মির্জাপুর উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজার, রাস্তাঘাট ও সড়কের পাশে এমনকি চা-মুদি দোকানেও বিক্রি হচ্ছে অকটেন, পেট্রোলসহ বিভিন্ন দাহ্য পদার্থ। যত্রতত্র পেট্রোল-অকটেন বিক্রির কারণে যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড।
মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল থেকে জামুর্কী পর্যন্ত ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের দুই পাশে বিভিন্ন বাজারে অসংখ্য অবৈধ খোলা জ্বালানি তেলের দোকান রয়েছে। এ ছাড়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামীণ বাজার ও অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোর পাশে রয়েছে উন্মুক্ত পেট্রোল-অকটেন বিক্রির দোকান। সব মিলিয়ে উপজেলায় অন্তত দুই শতাধিক অবৈধ খোলা জ্বালানি তেলের দোকান রয়েছে। মুদি দোকানগুলোতে অবৈধভাবে বোতলে ভরে পেট্রোল-অকটেন বিক্রি করা হচ্ছে। ইচ্ছে করলে যে কেউই এসব দোকান থেকে বোতলভর্তি পেট্রোল-অকটেন কিনে নিয়ে যেতে পারেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মির্জাপুর উপজেলায় পেট্রোল পাম্প রয়েছে ৯টি। পাম্পগুলো থেকে জ্বালানি কিনে এনে বিক্রি করেন দোকানিরা। মোটরবাইক চালকরা প্রতি লিটার ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি দিয়ে এসব দোকান থেকে জ্বালানি কিনে থাকেন। অনুমোদনহীন এসব দোকান দীর্ঘদিন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পেট্রোল-অকটেন বিক্রি করছে। অথচ অনুমোদন ছাড়া প্রকাশ্যে দাহ্য পদার্থ বিক্রি করা দণ্ডনীয় অপরাধ। পেট্রোল বিক্রি করতে হলে বিস্ফোরক পরিদপ্তরের লাইসেন্স নিতে হয়। 
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন দোকানে এক কিংবা আধা লিটার ওজনের প্লাস্টিক বোতলে পেট্রোল অথবা অকটেন ভরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। এসব দোকানে নেই আগুন নির্বাপণ যন্ত্র। বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে জানা নেই প্রতিকারের ব্যবস্থা। হাটবাজার কিংবা আবাসিক এলাকায় এ ব্যবসার কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকি রয়েছে।
জ্বালানি অধিদপ্তরের আইন অনুযায়ী, যেসব প্রতিষ্ঠানে তেল ও গ্যাস বিক্রি করবে, তাদের বিক্রির স্থানকে সম্পূর্ণ সুরক্ষিত রেখে ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালাতে হয়। তেল-গ্যাস বিক্রির স্থানে কমপক্ষে মেঝে পাকাসহ আধাপাকা ঘর, ফায়ার সার্ভিসের অগ্নিনির্বাপণ লাইসেন্সসহ অগ্নিনির্বাপণ সিলিন্ডার ও ঝুঁকিমুক্ত সংরক্ষণাগার থাকতে হবে। এ ছাড়া থাকতে হবে জ্বালানি অধিদপ্তরের অনুমোদন। অথচ এসব শর্তের একটিও নেই উপজেলার খোলা তেল ব্যবসায়ীদের। আবার উপজেলার বিভিন্ন বাজার, পাড়া-মহল্লা, মুদি, প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন দোকানে খোলা জ্বালানি বিক্রি হচ্ছে।
কয়েকজন পেট্রোল-অকটেন বিক্রেতা জানান, উপজেলার বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়কে শত শত ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চলাচল করে। মোটরসাইকেল চালকদের চাহিদার কারণেই পেট্রোল বিক্রি করে থাকেন তারা। পেট্রোল পাম্পের চেয়ে প্রতি লিটারে পাঁচ থেকে দশ টাকা বেশি রাখেন। পেট্রোল পাম্প দূরে হওয়ায় মোটরসাইকেল চালকরা খুশি হয়েই এই বেশি টাকা দেন। আর পেট্রোল বিক্রি করতে যে লাইসেন্স লাগে, সে সম্পর্কে জানেন না বলে দাবি তাদের। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও কখনও এ ব্যাপারে তাদের কিছু বলা হয়নি।
মির্জাপুর ফিলিং স্টেশনের মালিক মো.

আসলামের ভাষ্য, তারা সাধারণত যানবাহনে তেল বিক্রি করে থাকেন। ব্যবসায়ী এবং কৃষকরা ড্রামে তেল নেন। সেটি খুব নিরাপত্তার সঙ্গে দেওয়া হয়। তা ছাড়া কোম্পানি এবং স্থানীয় প্রশাসন থেকে এ ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় মির্জাপুর ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের স্টেশন অফিসার বেলায়েত হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, বোতলে করে এভাবে উন্মুক্তভাবে পেট্রোল-অকটেন বিক্রির কোনো নিয়ম নেই। বিক্রি করতে হলে কিছু নিয়ম আছে এবং বিভিন্ন দপ্তরের অনুমতি লাগে। মির্জাপুরে এ ধরনের অনুমতি কেউ নিয়েছে বলে তাঁর জানা নেই। তবে এসব স্থানে অগ্নিকাণ্ড ঘটলে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা থাকে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপজ ল র ব ভ ন ন এসব দ ক ন র উপজ ল ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

‘হাউসে কাউসার’ উম্মতের জন্য আল্লাহর বিশেষ নেয়ামত

হাউসে কাউসার হলো একটি পবিত্র পানির কূপ, যার পানি অত্যন্ত বিশুদ্ধ, সুমিষ্ট ও পবিত্র। কিয়ামতের দিন এই হাউস মুমিনদের তৃষ্ণা নিবারণের উৎস হবে। যে ব্যক্তি এটি থেকে একবার পান করবে, সে আর কখনো পিপাসার্ত হবে না।

এটি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর উম্মতের জন্য কিয়ামতের দিনে বিশেষ উপহার হিসেবে উপস্থাপিত হবে। সুরা কাউসারে আল্লাহ বলেন: ‘নিশ্চয় আমি আপনাকে কাউসার দান করেছি।’ (সুরা কাউসার, আয়াত: ১)

তাফসির অনুসারে, ‘কাউসার’ শব্দটি বহু অর্থ বহন করে, যার মধ্যে হাউসে কাউসার, জান্নাতের একটি নদী এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর উম্মতের জন্য অফুরন্ত নেয়ামত অন্তর্ভুক্ত।

যার পানি অত্যন্ত বিশুদ্ধ, সুমিষ্ট ও পবিত্র। কিয়ামতের দিন এই হাউস মুমিনদের তৃষ্ণা নিবারণের উৎস হবে।হাদিসে হাউসে কাউসার

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমার হাউসের দৈর্ঘ্য এক মাসের পথের সমান। এর পানি দুধের চেয়ে সাদা, সুগন্ধ মিশকের চেয়ে উত্তম এবং পাত্রগুলো আকাশের তারকার মতো। যে এটি থেকে পান করবে, সে আর কখনো পিপাসার্ত হবে না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৫৮১; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৩০০)

তিনি আরও বলেন, ‘কিছু লোক আমার হাউসের কাছে আসবে, আমি তাদের চিনব এবং তারাও আমাকে চিনবে। কিন্তু তাদের দূরে সরিয়ে দেওয়া হবে। আমি বলব, ‘তারা আমার উম্মত।’ ফেরেশতারা বলবে, ‘আপনি জানেন না, তারা আপনার পরে দ্বীনে নতুন বিষয় আবিষ্কার করেছে।’ তখন আমি বলব, ‘যারা আমার পরে দ্বীন বিকৃত করেছে, তারা দূর হোক।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৪৭; সহিহ বুখারি, হাদিস: ৭,০৫১)

সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আল্লাহর রাসুল, আপনি কি আমাদের চিনতে পারবেন?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত-পা অজুর কারণে দীপ্তিমান হবে, এমন চিহ্ন অন্য কোনো উম্মতের হবে না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৫৭৯; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৪৯)

হাউসের দৈর্ঘ্য এক মাসের পথের সমান। এর পানি দুধের চেয়ে সাদা, সুগন্ধ মিশকের চেয়ে উত্তম এবং পাত্রগুলো আকাশের তারকার মতো। যে এটি থেকে পান করবে, সে আর কখনো পিপাসার্ত হবে না।সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৫৮১; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৩০০আরও পড়ুনসুরা কাওসারে তিনটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মেরাজের রাতে আমি একটি নহরের তীরে পৌঁছালাম, যার পাড় মণিমুক্তা দ্বারা নির্মিত। এর পানি দুধের চেয়ে সাদা এবং সুগন্ধ মিশকের চেয়ে উত্তম। আমি জিবরাইল (আ.)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘এটি কী?’ তিনি বললেন, ‘এটি হাউসে কাউসার, যা আল্লাহ আপনাকে দান করেছেন।’ (মুস্তাদরাকে হাকেম, ১/১১৬; তিরমিজি, হাদিস: ২,৫৪৪)

হাউসে কাউসারের বৈশিষ্ট্য

অবস্থান: হাউসে কাউসার কিয়ামতের দিন মিজানের আগে বা পরে মুমিনদের জন্য উপস্থাপিত হবে। কিছু হাদিসে এটি জান্নাতের প্রবেশপথে অবস্থিত বলে উল্লেখ রয়েছে।

প্রশস্ততা: এর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ অত্যন্ত বিশাল। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এর দৈর্ঘ্য আদন (ইয়েমেনের এডেন বন্দর) থেকে আইলা (আরবের উত্তরাঞ্চলীয় শহর) পর্যন্ত দূরত্বের চেয়েও বেশি এবং প্রশস্ততা এক মাসের পথের সমান (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৫৮১)।

পানির গুণাগুণ: পানি দুধের চেয়ে সাদা, বরফের চেয়ে শুভ্র এবং মধু ও দুধের চেয়ে মিষ্টি। এর সুগন্ধ মিশকের (কস্তুরির) চেয়ে অধিক মনোমুগ্ধকর। যে এটি থেকে পান করবে, সে আর কখনো তৃষ্ণার্ত হবে না। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৪৭)

পাত্র: হাউসের পানি পানের জন্য পাত্রগুলো আকাশের তারকার মতো অসংখ্য ও উজ্জ্বল। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৫৭৯)।

পাড়ের সৌন্দর্য: এর পাড় মণিমুক্তা দ্বারা নির্মিত, যা এর শোভা বৃদ্ধি করে (মুস্তাদরাকে হাকেম, ১/১১৬)।

হাউসে কাউসার থেকে পান করার সৌভাগ্য শুধু সেই মুমিনরা পাবেন, যারা: রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাহ অনুসরণ করেছেন এবং বেদআত (ধর্মে নতুন আবিষ্কার) থেকে মুক্ত ছিলেন।আরও পড়ুনসাবধানী মানুষের নয়টি গুণ০৭ মে ২০২৫কারা পান করতে পারবেন

হাউসে কাউসার থেকে পান করার সৌভাগ্য শুধু সেই মুমিনরা পাবেন, যারা: রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাহ অনুসরণ করেছেন এবং বেদআত (ধর্মে নতুন আবিষ্কার) থেকে মুক্ত ছিলেন।

রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর উম্মতকে অজুর কারণে চিনতে পারবেন, কারণ তাদের মুখমণ্ডল, হাত ও পা দীপ্তিমান হবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৫৭৯)

তবে কিছু লোক হাউসের কাছে এলেও ফেরেশতারা তাদের তাড়িয়ে দেবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদের জন্য সুপারিশ করলেও ফেরেশতারা বলবেন, ‘আপনি জানেন না, তারা আপনার পরে দ্বীনে নতুন বিষয় আবিষ্কার করেছে।’ তখন রাসুল (সা.) বলবেন, ‘যারা আমার পরে দ্বীনকে বিকৃত করেছে, তারা দূর হোক।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৪৭)

আরও পড়ুনমহানবী (সা.)–র অসিয়ত নিয়ে সংশয়০২ জুলাই ২০২৩

সম্পর্কিত নিবন্ধ