২৩টি কমিউনিটি ক্লিনিক সময়সূচি অনুযায়ী চলছে না। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সেবা দেওয়ার কথা থাকলেও সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা তা মানছেন না। বেশির ভাগ ক্লিনিক সকাল ১০টার পর খোলে, বন্ধ হয় দুপুর ১২টার মধ্যে। ক্লিনিকগুলোতে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও পরিদর্শকদের নিয়মিত পরিদর্শনের কথা থাকলেও তারা সে দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করেন না। এভাবে খেয়ালখুশি মতো চলছে গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবা। 
জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে চারঘাটের ছয়টি ইউনিয়নে পাঁচটি স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র এবং ২৩টি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়। কিন্তু জনবল সংকটসহ নানা অজুহাত দেখিয়ে স্বাস্থ্যসেবায় আশানুরূপ সাড়া জাগাতে পারেনি সরকারের এ উদ্যোগ। তবে সংশ্লিষ্টরা নিয়মিত ওষুধসহ কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার কথা বললেও উল্টো কথা বলছেন সেবাপ্রার্থীরা।
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র এবং কমিউনিটি ক্লিনিকে বিনামূল্যে অন্তঃসত্ত্বা, স্বাভাবিক প্রসব, জটিল প্রসব, গর্ভ-উত্তর সেবা, শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা, ভিটামিন এ ক্যাপসুল বিতরণ ও জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল প্রদানসহ ২৭টি সেবা দেওয়ার কথা থাকলেও বেশির ভাগ থেকে বঞ্চিত রোগীরা। ৩০ রকমের ওষুধ দেওয়ার কথা বলা হলেও জ্বর-সর্দির বাইরে ওষুধ মিলছে না।
শনিবার বেলা সাড়ে ১১টা। ভায়ালক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রে সেবা নিতে এসেছেন দিনমজুর জিয়াউল হক। পাঁচ দিন ধরে তার সর্দি-জ্বর। জিয়া জানান, গত বুধ ও বৃহস্পতিবারও এসেছিলেন। দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করে খোলা না পেয়ে ফিরে গেছেন। শনিবারও সকাল ১০টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে চলে গেছেন। ওষুধ ও সেবা না পাওয়ার একই অভিযোগের কথা জানালেন আব্দুল কুদ্দুস, মর্জিনা বেওয়াসহ অপেক্ষারত আট-দশজন। 
তাদের অভিযোগ, সদরে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার আলম হোসেনের ক্লিনিক আছে। সেখানে সময় দেওয়ার কারণে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অনিয়মিত। 
আলম হোসেনের দাবি, কয়েক দিন ছুটিতে ছিলেন। তাই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাননি। আয়া, ফার্মাসিস্ট, পিয়নসহ প্রায় সব পদ শূন্য থাকায় স্বাস্থ্যকেন্দ্র ঠিকমতো খোলা থাকছে না। 
একই চিত্র দেখা গেছে ভাটপাড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রে। দুপুর ১২টার দিকে অপেক্ষারত তসলিমা বেগম বলেন, রোগীদের ৩০ ধরনের ওষুধ সরবরাহের কথা। রোগ যাই হোক, ডাক্তার দুটি প্যারাসিটামল ছাড়া কিছুই দেন না। আজ সেটাও পেলাম না।
এ কেন্দ্রের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার হাবিবুর রহমান বলেন, চা খাওয়ার জন্য বাইরে গিয়েছিলাম। এখানে জনবল কম। প্রয়োজনে বাইরে গেলে নিরাপত্তার কারণে হাসপাতাল বন্ধ রাখতে হয়। 
একই অবস্থা কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতেও। শনিবার বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে বাটিকামারী কমিউনিটি ক্লিনিকে তালা ঝুলতে দেখা গেছে। স্থানীয় বাসিন্দা মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘ক্লিনিক কখন খোলা থাকে, কখন বন্ধ হয়– কেউ জানে না। ভাগ্য ভালো থাকলে মাঝেমধ্যে খোলা পাওয়া যায়।’
এ ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) রবিউল ইসলাম বলেন, স্বাস্থ্য সহকারী আসেননি। আমি একা ছিলাম। একটা কাজে বাজারে থাকার কারণে কিছু সময় বন্ধ রাখতে হয়েছিল। 
কেজিপুর কমিউনিটি ক্লিনিকে শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় গিয়ে বন্ধ পাওয়া গেছে। অফিসের কাজে বাইরে ছিলেন জানিয়েছেন সেখানকার সিএইচসিপি জাকিয়া নাসরিন। 
ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র দেখভালের দায়িত্ব থাকা উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ফয়সাল ফেরদৌস বলেন, জনবল সংকটই আমাদের মূল সমস্যা। তার 
পরও যে অভিযোগগুলো উঠেছে খোঁজখবর নিয়ে তা  সমাধান করা হবে। 
একই কথা বলেন সদ্য যোগদান করা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.

তৌফিক রেজা। তাঁর ভাষ্য, তিনি আসার পর কমিউনিটি ক্লিনিক পরিদর্শন করেছেন। পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ আছে। তবে বন্ধ থাকার বিষয়টি খতিয়ে দেখে সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ব স থ য ও পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুনজর কখন পড়বে

চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নে দ্বিতল ভবনবিশিষ্ট একটি মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্রে ওষুধ নেই, চিকিৎসক নেই, বিদ্যুৎ–সংযোগ নেই। ফলে তেমন একটা রোগীও নেই। এই ‘নাই নাই’ হাসপাতালটির নাম মাস্টারদা সূর্য সেন মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্র। এভাবে কি একটা হাসপাতাল চলতে পারে? প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে যাওয়ার এমন নমুনা আমাদের হতাশ করে। দেশজুড়ে এ রকম আরও চিত্র আমরা দেখতে পাই, যা আমাদের স্বাস্থ্য খাত নিয়ে ইতিবাচক কোনো বার্তা দেয় না।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এবং ২০০৩ সালে চালু হওয়া এই ১০ শয্যার হাসপাতালটির মূল সমস্যা জনবলসংকট। ১৬টি পদের ১টিতেও স্থায়ী জনবল পদায়ন করা হয়নি। অন্য হাসপাতাল থেকে প্রেষণে এসে মাত্র তিনজন কর্মচারী (একজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, একজন মিডওয়াইফ ও একজন আয়া) সপ্তাহে কয়েক দিন করে দায়িত্ব পালন করেন। এটি একটি জরুরি প্রসূতিসেবাকেন্দ্র, যা ২৪ ঘণ্টা চালু থাকার কথা। কিন্তু বিদ্যুৎ নেই, ডাক্তার নেই এবং প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে এর কার্যক্রম এখন প্রায় স্থবির।

হাসপাতালের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় প্রায় তিন মাস ধরে বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন। ফলে পানীয় জলের ব্যবস্থাও নেই। বিনা মূল্যের ওষুধ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে প্রায় ছয় মাস ধরে। এ পরিস্থিতিতে একজন রোগী কীভাবে এখানে স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসবেন? যেখানে হাসপাতালের বাইরের সাইনবোর্ডে জরুরি প্রসূতিসেবার জন্য ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকার কথা লেখা, সেখানে মূল ফটকে তালা ঝোলানো। এটি জনগণের সঙ্গে একধরনের প্রতারণা। হাসপাতালটি চালু না থাকায় মা ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবার জন্য স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতাল বা চট্টগ্রাম শহরে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। এতে সময় ও অর্থ—দুটোরই অপচয় তো বটেই, চরম ভোগান্তিরও শিকার হতে হয় মানুষকে।

যে মিডওয়াইফরা এখানে কাজ করছেন, তাঁরা জানান, এখন মাসে মাত্র চার-পাঁচজন প্রসূতি সেবা নিতে আসেন, যেখানে আগে শতাধিক প্রসূতি সেবা পেতেন। নিরাপত্তা প্রহরীরা দুই বছর ধরে বেতন পাচ্ছেন না। তবু নিয়মিত বেতন পাওয়ার আশায় তাঁরা এখনো কাজ করে যাচ্ছেন। এ অসহনীয় দুর্ভোগের কারণ হলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চরম উদাসীনতা। উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জানান, তাঁরা বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জনবলসংকটের কথা জানিয়েছেন, কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি।

একটি মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্রের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু রাখতে কেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার ধরনা দিতে হবে? জনবল নিয়োগ, কর্মচারীদের বকেয়া বেতন পরিশোধ, বিদ্যুতের ব্যবস্থা কার্যকর করা—সব ধরনের সংকট দূর করতে হাসপাতালটির দিকে আন্তরিক মনোযোগ দেওয়া হবে, সেটিই আমাদের প্রত্যাশা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জনবল নিয়োগ দিচ্ছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী, পদ ৪৩০
  • হাতে ভোট গণনাসহ ছাত্রদলের ৬ দাবি, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত
  • ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুনজর কখন পড়বে
  • যে হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ, বিদ্যুৎ–সংযোগ কিছুই নেই