পদ হারিয়ে দানের অ্যাম্বুলেন্স ফেরত নিলেন মেয়র
Published: 30th, January 2025 GMT
পদ হারানোর পর দানের অ্যাম্বুলেন্স ফেরত নিলেন জামালপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র ছানুয়ার হোসেন ছানু। শুধু ফেরত নিয়েই ক্ষান্ত হননি। অ্যাম্বুলেন্সটির নাম পরিবর্তন করে ‘হ্যালো মেয়র’ মুছে ফেলে এখন সেটি সিদ্দিক অ্যাম্বুলেন্স লিখে ভাড়া খাটানো হচ্ছে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর সমালোচনার ঝড় বইছে।
প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে মেয়র পদে থাকাকালীন আনুষ্ঠানিকভাবে পৌরসভায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একটি অ্যাম্বুলেন্স দান করেন জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছানোয়ার হোসেন ছানু। পৌর কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে করোনাকালীন থেকে অ্যাম্বুলেন্সটি পৌরবাসীকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসছিল। পৌরসভার একজন গাড়িচালক অ্যাম্বুলেন্সটি চালাতেন। তার বেতন-ভাতা ও অ্যাম্বুলেন্স রক্ষণাবেক্ষণ খরচও বহন করত পৌর কর্তৃপক্ষ।
জামালপুর পৌরসভার তথ্যমতে, ২০২১ সালের ১৯ জুলাই অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম। ‘হ্যালো মেয়র’ নামে অ্যাম্বুলেন্সটি ২৪ ঘণ্টা সেবা দিত। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে আত্মগোপনে চলে যান ছানুয়ার হোসেন ছানু। সরকারি সিন্ধান্তে তাঁর পৌর মেয়রের পদও বাতিল হয়।
অ্যাম্বুলেন্সটি সম্প্রতি এক সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হলে পৌরসভার উদ্যোগে মেরামতের জন্য শহরের বাইপাস এলাকায় একটি ওয়ার্কশপে দেওয়া হয়। কিছুদিন আগে ছানোয়ার হোসেন ছানুর ব্যক্তিগত কর্মচারী মো.
জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, জামালপুরের মানবিক মেয়রখ্যাত ছানুয়ার হোসেন অ্যাম্বুলেন্সটি চালু করেছিলেন, মানুষ সেটাই জানত। কিন্তু সেটা ফেরত নিয়ে মানবিক মেয়র অমানবিক কাজ করেছেন।
পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হাফিজুর রহমানের ভাষ্য, করোনা মহামারির সময় তৎকালীন মেয়র ছানোয়ার হোসেন পৌরবাসীকে বিশেষ স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবা দেওয়ার লক্ষ্যে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালু করেন। সাবেক মেয়র ছানোয়ার হোসেন অ্যাম্বুলেন্সটি পৌরসভার অর্থে ক্রয় করেননি। অ্যাম্বুলেন্সটি পৌরসভাকে দান কিংবা লিখিতভাবে দেননি। তাছাড়া অ্যাম্বুলেন্সটির যাবতীয় কাগজপত্র যেহেতু ব্যবসায়ী সিদ্দিকুর রহমানের নামে, সেহেতু পৌরসভার পক্ষ থেকে অ্যাম্বুলেন্সটি ফেরত আনার কোনো উদ্যোগ নেওয়াও আইনসিদ্ধ নয়।
জামালপুর পৌরসভার প্রশাসক মৌসুমী খানম বলেন, তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর অ্যাম্বুলেন্সটি পাননি। তৎকালীন মেয়র অ্যাম্বুলেন্সটি পৌরসভায় লিখিতভাবে দানও করেননি। অ্যাম্বুলেন্সের কোনো কাগজপত্র পৌরসভার নামে নেই। তাই অ্যাম্বুলেন্সটি পৌরসভার পক্ষে দাবি করা কিংবা উদ্ধারকল্পে ব্যবস্থা নেওয়াটা কতটুকু যুক্তিযুক্ত বা আইনসিদ্ধ হবে, সেটা আপনারাই বলুন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রসভ র প র প রসভ র
এছাড়াও পড়ুন:
জমিজমার বিরোধে থানায় সালিসে গিয়ে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার যুবক
জমিজমা–সংক্রান্ত বিরোধে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় সালিসে আসা এক যুবককে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ দুপুরে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ওই যুবকের মা আনারা বেগম এ কথা জানান।
গ্রেপ্তার ওই যুবকের নাম আল-আমিন (৩২)। তাঁর বাড়ি নগরের বলাশপুর এলাকায়। মায়ের দাবি, আল-আমিন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। সালিসে জমিজমার কাগজ ঠিক থাকায় সাদা কাগজে স্বাক্ষর করতে রাজি না হলে রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।
তবে পুলিশ বলছে, ওই যুবক যুবলীগের সমর্থক। তাঁকে গ্রেপ্তারে কয়েকবার বাড়িতে অভিযানও চালিয়েছে পুলিশ। থানায় তাঁকে পেয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যদিও গ্রেপ্তারের পর আদালতে পাঠানো প্রতিবেদনে তাঁকে নগরের কেওয়াটখালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আল-আমিনের মা আনারা বেগম বলেন, ২০২১ সালে বলাশপুর এলাকায় স্বামীর পেনশনের ১৭ লাখ টাকায় ৩ দশমিক ৬০ শতাংশ জমি কেনেন তাঁরা। এর আগে ২০০৮ সালে একই দাগে ৪ শতাংশ জমি কেনার দাবি করে ২০২২ সালে জোরপূর্বক সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করেন এক ব্যক্তি। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে সালিস হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। ৫ আগস্টের পর সরকার পরিবর্তন হলে নিজের কেনা জমিতে বাড়ি করার উদ্যোগ নিলে বাধা হয়ে দাঁড়ান ওই ব্যক্তি ও তাঁর পক্ষের লোকজন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে কোতোয়ালি মডেল থানায় উভয় পক্ষকে ডাকা হয়। গত শনিবার রাত আটটায় থানায় সালিস শুরু হয়। চলে রাত ১২টা পর্যন্ত। সালিসে শেষ পর্যায়ে যখন জমির কাগজপত্র তাঁদের ঠিক পান সালিসকারীরা, তখন ওসি আল-আমিনকে তাঁর কক্ষে নিয়ে পিটিয়ে হাড়গোড় ভেঙে ফেলার হুমকি দেন। পেছনে পেছনে তিনি গিয়ে প্রতিবাদ করলে তাঁর সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করা হয়। এরপর আল-আমিনকে গারদে ঢুকিয়ে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করার জন্য চাপ দেওয়া হয়। রাজি না হওয়ায় সাজানো রাজনৈতিক মামলায় তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।
আনারা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে কোনো রাজনীতি করে না। আমার ছেলে ব্যবসা করে। তাকে রাজনৈতিক মামলায় পুলিশ কারাগারে পাঠিয়েছে।’
২৭ জুলাই আল-আমিনকে আদালতে পাঠানোর প্রতিবেদনে পুলিশ উল্লেখ করে, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাত ১টা ৩৫ মিনিটে পুলিশের টহল দল নগরের আকুয়া ভাঙ্গাপুল এলাকায় অবস্থানকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে সদরের উত্তর দাপুনিয়ার সরকারি পুকুরপাড় সেলফি নামের স্থানে পাকা রাস্তার ওপর একদল সন্ত্রাসী জনতাবদ্ধ হয়ে রাস্তা বন্ধ করে গাড়ি ভাঙচুর ও দাঙ্গাহাঙ্গামা সৃষ্টি করে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ৫টি মশাল, ২০টি লাঠি, ৩০টি ইটের টুকরা, ২৫টি কাচের টুকরা জব্দ করা হয়। এ ঘটনার পরদিন পুলিশ কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় আল-আমিনকে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে ২৬ জুলাই রাত ১১টা ৪০ মিনিটে নগরের কেওয়াটখালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রতিবেদনে পুলিশ আল-আমিনকে যুবলীগের সমর্থক হিসেবে উল্লেখ করে।
থানার ওই সালিসে থাকা মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি মো. বাবু বলেন, থানা চত্বরের একটি ঘরে এসআই সজীব কোচের উপস্থিতিতে দুই পক্ষের কাগজপত্র বোঝেন, এমন লোকজন নিয়ে সালিস শুরু হয়। একপর্যায়ে আল-আমিনকে ‘ফ্যাসিস্ট’ আখ্যায়িত করে গ্রেপ্তারের দাবি জানান প্রতিপক্ষের লোকজন। পরে তাঁকে থানা থেকেই গ্রেপ্তার করা হয়।
জানতে চাইলে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম বলেন, ‘১০ দিন আগে থেকে দারোগারা তাঁকে (আল-আমিন) ধরার জন্য খুঁজতেছে। ডেভিল হান্টের আসামি সে। আমাদের দুই দারোগা ছয় থেকে সাতবার তাঁর বাড়িতে রেড দিছে। সে যুবলীগের ফ্যাসিস্ট। মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তদন্তে প্রাপ্ত আসামি।’ ওসি বলেন, কোনো কাগজপত্র দিয়ে নোটিশ করে তাঁকে থানায় ডাকা হয়নি। বিচারক যদি মনে করে আমরা তাঁকে ইলিগ্যাল অ্যারেস্ট করেছি, তাহলে আদালত ফাইন্ডিংস দেবেন। আসামিকে থানা থেকে গ্রেপ্তার করা কী নিষেধ আছে?’ আদালতের প্রতিবেদনে ভিন্ন স্থান দেখানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জজ এটার বিচার করবে। যদি এমন কইরা থাকে, সমস্যা কী?’