ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ গ্রহণ করছিলেন, ওয়াশিংটন ডিসিতে তখন তাপমাত্রা তলানিতে। হিমাঙ্কের নিচের তাপমাত্রার কারণে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ক্যাপিটল ভবনের অভ্যন্তরে স্থানান্তরিত হয়েছিল। উদ্বোধনের পূর্ববর্তী মিডিয়া ভাষ্যে আবহাওয়া পরিণত হয়েছিল প্রধান কেন্দ্রবিন্দুতে। রয়টার্সের প্রতিবেদনমতে, এটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রে গত কয়েক দশকের মধ্যে ‘সবচেয়ে শীতল’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। 

আমি বেলা ১১টায় চারপাশ বোঝার চেষ্টা করছিলাম। এর মানে, ট্রাম্প মূল মঞ্চে আসার আগে আমার হাতে পুরো এক ঘণ্টা সময় ছিল। মনে হচ্ছিল, মঙ্গল গ্রহে বাইরের হিমশীতল আবহাওয়া জীবনের জন্য ভালো কিছু কিনা। মজার ব্যাপার, একটু পরই ট্রাম্প তাঁর উদ্বোধনী বক্তৃতায় বললেন, ‘আর আমরা নক্ষত্রের মধ্যে আমাদের প্রকাশ্য গন্তব্য অনুসরণ করব, মার্কিন মহাকাশচারীদের জন্য মঙ্গল গ্রহে নক্ষত্র ও জুপিটারের ওপর ডোরা কাটা দাগ দিয়ে দেব।’ 

নিশ্চিত বলা যায়, ট্রাম্প সোমবার শুধু আঞ্চলিক বিজয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা নয়। তিনি মেক্সিকো উপসাগরকে ‘আমেরিকা উপসাগর’ হিসেবে পুনঃনামকরণ করার পাশাপাশি পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য তাঁর দৃঢ় সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করেছেন। কারণ ‘মার্কিন জাহাজগুলোর ওপর মারাত্মকভাবে অতিরিক্ত চার্জ করা হচ্ছে। আর কোনো রকম বাছ-বিচার করে ন্যায্য আচরণ করা হচ্ছে না।’

মঙ্গল গ্রহের ব্যাপারে মন্তব্য করলে দর্শকদের মধ্যে একজনকে বেশ উচ্ছ্বসিত হাসিতে দেখা গেছে। তিনি হলেন টেসলার সিইও ধনকুবের ইলন মাস্ক, যিনি এ ধরনের ধারণার জন্য পরিচিত। তিনি মনে করেন, ‘পরবর্তী সময়ে সত্যিই বড় জিনিসটি হলো মঙ্গলে স্বনির্ভর শহর গড়ে তোলা এবং সেখানে প্রাণী ও অন্যান্য জীব নিয়ে আসা।’ রোটান্ডায় জায়গা করে নেওয়া পৃথিবীর সবচেয়ে অভিজাত প্রতিনিধিদের মধ্যে একজন হলেন ইলন মাস্ক। তা ছাড়া মাইক টাইসনের মতো অতি ধনী কিংবা দরিদ্র নন এমন ব্যক্তির বিপরীতে উপস্থিত ছিলেন মেটার সিইও মার্ক জাকারবার্গ, অ্যামাজনের জেফ বেজোস ও টিকটকের সিইও শো জি চিউ।

উদ্বোধনের আগের দিন আলজাজিরা উল্লেখ করেছে, অ্যাপলের সিইও টিম কুক অনুষ্ঠানে ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান দিয়েছেন। ‘গুগল, অ্যামাজন, মাইক্রোসফট ও মেটা বলেছে, ওপেনএআইর সিইও স্যাম অল্টম্যানসহ তারা ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দান করবে। ইতোমধ্যে তারা ১  মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়েছে।’ ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত ট্রাম্পের উদ্বোধন অনুষ্ঠানের তহবিল রেকর্ড ১৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। সে যাই হোক, প্লুটোক্রেসি বা ধনিকতন্ত্রের ওপর অত্যধিক চার্জ করার চেয়ে ‘আমেরিকাকে আবার মহান করুন’ প্রচেষ্টায় এর চেয়ে ভালো উপায় আর কী!

ট্রাম্প তাঁর বক্তৃতার শুরুতেই ঘোষণা করেন, ‘আমেরিকার স্বর্ণযুগ এখনই শুরু হচ্ছে। আমেরিকাতে জাতীয় ঐক্য ফিরে আসছে’– এমন মন্তব্যসহ আরও অনেক ভৌতিক কথাবার্তা তুলে ধরেছেন তিনি। এতে মনে করার কিছু নেই যে, গুটিকয়েক অত্যধিক ধনী লোকের অত্যাচার ঠিক একই সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। সৌভাগ্যবশত তিনি যা বলেন তা-ই যে এই গ্রহে ঘটবে– এমন নিশ্চয়তা নেই। যদিও ট্রাম্প বলেছেন, তাঁর দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে ‘পুরো বিশ্বের ওপর সূর্যের আলো পড়ছে’।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঈশ্বরের পক্ষ থেকে ক্রমাগত আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রে গির্জা ও রাষ্ট্রের স্পষ্ট বিচ্ছেদের ব্যাপারেও সূক্ষ্ম উপহাস সৃষ্টি করেছিল। আর ট্রাম্প পেনসিলভানিয়া রাজ্যে জুলাইয়ের একটি হত্যাচেষ্টা থেকে বেঁচে থাকার কারণ তুলে ধরতে গিয়ে বলেছেন, ‘আমি আবারও আমেরিকাকে মহান করে গড়ে তোলার জন্য ঈশ্বরের দ্বারা রক্ষা পেয়েছি।’

উল্লেখযোগ্য, ট্রাম্প তাঁর অভিষেকের মধ্য দিয়ে মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র দিবসকে ঢেকে ফেলার সুযোগ নিয়েছিলেন, যা প্রতিবছর জানুয়ারির তৃতীয় সোমবার উদযাপন হয়। দিনটির প্রতিশ্রুতি হলো, ‘আমরা তাঁর স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করব।’ সেটা সম্ভবত তখনই সহজ হবে যদি ট্রাম্প নিজে আপাদমস্তক একজন বর্ণবাদী না হন। 

প্রকৃতপক্ষে ট্রাম্পের ধারণা, ‘আমাদের শক্তি সব ধরনের যুদ্ধ বন্ধ করবে এবং এমন একটি বিশ্বে ঐক্যের একটি নতুন চেতনা নিয়ে আসবে, যে বিশ্ব বর্তমানে রাগান্বিত, হিংসাত্মক ও সম্পূর্ণরূপে অনাকাঙ্ক্ষিত।’ এই ধারণা যুক্তরাষ্ট্রকে ‘বিশ্বে সহিংসতার সর্বশ্রেষ্ঠ পরিচালনকারী’ হিসেবে কারও কারও যে মূল্যায়ন, তার সঙ্গে স্বতন্ত্রভাবে বিরোধপূর্ণ। 

এর কোনোটির মধ্য দিয়ে এটি বোঝানো হয় না যে, ডেমোক্র্যাটরা বৈশ্বিক সহিংসতা দূরীকরণ বা প্লুটোক্রেসি বা সম্পদশালীদের সরকার সমুন্নত রাখা, নিষ্ঠুর অসমতাকে চিরস্থায়ী করা, আশ্রয়প্রার্থীদের আতঙ্কগ্রস্ত করা ইত্যাদি ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা পালন করেনি। কিন্তু সোমবারের উদ্বোধনী প্রহেলিকা ছিল নিহিলিজম তথা সবকিছু উড়িয়ে দেওয়ার চর্চা। আর যখন আমি আমার জগতে ফিরে আসি এবং ট্রাম্প আবার ডিস্টোপিয়া বা কল্পনার জগৎকে দুর্দান্ত করে তুলেই চলেছেন, তখন আমার মনে হলো, কোনো এক দিন আমি ‘আমেরিকার স্বর্ণযুগ’-এর মধ্য দিয়ে মঙ্গল গ্রহও অতিক্রম করব।

বেলেন ফার্নান্দেজ: আলজাজিরার কলামিস্ট; আলজাজিরা থেকে সংক্ষেপিত ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন য র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা

সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।

উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।

আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’

তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’

আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’

ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।

ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’

পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।

গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।

২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।

তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।

জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।

দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ব্যালটে মামদানি, অদৃশ্য ‘প্রার্থী’ ট্রাম্প
  • দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা
  • ‘সাংস্কৃতিক জাগরণেই মুক্তি’
  • যদি ঠিক পথে থাকো, সময় তোমার পক্ষে কাজ করবে: এফ আর খান
  • বিবাহবিচ্ছেদ ও খোরপোষ নিয়ে ক্ষুদ্ধ মাহি
  • ফতুল্লায় দুই ট্রাকের মাঝে পড়ে যুবকের মৃত্যু
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে ২০ মামলার আসামি নিহত, গুলিবিদ্ধ ৩
  • নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন
  • তানজানিয়ার বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফের বিজয়ী সামিয়া
  • আমার স্ত্রী খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করছেন না: জেডি ভ্যান্স