরা সব পরিস্থিতিতে জনগণের সঙ্গেই আছি।’

নওগাঁ–৫ (সদর উপজেলা)

এই আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী কেন্দ্রীয় কমিটির সহসমবায়–বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নজমুল হক, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ২০১৮ সালে বিএনপি মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী জাহিদুল ইসলাম, আহ্বায়ক আবু বক্কর সিদ্দিক, সদস্যসচিব বায়েজিদ হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক মামুনুর রহমান ও জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদ হাসান। এই আসনে জামায়াতের প্রার্থী জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আ স ম সায়েম।

নওগাঁ–৬ (রাণীনগর ও আত্রাই)

এই আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও আত্রাই উপজেলা বিএনপির সভাপতি শেখ রোজাউল ইসলাম, রাণীনগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ইছাহাক আলী ও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম। এ ছাড়া সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য আলমগীর কবিরও এই আসন থেকে বিএনপির টিকিট পেতে তৎপর আছেন।জামায়াতের প্রার্থী আত্রাই উপজেলা জামায়াতের আমির মোহাম্মদ খবিরুল ইসলাম।

আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘দেশ স্বাধীন করার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছি। এরপর মানুষের কল্যাণে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শে গড়া দল বিএনপির একজন কর্মী হিসেবে প্রায় পাঁচ দশক ধরে কাজ করে যাচ্ছি। ২০০৮ সালে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছি। এরপর দলের সব আন্দোলন–সংগ্রামে মাঠে থেকে কাজ করেছি। সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দলের জন্য কাজ করেছি। দলের একজন দীর্ঘদিনের কর্মী হিসেবে দলের কাছে মনোনয়ন চাইব।’

বিএনপি ও জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থীদের সরব উপস্থিতি থাকলেও নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি, জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের তৎপরতা তেমন চোখে পড়েনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নওগাঁর ছয় আসনে ঈদের ছুটিতে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের গণসংযোগ