সম্প্রতি বাংলাদেশে শিশুখাদ্যের ওপর ভ্যাট বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়ে নানা আলোচনা ও সমালোচনা হচ্ছে। পুষ্টিকর খাদ্যকে আরও ব্যয়বহুল করে তোলা শুধু পরিবারগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করবে না; এটি দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বর্তমান অর্থনৈতিক মন্দা এবং অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রেক্ষাপটে শিশুখাদ্যের ওপর ভ্যাট বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গভীর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। বিক্রয়কর্মী ও বেকারি মালিকদের বক্তব্য অনুযায়ী, ভ্যাট বাড়ানোর প্রভাব শুধু পণ্যের দাম বাড়িয়েই থেমে থাকছে না; বরং বাজারে ভেজাল পণ্য এবং অপ্রয়োজনীয় কাটছাঁটের মতো সমস্যাও বাড়ছে। ফলে এ সংকট শুধু অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে নয়; সামাজিক ও নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও মূল্যায়ন করা জরুরি।
পুষ্টিহীনতায় শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে জাতির ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সক্ষমতা কমে যায়। শিশুখাদ্যে অতিরিক্ত কর আরোপ করা হলে তা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যেতে পারে, যা শিশুদের পুষ্টি চাহিদা পূরণে বাধা সৃষ্টি করে। একটি গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশের ৩৫.
অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে শিশুখাদ্যের মূল্য এমনিতেই বেশি। তদুপরি ভ্যাট বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত পরিস্থিতি আরও খারাপ করবে। বিশ্বের বেশির ভাগ দেশে শিশুখাদ্যের দাম অনেক কম এবং ভ্যাটমুক্ত কিংবা ভ্যাটের পরিমাণ সীমিত। এ ক্ষেত্রে মালয়েশিয়ার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। মালয়েশিয়ায় শিশুদের পুষ্টিকর খাদ্য ভ্যাটমুক্ত। দেশটির সরকার ভর্তুকির মাধ্যমে কম আয়ের পরিবারের জন্য বিশেষ পুষ্টি কর্মসূচি পরিচালনা করে। ইউনিসেফের মতে, পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিত করা গেলে অপুষ্টিজনিত সমস্যার কারণে স্বাস্থ্য খাতে যে অতিরিক্ত এক বিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়, তা কমানো সম্ভব। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রাজস্ব বাড়ানোর জন্য বিকল্প পন্থা গ্রহণ করা সম্ভব। বিলাসপণ্য, উচ্চ আয়ের ব্যক্তিদের ওপর কর বাড়ানো এবং অর্থনৈতিক সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রাজস্ব বাড়ানো যেতে পারে। কিন্তু শিশুদের পুষ্টির মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে অতিরিক্ত ভ্যাটের বোঝা চাপিয়ে দেওয়ার মতো এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত নয়। শিশুদের সুরক্ষা ও পুষ্টি নিশ্চিত করা কেবল সামাজিক বা নৈতিক দায়িত্ব নয়, এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক বিনিয়োগ। শিশুখাদ্যের ওপর ভ্যাট বৃদ্ধির মতো পদক্ষেপ শুধু বর্তমান প্রজন্মের জন্য নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও ক্ষতিকর। সরকারের উচিত, শিশুখাদ্যে ভ্যাট বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা। এটা শুধু জনকল্যাণের জন্য নয়, বরং সরকারের দীর্ঘমেয়াদি সুনাম, গ্রহণযোগ্যতা ও আস্থা বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে।
প্রজ্ঞা দাস
শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ,
ইডেন মহিলা কলেজ
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সবাই ভেবেছিলেন কিশোরী ডুবে গেছে, ১০ দিন পর ফোন করে জানাল সে গাজীপুরে আছে
১০ দিন আগে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর মরা কালিগঙ্গা নদীতে গোসল করতে গিয়েছিল কিশোরী সোহানা খাতুন। বাড়িতে ফিরে না আসায় পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসী তাকে খুঁজতে শুরু করেন। পরে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল নদীতে অভিযান চালিয়েও তার সন্ধান পায়নি। তবে গত বুধবার রাতে মাকে ফোন করেছে সোহানা; জানিয়েছে সে গাজীপুরে প্রাক্তন স্বামীর কাছে আছে।
নিখোঁজ হওয়া কিশোরীর নাম সোহানা খাতুন। তার বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার বাগুলাট ইউনিয়নের বাঁশগ্রাম কারিগর পাড়ায়। তার বাবা গোলাম মওলা ও মা শিরিনা খাতুন।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯ জুলাই দুপুরে বাড়ির পাশের মরা কালিগঙ্গা নদীতে গোসল ও কাপড় ধুতে গিয়েছিল সোহানা। দীর্ঘ সময়েও না ফেরায় তার মা নদীর ধারে যান; দেখেন, সোহানার কাপড় পড়ে আছে। এরপর স্বজন ও এলাকাবাসী তাকে খুঁজতে শুরু করেন। খবর পেয়ে ওই রাতে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল নদীতে উদ্ধার অভিযান চালায়। পরদিন খুলনা ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল ১২ ঘণ্টা অভিযান চালিয়েও তার সন্ধান না পেয়ে অভিযান স্থগিত করে। ২১ জুলাই এক কবিরাজ এনে নদীতে খোঁজার চেষ্টাও করেন সোহানার বাবা–মা।
এমন অবস্থায় বুধবার রাতে হঠাৎ সোহানা তার মায়ের ফোনে কল দিয়ে জানায়, সে ঢাকার গাজীপুরে তার প্রাক্তন স্বামীর কাছে রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান সোহানার বাবা গোলাম মওলা। তিনি বলেন, ‘প্রথমে ভেবেছিলাম, মেয়ে নদীতে ডুবে গেছে। সবাই মিলে খোঁজাখুঁজি করেছি। এমনকি কবিরাজও এনেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ বুধবার আমার স্ত্রীকে ফোন দিয়ে জানায়, সে প্রাক্তন স্বামীর কাছে আছে। আমরা বিষয়টি গতকাল রাতে পুলিশকে জানিয়েছি।’ বিষয়টি বুঝতে না পেরে সবাইকে কষ্ট দেওয়ার জন্য তিনি ক্ষমা চান।
স্থানীয় লোকজন জানান, প্রায় দুই বছর আগে খালাতো ভাই কুতুব উদ্দিনের সঙ্গে পালিয়ে যায় সোহানা এবং দুজন বিয়ে করে। তবে বনিবনা না হওয়ায় তিন মাস আগে সোহানা তাকে তালাক দিয়ে বাবার বাড়ি চলে আসে। নদীতে নিখোঁজ হওয়ার ‘নাটক’ করে সে পালিয়ে গেছে।
এ বিষয়ে কুমারখালী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আমিরুল ইসলাম বলেন, শুরুতে পরিবারের লোকজন জানিয়েছিল, নদীতে গোসলে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছে সোহানা। গতকাল আবার তার বাবা জানিয়েছে, মেয়ে গাজীপুরে প্রাক্তন স্বামীর কাছে আছে।