পে-স্কেলের ১০ গ্রেডে অন্তর্ভুক্তির দাবি আদায়ের লক্ষ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের মধ্য থেকে ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ নামে একটি কর্মসূচির ঘোষণা আসে, যা হচ্ছে কিনা তা নিয়ে শেষ সময়ে কারো কাছ থেকে পরিষ্কার কিছু জানা যাচ্ছে না।

শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) সারা দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের পক্ষে বিভিন্নভাবে এই কর্মসূচির ঘোষণা আসতে থাকে। বিশেষ করে ফেসবুকে কয়েকটি গ্রুপে এ বিষয়ে প্রচার চালাতে দেখা গেছে। সেখানে এই কর্মসূচি নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে মতবিরোধের বিষয়টিও কেউ কেউ তুলে ধরেছেন।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ও চায় না শিক্ষকরা এভাবে রাস্তায় নামুক। লং মার্চে নিরুৎসাহিত করতে প্রাথমিকের শিক্ষকদের নিজ নিজ কর্মস্থল ত্যাগ না করার নির্দেশ দিয়ে বিজ্ঞপ্তিও জারি করা হয়েছে।  সেক্ষেত্রে তাদের যৌক্তিক দাবি পূরণের উপায় বাতলে দিয়ে প্রাথমিক শিক্ষার কর্মকর্তারা বলছেন, শিক্ষকরা লিখিত দাবিনামা বা স্মারকলিপি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে দিতে পারেন।

যেহেতু কর্মসূচি সম্পর্কে কোনো পক্ষ থেকে পরিষ্কার বার্তা পাওয়া যায়নি; আবার শিক্ষকদের কর্মস্থল ত্যাগ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে; সেই জায়গা থেকে রাইজিংবিডি ডটকম কয়েকটি জেলায় প্রাথমিকের শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে।

রংপুরের পীরগাছা উপজেলার ছিদামহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুল ইসলামের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তার কিছু জানা নেই।

কামরুলের মত ওই উপজেলার মেকুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বড়দরগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা হলে প্রায় একই তথ্য উঠে আসে।

শুধু রংপুর নয়, আরো কয়েকটি জেলার কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কর্মসূচির কথা তারা জানলেও এতে তারা অংশ নেবেন না। আবার কেউ কেউ পরিচয় প্রকাশ হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় লং মার্চ টু ঢাকার বিষয়ে কথা বলতে আগ্রহী হননি।

বিষয়টি নিয়ে রাইজিংবিডি ডটকম কথা বলেছে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলা সরকারি প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শামসুজ্জামান জনির সঙ্গে। তিনি বলেছেন, আগামীকাল (২৪ জানুয়ারি) প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষকদের ঢাকাতে কর্মসূচি আছে কিনা সেটি আমাদের জানা নেই। আর জেলা বা বিভাগীয় অধিদপ্তর থেকে আমাদের কাছে এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা আসেনি।

অবশ্য এই শিক্ষা কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন যে, ছুটির দিন ছাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কর্মস্থল ত্যাগ করার বিষয়ে বিধিনিষেধ রয়েছে।

মিঠাপুকুরের শিক্ষা কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের কাছ থেকে কর্মসূচির বিষয়ে পরিষ্কার তথ্য না পাওয়া গেলেও রংপুর বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আজিজুর রহমান লং মার্চ টু ঢাকার ব্যাপারে ওয়াকিবহাল।

রাইজিংবিডি ডটকমের সঙ্গে কথা হলে আজিজুর রহমান বলেন, “শিক্ষকদের মধ্যে থেকে আগামীকাল (শুক্রবার) লং মার্চ টু ঢাকার একটি কর্মসূচির কথা আমরা জেনেছি। তবে আমাদের ঊর্ধ্বতন অধিদপ্তর থেকে নির্দেশনা এসেছে মাঠ পর্যায়ের শিক্ষকরা যাতে তাদের কর্মস্থল ত্যাগ না করেন। সেই বার্তা আমরা স্থানীয় শিক্ষা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে শিক্ষকদের কাছে পৌঁছে দিয়েছি।”

পে-স্কেল অনুযায়ী প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের চাকরির স্তর দশম গ্রেডে উন্নতি করার দাবির বিষয়ে আজিজুর রহমান একে ‘দীর্ঘদিনের দাবি’ বলে বর্ণনা করে তিনি বলেন, এই বিষয়ে স্মারকলিপি বা লিখিত আকারে যথাযথ অধিদপ্তরে শিক্ষকরা পাঠাতে পারেন।

দাবি আদায়ের জন্য কর্মস্থল ত্যাগ করা বা আন্দোলন না করার পরামর্শ রংপুরের বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আজিজুরের।

বগুড়ার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারীদের সঙ্গে কথা বলে লং মার্চ টু ঢাকার ব্যাপারে তাদের জানাশোনা রয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশেরও বিষয়েও তারা অবহিত।

বগুড়া থেকে প্রাথমিকের অনেক শিক্ষক ঢাকায় আসতে চেয়েও তা বাতিল করেছেন বলে তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। কর্মস্থল ত্যাগ না করার নির্দেশ আসায় বিভাগীয় ব্যবস্থার মুখোমুখি হতে হয় কিনা, সেই বিবেচনায় এই শিক্ষকেরা তাদের পরিচয় প্রকাশ করতে চাননি।

বগুড়ার নন্দীগ্রাম সদর উপলোর ডুবাতেঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান এই কর্মসূচির বিষয়ে অবহিত। রাইজিংবিডি ডটকমের সঙ্গে কথা হলে এই শিক্ষক বলেন, জেলা শিক্ষা অফিস থেকে জারি করা পরিপত্রের কারণে অনেক শিক্ষকই আর ঢাকায় যেতে চাইছেন না।

প্রাথমিকের শিক্ষকদের এই কর্মসূচিকে ন্যায্য দাবি বর্ণনা করে মিজানুর রহমান বলেন, “আগামীকালকের (শুক্রবার) কর্মসূচি সফল করার জন্য আমাদের প্রস্তুতি ছিল। প্রতিটি উপজেলা থেকে অন্তত দুটি করে বাস ঢাকার উদ্দেশ্যে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জেলা শিক্ষা অফিস থেকে আমাদের পরিপত্র দেওয়া হয়েছে। তাতে বিনা অনুমতিতে কর্মস্থল ত্যাগ না করতে বলা হয়েছে।”

প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের বিধিনিষেধ অমান্যের পরিণতি সম্পর্কে এই শিক্ষকের ধারণা রয়েছে। ঢাকায় যাওয়ার বিষয়ে কড়াকড়ি উপেক্ষা করার সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, “তাদের (শিক্ষা অফিস) কাছে কর্মসূচির জন্য অনুমতি চাইলে তারা কি দেবে?”

“শিক্ষা অফিসের পরিপত্র অমান্য করে গেলে তো সমস্যা হবে। চাকরির ভয় তো সবারই আছে; তাই যাদের যাওয়ার কথা ছিল, তাদের অধিকাংশই মোবাইল ফোন বন্ধ করে রেখেছেন।”

তাহলে বগুড়া থেকে আপনাদের লং মার্চ কি স্থগিত করলেন- এমন প্রশ্নে শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, “স্থগিত করা হয়নি। তবে যে পরিমাণ শিক্ষকের যাওয়ার কথা, তেমনটি যাচ্ছেন না।”

লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো.

মঈনুল ইসলামের সই করা একটি পরিপত্র বা আদেশের কপি রাইজিংবিডি ডটকমের হাতে এসেছে।  তাতে পরিষ্কার ভাষায় বলা হয়েছে, যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোনো শিক্ষক কর্মস্থলের বাইরে যেতে পারবেন না। এই নির্দেশ ভঙ্গ করলে তাদের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী বিধিমালা-২০১৮ অনুযায়ী বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে দেশের শিক্ষাবিদ ও গবেষকদের তরফে দীর্ঘদিন কথা হচ্ছে। প্রাথমিকের শিক্ষকদের বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির বিষয়ে দীর্ঘদিন কথা বলে আসছেন চিন্তাবিদ, লেখক ও গণবুদ্ধিজীবী অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান।

বগুড়ার শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, “আমরা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষকরা বর্তমানে ১৩তম গ্রেডে রয়েছি। আমরা চাই পদোন্নতিসহ আমাদের দশম গ্রেডে উন্নীত করা হোক।”

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কোমলমতী শিশুদের শিক্ষার পাদপ্রদীপে নিয়ে আসেন, জ্ঞানের সঙ্গে তাদের পরিচয় ঘটিয়ে দেন। অথচ তারা তৃতীয় শ্রেণির চাকরিজীবী; বেতন-ভাতাও কম।

এই বিষয়টি মনে করিয়ে দিয়ে শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, “বর্তমানে আমরা ১৩তম গ্রেডের তৃতীয় শ্রেণির প্রথম ধাপের মর্যাদায় রয়েছি। দশম গ্রেডে উন্নীত করলে আমরা দ্বিতীয় শ্রেণীর মর্যাদা পাব।”

বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার নন্দগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমাজের বগুড়া জেলার সাভাপতি রাসেল কবির অবশ্য ভিন্ন তথ্য দিচ্ছেন। শুক্রবারের ঢাকার কর্মসূচি নিয়ে প্রাথমিকের শিক্ষকদের মধ্যে মতপার্থক্যের বিষয়টি সামনে আসে তার কথায়।

রাইজিংবিডি ডটকমের সঙ্গে কথা বলে রাসেল কবির বলেন, পুরো বাংলাদেশে আমাদের রেজিস্ট্রেশনভূক্ত সংগঠন ছয়টি। তারা আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকাতে অবস্থান কর্মসূচি ডেকেছিল। কিন্তু অতি উৎসাহী হয়ে জয়পুরহাটের ক্ষেতলালের মাহবুবু রহমান চঞ্চল নামের একজন শিক্ষক ও লিপি নামের এক ম্যাডাম আমাদের টেক্কা দিতে নতুন কিছু শিক্ষক যারা চাকরির নিয়মই এখনো বুঝে উঠতে পারেননি, তাদের নিয়ে ২৪ তারিখে লং মার্চের ডাক দিয়েছেন।

“আমাদের যে ছয়টি রেজিস্ট্রেশনভুক্ত সংগঠন রয়েছে, এর কোনো নেতৃবৃন্দ বা শিক্ষক এর সঙ্গে (লং মার্চ) জড়িত নন,” দাবি করেন রাসেল কবির।

শিক্ষার গুণগত মান ঠিক করার জন্য আগে পরিমাণগত দিকটি ঠিক করার পক্ষে অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান। প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধির দাবিতে কেন আন্দোলন হয় না; সেই বিষয়েও মানুষকে সজাগ করার কাজটি করে যাচ্ছেন তিনি।

বিভিন্ন সময় দেওয়া বক্তব্যে অধ্যাপক সলিমুল্লাহ প্রশ্ন রেখেছেন, “আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কত বেতন পান? যারা ১১ গ্রেড, ১২ গ্রেড, ১৩ গ্রেডে চাকরি করেন, তাদের বেতন ১১ হাজার, ১২ হাজর, ১৩ হাজার; এই রকম। সেই বেতন দিয়ে তাদের কাছ থেকে আমরা যে বেতন আশা করব, সেটি খুব উন্নত মানের হতে পারে না।”

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে অধ্যাক সলিমুল্লাহ সরকারি কলেজে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য দূর করার আন্দোলনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে কেন প্রাথমিকের শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধির জন্য তেমন কিছু হচ্ছে না; তা নিয়ে আক্ষেপ করেন।

তিনি বলেন, “প্রাথমিকের শিক্ষকদের জন্য আপনারা আন্দোলন করছেন না কেন?”

প্রাথমিক শিক্ষকরা কয়েক বছর ধরে বেতন বৈষম্য দূরীকরণ ও দশম গ্রেডে উন্নীতকরণের জন্য আন্দোলন করে আসছে। ২০২৪ সালজুড়ে ঢাকায় অনেক কর্মসূচি দিয়েছে সরকারি প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমন্বয় পরিষদ। গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন ছিল তেমন একটি কর্মসূচি। সেদিনই তারা দাবি পূরণের লক্ষ্যে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আব্দুল হাকিমের কাছে একটি স্মারকলিপি দিয়েছিলেন।   

 

(প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন রংপুর প্রতিনিধি আমিরুল ইসলাম ও বগুড়া প্রতিনিধি এনাম আহমেদ।)

ঢাকা/হাসান/রাসেল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর শ ক ষকদ র ক দশম গ র ড এই শ ক ষ আজ জ র র পর ষ ক র শ ক ষকর র জন য দ র কর কর র ন উপজ ল সরক র ব ষয়ট

এছাড়াও পড়ুন:

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনগুলোয় প্রথম আলোর জমজমাট আয়োজন

২৭ বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে প্রথম আলোর। ৪ নভেম্বর ২০২৫ সংখ্যাটিতে লেখা থাকবে বর্ষ ২৮, সংখ্যা ১। যা কিছু ভালো, তার সঙ্গে প্রথম আলো—এই স্লোগান নিয়ে ১৯৯৮ সালের ৪ নভেম্বরে বেরিয়েছিল প্রথম আলোর প্রথম সংখ্যা। ঝকঝকে ছাপা, রঙিন ছবি, ১২ পৃষ্ঠার কাগজ, প্রতিদিন নতুন নতুন ফিচার পাতা, দলনিরপেক্ষতার অঙ্গীকার, বস্তুনিষ্ঠতার চর্চা, পেশাদারত্বের উৎকর্ষ আর নতুনকে মেনে নেওয়ার অবিরাম প্রয়াস—সব মিলিয়ে প্রথম আলো হয়ে ওঠে বাংলাদেশের মানুষের এক অপরিহার্য সঙ্গী। হয়ে ওঠে পরিবারেরই একজন। অল্প কয়েক বছরের মধ্যে প্রথম আলো লাভ করে সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিকের সম্মান। নানা রকমের বাধা, প্রতিকূলতা পেরিয়ে সত্যে তথ্যে প্রথম আলো আজ শুধু একটা কাগজ নয়, একটা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মও। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে সারা বিশ্বে প্রথম আলো লাভ করেছে বাংলাভাষী পাঠকদের উষ্ণ অভ্যর্থনা, তেমনি ওয়ান–ইফরা বা ইনমার মতো আন্তর্জাতিক সংগঠন থেকে এ গণমাধ্যম লাভ করছে সম্মানজনক স্বীকৃতি, বিশ্বসেরা আর এশিয়া সেরার পুরস্কার।

প্রথম আলোর ঢাকা অফিস থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় এরই মধ্যে বেজে উঠেছে উৎসবের আনন্দলহরী। জেলায় জেলায় চলছে প্রথম আলোর লেখক–সুধী পাঠক আর শুভানুধ্যায়ীদের সম্মিলনীর প্রস্তুতি। কাগজে, অনলাইনে, ভিডিও, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রথম আলোর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের জন্য কর্মী আর অংশীজনদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে কর্মচাঞ্চল্য।

প্রথম আলো কাগজটি মোট ৪ দিন প্রকাশিত হবে বর্ধিত কলেবরে। ৪ দিনে থাকবে ৪টি ক্রোড়পত্র। লিখবেন নিজ নিজ ক্ষেত্রে সেরা লেখকেরা। থাকবে দেশবরেণ্য শিল্পীদের আঁকা প্রচ্ছদ।

৪ নভেম্বর ২০২৫, মঙ্গলবার বের হবে ‘বৈষম্য পেরিয়ে’

২০২৪ সালের বিপুল অভ্যুত্থানে ছাত্র–জনতা পথে এসেছিল বৈষম্যের বিলোপ চেয়ে। এই ক্রোড়পত্রে লেখকেরা খুঁজে দেখছেন রাষ্ট্রের ক্ষমতাকাঠামোয়, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ও রাজনীতির অঙ্গনে বৈষম্যের রূপ। খোঁজার চেষ্টা করেছেন উত্তরণের উপায়।

৫ নভেম্বর ২০২৫, বুধবার প্রকাশ পাবে ‘বৈষম্যের অন্দরে’

সমাজ আর জনগোষ্ঠীর গভীরে থেকে যাওয়া বৈষম্য প্রতিফলিত হয় রাষ্ট্রে। আবার রাষ্ট্রীয় বৈষম্য সামাজিক বৈষম্যকে ভিত্তি দেয়। দেশের নারী–লেখক ও ভাবুকেরা উন্মোচন করে দেখিয়েছেন সমাজে ছড়িয়ে থাকা নানা বৈষম্যের চেহারা।

৬ নভেম্বর ২০২৫, বৃহস্পতিবার আসছে ‘তারুণ্যের দিগন্ত’

তরুণদের সামনে নতুন পৃথিবীর আহ্বান। কিন্তু সে আহ্বানে সাড়া দেওয়ার পথে শত বাধা ও বৈষম্যের প্রাচীর। আবার তরুণেরাই সেসব বৈষম্যের বাধা উপড়ে ফেলে এগিয়ে চলেন। তরুণদের পথের সেসব বাধা আর বাধা পেরোনোর গল্প নিয়ে এই ক্রোড়পত্র।

৭ নভেম্বর ২০২৫, শুক্রবার প্রকাশিত হবে ‘আলোর গল্প’

সাংবাদিকতা শেষ পর্যন্ত জনমানুষের জন্য। সত্য ও তথ্যনিষ্ঠ সাংবাদিকতার জন্য প্রথম আলো সেসব মানুষের প্রতি দায়বদ্ধ। প্রথম আলোর নানা উদ্যোগের লক্ষ্যও মানুষ। এই ক্রোড়পত্র গত একটি বছরে প্রথম আলোর সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের গল্পের সমাবেশ।

অনলাইনে থাকছে আকর্ষণীয় আয়োজন

লেখা, ছবি, ভিডিও, পডকাস্টসহ নানা কনটেন্ট দিয়ে সাজানো হবে প্রথম আলো ডটকম, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আনন্দালোকিত দিনগুলোতে প্রথম আলো ডটকম থাকবে জমজমাট। পাশাপাশি ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, টিকটকসহ সামাজিক মাধ্যমগুলোতে প্রথম আলোর ফলোয়ারদের জন্য থাকবে বাড়তি কিছু, উৎসবের উপহার।

প্রথম আলোর কর্মীরা মিলবেন প্রীতিসম্মিলনীতে

৪ নভেম্বর প্রথম আলো তার সব কর্মীকে নিয়ে আয়োজন করতে যাচ্ছে প্রীতিসম্মিলনী। রাজধানীর একটি বড় মিলনায়তনের একাধিক হলরুমজুড়ে বসবে এই আসর। তাতে সারা দেশের প্রথম আলো প্রতিনিধি, ঢাকার সর্বস্তরের স্টাফদের সঙ্গে যোগ দেবেন প্রথম আলোর আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিরাও। থাকবেন অতিথি বক্তা ও শিল্পীরা।

প্রথম আলো বন্ধুসভার একটি করে ভালো কাজ

এরই মধ্যে সারা দেশে প্রথম আলোর শতাধিক বন্ধুসভা ‘একটি করে ভালো কাজ’ শীর্ষক কর্মসূচি পালন করেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে সুধী সম্মিলনী আয়োজনের জন্য প্রথম আলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বন্ধুসভা কাজ করে চলেছে উৎসাহের সঙ্গে। ঢাকা বন্ধুসভাও ১৩ নভেম্বর আয়োজন করতে যাচ্ছে বন্ধুদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উৎসব।

২০২৩ সালে প্রথম আলোর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর স্লোগান ছিল ‘হারবে না বাংলাদেশ।’ গত বছর প্রথম আলো বলেছিল ‘জেগেছে বাংলাদেশ’। সত্যে তথ্যে ২৫, সত্যে তথ্যে ২৬ পেরিয়ে এল ২৭ বছর পূর্তির উৎসব।

প্রথম আলো আজকের দিনে, যখন চারদিকে ভুয়া খবরের ছড়াছড়ি, যখন দেশবাসী অনিশ্চয়তার ধোঁয়াশার মধ্যে দিগন্তে তাকিয়ে আছেন আলোকরেখার জন্য, তখন প্রথম আলো ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে কী স্লোগান নিয়ে আসছে? জানা যাবে আর কয়েক ঘণ্টা পরই।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনগুলোয় প্রথম আলোর জমজমাট আয়োজন
  • নোবিপ্রবিসাসের বর্ষসেরা সাংবাদিক রাইজিংবিডি ডটকমের শফিউল্লাহ
  • এআই খাতের অনেক বিনিয়োগই ব্যর্থ হতে পারে, আশঙ্কা বিল গেটসের