ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের জিওগ্রাফি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট বিভাগের নাম পরিবর্তন নিয়ে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।

বুধবার (২৯ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় বিভাগের নাম অপরিবর্তিত রাখার দাবিতে প্রশাসনিক ভবনের সামনে মানববন্ধন অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে ‘সচেতন শিক্ষার্থী’র ব্যানারে একদল শিক্ষার্থী। কিছুক্ষণ পরে বিভাগের নাম পরিবর্তনের দাবিতে ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’র ব্যানারে আরেকদল শিক্ষার্থী মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দিলে উভয় গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

এ সময় সচেতন শিক্ষার্থীরা ‘বিভাগের নাম পরিবর্তন, চলবে না চলবে না’, ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিচার চাই’, ‘বিভাগে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, চলবে না চলবে না’, ‘বিচার চাই বিচার চাই, সন্ত্রাসীদের বিচার চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।

অপর দিকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে ‘তুমি কে আমি কে, দুষ্কৃতকারী দুষ্কৃতকারী, কে বলেছে কে বলেছে, জালিয়াতকারী জালিয়াতকারী’, ‘নাম চেঞ্জের টালবাহানা, মানি না মানব না’, ‘আমার স্বাক্ষর করল কে, এর উত্তর আগে দে’, ‘স্বাক্ষর জালিয়াতির বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।

নাম পরিবর্তন না চাওয়া শিক্ষার্থীদের দাবি, দেশের প্রায় সবকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে জিওগ্রাফি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট নামেই এ বিষয়টি পড়ানো হয়। শুধু যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি নামে রয়েছে। এ ছাড়া বিসিএস এবং পিএসসির ক্ষেত্রে জিওগ্রাফি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের সুযোগ-সুবিধা বেশি।

নাম পরিবর্তনের বিপক্ষের শিক্ষার্থী ফারিহা বলেন, “জিওগ্রাফি বিষয় পিএসসিতে নিবন্ধিত সাবজেক্ট যার সাবজেক্ট কোড রয়েছে (৩১১)। কিন্তু এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনলোজি বা শুধু এনভায়রমেন্টাল সায়েন্স কোনটাই বিষয় হিসেবে পিএসসিতে নিবন্ধিত নেই, বিষয় কোডও নেই। ফলে জিওগ্রাফি না থাকলে আমরা বিসিএসসহ (শিক্ষা) জিওগ্রাফির নিবন্ধিত সরকারি চাকরিতে আবেদন করতে পারব না।”

তিনি বলেন, “দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি স্কুল-কলেজে যেখানে ভূগোলের শিক্ষক নেওয়া হয়, সেগুলোয় নিয়োগ পেতে ভূগোল বিষয়ে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়, যা পরিবেশ বিজ্ঞানে নেই। ভূগোলেরই নিজস্ব ক্যাডার রয়েছে পিএসসিতে, যা পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বা শুধু পরিবেশ বিজ্ঞানের নেই। তাই বিভাগের নাম যা আছে, সেটাই রাখতে হবে।”

অপর দিকে নাম পরিবর্তন চাওয়া শিক্ষার্থীদের দাবি, ভর্তির সময় তারা এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড জিওগ্রাফি দেখে ভর্তি হলেও ভর্তি হওয়ার পর জানতে পারেন, বিভাগের নাম জিওগ্রাফি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট। বিভাগের নাম পরিবর্তন করার সময় স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে স্বাক্ষর নিয়ে বিভাগে আবেদনপত্র দিয়ে যাবতীয় প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নাম পরিবর্তন করার বিষয়ে তারা অবগত ছিলেন না। পরবর্তী সময়ে চাকরির বাজারে প্রবেশ করার ক্ষেত্রে অসুবিধা হবে বিধায় তারা এখন নিয়মতান্ত্রিকভাবে বিভাগের নাম পরিবর্তন চান।

নাম পরিবর্তনের পক্ষে শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, “গত ৫ মাস ধরে প্রশাসনের নিকট বিভাগের সময়োপযোগী নাম দেওয়ার যে দাবি, তা একাডেমিক কাউন্সিল ও পরবর্তী সিন্ডিকেটে উত্থাপন করতে হবে। যদি প্রশাসন পদক্ষেপ নিতে না পারে, তাহলে আমরা কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ করে দেব। আর যে স্বাক্ষর জালিয়াতি হয়েছে এ বিষয়ে আমরা হাইকোর্টে মামলা করব। সবাইকে জবাবদিহি করতে হবে।”

এ বিষয়ে বিভাগের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক বিপুল রায় বলেন, “শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিভাগে শান্তিপূর্ণ শিক্ষার পরিবেশ থাকা জরুরি। শিক্ষার্থীরা এভাবে মুখোমুখি দাঁড়ালে শান্তি বিনষ্ট হবে। তারা তো ইতোমধ্যেই তাদের দাবিগুলো আমাদের জানিয়েছেন, এখন আর এখানে কর্মসূচি পালনের প্রয়োজন নেই। একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিংয়ে আমি নিজেও থাকব, সেখান থেকে উপযুক্ত সিদ্ধান্তটাই আসবে বলে আশা করি।”

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড.

ওবায়দুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের বলেন, “বিভাগের নাম পরিবর্তন কোন সহজ বিষয় নয়। কেউ চাইলেই ইচ্ছেমতো নাম দিতে পারে না। এটার একটা নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়া আছে। তারা যেহেতু প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য দাঁড়িয়েছে, আমরা দুই পক্ষের মেসেজ পেয়েছি। আজ বেলা ৩টায় একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিং আছে, সেখানে তাদের নাম পরিবর্তনের বিষয়টি এজেন্ডাভুক্ত হয়েছে। এ বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

ঢাকা/তানিম/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন বন ধ পর ব শ প এসস

এছাড়াও পড়ুন:

গুলশানে ৫০ লাখ টাকা চাঁদাবাজির মামলায় অপু গ্রেপ্তার

রাজধানীর গুলশানে সাবেক এমপি শাম্মী আহমেদের বাসায় চাঁদাবাজির মামলায় এজাহারনামীয় আসামি বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের সদ্য বহিষ্কৃত যুগ্ম আহ্বায়ক জানে আলম অপুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

শুক্রবার (১ আগস্ট) সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর ওয়ারী থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয়ে গুলশানে ৫০ লাখ টাকা চাঁদাবাজির ঘটনায় গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের যুগ্ম আহ্বায়ক জানে আলম অপুকে ওয়ারী থেকে ডিবির ওয়ারী বিভাগের সদস্যরা গ্রেপ্তার করেছেন। তাকে মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে।

গত ১৭ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে একটি চক্র রাজধানীর গুলশানের ৮৩ নম্বর রোডে আওয়ামী লীগ নেত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় গিয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন জানে আলম অপু ওরফে কাজী গৌরব অপু এবং আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান ওরফে রিয়াদ। এ সময় শাম্মী আহমেদ দেশের বাইরে থাকায় তার স্বামী সিদ্দিক আবু জাফরকে জিম্মি করে ভয় দেখানো হয়।

চক্রটি বাসায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি করে প্রথম ধাপে ১০ লাখ টাকা আদায় করে নেয়। এর মধ্যে ৫ লাখ টাকা ভাগ পান অপু এবং বাকি ৫ লাখ পান রিয়াদ। চাঁদার দ্বিতীয় কিস্তি আনতে ২৬ জুলাই সন্ধ্যায় আবারও গুলশানের ওই বাসায় গেলে চক্রের পাঁচ সদস্যকে আটক করে পুলিশ। তারা হলেন- আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান ওরফে রিয়াদ, ইব্রাহীম হোসেন মুন্না, সাকদাউন সিয়াম, সাদমান সাদাব এবং আমিনুল ইসলাম। তাদের সবাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের বিভিন্ন পদে ছিলেন। গ্রেপ্তারের পরপরই  তাদেরকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়।

এদিকে, চাঁদাবাজির এ ঘটনায় গুলশান থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, এজাহারনামীয় ছয় আসামি ও অজ্ঞাত ১০-১২ জন সমন্বয়ক পরিচয়ে ১৭ জুলাই সকালে আমার গুলশান-২ নম্বরের বাসায় আসে। যার মধ্যে আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ ও কাজী গৌরব অপু আমাকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধামকি দিয়ে ৫০ লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার দাবি করে। তাদের দাবিকৃত টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা আমাকে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে গ্রেপ্তারের হুমকি দেখায়। একপর্যায়ে আমি বাধ্য হয়ে ১০ লাখ টাকা দিই। পরে ১৯ জুলাই রাতে রিয়াদ ও অপু আমার বাসায় এসে ধাক্কাধাক্কি করে, যা আমি পুলিশকে ফোন করে জানাই। এ সময় অভিযুক্তরা সেখান থেকে সটকে পড়ে।

এজাহারে আরো বলা হয়েছে, ২৬ জুলাই শনিবার বিকেলে রিয়াদের নেতৃত্বে আসামিরা আমার বাসার সামনে এসে আমাকে খুঁজতে থাকে। আমি বাসায় না থাকায় বাসার দারোয়ান আমাকে ফোন করে বিষয়টি জানায়। এ সময় আসামিরা তাদের দাবিকৃত আরো ৪০ লাখ টাকা না দিলে আমাকে পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করানো হবে বলে হুমকি দিতে থাকে।

ঢাকা/এমআর/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ