বান্দরবানের থানচি উপজেলার সাঙ্গু নদী থেকে অবাধে চলছে বালু উত্তোলন। অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে প্রতিদিন ভোর থেকে রাত পর্যন্ত প্রভাবশালী একটি মহল বালু উত্তোলন করছে। সরকারি ইজারা ছাড়াই প্রকৃতি ও পরিবেশের ক্ষতি করে এ কাজ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। তাদের আশঙ্কা, বালু উত্তোলন বন্ধ করা না হলে পাড় ভেঙে ফসলি জমি নদীতে বিলীন হতে পারে। 

এলাকাবাসীর অভিযোগ, স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে থানচি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মালিরাম ত্রিপুরার নেতৃত্বে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা উচহাই মার্মা, থানচি উপজেলার যুবলীগের সভাপতি ও বলিপাড়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য উচনুং মার্মা, ক্রাপ্রুঅং মার্মা ও মো.

ইসলামসহ আরো কয়েকজন সাঙ্গু নদী থেকে বালু উত্তোলন করছেন। তারা থানচি আম বাগান পাড়া, থানচি বাজার ঘাট, থানচি হাসপাতালের বিপরীতে সাঙ্গু নদীর ঘাট, জিনিঅং পাড়ার ঘাট, ডাকছৈ পাড়া ঘাটসহ বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন। 

বালু উত্তোলনের কাজে নিয়োজিত কয়েকজন শ্রমিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মাসখানেক ধরে প্রতিদিন ড্রেজার মেশিন দিয়ে সাঙ্গু নদী থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।

আরো পড়ুন:

নবজাতককে নদীতে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ

বছিলা নদীপাড়ে ওয়াকওয়ে অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন

স্থানীয় বাসিন্দা প্রুথোয়াইচিং মার্মা বলেন, “চক্রটি দিনরাত অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। এলাকার মানুষজন ভয়ে কেউ তাদের বাধা দেয় না। বালু উত্তোলনের কারণে সাঙ্গু নদীর পাড় এখন ঠিক থাকলেও পরে তা ভাঙতে পারে। ভবিষ্যতে চর ভেঙে গেলে বাদাম চাষিরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বেন।”

অপর বাসিন্দা মংমে মার্মা বলেন, “আওয়ামী লীগের নেতারা মিলে গত বছরও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করেছেন। এ বছর কয়েকটা স্পট থেকে তারা বালু উত্তোলন করছেন। তাদের কারণে সাঙ্গু নদীর পাড় ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। একইসঙ্গে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে।”  

বালু উত্তোলনের সত্যতা স্বীকার করে থানচি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মালিরাম ত্রিপুরা বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে উপজেলায় পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা থাকায় স্থানীয় বাসিন্দাদের কোনো কাজকর্ম নেই। তাই বাধ্য হয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করতে হচ্ছে।”

পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. রেজাউল করিম বলেন, “বালু উত্তোলনের বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরে সরাসরি দায়িত্ব না থাকলেও এই কারণে পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এমন কোনো প্রমাণ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” 

থানচি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত ইউএনও) রাকিব হাসান চৌধুরী বলেন, “বান্দরবানের কোনো এলাকায় বালু উত্তোলনের কোনো অনুমোদন নেই। এর আগেও অবৈধ বালু উত্তোলনের স্পটে অভিযান চালিয়েছি। কয়েকটা ড্রেজার মেশিনসহ বালু উত্তোলনের সরঞ্জাম আগুনে পুড়িয়ে নষ্ট করা হয়েছিল।” 

তিনি আরো বলেন, “থানচি উপজেলা ছোট এলাকা হওয়ায় অভিযানে যাওয়ার আগেই অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সঙ্গে যারা জড়িত তারা খবর পেয়ে যান। বালু উত্তোলনের স্পটগুলোতে গেলেও কাউকে পাওয়া যায় না।”

ঢাকা/চাইমং/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর ব শ উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার

রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।

গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।

সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।

ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ