অলাত এহ্সান মূলত গল্পকার। সাহিত্য সমালোচনা ও প্রবন্ধও লেখেন তিনি। অবসরে চর্চা করেন জাপানি ভাষা। ২০২৫ বইমেলায় প্রকাশ হবে অলাত এহসানের ‘বৃদ্ধাশ্রম হয়ে ওঠা কফি হাউসটি’ গল্পগ্রন্থ। তার প্রথম গল্পগন্থ ‘অনভ্যাসের দিনে’ পাঠকনন্দিত হয়েছে। তরুণ প্রজন্মের এই গল্পকারের কাছে রাইজিংবিডি জানতে চেয়েছিলো বই প্রচারণায় একজন তরুণ লেখক কীভাবে কাজ করতে পারেন? 

অলাত বলেন, ‘‘বিশ্বের বহু প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান আছে, যেখান থেকে (পরিচিত-অপরিচিত) যেকারও বই বের হলে আপনি চোখ বুঝে কিনতে পারেন, লেখার মান নিয়ে ঠকবেন না। এটা ওইসব প্রকাশনীর সম্পাদনা পরিষদ নিশ্চিত করে। আমাদের মনে হয় অমন ব্রান্ড হয়ে ওঠা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান তেমন নেই। আবার লেখকও তার লেখার মানে তেমন ব্যাপারে যত্নশীল নন, সেই যে এক লেখক বলেছিলেন না— অনেক লেখক আছেন যাদের অনেক পড়ার দরকার ছিল, কিন্তু তারা লেখেন। বিপদ হলো, বহু প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান আছে যারা বই প্রকাশের ব্যয় লেখকের ওপর চাপিয়ে দেয়, এখন বই বিপননের দায়িত্বও তাদের ওপরই দিচ্ছে। মানে নিজের খরচে প্রকাশনা অনুষ্ঠান করা, বই রিভিউ করানো ও সুহৃদ সাহিত্য সম্পাদককে বলে ছাপার ব্যবস্থা করা, পরিচিত স্টলে বলে বই রাখা, এমনি টাকা আদায় পর্যন্ত। একজন সম্ভাবনাময় লেখক যেমন উদ্যোমী হয়ে লিটনম্যাগ করতে গিয়ে নানা বিরূপ অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে তার শেষপর্যন্ত লেখক সত্তাটাই মারা যায়, তেমনি বই বিপণন করতে গিয়ে আমাদের লেখকদেরও মৃত্যু হতে পারে।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘ দেখুন, নাই নাই করে তো দেশে বই প্রকাশ কম হচ্ছে না, সারা বছর ও বইমেলা মিলিয়ে। দেশে পেশাদার সম্পাদনা প্রতিষ্ঠান দাঁড়িয়েছে কয়েকটি, তাহলে বই মার্কেটিংয়েও পেশাদার প্রতিষ্ঠান দাঁড়ানো তো খুবই সম্ভব, সময়ের দাবি। তাহলে ব্যক্তিভিত্তিক মার্কেটিংয়ের দরকার পড়ে না। বইয়ের মার্কেটিং তো পাঠক জরিপের (মার্কেট অ্যানালাইস) ওপর নির্ভর করে। পাঠকের পাঠরুচি, সংখ্যার ওপর নির্ভর করবে কোন বই কতটা ও কীভাবে প্রচার দরকার হবে। তাছাড়া এখন তো প্রচার মাধ্যমও বহু, লিখিত থেকে ভিয্যুয়াল, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তো আছেই। সেখানে, প্রশ্ন হলো লেখক কি আদৌও বই মার্কেটিং করতে পারেন?— এটা তো সেই পুরোনো বিদ্যা— বর্ষায় পানির প্রাচুর্য দেখে খুশি হয়ে কেউ যদি খালের মুখ বন্ধ করে পানি আটকে রাখতে চায়, তাহলে বর্ষা শেষেই শুকিয়ে মরবে। সেচ চলবে না। বড় নদীর সঙ্গে সংযোগ রক্ষা না করে তা সম্ভবও না। অনেক লেখক মানে করেন, তার পাঠক গোষ্ঠী তৈরি করবেন, আর তাকে ধরে রাখবেন। কিন্তু তাতে শেষে পাঠকেরই মৃত্যু হতে পারে। জরুরি হচ্ছে, পাঠককে পাঠের অবারিত উৎসের সঙ্গে যোগ করে দেওয়া। আপনার বই পড়ে যদি পাঠক আরেকটা বই পড়ার উৎসাহ পায়, নতুন লেখকের বইয়ের সন্ধানে উৎসাহিত হয়, তাহলেই মঙ্গল। তাহলেই সাহিত্যের সেচ কাজ চলতে পারে। এই শুভ বোধ সব লেখকের থাকা জরুরি।’’

বাংলাদেশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় লেখক ধরে বই কেনার প্রবণতা। সেক্ষেত্রে একজন লেখক পাঠকের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করবেন কীভাবে?—প্রশ্নের জবাবে অলাত বলেন, ‘‘দেশে যেহেতু নির্ভাবনায় বই কেনার মতো প্রকাশনী কম, তাই পাঠকেরা অনেক সময় লেখক ধরে বই কেনেন। সেই হিসেবে লেখক খানিকটা প্রচারে সহযোগিতা করতে পারে মাত্র। তাই লেখালেখি বা লেখক নিয়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ায় জরুরি, কিন্তু তার অবস্থা তো করুন এদেশে, যাও হয় তার অনেকটাই গোষ্ঠী চর্চার আদলে। অনেক সময় পাঠক লেখকের ফেসবুক প্রোফাইল ঘেটে, সার্চ করে দেখতে চান পছন্দের লেখকের নতুন বই আছে কি না। তাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখকের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে তথ্যগুলো থাকা দরকার। লেখক যদি তার ব্যক্তি ও লেখক সত্তাকে আলাদা করতে পারেন, মানে লেখকের নামে একটা পেজ থাকে, তাহলে সেখানে লেখার অংশ নিয়মিত তুলে দিতে পারেন। এমনটা পাওলো কোয়েল, স্টিফেন কিংস, নীল গ্যেইম্যান থেকে শুরু করে সালমান রুশদীরও আছে। কিন্তু এগুলো তো তার বা তাদের এজেন্ট করেন, তাতে তাদের ব্যক্তিগত লেখায় পড়ায় কোনো প্রভাব পড়ে না। আমাদের এখানে লেখকদের পাঠের জায়গায়টা পোক্ত হওয়া খুব জরুরি। সেটারই বড় অভাব। বহু লেখক তার লেখার জন্য পাঠকমানস গড়ে তোলার জন্য বহু বিদেশি সাহিত্য অনুবাদ করেছেন। এখন পাঠ ভিত্তিক সমাজ তৈরিতে লেখকদের থাকা দরকার। তাতে পাঠক সমাজ গড়ে উঠলে বইয়ের বিক্রিও বাড়বে।’’

ঢাকা/লিপি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর দরক র

এছাড়াও পড়ুন:

সিদ্দিককে মারধর ও শিল্পীদের বিরুদ্ধে মামলা, যা বললেন অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি

শোবিজের একঝাঁক একঝাঁক অভিনয়শিল্পীকে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি করা হয়েছে। প্রথমে ইরেশ যাকের, তারপর সুবর্ণা মুস্তাফা, অপু বিশ্বাস, নুসরাত ফারিয়া, নিপুণসহ ১৭ অভিনয়শিল্পীর নাম প্রকাশ্যে এসেছে। এরই মধ্যে গতকাল অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর ও লাঞ্ছিত করে রাজধানীর রমনা থানায় সোপর্দ করা হয়। এসব বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চর্চা চলছে। এ নিয়ে অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি আজাদ আবুল কালাম নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন।

সিদ্দিকের ওপর হামলা ও লাঞ্ছনা ঘটনা নিয়ে আজাদ আবুল কালাম গণমাধ্যমে বলেন, “সিদ্দিকের সঙ্গে যা ঘটেছে, এটা তো মব। এই মব ভায়োলেন্সকে তো ঠেকাচ্ছে না। কেন যেন মনে হচ্ছে, মব ভায়োলেন্সকে নীরবে বলা হচ্ছে, করে যাও। আমাদের কিছুই করার নেই। একজনের রাজনৈতিক চিন্তাচেতনা থাকতে পারে। অভিনেতা হিসেবে সিদ্দিক সবার কাছে পরিচিত। কিছু লোক তাকে এভাবে রাস্তায় ধরে মেরে দেবে!”

প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে আজাদ আবুল কালাম বলেন, “দলবদ্ধভাবে সিদ্দিককে শারীরিকভাবে আঘাত করেছে, আক্রমণ করেছে, গায়ে থেকে জামাকাপড় খুলে ফেলেছে, এরপর থানায় সোপর্দ করেছে। থানায় যদি সোপর্দ করতেই হয়, তাহলে প্রথমে কেন আইন হাতে তুলে নিল? তাকে হেনস্তা করে আইনের হাতে তুলে দেবে— এই মব জাস্টিস, মব ভায়োলেন্স সমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে। এটা তো একটা সময় নানা স্তরে হবে। এসব কর্মকাণ্ড সরকারকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে। সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে, যেখানে মব ভায়োলেন্স, সেখানে কঠোর হস্তে দমন করবে।”

ঢালাওভাবে অভিনয়শিল্পীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের বিষয়ে বিস্মিত আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, “ঢালাওভাবে হত্যা মামলা হচ্ছে! দেখে মনে হচ্ছে, সবাইকে মামলার মধ্যে ফেলতে হবে। ৩০০-৪০০ জন মামলার আসামি, এটা অবাস্তব একটা অবস্থা। একজন সুবর্ণা মুস্তাফার মতো শিল্পী রাস্তায় গিয়ে মানুষকে গুলি করবে? যে মানুষটি মামলা করেছেন, তিনি আন্দোলনের সময় আহত হয়েছেন, গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন; তিনি মামলা করেছিলেন অনেক লোকের নামে। মামলার নথিতে শিল্পীদের অনেকের নাম দেখলাম, তারা রাস্তায় নেমে মানুষকে গুলি করবে!”

সরকারিভাবে এ ধরনের মামলাকে প্রতিরোধ করা উচিত বলে মনে করেন আজাদ আবুল কালাম। তিনি বলেন, “সরকারিভাবে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারেরও উচিত হবে এ ধরনের মামলাকে প্রতিরোধ করা। নিরুৎসাহিত করা। যে ব্যক্তি মামলা করছেন, যদি প্রমাণিত হয়, শিল্পীরা কেউই গুলি করেনি, তখন তো এটা মিথ্যা মামলা হবে। এ রকম মিথ্যা মামলার ক্ষেত্রে, যে ব্যক্তি শিল্পীদের নামে মামলা করেছেন, তার কী শাস্তি হবে, তারও বিধান থাকতে হবে।”

“কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে, তা জানানোর একটা প্রক্রিয়া আছে। শুধু শিল্পী না, একজন খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধেও যদি কোনো অভিযোগ থাকে, তাহলে আপনি তার অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার আগপর্যন্ত তাকে অপরাধী বলতে পারেন না। তাকে সামাজিকভাবে হেয় করতে পারেন না। মামলা করে তাকে সামাজিকভাবে হেয় করা শুরু করলেন, এই প্রক্রিয়া যদি চলতে থাকে, এটাই যদি আমাদের মনস্তত্ত্ব হয়, তাহলে বিভক্তি আরো বাড়বে।” বলেন আবুল কালাম আজাদ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নাটোরে ছুরিকাঘাতে প্রাণ গেল একজনের
  • ফরিদপুর জেলা এনসিপি’র কমিটি গঠনের দায়িত্বে মহিলা আ’লীগ সভাপতির মেয়ে
  • ফরিদপুর জেলা এনসিপি’র কমিটি গঠনের দায়িত্বে মহিলা আ’লীগ সভাপতি মেয়ে
  • ৫০ পেরোনো নারীর খাদ্যাভ্যাস যেমন হতে হবে
  • যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ করতে কাজ করছে চীন
  • সেলফি’র ধাক্কায় গণস্বাস্থ্যের কর্মীর মৃত্যু, ৬ বাস আটক
  • পেহেলগামে হামলার পর প্রতিশোধের আশঙ্কায় দিন কাটছে ভারতীয় মুসলিমদের
  • প্রথম আলোর সাংবাদিককে বৈষম্যবিরোধী নেতার হুমকি, থানায় জিডি
  • গাজীপুরে জমি নিয়ে বিরোধে সংঘর্ষ, হাতুড়িপেটায় একজন নিহত
  • সিদ্দিককে মারধর ও শিল্পীদের বিরুদ্ধে মামলা, যা বললেন অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি