৫ দাবিতে সিকৃবির ভেট শিক্ষার্থীদের ক্লাস বর্জন
Published: 22nd, January 2025 GMT
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (সিকৃবি) ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থীরা ইন্টার্নশিপ ভাতা বৃদ্ধিসহ পাঁচ দফা দাবিতে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন। দাবি আদায়ে কোন কার্যকর পদক্ষেপ না পেলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তারা।
এর আগে, মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) সকালে একই দাবিতে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে তারা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন।
বুধবার (২১ জানুয়ারি) সকাল ১০টা থেকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের সামনে অবস্থান করে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন।
এ সময় তারা ‘ইউজিসি কে খবর দে, বৈষম্যের কবর দে’, ‘অন্যরা পায় ২০ হাজার, আমরা কেন ৯ হাজার’, ‘অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘বৈষম্য যেখানে, লড়াই হবে সেখানে’ প্রভৃতি স্লোগান দেন।
শিক্ষার্থীদের দাবি, তাদের ৫ বছরের একাডেমিক সেশনের মধ্যে পুরো ১ বছর ইন্টার্নশিপ করতে হয়। ইন্টার্নশিপ চলাকালে মাসিক মাত্র ৯ হাজার টাকা ভাতা দেওয়া। যেখানে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা করে ভাতা দিয়ে থাকে। সমসাময়িক অনেক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি শিক্ষার্থীদের তুলনায় সিকৃবির শিক্ষার্থীরা অনেক সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
ভেটেরিনারি চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো.
এ বিষয়ে ভেটেরিনারি, অ্যানিম্যাল ও বায়োমেডিকেল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. ছিদ্দিকুল ইসলাম বলেন, “শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির পক্ষে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একমত। তাদের যৌক্তিক দাবি নিয়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইউজিসির সঙ্গে আলোচনা করবো। আলোচনার জন্য আমাদের সময়ের প্রয়োজন।”
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, ইন্টার্নশিপ ভাতা ২০ হাজার টাকায় করতে হবে; ইন্টার্নশিপ সময়কালে প্রতি কার্যদিবসের যাতায়াত ও অন্যান্য খরচ বাবদ দৈনিক ন্যূনতম ৩০০ টাকা ভাতা দিতে হবে; কমপক্ষে চার মাসের ইন্টার্নশিপের জন্য সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ প্রদান করতে হবে; ঢাকায় অবস্থানের সময় ২ মাসের মধ্যে সীমিত রাখতে হবে।
তাদের অন্য দাবিগুলো হলো- বর্তমান পরিস্থিতির কারণে এক্সটার্নশিপের জন্য ভারতের বিকল্প হিসেবে অন্যান্য দেশে সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে; ইন্টার্নশিপের সম্মানি প্রতিমাসে নিয়মিত পরিশোধ করতে হবে।
ঢাকা/আইনুল/মেহেদী
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
গণঅভ্যুত্থানে শহীদ রিজভীর ভাইকে কুপিয়ে জখম, গ্রেপ্তার ৩
নোয়াখালী জেলায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ মাহমুদুল হাসান রিজভীর ছোট ভাই স্কুলছাত্র শাহরিয়ার হাসান রিমনকে (১৬) এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে আহতের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। রবিবার (২৮ এপ্রিল) রাতে সুধারাম মডেল থানায় রিমনের মা বাদী হয়ে দায়ের করেন। পুলিশ এ ঘটনায় তিন কিশোরকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম ও ছবি প্রকাশ করেনি।
এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে রিমনের স্কুলের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেছে।
আহত শাহরিয়ার হাসান রিমন জেলা শহরের বসুন্ধরা কলোনি বাসিন্দা মো. জামাল উদ্দিন ও ফরিদা ইয়াছমিন দম্পত্তির ছেলে। সে স্থানীয় হরিনারায়ণপুর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
আরো পড়ুন:
কুমিল্লায় বজ্রপাতে ৪ জনের মৃত্যু
ধর্ষণের অভিযোগে গণপিটুনি, কারাগারে ইমামের মৃত্যু
বিদ্যালয় থেকে ফেরার পথে রোববার (২৮ এপ্রিল) বিকেলে কিশোর গ্যাং সদস্যরা শাহরিয়ার হাসান রিমনকে ধারালো ছুরি এলোপাতাড়ি আঘাত করে। এতে সে গুরুতর আহত হয়। পরে স্থানীয়রা তাকে নোয়াখালী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। তবে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়।
এ ঘটনায় রাতে আহত রিমনের মা ফরিদা ইয়াছমিন ২১ জনকে এজহারভুক্ত ও ১০-১২ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করেন। পুলিশ রাতেই অভিযান পরিচালনা করে তিন কিশোরকে গ্রেপ্তার করে।
রিমনের মা ফরিদা ইয়াছমিন জানান, রিমনের পিঠে, মাথায়সহ মোট ছয়টি ছুরির আঘাত করা হয়। তার অপারেশন ঢাকা মেডিকেল কলেজে করানো হয়েছে। বর্তমানে সেখানে চিকিৎসা চলছে। তার পিঠের আঘাতগুলো ফুসফুস পর্যন্ত চলে গেছে বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন।
তিনি আরো জানান, হামলাকারীরা ভেবেছিল রিমন মারা গেছে। যখন জানতে পারে সে বেঁচে আছে, তখন তারা ফের হামলা করতে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল পর্যন্ত যায়। রিমনের অপরাধ দুই দল কিশোরের মাঝে চলমান দ্বন্দ্ব মিমাংসা করে দেওয়া। একপক্ষ মানলেও অপরপক্ষ মিমাংসার বিষয়টি মন থেকে মানতে পারেনি। তারাই আমার ছেলের উপর হামলা করেছে।
রিমনের বাবা জামাল উদ্দিন বলেন, রিমনকে ধারালো ছুরি দিয়ে মোট ছয়টি আঘাত করা হয়েছে। নোয়াখালী জেনারেল হাসপতালে নেওয়া হলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তিনি রিমনের সুস্থতার জন্য দোয়া চেয়েছেন।
ঢাকায় রিমনের সঙ্গে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা নাহিদা সুলতানা ইতু জানান, রাতেই রিমনের সিটিস্ক্যান করা হয়েছে। এরপর তার অপারেশন হয়েছে। চিকিৎসকরা বলেছেন, রিমনের পিঠের আঘাতগুলো গুরুতর। ছুরির আঘাত প্রায় ফুসফুস পর্যন্ত চলে এসেছে। তার সুস্থ হতে অনেক সময় লাগবে।
রবিবার (২৮ এপ্রিল) বিকেলে স্কুল থেকে বাসায় ফেরার পথে জেলা শহরের বার্লিংটন মোড়ে একদল কিশোর রিমনকে ছুরিকাঘাত করে গুরুতর আহত করে।
স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, নোয়াখালী পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের বার্লিংটন এলাকাটি কিশোর গ্যাংয়ের আখড়া। এই এলাকা দিয়ে প্রতিদিন সরকারি বালিকা বিদ্যালয়, হরিনারায়ণপুর স্কুল, সরকারি মহিলা কলেজসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীরা যাতায়াত করে। প্রতিদিন তাদের উত্ত্যক্ত করা হয়। কিন্তু ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করে না। প্রশাসনেরও নজরদারি নেই।
এদিকে, রিমনকে ছুরিকাঘাত করে আহত করার প্রতিবাদে তার স্কুলের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে স্কুলের সামনে প্রধান সড়কে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে রিমনের স্কুলের শিক্ষার্থী ছাড়াও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মী, স্কুলের শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় বক্তারা অবিলম্বে রিমনের উপর যারা হামলা করেছেন, তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) আবু তৈয়ব মো. আরিফ হোসেন জানান, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলা দায়েরের পর সিসিটিভি ফুটেজ ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এজহারভুক্ত একজনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনায় আমাদের আরো অনুসন্ধান চলছে। সিসি ক্যামেরা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। অপরাধীদের খুব দ্রুতই আইনের আওতায় আনতে পারবেন বলে আশা করেন তিনি।
ঢাকা/সুজন/বকুল