প্রতিভাময়ীর প্রেমে
মারুফ রায়হান
গানের সঙ্গে গদ্যের প্রেম হলো
তোমরা অবাক হলে
গহিন সুরের সাথে নুড়িপাথরের প্রেম হলে
তোমরা চমকে যাও, কেন!
প্রতিভাময়ীর প্রেমে আমি বারবার সন্তপুরুষ
স্থাপত্যের সাথে বুঝি শব্দের প্রেম হতে নেই
আমি চিরকাল থরোথরো নিঃশব্দ শব্দ
সে আজ আশ্চর্য স্থপতি
আমার মনের নকশা বদলে বদলে দিচ্ছে
কেন তবে প্রতিভাময়ীর প্রেমে
শব্দকে সশব্দ হতে দেব না, বলো?
শাস্ত্রীয় সংগীতের সাথে কবিতার ছন্দ ও মিল
খুঁজে পেল একবার জীবনের অন্ত্যমিল
কবিতায় যদি রাগিণী বেজে ওঠে, আর
রাগিণীর স্তনের মন্দিরে মাথা রাখে কবিতা
তাতে জগতের কী ক্ষতি, বলতে পারো?
ঈর্ষায় মূর্ছা যায় তবু নীতিভ্রষ্ট বিচারক
জলরংশিল্পী বুঝি ফ্যাশন মডেলে মুগ্ধ হতে পারে না
এই প্রেমকে সামাজিক চোখে দেখো না দেখো না
শিল্পী সতত থাকে শিল্পেরই প্রেমে
যেমন কবিতা সারাক্ষণ থাকে নৃত্যের আলিঙ্গনে
নর্তকী নশ্বর, আর কবিতা অবিনাশী
আমি নগণ্য কবি বটে, তবে
আমার ধ্বনিরা আজ ক’জন প্রতিভাময়ীর প্রেমে
শূন্যতায় গড়ে চলেছে বিমূর্ত বাসর
বহুদূর থেকে ভেসে আসা সুর
আরিফ মঈনুদ্দীন
বহুদূর থেকে কী এক শব্দ ভেসে আসছে
অনুমান-আন্দাজ করার আগে ভাবনার পাল খাটিয়ে খানিক
তাকিয়ে থাকি দূরের পর্দায়– অদৃশ্য অথচ জ্বলজ্বল-করা
সৃষ্টিসীমায় দিগন্তপ্রসারী হাওয়ার নাচন এখানে
তোমার তরল জ্যোৎস্না উপস্থিত হবে পূর্ণিমায়
উপভোগের আলোয় যারা অভ্যর্থনা জানাতে প্রস্তুত
তারা দেখবে আমার কতটুকু গ্রহণযোগ্যতা লেখা হয়ে আছে
দলিলের পৃষ্ঠা জুড়ে
তাই আমি সোজা পথ ধরে নির্দেশিত কথামালা
কর্ম তালিকায় তুলে নিয়ে একটি একটি করে
রূপায়ণ প্রক্রিয়ায় হাত দেবো
কতটুকু সময় বরাদ্দ তা যেহেতু জানা নেই
আমার তাড়াহুড়োর পাশ কাটিয়ে কঠিন দৃঢ়তায় বেছে নেবো
সময়ের শ্রেষ্ঠ অংশ
যতখানি জীবন না-পারার কিছুই নেই
কেননা ততখানিই নির্ঘণ্ট আমার
বাকিটুকু ফেলে রাখা হবে তোমাদের জন্য
এভাবেই শতাব্দী আসবে আর যাবে
সভ্যতার শেষ লগ্ন অবধি মানব-মানবীর বাক প্রতিমাই
ইতিহাসে লেখা রবে।
সেই শব্দই স্বপ্নে অথবা জাগরণে ভেসে আসে নিশিদিন
যারা ধরতে পারে তারাই সাফল্যের বরপুত্র
নবীন কিংবা প্রবীণ।
বসন্ত বিবাদ
অনুভব আহমেদ
তোমার সাথে আমার কোনো বসন্ত নাই, কলহ আছে
আছে–
পার করেও পার করা যায় না এমন দূরত্বে
ধুরন্ধর হাওয়ায় নিরুদ্বেগ উড়া পাতার নিনাদ
আমি তো বাতাস বেয়ে গড়িয়ে পড়া ফুলের ঘ্রাণে
রাষ্ট্রবাহী শবের প্রতীক
চিৎকারে চিৎকারে গুম হয়ে যাওয়া বাঁকের বাঁকে
আমার শরীর স্রোতের খড়কুটো
মাছেরা ঠুকরে খায়
আমার কোনো বসন্ত নাই
পাখিরা গায়, ধুলো ওড়ে
তোমাকে করা ফোন কেটে যায়
সহজ যোগাযোগের দিনে দুর্বল হয়ে থাকা সেতুটা ভেঙে যায়
ছড়া কাটার ছলে আমাদের কেটেছিল যে সাপ
আমি তার বিষ বয়ে বেড়াই প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তর
হয়তো কোনো বসন্তে
তোমার মতো কেউ আসে
আমি সেই ঠোঁটে ক্ষত রাখি
আমি ভয় পাই, আমি দেখি
তারও কোনো বসন্ত নাই
আছে–
নিরুদ্বেগ হাওয়ায় উড়ে যাওয়া পাতা, ধুলোর ঝড়।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহীতে প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া কমল ৭৫ পয়সা
রাজশাহীতে হিমাগারে আলু সংরক্ষণে নতুন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। আজ সোমবার আলুচাষি, ব্যবসায়ী ও হিমাগারমালিকদের উপস্থিতিতে এ সিদ্ধান্ত হয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, হিমাগারে প্রতি কেজি আলু রাখার জন্য ভাড়া দিতে হবে ৫ টাকা ৫০ পয়সা। এর সঙ্গে যুক্ত হবে শ্রমিকের খরচ ৫০ পয়সা। সেই হিসাবে প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া কমেছে ৭৫ পয়সা।
এর আগে গত মার্চে সরকার প্রতি কেজি আলু রাখার ভাড়া ৬ টাকা ৭৫ পয়সা নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এর পর থেকে এ নিয়ে রাজশাহীর আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা বাড়তি ভাড়ায় আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন। এ নিয়ে কয়েক দফা তাঁরা রাজপথে আন্দোলনও করেছেন। অন্যদিকে হিমাগারমালিকদের দাবি ছিল, প্রতি কেজি আলুর ভাড়া ৮ টাকা করা হোক।
রাজশাহী কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন এবং রাজশাহী জেলা আলুচাষি ও আলু ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজশাহীতে হিমাগার থেকে বাড়তি ভাড়া না দিলে আলু ছাড়া হবে না। এর প্রতিবাদে ঈদের পর নতুন করে আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা আন্দোলন করে আসছেন। তাঁদের দাবি, আলু রাখার খরচ আগের বছরের মতো চার টাকা করতে হবে। এ নিয়ে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তাঁরা। হিমাগার মালিকপক্ষ এ নিয়ে আলোচনায় বসার তাগিদ দিয়ে আসছিল।
এরই মধ্যে আলুচাষিনেতারা ১৪ জুন সেনাবাহিনীর কাছে এ নিয়ে একটি অভিযোগ দেন। পরে বিষয়টি আমলে নিয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আজ দুপুরে সভা ডাকা হয়। সভায় সব পক্ষের সম্মতিতে সিদ্ধান্ত হয় যে এ বছর সরকার নির্ধারিত প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া ৬ টাকা ৭৫ পয়সার বদলে ৫ টাকা ৫০ পয়সা ও শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা রাখা হবে। আর পেইড বুকিংয়ের ক্ষেত্রে শুধু শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা দিতে হবে আলু রাখা চাষি ও ব্যবসায়ীদের। পরে বিকেলে ক্যান্টনমেন্টে হওয়া এই সিদ্ধান্ত প্রশাসনিকভাবে পাস করার জন্য রাজশাহী জেলা প্রশাসকের দপ্তরে সভা হয়।
সভায় আলুচাষি ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি, হিমাগার মালিক সমিতি, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি, পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামীকাল মঙ্গলবার রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পক্ষ থেকে নতুন ভাড়ার বিজ্ঞপ্তি সব হিমাগারে প্রচার করা হবে।
এ ব্যাপারে সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এবার আলুর দাম কম। আবার এ নিয়ে দুই পক্ষের সংঘাতের আশঙ্কা ছিল। এ নিয়ে একটি অভিযোগ পান তাঁরা। পরে দুই পক্ষকে নিয়ে সভা হয়। সভায় সবার সম্মতিতে সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্ত বিকেলে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে আরেকটি সভার মাধ্যমে পাস হয়েছে।
রাজশাহীর আলুচাষি ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মিঠু আহমেদ বলেন, শুরু থেকেই তাঁরা বাড়তি ভাড়ার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন। কয়েক দিন ধরে তাঁরা হিমাগার থেকে আলু নিতে পারছিলেন না। হিমাগারগুলোয় বাড়তি ভাড়া দিতে হচ্ছিল। এ নিয়ে আন্দোলনের পাশাপাশি সেনাবাহিনীকেও অবহিত করেন তাঁরা। শেষ পর্যন্ত একটি ভালো সিদ্ধান্ত হয়েছে।
রহমান সিডস স্টোরেজের ব্যবস্থাপক আবদুল হালিম বলেন, সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতি কেজি আলু রাখতে খরচ পড়বে ৫ টাকা ৫০ পয়সা আর শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা। এ ছাড়া যাঁরা আগে থেকেই টাকা দিয়ে অগ্রিম বুকিং দিয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে আলুর কেজিপ্রতি শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা দিতে হবে।
রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান বলেন, নতুন সিদ্ধান্ত সব হিমাগারমালিকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানানো হবে।
আরও পড়ুনরাজশাহীতে হিমাগারে ভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদে বিক্ষোভ-সমাবেশ১৫ জুন ২০২৫