Samakal:
2025-08-01@09:13:12 GMT

নদী বাঁচলে প্রাণ বাঁচবে

Published: 31st, January 2025 GMT

নদী বাঁচলে প্রাণ বাঁচবে

নদীমাতৃক বাংলাদেশে নদীই প্রাণ। অট্টালিকাসমৃদ্ধ বড় বড় শহর গড়ে উঠেছে নদীকে কেন্দ্র করে। ইতিহাসে আমরা যত বিশাল ও সমৃদ্ধ সভ্যতা দেখি না কেন, তাদের সভ্যতার বিস্তার ঘটেছে নদীকে কেন্দ্র করেই। একসময় সভ্যতা-সংস্কৃতি থেকে পৌরাণিক কাহিনি, ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি, শিল্প, ভৌগোলিক গড়ন, যোগাযোগ ব্যবস্থা, এমনকি জীবিকার অনুষঙ্গ গড়ে উঠেছিল নদীকে কেন্দ্র করে। বাংলাদেশের উর্বরতা সমৃদ্ধ মাটি তৈরিতে প্রধান কারিগর নদী। বাংলাদেশে ৫৭টি আন্তর্জাতিক নদী রয়েছে। এ ছাড়া শাখা-প্রশাখা মিলিয়ে ৭০০-এর মতো নদনদী, অসংখ্য খাল-বিল বাংলাদেশের বুক চিরে জালের মতো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। এ দেশে কৃষিকাজে যুগ যুগ ধরে নদীর সেবা পেয়ে আসছে জনগণ। ক্ষেতে সেচ দেওয়া থেকে শুরু করে শিল্পকারখানায় অন্যতম প্রধান সহায়ক হিসেবে পানি অপরিহার্য। যে পানির জোগান দিয়ে থাকে নদী। ভূগর্ভস্থ পানির লেয়ার ধরে রাখতে নদী অদ্বিতীয়। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও মাটির স্বাস্থ্য ধরে রাখতে পানি খুবই কার্যকর। এ ছাড়া সামুদ্রিক অনেক মাছ প্রজননের সময় নদীতে এসে ডিম পাড়ে। 

আমাদের জাতীয় জীবনে গুরুত্বপূর্ণ নদীগুলো আজ মুমূর্ষু অবস্থায়। দখল-দূষণে ধীরে ধীরে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে এক সময়ের খরস্রোতা ও উপকারী নদীগুলো। ইদানীং দেখা যাচ্ছে অসাধু ও ভূমিদস্যুদের নদী দখলের অবাধ প্রতিযোগিতা ও ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনে নদীগুলো নাব্য হারিয়ে আজ মৃতপ্রায়। আন্তঃদেশীয় নদীগুলোর ওপর বাঁধ দেওয়ার ফলে পানির প্রবাহে তারতম্য সৃষ্টি হওয়ায় নদীগুলো হারাচ্ছে স্বাভাবিক প্রবাহ এবং শুকনো মৌসুমে পানি কমে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে অহরহ। এ ছাড়া ট্যানারি, কলকারখানার দূষিত ও বিষাক্ত বর্জ্য অবাধে নদীতে ফেলা, গৃহস্থালি বর্জ্য, কৃষিক্ষেতে ব্যবহৃত রাসায়নিক সার ও বিষ যা বৃষ্টির পানির সঙ্গে নদীতে মিশে নদীদূষণে জীববৈচিত্র্য ধ্বংসে সহায়তা করছে। হাসপাতাল-ক্লিনিকের বর্জ্য ও জাহাজের তেল এবং শহরের অপচনশীল কঠিন আবর্জনা নদীদূষণে সমানভাবে দায়ী। 
অপরিকল্পিত উপায়ে নদীপাড়ে গড়ে ওঠা বিভিন্ন স্থাপনা নদীর স্বাভাবিক পানিপ্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। নদীদূষণের ক্ষতিকর প্রভাব ভয়াবহ। নদীদূষণের ফলে পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য ও মানব স্বাস্থ্যের জন্য বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। নদীদূষণের ফলে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাবসহ মানব স্বাস্থ্যঝুঁকি বৃদ্ধি করে। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য বিপর্যস্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের জন্য প্রাণঘাতী ক্যান্সার রোগের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে। এ ছাড়া অ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট, চর্ম, ফুসফুসের রোগসহ পানিবাহিত বিভিন্ন জটিল ও কঠিন রোগের সৃষ্টি করে। বিরতিহীনভাবে নদী দখল ও দূষণের ফলে নদী হারাচ্ছে তার স্বাভাবিক প্রবাহ। সেই সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে শিশুদের সোনালি শৈশব। সাঁতার কাটার জায়গা না পেয়ে সাঁতার শেখা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অনেক শিশু, যা অনেক ক্ষেত্রে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর অঙ্ক বাড়িয়ে দিচ্ছে। 
দূষণের করাল গ্রাস থেকে নদীগুলোর জীবনীশক্তি ফিরিয়ে আনতে নদীর ওপর চালানো অত্যাচারের স্টিমরোলার বন্ধ করা; যত্রতত্র বাঁধ, কালভার্ট ও ব্রিজ তৈরিতে যথাসম্ভব সতর্কতা অবলম্বন; নদীদূষণ রোধে নদীর পানিতে বর্জ্য ফেলা বা নৌযান নির্গত বর্জ্য নিক্ষেপে যথা সম্ভব বিরত থাকলে সুফল পাওয়া যাবে। এ ছাড়া নৌযান চলাচলের জন্য বিকল্প জ্বালানির কথা চিন্তা করা, শিল্প ও কলকারখানায় বর্জ্য নদীতে না ফেলে তা পরিশোধনের ব্যবস্থা বা নিরাপদভাবে বর্জ্য নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা, প্লাস্টিক জাতীয় কঠিন বর্জ্য পুনর্ব্যবহার করা যেতে পারে। নদী দখলমুক্ত করতে আমাদের রাজনৈতিক সদিচ্ছা বেশি প্রয়োজন। জাগ্রত ও সচেতন নাগরিকদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা, সরকারের সুদৃষ্টি এবং আইনের অনুশাসন মৃতপ্রায় নদীগুলোকে রক্ষা করতে কার্যকর হতে পারে।

খন্দকার বদিউজ্জামান বুলবুল: 
শিক্ষার্থী, আনন্দ মোহন কলেজ, ময়মনসিংহ

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর ব শ ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

সবাই ভেবেছিলেন কিশোরী ডুবে গেছে, ১০ দিন পর ফোন করে জানাল সে গাজীপুরে আছে

১০ দিন আগে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর মরা কালিগঙ্গা নদীতে গোসল করতে গিয়েছিল কিশোরী সোহানা খাতুন। বাড়িতে ফিরে না আসায় পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসী তাকে খুঁজতে শুরু করেন। পরে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল নদীতে অভিযান চালিয়েও তার সন্ধান পায়নি। তবে গত বুধবার রাতে মাকে ফোন করেছে সোহানা; জানিয়েছে সে গাজীপুরে প্রাক্তন স্বামীর কাছে আছে।

নিখোঁজ হওয়া কিশোরীর নাম সোহানা খাতুন। তার বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার বাগুলাট ইউনিয়নের বাঁশগ্রাম কারিগর পাড়ায়। তার বাবা গোলাম মওলা ও মা শিরিনা খাতুন।

পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯ জুলাই দুপুরে বাড়ির পাশের মরা কালিগঙ্গা নদীতে গোসল ও কাপড় ধুতে গিয়েছিল সোহানা। দীর্ঘ সময়েও না ফেরায় তার মা নদীর ধারে যান; দেখেন, সোহানার কাপড় পড়ে আছে। এরপর স্বজন ও এলাকাবাসী তাকে খুঁজতে শুরু করেন। খবর পেয়ে ওই রাতে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল নদীতে উদ্ধার অভিযান চালায়। পরদিন খুলনা ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল ১২ ঘণ্টা অভিযান চালিয়েও তার সন্ধান না পেয়ে অভিযান স্থগিত করে। ২১ জুলাই এক কবিরাজ এনে নদীতে খোঁজার চেষ্টাও করেন সোহানার বাবা–মা।

এমন অবস্থায় বুধবার রাতে হঠাৎ সোহানা তার মায়ের ফোনে কল দিয়ে জানায়, সে ঢাকার গাজীপুরে তার প্রাক্তন স্বামীর কাছে রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান সোহানার বাবা গোলাম মওলা। তিনি বলেন, ‘প্রথমে ভেবেছিলাম, মেয়ে নদীতে ডুবে গেছে। সবাই মিলে খোঁজাখুঁজি করেছি। এমনকি কবিরাজও এনেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ বুধবার আমার স্ত্রীকে ফোন দিয়ে জানায়, সে প্রাক্তন স্বামীর কাছে আছে। আমরা বিষয়টি গতকাল রাতে পুলিশকে জানিয়েছি।’ বিষয়টি বুঝতে না পেরে সবাইকে কষ্ট দেওয়ার জন্য তিনি ক্ষমা চান।

স্থানীয় লোকজন জানান, প্রায় দুই বছর আগে খালাতো ভাই কুতুব উদ্দিনের সঙ্গে পালিয়ে যায় সোহানা এবং দুজন বিয়ে করে। তবে বনিবনা না হওয়ায় তিন মাস আগে সোহানা তাকে তালাক দিয়ে বাবার বাড়ি চলে আসে। নদীতে নিখোঁজ হওয়ার ‘নাটক’ করে সে পালিয়ে গেছে।

এ বিষয়ে কুমারখালী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আমিরুল ইসলাম বলেন, শুরুতে পরিবারের লোকজন জানিয়েছিল, নদীতে গোসলে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছে সোহানা। গতকাল আবার তার বাবা জানিয়েছে, মেয়ে গাজীপুরে প্রাক্তন স্বামীর কাছে আছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ