দিনরাত বিকট শব্দে কাজ হয় করাতকলে। কাঠের গুঁড়া বাতাসে উড়ে বেড়ায়। উড়ে এসে তা শিক্ষার্থী, চলন্ত যানবাহনের চালক ও পথচারীদের চোখে পড়ে। করাতকলগুলোর কাঠ ও গাছের গুঁড়ি রাখায় সড়কগুলোও সংকুচিত হয়ে পড়ছে। মাঝেমধ্যেই ঘটছে দুর্ঘটনা।
এ চিত্র দেখা গেছে ভোলার চরফ্যাসনে দক্ষিণ আইচা থানার চর মানিকা ইউনিয়নের নতুন বাজারে। সড়ক ও জনপথের জায়গায় আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে অবস্থিত করাতকলটির মালিক চর মানিকা ১ নম্বর ওয়ার্ড  আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও ইউপি সদস্য রফিজুল সিকদার। সড়ক ঘেঁষা করাতকলের দক্ষিণ পাশেই উত্তর চর মানিকা প্রাথমিক ও উত্তর চর মানিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়। করাতকলের কারণে বিদ্যালয় দুটির সহস্রাধিক শিক্ষার্থীকে চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বিকট শব্দে পাঠে মন দিতে পারে না তারা। সড়কের সীমানার পর ৩৩ ফুটের মধ্য এ ধরনের কারখানা চালুর ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও প্রভাব খাটিয়ে করাতকলটি স্থাপন করেছেন আওয়ামী লীগের ওই নেতা।
চর মানিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বেল্লাল হোসেন বলেন, করাতকলের কারণে যানবাহন, পথচারী, শিক্ষার্থীদের চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। বন বিভাগ এবং সওজকে একাধিকবার জানানো হয়েছে। তারা আমলে নেননি।
এ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সারোয়ার জানায়, করাতকলে কাঠ চেরাই করার সময় বিকট শব্দ হয়। এতে পড়ায় মন বসাতে সমস্যা হয়। 
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বাজার ঘেঁষে থাকা করাতকলের কারণে ক্রেতা-বিক্রেতাদের চলাচলে ঝুঁকি বেড়েছে। করাতকলের কাঠের গুঁড়া বাতাসে ছড়িয়ে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় অবৈধ কাজ চললেও কর্তৃপক্ষ দেখে না। 
অটোবাইক চালক মজিদ মুন্সি বলেন, করাতকলের কাঠে সড়ক সংকুচিত হয়ে গেছে। বিপরীত দিক থেকে আশা গাড়িগুলোকে সাইড দিতে গিয়ে বিপদে পড়তে হয়। এতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে করাতকল মালিক চর মানিকা ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও ইউপি সদস্য রফিজুল সিকদার বলেন, নিজের জমিতে বৈধভাবে করাতকল স্থাপন করেছি। টাকা দিয়ে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের অনুমোদনও নেওয়া হয়েছে। তবে কাগজপত্র দেখতে চাইলে এখন নেই বলে জানান এই নেতা। 
শুধু রফিজুল সিকদার নন, দক্ষিণ আইচায় চর আইচা মাধ্যমিক বিদ্যালয়-সংলগ্ন এলাকায় হেমলেট পাটোয়ারী ও আওয়ামী লীগ নেতা জাফর সাদেক মিয়া, হাজারীগঞ্জ ইউনিয়নে বাজারের বাঁধের ঢালে ফারুক মিয়ার তিনটি ছাড়াও উপজেলার শশীভূষণ, চরকলী, দুলারহাট, সদরের মহাসড়ক, বিদ্যালয়, ম্যানগ্রোভ বন ঘেঁষে শতাধিক করাতকল স্থাপন করা হয়েছে। বন বিভাগের কর্মকর্তাদের মাসোহারা দিয়েই চলছে অবৈধ করাতকল। তাই বন বিভাগ দেখেও না দেখার ভান করে। 
আওয়ামী লীগ নেতা জাফর সাদেক জানান, বন বিভাগের অনুমতি নিয়েই করাতকল স্থাপন করেছেন। পরিবেশ ছাড়পত্র আছে কিনা, জানতে চাইলে সেটা কী জিনিস তা জানা নেই বলে জানান। কথা বলতে হেমলেট পাটোয়ারীর মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। 
টাকার বিনিময়ে অবৈধ করাতকল চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করে বন বিভাগের কর্মকর্তা আব্দুস সালাম বলেন, চরফ্যাসনে ১৮২টি করাতকল আছে। এর মধ্যে অনুমোদিত ৮২টি। শিগগির অভিযান চালিয়ে অবৈধ করাতকলের মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহিদুল ইসলাম জানান, করাতকলটি সওজের জমিতে স্থাপিত 
কিনা, কর্মকর্তাদের পাঠিয়ে তদন্ত করা হবে। সত্যতা পেলে তাদের উচ্ছেদ করা হবে। একই কথা বলেন জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক তোতা মিয়া। 
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.

শোভন বসাক বলেন, করাতকলের কণা জাতীয় কাঠের গুঁড়া চোখের রেটিনার গুরুতর ক্ষতি করে। এতে চোখ নষ্ট পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে। তাই ঘনবসতি স্থানে করাতকল নির্মাণে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসনা শারমিন মিথি জানান, অবৈধ করাতকলের তালিকা হয়েছে। মালিকদের এক মাসের মধ্যে কাগজ জমা দিতে বলা হয়েছে। কাগজপত্র হাতে আসার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অব ধ ক আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

নুরাল পাগলার দরবার থেকে চুরি হওয়া জেনারেটর উদ্ধার, যুবক গ্রেপ্তার

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরাল পাগলার দরবার থেকে চুরি হওয়া একটি জেনারেটর উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় মো. মিজানুর রহমান (২৪) নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়।

গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নে অভিযান চালিয়ে মিজানুরকে গ্রেপ্তার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও গোয়ালন্দ ঘাট থানা-পুলিশ। মিজানুরের বাড়ি রাজবাড়ী সদর উপজেলার লক্ষ্মীকোল সোনাকান্দর গ্রামে।

আরও পড়ুননিহতের বাবার মামলায় গ্রেপ্তার আরও ২, দেড় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির দাবি১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

এ নিয়ে দুই মামলায় মোট ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. শরীফ আল রাজীব।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ৫ সেপ্টেম্বর গোয়ালন্দের নুরাল পাগলার দরবারে বিক্ষুব্ধ জনতা হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। এ সময় মিজানুর রহমান জেনারেটর চুরি করে নিয়ে যাচ্ছেন—এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরে ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে মিজানুরকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হয়। মিজানুরকে দরবারে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, লাশ পোড়ানো ও হত্যার ঘটনায় হওয়া মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে তাঁকে রাজবাড়ীর আদালতে সোপর্দ করার প্রস্তুতি চলছে।

আরও পড়ুননুরাল পাগলার দরবারে হামলায় হত্যা মামলা, মসজিদের ইমামসহ চারজন গ্রেপ্তার০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ওই দিন পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় উপপরিদর্শক (এসআই) সেলিম মোল্লা বাদী হয়ে প্রায় তিন হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করে ৬ সেপ্টেম্বর মামলা করেন। এই মামলায় মোট ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদিকে দরবারে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, হত্যা ও কবর থেকে লাশ তুলে মহাসড়কে পুড়িয়ে ফেলার ঘটনায় নিহত ভক্ত রাসেল মোল্লার বাবা আজাদ মোল্লা বাদী হয়ে ৮ সেপ্টেম্বর মামলা করেন। ওই মামলায় সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় এখন পর্যন্ত মিজানুরসহ নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ