কখনও ফেসবুকে কখনও কার্যালয়ে গিয়ে পরিচয়। ধীরে ধীরে গড়ে তোলে প্রেমের সম্পর্ক। এক পর্যায়ে অসুস্থতার বাহানা করে ডেকে নেয় নির্দিষ্ট ফ্ল্যাটে। তারপর আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ধারণ করে শুরু হয় ব্ল্যাকমেইল। হাতিয়ে নেয় টাকা। এভাবেই দীর্ঘদিন ধরে গুরুদাসপুর উপজেলায় প্রতারণা করে আসছে কয়েকটি চক্র। সম্মানহানির ভয়ে থানায় অভিযোগ করতে চান না ভুক্তভোগীরা। যে কারণে দিন দিন বেড়েই চলছে প্রতারক চক্রের তৎপরতা।
বিষয়টি নিয়ে তিন মাস অনুসন্ধান চালিয়েছে সমকাল। গুরুদাসপুর উপজেলার প্রায় ১০ জন সরকারি চাকরিজীবী ও ৫ ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলেছে। তাদের কথাবার্তায় উঠে এসেছে এই প্রতারণার তথ্য। একেকটি প্রতারণার ঘটনা যেন একেকটি নাটক-সিনেমার দৃশ্যপট। সেখানে থাকে পুলিশের অভিনয়, সাংবাদিক, কেউবা আবার গোয়েন্দা সংস্থার লোক। সেই নাটকের মূল চরিত্রে থাকে সুন্দরী তরুণী। তাদের খপ্পরে পড়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন একেকজন ভুক্তভোগী। 
ভুক্তভোগীদের মধ্যে রয়েছেন গুরুদাসপুর পৌরসভার একজন কর্মকর্তাও। তাঁর ভাষ্য, প্রায় তিন মাস আগে পৌরসভার কাজকর্ম শেষ করে একটু প্রশান্তির জন্য চলনবিল বিলশা এলাকায় ঘুরতে যান তিনি। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামার আগের মুহূর্তে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হবেন, ঠিক এমন সময় সুন্দরী এক তরুণী এসে সালাম দেয়। সালামের জবাব দিলে দু’জনের মধ্যে কুশল বিনিময় হয়। তরুণী তাঁকে চিনলেও তিনি চিনতেন না। তরুণী তখন বলে, তার জন্মসনদের একটু কাজ করে দিতে হবে– এই বলে ফেসবুক আইডি চেয়ে নেয়। এরপর দিনরাতে বিভিন্ন সময় মেসেজ করত। তিনিও জবাব দিতেন। কথা বলতে বলতে দু’জনের মধ্যে সখ্য গড়ে ওঠে। সম্পর্ক শুরুর প্রায় ১০ দিন পর হঠাৎ একদিন রাত ৮টার দিকে ওই তরুণী কল দিয়ে বলে, সে খুব অসুস্থ, বাসায় কেউ নেই। ওষুধ নিয়ে আসারও কেউ নেই। তাই জ্বরের ওষুধ কিনে দিতে অনুরোধ করে। মানবিক দিক চিন্তা করে ওষুধ নিয়ে ওই তরুণীর দেওয়া ঠিকানায় গুরুদাসপুর বাজার এলাকার একটি ফ্ল্যাটে যান তিনি। যাওয়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যেই প্রায় ছয়-সাতজনের একটি চক্র মারধর শুরু করে। নগ্ন করে ছবি ও ভিডিও ধারণ করতে থাকে। এক পর্যায়ে একজন পরিচয় দেয় পুলিশ, একজন সাংবাদিক, গোয়েন্দা সংস্থার লোক ও স্থানীয় বাসিন্দা। কিছুক্ষণ পরে ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ২ লাখ টাকা দাবি করে। পরে অনেক চেষ্টা করে ১ লাখ টাকা দিয়ে মুক্তি পান তিনি। সম্মানহানির ভয়ে থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়নি বলে দাবি তাঁর।
এই চক্রের খপ্পরে পড়েন উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের একজন। এই ভুক্তভোগী জানান, প্রায় পাঁচ মাস আগে এক তরুণীর সঙ্গে পরিচয় হয় নিজ কার্যালয়ে। প্রথমে বন্ধুত্ব হলেও পরে প্রেম পর্যন্ত গড়ায়। এরপর একদিন অসুস্থতার কথা বলে তাঁকে ডেকে নেয় একটি ফ্ল্যাটে। সেখানে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই ছয়-সাতজনের একটি গ্রুপ তাঁকে বিব্রত করে ছবি ও ভিডিও ধারণ করে। ২ লাখ টাকা দিয়ে ছাড়া পান তিনি। এতেই শেষ হয়নি। তারপর কয়েক ধাপে বিভিন্নভাবে তাঁর কাছ থেকে আরও ১ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারক চক্রটি। সম্মানহানির ভয়ে আইনের আশ্রয় নিতে চাননি তিনি।
এই চক্রের ফাঁদে পড়েন চাঁচকৈড় বাজারের এক ব্যবসায়ীও। তাঁর ভাষ্য, ফেসবুকে এক তরুণীর সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর। মাঝে মধ্যেই তাঁর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এসে গল্প করে চলে যেত মেয়েটি। প্রায় ১৫ দিন কথা বলার পর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এক মাস পর তাঁকে বাড়িতে ডেকে নেয় তরুণী। তাঁর বাড়িতে যাওয়ার প্রায় ২০ মিনিট পর ৮-১০ জনের একটি চক্র তাঁকে নগ্ন করে মারধর করে। এসবের ছবি ও ভিডিও করে। পরে ৩ লাখ টাকা দিয়ে ছাড়া পান তিনি। তিনি বলেন, ‘আমি এখনও রাতে ঘুমাতে পারি না। কারণ চক্রের সদস্যদের কাছে আছে সেই ভিডিও। কখন জানি আবার টাকা দাবি করে কিংবা ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়।’ তিনিও আত্মসম্মানের ভয়ে থানায় অভিযোগ দেননি।
প্রতারকের খপ্পরে পড়েন রুহুল আমিন (ছদ্মনাম) নামে একজন। এ ঘটনায় চক্রের ১৮ সদস্যের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা করেন তাঁর ছেলে। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন– নারায়ণপুর গ্রামের রাসেল ইসলাম, সাবিদুল ইসলাম ও মিঠুন শেখ। রাসেলের বিরুদ্ধে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ছিনতাইসহ হত্যা মামলা রয়েছে। কারাগারে রয়েছেন তারা।
ভুক্তভোগী জানান, গত মঙ্গলবার গুরুদাসপুর সরকারি পাইলট হাইস্কুল মাঠে ওয়াজ মাহফিলে যান তিনি। সে সময় চক্রের এক নারী সদস্যকে দিয়ে তাঁকে অপহরণ করে একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে নিয়ে যায়। ওই নারীর সঙ্গে তাঁকে আপত্তিকর অবস্থায় রেখে ভিডিও ধারণ করে। ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ চায় অভিযুক্তরা। টাকার জন্য তাঁর ছেলেকে ফোন করলে সে পুলিশের শরণাপন্ন হয়। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে।
গুরুদাসপুর থানার ওসি গোলাম সারওয়ার হোসেন বলেন, ইতোমধ্যে চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ১৮ জনের নাম বলেছে তারা। আদালতে রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। রিমান্ড মঞ্জুর হলে জিজ্ঞাসাবাদে আরও তথ্য পাওয়া যেতে পারে। তাঁর দাবি, নির্দিষ্টভাবে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ দিলে দ্রুত এসব চক্রকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা যায়। তারপরও পুলিশ প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করছে।
ইউএনও ফাহমিদা আফরোজের ভাষ্য, যারা ফাঁদে পা দিচ্ছেন তাদের আরও সচেতন হতে হবে। যেসব ভুক্তভোগী ভয়ে বা সম্মানহানির ভয়ে আইনের আশ্রয় নিচ্ছেন না, তারা ভুল করছেন। সাহস করে পরিচয় গোপন রেখেও চক্রের বিরুদ্ধে তথ্য দিলে পুলিশ ব্যবস্থা নিতে পারে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র একট ব যবস সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

ব্যক্তিগত মুহূর্ত নিয়ে অসুস্থ প্রতিযোগিতায় আমি নেই: অপু বিশ্বাস

শাকিব খান ও সন্তানদের নিয়ে চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস ও শবনম বুবলীর বাকযুদ্ধের কথা কমবেশি সবারই জানা। শাকিবকে কেন্দ্র করে প্রায়শই কথার লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েন দু’জন। গতকাল বাবা দিবসে শাকিব খান ও সন্তানদের নিয়ে ফেসবুকে পাল্টাপাল্টি স্ট্যাটাস দিয়েছেন অপু-বুবলী।

এরপরই নেটিজেনরা বলছে, দু’জনের একজন শাকিবকে নিয়ে স্ট্যাটাস দিলে বা কোনো মন্তব্য করলে কিছুক্ষণ পরই অপরজনও তার প্রতিক্রিয়া নিয়ে হাজির হন। বিষয়গুলো নিয়ে যেন একপ্রকার ক্লান্ত ও বিরক্ত অপু বিশ্বাস। তাই রোববার রাতেই ফেসবুক স্ট্যাটাসে স্পষ্ট এক বার্তা দিয়ে অপু জানান, কোনো ধরণের অসুস্থ প্রতিযোগিতার মাঝে তিনি নেই। আপাতত নিজের কাজ ও সন্তানকে নিয়েই ব্যস্ত থাকতে চান তিনি।

প্রাক্তন স্বামী শাকিব খান ও ছেলে জয়ের সঙ্গে তোলা একটি ছবি ফেসবুকে প্রকাশ করে অপু বিশ্বাস লিখেছেন, ‘প্রিয় ভক্ত-অনুরাগী ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা, সাম্প্রতিক সময়ে লক্ষ্য করছি, আমার ব্যক্তিগত কিছু মুহূর্ত বা আমার ছেলের সাথে স্মরণীয় সময়গুলো যখন আমি আপনাদের সঙ্গে ভাগাভাগি করি— তখনই কোনো না কোনোভাবে সেই বিষয়কে ঘিরে একধরনের অপ্রয়োজনীয় প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়।’

এরপর অপু লেখেন, ‘আমি একজন মা, একজন অভিনেত্রী, একজন উদ্যোক্তা। আমার অনেক দায়িত্ব, অনেক ব্যস্ততা। ক্যামেরার বাইরে আমার জীবনটা একজন নারীর মতোই-হাজারো কাজ, পরিকল্পনা, এবং স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে চলা। আমি কাউকে কিছু প্রমাণ করতে চাই না। আমার সম্পর্ক, আমার জীবনের অধ্যায়গুলো দর্শকের চোখের সামনেই কেটেছে। সেখানে লুকোচুরি নেই, নাটক করার কিছু নেই।’

অপুর ভাষ্য, ‘আমার ছেলের জন্য সময় দেই, তার বাবার সঙ্গে সুন্দর মুহূর্তগুলো ধরে রাখি-এটা সম্পূর্ণই ওর মানসিক বিকাশ ও সুন্দর শৈশবের জন্য। এটিকে ঘিরে কারো ‘অস্বস্তি’ তৈরি হলে, সেটার দায় আমার নয়।’

‘আমি অনেকদিন ধরেই দেখছি, আমার কোনো সাধারণ পারিবারিক পোস্টের পরেই যেন কিছু 'কাউন্টার প্রচেষ্টা' শুরু হয়। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই—আমি সেই অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নেই। সম্মান নিজে অর্জন করতে হয়, অন্যকে ছোট করে নয়। এখন থেকে আমি শুধু নিজের কাজ, নিজের ছেলে, নিজের ভক্তদের সময় দিতে চাই- লেখেন অপু।

সব শেষে অপু লিখেছেন, ‘কারো সাথে পাল্লা দেওয়ার জন্য আমি এখানে আসিনি। আমি নিজের জায়গাতেই স্বাচ্ছন্দ্যে আছি। যারা আমাকে ভালোবাসেন, পাশে থাকেন—আপনাদের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা। আমি আপনাদের বিশ্বাস ভাঙতে চাই না। আর নিজের ব্যক্তিত্ব নষ্ট করে কারো সঙ্গে পা মেলাতে রাজিও নই। ভালোবাসা অমলান থাকুক।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কখন ক্ষেপণাস্ত্র এসে পড়ে, সেই আতঙ্কে দিন কাটছে তেহরানের মানুষের
  • ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র কেড়ে নিল তরুণ ইরানি কবি আর তাঁর পুরো পরিবারকে
  • চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্ত এক ব্যক্তির মৃত্যু
  • আমি কারো সঙ্গে পাল্লা দিতে আসিনি: অপু বিশ্বাস
  • হামজাদের কোচিং স্টাফ বাড়ছে
  • ব্যক্তিগত মুহূর্ত নিয়ে অসুস্থ প্রতিযোগিতা, স্পষ্ট বার্তা দিলেন অপু
  • ব্যক্তিগত মুহূর্ত নিয়ে অসুস্থ প্রতিযোগিতায় আমি নেই: অপু বিশ্বাস
  • ‘ভালোবাসার আসল রূপটাই যেন ছিলেন আব্বা’
  • বর্ষার শুরুতেই সপ্তাহব্যাপী বৃষ্টির বার্তা
  • টানা সাত দিন সারাদেশে বৃষ্টি ঝরবে