শতকোটির কোকেন পাচার চক্রে দেশি-বিদেশি ৭ জন
Published: 24th, January 2025 GMT
দেশে শতকোটি টাকার কোকেন জব্দের মামলায় আন্তর্জাতিক মাদক কারবারি চক্রের সাত সদস্যের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। দুই বাংলাদেশি, চার নাইজেরীয় ও মালাউয়ির এক নাগরিককে আসামি করে আদালতে গত বুধবার অভিযোগপত্র দিয়েছে সংস্থাটি। তাদের মধ্যে ছয়জন গ্রেপ্তারের পর কারাগারে রয়েছেন। তবে চক্রের হোতা জ্যাকব ফ্রাঙ্ক ওরফে ডন ফ্রানকি এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে।
কারাগারে থাকা ছয়জন হলেন– নমথান্দাজো টাওয়েরা সোকো, সাইফুল ইসলাম রনি, আসাদুজ্জামান আপেল, ননসো ইজেমা পিটার ওরফে অসকার, নুলুয়ি ইবুকা স্ট্যানলি ওরফে পোডস্কি ও ইজেহ ইমানুয়েল চিদেরা। তাদের মধ্যে চিদেরা ঢাকার ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র।
ডিএনসির পরিচালক (অভিযান ও গোয়েন্দা) তানভীর মমতাজ সমকালকে বলেন, বাংলাদেশকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করে কোকেন পাচারের চেষ্টা চালায় চক্রটি। মালাউয়ি থেকে আসা চালানের প্রাথমিক গন্তব্য ছিল ভারতের দিল্লি। নিষিদ্ধ এই মাদকের কারবারে জড়িত দেশি-বিদেশি চক্রের সাতজনকে তদন্তে শনাক্ত করা গেছে। অপরাধ সম্পৃক্ততার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে।
গত বছরের ২৪ জানুয়ারি রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৮ কেজি ৩০০ গ্রাম কোকেনসহ মালাউয়ির নাগরিক নমথান্দাজো টাওয়েরা সোকোকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি ওই দেশের একটি হাসপাতালের নার্স। তবে বিমানবন্দরে নিজেকে কাপড় ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দেন। তল্লাশি করে তার লাগেজে বিশেষ কায়দায় লুকানো কোকেন পাওয়া যায়। ডিএনসির কর্মকর্তারা জানান, দেশে ধরা পড়া কোকেনের বৃহত্তম এ চালানের আনুমানিক মূল্য ১০০ কোটি টাকার বেশি। এ ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় মামলা করেন ডিএনসির পরিদর্শক দেওয়ান মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান। তদন্তে নেমে চক্রের আরও পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে ডিএনসি।
তদন্ত সূত্র জানায়, চক্রের হোতা ডন ফ্রানকি সহযোগীদের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কোকেনসহ অন্যান্য মাদকের কারবার চালান। বাংলাদেশে তার যাতায়াত ছিল। এই চালান জব্দের কয়েক মাস আগে তিনি ঢাকা ছাড়েন। সেই সময় এখানে তার কারবার পরিচালনার দায়িত্ব দিয়ে যান ডন ওয়েসলিকে। তবে নাইজেরিয়ায় বসে ফ্রানকিই সব নির্দেশনা দেন। সোকোর মাধ্যমে তিনিই কোকেনের চালান ঢাকায় পাঠান। গ্রেপ্তারদের বেশির ভাগের সঙ্গে তার হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগের প্রমাণ মিলেছে।
চক্রে কার কী ভূমিকা
সোকো মূলত চালানটি বাংলাদেশ পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার বাহক ছিলেন। তার নামে ভুয়া আমন্ত্রণপত্র তৈরি করে পাঠান সাইফুল ইসলাম রনি। সেই সঙ্গে তিনি ফ্রানকির নির্দেশনায় সোকোর জন্য হোটেলের কক্ষ ভাড়া নেওয়া, তার যাবতীয় খরচ জোগানো ও ভিসার ব্যবস্থা করেন। এ জন্য তিনি একটি বেসরকারি ব্যাংকের উত্তরা জনপথ শাখার হিসাব নম্বরের মাধ্যমে একাধিকবার পেমেন্ট নিয়েছেন। ঢাকার বারিধারা এলাকার ১১ নম্বর সড়কে ফ্রানকির জন্য ফ্ল্যাট ভাড়া করে দেন আসাদুজ্জামান আপেল। তিনি ফ্রানকির সঙ্গে এম অ্যান্ড জে কালেকশন নামক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু, ট্রেড লাইসেন্স তৈরি ও ব্যাংক হিসাব খুলে সিগনেটরি হন। এ ছাড়া কোকেনের চালান ফ্রানকির ফ্ল্যাটে আসার পর নতুন করে প্যাকেজিং করার জন্য অর্ধশত লাগেজ সরবরাহ করেন। পিটার ওরফে অসকার ভিসা-পাসপোর্ট ছাড়াই এ দেশে অবস্থান করে কোকেনের চালান ঢাকায় আনা এবং পরে নয়াদিল্লি পর্যন্ত পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ চক্রের সদস্যদের দিতেন। সমন্বয়ের জন্য ফ্রানকি, পোডস্কি ও চিদেরার সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল।
এদিকে পোডস্কিও ভিসা-পাসপোর্ট ছাড়াই বাংলাদেশে অবস্থান করছিলেন। তিনি ডন ওয়েসলির কাছ থেকে মাদকের চালান নিয়ে অন্তত তিনবার কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে দিল্লিতে পৌঁছে দেন। প্রতিটি চালান দিল্লি পৌঁছানোর জন্য ফ্রানকির কাছ থেকে ২ হাজার মার্কিন ডলার নিয়েছেন। চিদেরা কোকেন চালান পাচারের কাজে দরকারি অর্থ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন। তিনি নাইজেরিয়ায় থাকা তার মা ও স্ত্রীর বাইন্যান্স ওয়ালেট ব্যবহার করে ফ্রানকির কাছ থেকে নাইজেরিয়ান মুদ্রা ‘নায়রা’ গ্রহণ করেন। পরে বাইন্যান্স ওয়ালেটের মাধ্যমে তা ক্রিপ্টোকারেন্সিতে পরিবর্তন করেন। সেই অর্থ বাংলাদেশে এনে ফ্রানকির তালিকা অনুযায়ী অসকারের মাধ্যমে চক্রের সদস্যদের কাছে পৌঁছে দিতেন। চিদেরা তার জবানবন্দিতে তারেক মনোয়ার নামে একজনের কথা বললেও ঠিকানা না পাওয়ায় তাকে অভিযোগপত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন য ব যবস নবন দ ড এনস
এছাড়াও পড়ুন:
সালিশে বেত্রাঘাত করায় সংঘর্ষ, ছাত্রদল নেতাসহ আহত ৬
বগুড়ার ধুনট উপজেলায় গ্রাম্য সালিশে বেত্রাঘাত ও জরিমানা করার জেরে সংঘর্ষে ছাত্রদল নেতাসহ ছয়জন আহত হয়েছেন। শুক্রবার রাতে উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। পরে মামলা হলে পুলিশ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে গ্রামের এক যুবকের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর জেরে বিয়ের দাবিতে যুবকের বাড়িতে অবস্থান নেন গৃহবধূ। ঘটনাটি স্থানীয়ভাবে মীমাংসার জন্য জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক এস এম জাকিরের নেতৃত্বে শুক্রবার রাতে সালিশ বৈঠক বসে।
বৈঠকে যুবককে দোষী সাব্যস্ত করে তাকে ৫০টি বেত্রাঘাত ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। বিষয়টি নিয়ে যুবকের বড় ভাই প্রতিবাদ করায় সংঘর্ষ হয়। এতে ছাত্রদল নেতা জাকিরসহ ছয়জন আহত হন। তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে জাকিরসহ দু’জনকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
অভিযুক্ত যুবকের বড় ভাই বলেন, ‘ছাত্রদল নেতা জাকির ও তার পরিবারের সদস্যদের অত্যাচারে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। তারা প্রভাব খাটিয়ে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে সুবিধা আদায় করছে।’
ছাত্রদল নেতা এস এম জাকির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘পূর্বপরিকল্পিতভাবে আমাকেসহ আমার স্বজনের ওপর হামলা করে আহত করা হয়েছে।’ ধুনট থানার ওসি সাইদুল আলম বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। এতে জড়িত সন্দেহে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।