রংপুর রাইডার্সের জয়ের ট্রেন ছুটছিল এক্সপ্রেস গতিতে। একের পর এক জয় তুলে প্রতিপক্ষকে এলোমেলো করে দিচ্ছিল তারা। তাদের সেই ট্রেন এসে থামল রাজশাহীর গন্তব্যে।

দুর্বার রাজশাহী বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) চট্টগ্রামে রংপুরকে ২৪ রানে হারিয়েছে। নিজেদের হারের ব্যাখ্যায় রংপুর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছে, ‘‘ঘিরে লিয়েছে মামুর ব্যাটারা- পচা শামুকে কেটেছে পা!’’ রাজশাহীও কম না, ‘‘রং মুছে গেছে দেয়ালের। দুর্বার যখন ফর্মে, প্রতিপক্ষ তখন অন্ধকারে!’’ কথার লড়াই জমেছে ম‌্যাচের পর।

রাজশাহী ম্যাচটাকে কিভাবে জমালো সেটাই প্রশ্নের। মাঠের বাইরে নানা ইস্যুতে দুর্বার রাজশাহী প্রবল সমালোচিত। রংপুর সুখী পরিবার। তাদের হারানোর কাজটা চাট্টেখানি কথা ছিল না। নিজের দ্বিতীয় ম‌্যাচে অধিনায়কত্ব করতে নামা তাসকিন আহমেদ জানালেন সাফল‌্যের রসদ—

আরো পড়ুন:

রংপুরের ‘ওয়েক আপ কল’

‘পদ্মার জলে’ ডুবলো রংপুর

‘‘সহজ ছিল না। কারণ, শেষ ম্যাচটা আমরা বাজেভাবে হেরেছিলাম। সবাই সবাইকে সাপোর্ট করেছে দারুণভাবে। চেষ্টা করেছে প্রক্রিয়ায় থেকে যদি জেতা সম্ভব হয়। ওভারঅল ব্যাটিং-বোলিং দারুণ একটা পারফরম্যান্স ছিল। এটা টিম গেম। এরকম দলকে হারাতে দুইটি বিভাগ যদি পারফর্ম না করে তাহলে কঠিন হয়ে যায়। তুলনা করলে ওদের থেকে আমাদের দলটা দুর্বল। কিন্তু দলগতভাবে আমরা ভালো ক্রিকেট খেলেছি।’’

১০ ম্যাচে চার জয়ে ৮ পয়েন্ট রাজশাহীর। আজকের ম্যাচটি তাদের ছিল ডু অর ডাই। হারলে প্লে’অফের আশা শেষ এরকম। জয়ে বেঁচে আছে সুযোগ। পরের দুই ম্যাচ একই ধারাবাহিকতায় জিতে সেরা চারে যেতে চান তাসকিন—
‘‘আমাদের আজকের মাচ নিডেড উইন গেম ছিল। আলহামদুলিল্লাহ আমরা জিতে টুর্নামেন্টে এখনও টিকে আছি। এখনও দুইটি ম্যাচ আছে আমাদের। ভালোভাবে শেষ করা…আমাদের তো লক্ষ্য প্লে’অফ খেলা। সামনের দুইটি ম্যাচ ভালো ক্রিকেট খেলা এবং দলকে নিয়ে প্লে অফে যাওয়া।’’

২০ উইকেট নিয়ে তাসকিন আগেই ছিলেন শীর্ষে। আজ আরও পকেটে পুরেছেন ২ উইকেট।

বিপিএলের দ্বিতীয় আসর থেকে নিয়মিত অংশগ্রহণ করা তাসকিন এবার ২০ উইকেট নিয়ে দ্বিতীয়বার এক আসরে ২০ উইকেট ছোঁয়ার রেকর্ড স্পর্শ করেছেন। এর আগে তাসকিন ২০১৯ সালে ২২ উইকেট পেয়েছিলেন সিলেট সিক্সার্সের হয়ে। এছাড়া রুবেল হোসেন ও সাকিব দুইবার করে ২০ উইকেটের বেশি পেয়েছেন।

তাসকিনের সামনে এবার বড় কিছুর অপেক্ষা। বিপিএলের এক আসরে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হতে হলে আর ২ উইকেট পেলেই হবে তার। সাকিব আল হাসানের ২৩ উইকেটকে ছাড়িয়ে যেতে তাসকিনের প্রয়োজন ২ উইকেট। সেদিকে অবশ‌্য তার মনোযোগ নেই, ‘‘একই প্রক্রিয়ায় আছি (বোলিং পরিকল্পনা)। এটা আসলে একটা অভ্যাস। মাঠ ও মাঠের বাইরে একই প্রক্রিয়ায় থাকার চেষ্টা করেছি। ভালো খারাপ মিলিয়ে চলছে। মূল বিষয়টি হলো, ভালো বোলিং করতে পারাটা। উইকেট কখনো বেশি হবে কখনো কম। কিন্তু প্রক্রিয়া অনুসরণ করাটাই গুরুত্বপূর্ণ।’’

চট্টগ্রাম/ইয়াসিন/আমিনুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব প এল

এছাড়াও পড়ুন:

গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও

রংপুরের গংগাচড়ায় ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ঘিরে সহিংসতার শিকার হিন্দু পরিবারের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। তবে ঘটনার তিন দিন পরেও এলাকায় ফেরেনি অনেক পরিবার। আতঙ্কে এখনো আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে অনেকে।

গত ২৭ জুলাই রাতে ওই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলার আগে এলাকায় মাইকিং করে লোকজন জড়ো করা হয়।

পুলিশ, প্রশাসন ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বলছেন, যারা হামলা করেছেন, তাদের মধ্যে অনেকে ছিলেন ‘বহিরাগত’। পাশের নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলা থেকে লোকজন এসে হামলা চালিয়ে চলে যায়। হামলার সময় ২২টি ঘরবাড়ি তছনছ ও লুটপাট করা হয়। 

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এলাকায় অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প বসানো হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে পুলিশ টহল। প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ঢেউটিন, কাঠ, চাল-ডাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করেছে এবং ঘরবাড়ি মেরামতের কাজও শুরু হয়েছে। তবু আতঙ্কিত পরিবারগুলো। 

ক্ষতিগ্রস্তদের একজন অশ্বিনী চন্দ্র মোহান্ত বলেন, “সেদিনের ঘটনা ছিল এক ভয়াবহ। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে ধর্ম অবমাননাকারী কিশোরকে থানা হেফাজতে দিয়েছি। কিন্তু তারপরও ঘরবাড়ি রক্ষা হয়নি। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি এবং কিছু মুরুব্বি আমাদেরকে অভয় দিয়েছিলেন, কিন্তু রক্ষা হয়নি।” 

তিনি আরো বলেন, “আমরা নিজেরাই অভিযুক্ত কিশোরকে থানায় সোপর্দ করেছি। তারপরও মিছিল নিয়ে এসে দুই দফায় আমাদের ২০ থেকে ২৫টি ঘরবাড়ি তছনছ করে দিয়ে লুটপাট করেছে তারা। এদের মধ্যে অধিকাংশ লোকেই অপরিচিত।” 

আরেক ভুক্তভোগী দেবেন্দ্র চন্দ্র বর্মন জানান, “প্রথমে অল্পসংখ্যক কম বয়সী কিছু ছেলে আসে। পরে হাজারো লোকজন এসে আমাদের বাড়িঘরে তাণ্ডব চালায়। অনেকেই এখনো আত্মীয়দের বাড়িতে। আমরা চরম আতঙ্কে আছি।”

রবীন্দ্র চন্দ্রের স্ত্রী রুহিলা রানী বলেন, “ছোট ছেলেটা যদি ভুল করে থাকে, আমরা তাকে থানায় দিয়েছি। কিন্তু তারপরও এমন ধ্বংসযজ্ঞ কেন? আমাদের গরু, সোনা-টাকা সব লুটে নিয়েছে। শুধু চাল-ডাল আর টিনে কি জীবন চলে?”

গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ও সদস্য সচিব আনিসুর রহমান লাকুসহ একটি প্রতিনিধি দল। তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে শাড়ি ও লুঙ্গি বিতরণ করেন এবং পাশে থাকার আশ্বাস দেন।

গংগাচড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আল এমরান বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে কিশোরটিকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনা হয় এবং পরে আদালতের মাধ্যমে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তারপরও পুলিশ প্রশাসন সর্বাত্মক নিরাপত্তায় নিয়োজিত।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহামুদ হাসান মৃধা বলেন, “অপরাধীদের ধরতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হচ্ছে সহায়তা। পুলিশ ও সেনাবাহিনী পুরো এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে।” 

উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের তথ্যমতে, হামলায় ১৫টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যাতে ২২টি পরিবার বসবাস করতেন। ঘর মেরামতের পর কিছু পরিবার ফিরলেও অভিযুক্ত কিশোর ও তার চাচার পরিবারের কেউ এখনো ফিরে আসেনি।

ঢাকা/আমিরুল/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘কাঁচামিঠে ফলের ছড়া’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন
  • ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্পের
  • মেসি বনাম ইয়ামাল: ফিনালিসিমার সময়-সূচি ঘোষণা
  • গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও