মধ্যরাতে শুরু খোকসার ঐতিহ্যবাহী কালীপূজা
Published: 29th, January 2025 GMT
কুষ্টিয়ার খোকসায় মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) দিবাগত মধ্যরাতে মহিষ ও পাঠা বলির মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে ঐহিত্যবাহী কালীপূজা ও মেলা। জেলার খোকসা উপজেলার জানিপুর গড়াই নদীর তীরে খোকসা কালী পূজা মন্দির প্রাঙ্গণে প্রতিবছর এ পূজা অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় ৬শ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলে আসা এ পূজা ও মেলাকে ঘিরে হিন্দু সম্প্রদায় এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে অন্যরকম এক আমেজের সৃষ্টি হয়েছে। ১৫ দিনব্যাপী মেলা থাকবে।
জানা যায়, হিন্দু সম্প্রদায়সহ ধর্ম বর্ণ বৈষম্যহীন এলাকাবাসীর সনাতনী ভক্তির স্থান ও ধর্মীয় পর্যটন কেন্দ্র খোকসার কালী পূজা মন্দির। বার্ষিক পূজা ও মেলাকে ঘিরে স্থানীয় সব শ্রেণি-পেশার মানুষের অন্যরকম এক আমেজের সৃষ্টি হয়। মাঘের আমাবস্যা থেকে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এ পূজা উপলক্ষে সাড়ে সাত হাত লম্বা বিশাল দেহের দৃষ্টি নন্দন কালী প্রতিমা তৈরি করা হয়।
বংশ পরাক্রমে স্থানীয় প্রতিমা শিল্পী সুকুমার বিশ্বাস, নিমাই বিশ্বাস ও তাদের তিন সহযোগী প্রতিমা তৈরির কাজ করে আসছে। কালী পূজা উপলক্ষে মন্দির প্রাঙ্গণে পক্ষকাল ব্যাপী মেলার আয়োজন করা হয়। এ মেলায় দেশ বিদেশ থেকে আসা প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষের সমাগম ঘটে।
কালী পূজার ইতিহাস সম্পর্কে জানা গেছে, খোকসার ঐতিহ্যবাহী কালীপূজা কোন সুদূর অতীতে শুরু হয়েছে তার সঠিক ইতিহাস নেই।
তবে বর্তমানে পূজারী শ্রী প্রবোধ কুমার ভট্টাচার্যের সপ্তদশ ঊর্ধ্বতন পুরুষ রামাদেব তর্কলংকার এ পূজার প্রথম পূজারী ছিলেন। আর এ থেকে অনুমান করা হয় খোকসার কালীপূজার বয়স ৬শ বছরের বেশি। আত্মপ্রচার বিমুখ তান্ত্রিক সাধু গড়াই নদীর তীরে খোকসা নামক এক জাতীয় গাছে বেষ্টিত জন মনুষ্যহীন জঙ্গলাকীর্ণ স্থানে এ কালীপূজা আরম্ভ করেন বলে লোক মুখে শোনা যায়।
কালের সাক্ষী খোকসার কালীবাড়ী বিষয়ে আরো জানা গেছে, বিশাল এক জোড়া বট ও পাকুড় গাছ বেষ্টিত প্রাত্যহিক পূজা মন্দির। এখানে রাখা আছে নলডাঙ্গার রাজা ইন্দু ভূষণ দেব রায় কর্তৃক গড়াই নদী থেকে প্রাপ্ত কৃষ্ণবর্ণের প্রস্তর খন্ড। এটি বৌদ্ধ আমলের নিদর্শন। এ প্রস্তর খন্ডের গঠন অনেকটা চৌকির মতো। কৃষ্ণবর্ণের প্রস্তর খন্ডটিকে সারা বছরই পূজা করা হয়। ২৭ ইঞ্চি লম্বা, ৪ ফুট চওড়া পিতলের পাত দিয়ে তৈরি শিব ঠাকুর পূজার পাট আসন উল্লেখযোগ্য। আগের পূজা মন্দিরটি প্রমত্তা গড়াই নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়া ১৩৪১ বাংলা সালে পূজা মন্দিরটি বর্তমান স্থানে সরিয়ে আনা হয়।
বার্ষিক পূজা মন্দিরে প্রতি বছর মাঘী আমাবস্যার তিথিতে সাড়ে সাত হাত লম্বা কালী মূর্তিসহ সাড়ে বার হাত দীর্ঘ মাটি ও খড় দিয়ে তৈরি কালীমূর্তি পূজান্তে বিসর্জন দেওয়া হয়। এখানে নির্মাণ করা হয় নাট মন্দির। বার্ষিক পূজা ও মেলায় আগত পূজার্থী এবং দর্শনার্থীদের সাময়িক বিশ্রামাগার ও পূজা কমিটির কার্যালয়। মন্দিরের সম্মুখ ভাগে রাস্তা এবং পশ্চিমে গড়াই নদী পর্যন্ত বিস্তৃত মাঠ। এটাই মেলাঙ্গন। প্রতি বছর একই তিথিতে প্রচলিত নিয়মে এ পূজা হয়ে আসছে। মাঘী আমাবস্যার এক মাস আগে কদম কাঠের কাঠামো তৈরি করা হয়। এ কাঠামোই খড় ও মাটি দিয়ে তৈরি মূর্তিতে বার্ষিক পূজা হয়ে থাকে। জমিদার আমলে এখানে এক মাসেরও অধিক সময় মেলা চলতো।
মহিষ ও পাঠা বলির সূচনা বিষয়ে জানা গেছে, কালীপূজা শুরুতেই ক্রোধের প্রতীক মহিষ ও পাঠা বলির প্রথা চালু হয়। প্রথম দিকে পাঠা বলির সংখ্যা ছিল অনির্ধারিত। বার্ষিক পূজার দিনে প্রথম প্রহরে চন্ডি পাঠান্তে একটি পাঠা বলি দেওয়া হতো। দিনের শেষ প্রহরে দেবীকে আসনে তোলার পর নড়াইলের জমিদার রতন বাবুদের পাঁচ শরিকের জন্য পাঁচটা পাঠা বলি অতঃপর নলডাঙ্গার রাজা প্রেরিত মহিষ বলি হত। এরপর শিলাইদহের জমিদারী ষ্ট্রেট এর সন্মানে জোড়া পাঠা বলি হত। মাঘী সপ্তমীর পূজা ও মেলা পর্যন্ত চলতো ভক্তদের মানসার জন্য আনা পাঠা বলি। ক্রোধের পথিক মহিষ ও পাঠা বলীর এ প্রথা সেই রাজা জমিদারী আমল থেকে আজও প্রচলিত রয়েছে।
ঐতিহ্যমন্ডিত খোকসা কালীপূজা মন্দির ও ধর্মীয় পর্যটন কেন্দ্রটি সম্পর্কে আজও কোনো ইতিহাস রচনা করা হয়নি। তবে খোকসার কালী পূজা মন্দির ও ধর্মীয় পর্যটন কেন্দ্রটি সুষ্ঠু সংরক্ষণ ও প্রসার বৃদ্ধি সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।
ঢাকা/কাঞ্চন/ইমন
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
২৯ জুলাই-৮ আগস্ট ‘ফ্যাসিবাদী শক্তির’ নৈরাজ্যের আশঙ্কায় এসবির সতর্কতা
শেখ হাসিনা সরকার পতনের বছর পূর্তি উপলক্ষে সরকার ও বিভিন্ন সংগঠনের কর্মসূচি ঘিরে ‘ফ্যাসিবাদী শক্তি’ নৈরাজ্য করতে পারে-এমন আশঙ্কার কথা জানিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব ইউনিটকে সতর্ক করে চিঠি দিয়েছে পুলিশের বিশেষ শাখা। সেই চিঠিতে ২৯ জুলাই হতে ৮ আগস্ট পর্যন্ত সময়কালকে ‘বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ’ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।
সোমবার (২৮ জুলাই) পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) ডিআইজি (রাজনীতিক উইং) এ সংক্রান্ত চিঠিতে এ সময়ে বিশেষ অভিযান পরিচালনাসহ যানবাহন তল্লাশির পরামর্শও দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) এসবি প্রধান গোলাম রসুল গণমাধ্যমকে বলেন, “এটা কোনো এক মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। তবে আমরা কোনো বিশেষ দিন-অনুষ্ঠান ঘিরে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ-নির্দেশনা দিয়ে থাকি, এটা আমাদের নিয়মিত কাজের অংশ।”
আরো পড়ুন:
সিজু নিহতের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন
অধ্যাপক জওহরলাল বসাকের উপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ঐতিহাসিক জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সরকার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ফ্যাসিবাদবিরোধী সামাজিক সংগঠনগুলো ১ জুলাই থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। এই ধারাবাহিকতায় ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত কর্মসূচি পালনের সময়কাল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে কর্মসূচি পালনকে কেন্দ্র করে বিতাড়িত ফ্যাসিবাদী শক্তি অনলাইন-অফলাইনে প্রচারণা চালিয়ে দেশব্যাপী নৈরাজ্য সৃষ্টি, ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তির কর্মসূচিতে বাধা প্রদানসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর অপচেষ্টা চালাতে পারে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখাসহ সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তি ও জানমাল রক্ষায় পুলিশের বিভিন্ন বিভাগকে কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছে এসবি। নির্দেশনাগুলো হলো ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা। ৮ আগস্ট পর্যন্ত নিয়মিত সন্দেহজনক ব্যক্তিসহ মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস ও অন্যান্য যানবাহন তল্লাশি করা। বাস টার্মিনাল, লঞ্চঘাট, রেলস্টেশন ও বিমানবন্দরের পার্শ্ববর্তী এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল অভিযান পরিচালনা করা। মোবাইল প্যাট্রোল জোরদার করা। গুজব রোধে সাইবার পেট্রোলিং কার্যক্রম অব্যাহত রাখাসহ গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করা। এছাড়া কোনো অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকলে তা তাৎক্ষণিকভাবে এসবিকে অবহিত করার কথাও বলা হয়েছে।
ঢাকা/এমআর/এসবি