ভারতীয় বাংলা গানের শ্রোতাপ্রিয় সংগীতশিল্পী অঞ্জন দত্ত। অভিনয়, গান, পরিচালনা— সবক্ষেত্রে চর্চিত তিনি। তাকে নিয়ে ভক্তদের উৎসাহ অন্তহীন। মাঝে মাঝে চলচ্চিত্রের পাশাপাশি ব্যক্তিগত, সমাজ-রাষ্ট্র, রাজনীতি নিয়ে নিজের ভাবনার কথা বলে থাকেন।

কিছু দিন আগে কলকাতার একটি পডকাস্টে কথা বলেন অঞ্জন দত্ত। এ আলাপচারিতায় উঠে আসে আজকালের কলকাতার প্রসঙ্গ। এ শহরের মানুষ ‘রাজনৈতিকভাবে সঠিক’ থাকার চেষ্টা করছেন। কিন্তু এই ব্যাপারটির সঙ্গে ঠিকমতো মানিয়ে নিতে পারছেন না তিনি।

এ বিষয়ে অঞ্জন দত্ত বলেন, “পলিটিক্যালি কারেক্টনেসের একটা সমাজ তৈরি হয়েছে। তাতে নিজেকে অ্যাডাপ্ট করতে পারছি না। এই শহরটা, এই কলকাতা কখনই পলিটিক্যালি কারেক্ট ছিল না। সত্তর দশকে এখানে কত কী হয়েছে। এখানে একটা আন্দোলন হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছিল রবীন্দ্রনাথ শেষ কথা নয়।”

আরো পড়ুন:

সারেগামাপা’র বিজয়ী শ্রদ্ধা

সৃজিত-ঋতাভরী কেন আলোচনায়?

এরপর সঞ্চালক গায়ক বলেন, আগে কালো সাহেবের মেয়ে বলা গেলেও সেটা এখন বলা যাবে না। তাহলেই রেসিস্ট তকমা দেগে দেওয়া হবে, এই বিষয়ে আপনার মত কী? প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে অঞ্জন দত্ত বলেন, “এগুলোকে সামনে আনার ইচ্ছা আমার আছে। আমি আজ আমার স্ত্রীকে আমার সমান মনে করি। কেউ তার প্রেমিকাকে নিজের সমান মনে করেন। কিন্তু তাই বলে কি সে সচেতন হবে? নারী স্বাধীনতা তো কবে হয়ে গেছে। তারপরও এই ইকুয়ালিটি এখনো চাপিয়ে দেওয়া হবে কেন?”

খানিকটা ব্যাখ্যা করে অঞ্জন দত্ত বলেন, “মোটাকে ‘মোটা’ বললে বডি শেমিং। মোটাকে ‘মোটা’ বলব না, কালোকে ‘কালো’ বলব না, বোকাকে ‘বোকা’ বলব না তো কী বলব? ঠাট্টা-মজা যদি না করতে পারি একে অন্যকে নিয়ে তাহলে তো গম্ভীর হয়ে থাকতে হবে। তাসের দেশে থাকতে হবে। আনন্দ করে থাকব আমি, এত সচেতন হয়ে থাকব কেন? অফিসে সচেতন থাকব। সবসময় কেন?”

চিত্রনাট্য লেখার ক্ষেত্রেও সমস্যা হচ্ছে অঞ্জন দত্তের। এ তথ্য স্মরণ করে এই শিল্পী বলেন, “নিজেরই স্ক্রিপ্ট লিখতে অসুবিধা হয়। কাজের লোককে ‘ঝি’ বলা যাবে না। কেন ‘কাজের লোক’ বললে কি তার জাত উঠে যাচ্ছে, না নেমে যাচ্ছে, বুঝতে পারছি না। ‘বেশ্যা’ কেন বলতে পারছি না? সেক্স ওয়ার্কার কেন বলতে হবে এটা বুঝতে পারছি না। এটা করতে করতে আমরা আমাদের জীবনের মজা হারিয়ে ফেলছি। বাঁচার আনন্দ হারিয়ে ফেলছি। প্রতি মুহূর্তে সচেতন থাকছি। এটা আমাদের কোথাও পৌঁছে দেবে না।”

গানের পাশাপাশি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেও খ্যাতি কুড়িয়েছেন অঞ্জন দত্ত। ১৯৯৮ সালে ‘বড়দিন’ সিনেমা পরিচালনার মাধ্যমে চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে অভিষেক ঘটে তার। পরবর্তীতে আরো ২১টি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। ২০১১ সালে তার নির্মিত ‘রঞ্জনা আমি আর আসবোনা’ সিনেমাটি ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে।

তথ্যসূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস

ঢাকা/শান্ত

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র চলচ চ ত র

এছাড়াও পড়ুন:

সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের

সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বিশ্বের সব দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে তিনি এ আহ্বান জানান। বিশ্বব্যাপী ২ নভেম্বর দিবসটি পালিত হয়।

জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মহাসচিবের বিবৃতিতে বলা হয়, সত্যের সন্ধানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা ক্রমবর্ধমান বিপদের মুখে পড়ছেন। এর মধ্যে রয়েছে মৌখিক নিপীড়ন, আইনি হুমকি, শারীরিক আক্রমণ, কারাবাস ও নির্যাতন। এমনকি অনেককে জীবনও দিতে হচ্ছে।

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের এই আন্তর্জাতিক দিবসে আমরা ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছি। বিশ্বজুড়ে সাংবাদিক হত্যার প্রায় ১০টি ঘটনার মধ্যে ৯টির বিচারই এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।’

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘বর্তমানে যেকোনো সংঘাতের মধ্যে (ফিলিস্তিনের) গাজা সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ জায়গায় পরিণত হয়েছে। আমি আবারও এই ঘটনাগুলোর স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি।’

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যেকোনো জায়গায় বিচারহীনতা শুধু ভুক্তভোগী এবং তাঁদের পরিবারের প্রতিই অন্যায় নয়, বরং এটি সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ, আরও সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার শামিল এবং গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি।’ তিনি বলেন, সব সরকারের উচিত প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করা, প্রত্যেক অপরাধীর বিচার করা এবং সাংবাদিকেরা যাতে সর্বত্র স্বাধীনভাবে তাঁদের কাজ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করা।’

জাতিসংঘ মহাসচিব আরও বলেন, ‘নারী সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে অনলাইনে উদ্বেগজনকভাবে বাড়তে থাকা হয়রানিমূলক আচরণ অবশ্যই আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। এ ধরনের অপরাধের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাজা হয় না এবং এটি প্রায়শই বাস্তব জীবনে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যাঁরা সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের জন্য ডিজিটাল দুনিয়াকে নিরাপদ রাখতে হবে।’

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যখন সাংবাদিকদের কণ্ঠ রুদ্ধ হয়, তখন আমরা সবাই আমাদের কণ্ঠস্বর হারাই। আসুন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায়, জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবিতে এবং যাঁরা ক্ষমতার বিপরীতে সত্য তুলে ধরেন, তাঁরা যেন ভয় ছাড়াই তা করতে পারেন তা নিশ্চিত করতে আমরা সম্মিলিত অবস্থান নিই।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ