দক্ষিণ কোরিয়ায় বিধ্বস্ত বিমানের ইঞ্জিনে পাওয়া গেল হাঁসের ডিএনএ
Published: 27th, January 2025 GMT
দক্ষিণ কোরিয়ার মুয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জেজু এয়ারের বিধ্বস্ত হওয়া বিমানের দুটি ইঞ্জিনেই হাঁসের ডিএনএ মিলেছে। ডিসেম্বরে বেসরকারি বিমান সংস্থা জেজু এয়ারের বিমানটি বিধ্বস্ত হয়ে ১৭৯ যাত্রীর প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছিল।
সোমবার বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি প্রকাশিত প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিধ্বস্ত জেজু এয়ারের বিমানের উভয় ইঞ্জিনে হাঁসের খণ্ড-বিখণ্ড দেহ পাওয়া গেছে।
তবে দক্ষিণ কোরিয়ায় ভয়াবহ এই বিমান বিপর্যয়ের চূড়ান্ত কারণ কী, তা জানতে কর্তৃপক্ষ এখনও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দুর্ঘটনার এক মাস পর দক্ষিণ কোরিয়ার কর্তৃপক্ষের প্রকাশিত ছয় পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জেজু এয়ারের বোয়িং ৭৩৭-৮০০ বিমানের উভয় ইঞ্জিনে বাইকাল টিলসের ডিএনএর অস্তিত্ব মিলেছে। বাকাল টিলস এক প্রজাতির পরিযায়ী হাঁস; যা শীতকালে দলে দলে দক্ষিণ কোরিয়ায় উড়ে যায়।
প্রতিবেদনে ল্যান্ডিং গিয়ার মোতায়েন না করে বিমানটি কী কারণে অবতরণ করেছে এবং ফ্লাইটের ডাটা রেকর্ডার কেন বিমানের শেষ চার মিনিটে রেকর্ডিং বন্ধ করে দিয়েছে, সে সম্পর্কে কোনও প্রাথমিক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি তদন্তকারীরা।
গত ২৯ ডিসেম্বর থাইল্যান্ডের ব্যাংকক থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার উদ্দেশে ১৮১ যাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল জেজু এয়ারের ফ্লাইট ৭সি২২১৬। জেজু এয়ারের এই বিমানে ১৭৫ জন যাত্রী ও ৬ জন ক্রু ছিলেন। রানওয়েতে প্রবল গতিতে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে দেখা যায় বিমানটিকে। এ সময় বিমানের ল্যান্ডিং গিয়ার দেখা যাচ্ছিল না। কিছুক্ষণ ছুটে যাওয়ার পর রানওয়ের শেষ প্রান্তের একটি প্রাচীরে গিয়ে প্রচণ্ড গতিতে আঘাত হানে। এতে উড়োজাহাজের সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়ার পাশাপাশি বিস্ফোরণের পর আগুন ধরে যায়। ঘটনাস্থলে কালো ধোঁয়ার বিশাল কুণ্ডলী আকাশে উড়তে দেখা যায়। এই ঘটনায় বিমানের ১৭৯ আরোহী মারা যান।
বিমান দুর্ঘটনার স্থানের নতুন কিছু ছবি প্রকাশ করেছে তদন্ত কমিটি। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিমানবন্দরের প্রাচীরে আঘাত হানার পর বিমানে আগুন ধরে যায় এবং বিস্ফোরণ ঘটে। বিমানের উভয় ইঞ্জিনই প্রাচীরের নিচে চাপা পড়ে এবং দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া সামনের অংশটি প্রাচীর থেকে ৩০-২০০ মিটার পর্যন্ত ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়েছিল।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
নড়াইলে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা
নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নে সড়কের পাশে সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে শাহবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন।
মামলায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানসহ ১৩ জন আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকা ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন ও প্রশিকার গঠিত সংগঠন প্রভাতী যুব সংঘের সভাপতি নড়াইল সদর উপজেলার তুজরডাঙ্গা এলাকার মুজিবুর রহমান, সদস্য একই এলাকার জরিনা বেগম, রজব আলী, মো. আজিবর, মো. ইলিয়াছ, ইমান আলী, মো. ওমর, মো. হায়দার, আবু সাঈদ, মো. এনামুল ও মো. শরিফুল।
এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মামলার এজহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, গত ২৯ এপ্রিল নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ বাজার থেকে হাজির বটতলা পর্যন্ত সরকারি রাস্তার জায়গা থেকে গাছ কাটা ও চুরি করে বিক্রির সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। উপস্থিত হয়ে দেখেন, কাটা গাছবোঝাই একটি ট্রাক এবং নছিমন জব্দ করেছেন নড়াইল সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার দেবাশীষ অধিকারী। তখন ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মামলার আসামিরা কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই খাসজমি থেকে গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। এর আগেও একবার তাঁরা ওই জমি থেকে গাছ বিক্রি করেছিলেন। জব্দ করা গাছের লগ, ডালপালা এবং আগে কাটা গাছের অবশিষ্ট ভূমিসংলগ্ন গুঁড়ি পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেছে, ওই স্থান থেকে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার অধিক গাছ চুরি করে কাটা ও বিক্রি হয়েছে।
প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকার ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০০৯ সালে প্রশিকা, ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রভাতী যুব সংঘের যৌথ উদ্যোগে একটি চুক্তির মাধ্যমে সড়কের পাশে গাছগুলো রোপণ করেছিল। সে সময় সড়কটি খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল না। বর্তমানে তা সরকারের আওতায় পড়ায় গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে ইউএনওর কাছে আবেদন করা হয়েছিল, তবে প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। কিছুদিন আগে ইউপি সদস্য ইব্রাহিম তাঁকে ফোনে জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালা বিক্রি করতে চান চেয়ারম্যান। বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালাগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হবে ভেবে তিনি বিক্রিতে সম্মতি দেন। পরে গাছ কীভাবে বা কারা কেটেছে, তা তিনি জানেন না।
মামলা করার আগে অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগের ব্যাপার জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, প্রশিকার সঙ্গে চুক্তির একটি পক্ষ ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। সেই হিসেবে গাছ কাটার অনুমতি নিতে ইউএনও বরাবর প্রশিকার আবেদন তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে সুপারিশ করেছিলেন। তবে গাছ কেটেছে প্রশিকা আর তাদের সংগঠন। এখানে চেয়ারম্যান-মেম্বরের কিছু নেই।
নড়াইল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী বলেন, প্রশিকার চুক্তির সময় সড়কটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ছিল, পরে ২০১৫ সালে এটি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। খাসজমি থেকে গাছ কাটা বেআইনি। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।