রাস্তা, স্কুল ঘেঁষে শতাধিক করাতকল
Published: 26th, January 2025 GMT
দিনরাত বিকট শব্দে কাজ হয় করাতকলে। কাঠের গুঁড়া বাতাসে উড়ে বেড়ায়। উড়ে এসে তা শিক্ষার্থী, চলন্ত যানবাহনের চালক ও পথচারীদের চোখে পড়ে। করাতকলগুলোর কাঠ ও গাছের গুঁড়ি রাখায় সড়কগুলোও সংকুচিত হয়ে পড়ছে। মাঝেমধ্যেই ঘটছে দুর্ঘটনা।
এ চিত্র দেখা গেছে ভোলার চরফ্যাসনে দক্ষিণ আইচা থানার চর মানিকা ইউনিয়নের নতুন বাজারে। সড়ক ও জনপথের জায়গায় আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে অবস্থিত করাতকলটির মালিক চর মানিকা ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও ইউপি সদস্য রফিজুল সিকদার। সড়ক ঘেঁষা করাতকলের দক্ষিণ পাশেই উত্তর চর মানিকা প্রাথমিক ও উত্তর চর মানিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়। করাতকলের কারণে বিদ্যালয় দুটির সহস্রাধিক শিক্ষার্থীকে চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বিকট শব্দে পাঠে মন দিতে পারে না তারা। সড়কের সীমানার পর ৩৩ ফুটের মধ্য এ ধরনের কারখানা চালুর ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও প্রভাব খাটিয়ে করাতকলটি স্থাপন করেছেন আওয়ামী লীগের ওই নেতা।
চর মানিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বেল্লাল হোসেন বলেন, করাতকলের কারণে যানবাহন, পথচারী, শিক্ষার্থীদের চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। বন বিভাগ এবং সওজকে একাধিকবার জানানো হয়েছে। তারা আমলে নেননি।
এ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সারোয়ার জানায়, করাতকলে কাঠ চেরাই করার সময় বিকট শব্দ হয়। এতে পড়ায় মন বসাতে সমস্যা হয়।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বাজার ঘেঁষে থাকা করাতকলের কারণে ক্রেতা-বিক্রেতাদের চলাচলে ঝুঁকি বেড়েছে। করাতকলের কাঠের গুঁড়া বাতাসে ছড়িয়ে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় অবৈধ কাজ চললেও কর্তৃপক্ষ দেখে না।
অটোবাইক চালক মজিদ মুন্সি বলেন, করাতকলের কাঠে সড়ক সংকুচিত হয়ে গেছে। বিপরীত দিক থেকে আশা গাড়িগুলোকে সাইড দিতে গিয়ে বিপদে পড়তে হয়। এতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে করাতকল মালিক চর মানিকা ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও ইউপি সদস্য রফিজুল সিকদার বলেন, নিজের জমিতে বৈধভাবে করাতকল স্থাপন করেছি। টাকা দিয়ে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের অনুমোদনও নেওয়া হয়েছে। তবে কাগজপত্র দেখতে চাইলে এখন নেই বলে জানান এই নেতা।
শুধু রফিজুল সিকদার নন, দক্ষিণ আইচায় চর আইচা মাধ্যমিক বিদ্যালয়-সংলগ্ন এলাকায় হেমলেট পাটোয়ারী ও আওয়ামী লীগ নেতা জাফর সাদেক মিয়া, হাজারীগঞ্জ ইউনিয়নে বাজারের বাঁধের ঢালে ফারুক মিয়ার তিনটি ছাড়াও উপজেলার শশীভূষণ, চরকলী, দুলারহাট, সদরের মহাসড়ক, বিদ্যালয়, ম্যানগ্রোভ বন ঘেঁষে শতাধিক করাতকল স্থাপন করা হয়েছে। বন বিভাগের কর্মকর্তাদের মাসোহারা দিয়েই চলছে অবৈধ করাতকল। তাই বন বিভাগ দেখেও না দেখার ভান করে।
আওয়ামী লীগ নেতা জাফর সাদেক জানান, বন বিভাগের অনুমতি নিয়েই করাতকল স্থাপন করেছেন। পরিবেশ ছাড়পত্র আছে কিনা, জানতে চাইলে সেটা কী জিনিস তা জানা নেই বলে জানান। কথা বলতে হেমলেট পাটোয়ারীর মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
টাকার বিনিময়ে অবৈধ করাতকল চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করে বন বিভাগের কর্মকর্তা আব্দুস সালাম বলেন, চরফ্যাসনে ১৮২টি করাতকল আছে। এর মধ্যে অনুমোদিত ৮২টি। শিগগির অভিযান চালিয়ে অবৈধ করাতকলের মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহিদুল ইসলাম জানান, করাতকলটি সওজের জমিতে স্থাপিত
কিনা, কর্মকর্তাদের পাঠিয়ে তদন্ত করা হবে। সত্যতা পেলে তাদের উচ্ছেদ করা হবে। একই কথা বলেন জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক তোতা মিয়া।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসনা শারমিন মিথি জানান, অবৈধ করাতকলের তালিকা হয়েছে। মালিকদের এক মাসের মধ্যে কাগজ জমা দিতে বলা হয়েছে। কাগজপত্র হাতে আসার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
যে কারণে এক সপ্তাহে তিন ব্যাংক এমডির পদত্যাগ
গত সপ্তাহে বেসরকারি খাতের তিন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদত্যাগ করেছেন। এর মধ্যে সাউথইস্ট ব্যাংকের এমডিকে আগে থেকেই ছুটিতে পাঠিয়েছিল ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ। আর মেঘনা ও কমার্স ব্যাংকের এমডি হঠাৎ করেই পদত্যাগ করেছেন।
জানা গেছে, পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হওয়ায় মেঘনা ও কমার্স ব্যাংকের এমডিদের পদত্যাগ করতে হয়। হঠাৎ করে দুই এমডির পদত্যাগ নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকও। গত বছরের ৫ আগস্টের পর এই তিন ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে কমার্স ব্যাংক ছিল এস আলমের নিয়ন্ত্রণে ও মেঘনা ব্যাংক ছিল সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর পরিবার ও তাঁদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ন্ত্রণে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর গতকাল মুদ্রানীতি অনুষ্ঠানে বলেন, ‘কয়েকজন এমডি কেন পদত্যাগ করেছেন, আমরা তা খতিয়ে দেখছি।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ব্যাংকিং নিয়মে কোনো এমডি পদত্যাগ করলে বাংলাদেশ ব্যাংককে তার কারণ জানাতে হয়। তাঁর পদত্যাগ কার্যকর হবে কি না, এরপরই এ নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়। পদত্যাগ করা এমডিকে কাজে ফিরিয়ে দেওয়ার উদাহরণও আছে।
জানা যায়, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকে ৪৮ কোটি টাকা সুদ মওকুফের সিদ্ধান্ত ঘিরে সৃষ্ট বিতর্কের জেরে পদত্যাগ করেছেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন। গত মঙ্গলবার পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে মোশারফ হোসেনের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন পর্ষদের কয়েকজন সদস্য। পরদিনই তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন।
তবে ব্যাংকটি লিখিতভাবে প্রথম আলোকে জানিয়েছে, এমডি লক্ষ্য পূরণ করতে না করায় তার ব্যর্থতা স্বীকার করে নেন, এরপর ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন। মোশারফ হোসেন চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি কমার্স ব্যাংকের এমডি হিসেবে যোগ দেন।
এদিকে গত সোমবার সাউথইস্ট ব্যাংকের এমডি নুরুদ্দিন মো. ছাদেক হোসেন পদত্যাগ করেন। অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান বরাবরে পদত্যাগপত্র জমা দেন। এর আগে চলতি বছরের ৪ মে তাঁকে তিন মাসের ছুটিতে পাঠিয়েছিল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ।
গত রোববার পদত্যাগ করেন মেঘনা ব্যাংকের এমডি কাজী আহ্সান খলিল। গত বছরের এপ্রিলে ৩ বছরের জন্য তিনি ব্যাংকটির এমডি হিসেবে যোগ দেন। তবে ১৫ মাসের মাথায় এসে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন।
জানতে চাইলে কাজী আহ্সান খলিল প্রথম আলোকে বলেন, ‘নতুন পর্ষদ কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ করে আমাকে ছুটিতে পাঠানোর উদ্যোগ নেয়। আমি সেই প্রস্তাবে রাজি না হয়ে নিজেই পদত্যাগ করেছি। বাংলাদেশ ব্যাংক তদন্ত করলেই আরও অনেক কিছু জানতে পারবে।’
চলতি বছরের মার্চে মেঘনা ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকটির শেয়ারধারী পরিচালকের পাশাপাশি স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়। যাঁদের দুজন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা।