Samakal:
2025-06-16@08:58:47 GMT

নেইমার ফিল সেভেন্টিন

Published: 2nd, February 2025 GMT

নেইমার ফিল সেভেন্টিন

সান্তোসের মাঠ ভিলা বেলমিরো থেকে হাঁটা দূরত্ব আধা কিলোমিটারের মতো ১৪ তলা সমাধি ভবন, সেই একুমেনিকেল মেমোরিয়াল সিমেট্রির প্রথম তলাতেই শান্তিতে চিরঘুমে পেলে। তিনিই বলে গিয়েছিলেন, মৃত্যুর পরও যেন সান্তোসের কাছাকাছি থাকতে পারেন। সান্তোসের কিং পেলে কি এদিন শুনতে পেয়েছিলেন, এক প্রিন্সের প্রত্যাবর্তনে সেখানকার মানুষের হর্ষধ্বনি। অনুভব করতে পেরেছিলেন কি, তাদের আবেগ! দেখতে পেয়েছিলেন কি, সেই যুবরাজকে পরানো তাঁর পছন্দের সেই ১০ নম্বর জার্সিটি? 

যখন হাজার বিশেক সমর্থকের সামনে এসে সেই ১০ নম্বর জার্সিটি পরে কান্নায় ভাসছিলেন নেইমার, তখন ওপর থেকে নিশ্চিত তাঁকে আশীর্বাদ করেছিলেন পেলে। আসলে সাও পাওলোর প্রত্যেক ফুটবলারের কাছে সান্তোস একটি আবেগের নাম। গতকাল সেই ক্লাবে ১৫ বছর পর ফিরে এসে নেইমারও ভাসলেন আবেগ ও ভালোবাসার স্রোতে। 

‘কিছু সিদ্ধান্ত আছে, যা ফুটবল বা যুক্তির সীমানার বাইরে। কিছু আছে প্রভাব বিস্তারি। স্বীকার করছি, জানুয়ারির শুরুতেও আমি কল্পনা করিনি, সান্তোসে ফিরব বা আল হিলাল ছাড়ব। আমি সেখানে খুশি ছিলাম, আমার পরিবারও খুশি ছিল। তবে এর পর কিছু ব্যাপার ঘটল এবং আমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হতো। প্রতিদিনের অনুশীলনে আমি ভালো অনুভব করছিলাম না। তাই সান্তোসে ফেরার প্রস্তাব পেয়ে দ্বিতীয়বার ভাবিনি।’ মাইক হাতে কথাগুলো বলতে বলতেই যেন কৈশোরের সেই দিনগুলোতে ফিরে যান নেইমার।

১১ বছর বয়সে এই ক্লাবে পা রেখেছিলেন। ৬ বছর পর এখান থেকেই পেশাদার ফুটবলে যাত্রা শুরু হয় তাঁর। চার বছরে সান্তোস এফসির হয়ে মোট ২২৫ ম্যাচে ১৩৬ গোল করেন। ২০১১ সালে কোপা লিবের্তাদোরেস চ্যাম্পিয়ন হয়, যা ছিল ৫০ বছরের মধ্যে সেই টুর্নামেন্টে সান্তোসের প্রথম শিরোপা। তার পরই তো ব্রাজিল থেকে বার্সেলোনা, প্যারিস, রিয়াদ হয়ে ফের সান্তোসে আসা।

‘নতুন প্রাণশক্তি নিয়ে ফিরেছি আমি। এখানে পা রাখার পরই মনে হচ্ছে, যেন বয়স আবার ১৭ হয়ে গেছে।’ বছর বত্রিশের নেইমারকে এ সময় সতেরোর কিশোরের মতোই লাগছিল যেন। কখনও গ্যালারির দিকে মাথা ঝুঁকিয়ে, কখনও মাটিতে চুমু খেয়ে, কখনও দুই হাত গোল সেলিব্রেশনের মতো ছড়িয়ে বারবার সান্তোসের দর্শকদের ধন্যবাদ জানাচ্ছিলেন। তাঁর জন্য রাজকীয় সংবর্ধনার আয়োজন করেছিল ক্লাবটি। স্থানীয় শিল্পীদের নিয়ে কনসার্টও আয়োজন করেছিল। আতশবাজি ও আলোর ঝলকানিতে মাঠে প্রবেশ করেন তিনি। দর্শকদের আবদারে ড্রিবলিং দেখানোর পর নেইমার বলতে থাকেন, ‘ম্যাচে এসব নান্দনিক সৌন্দর্য দেখানোর সাহসের ঘাটতি থাকবে না।’

নেইমারকে নিয়ে ‘দ্য প্রিন্স ইজ কামিং ব্যাক’ শিরোনামে একটি ভিডিও পোস্ট করে ক্লাবটি। যেখানে নেইমার বলেন, ‘কিং পেলে, আপনার ইচ্ছা আমার কাছে আদেশের মতো। সিংহাসন এবং মুকুট এখনও আপনার। আপনি চিরন্তন। আপনার এই ১০ নম্বর; পবিত্র এই জার্সিটি গায়ে জড়ানো আমার জন্য সম্মানের।’ ছয় মাসের জন্য সান্তোসের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে তাঁর। এদিন সাও পাওলো থেকে বন্দরনগরী সান্তোসে হেলিকপ্টারে আসেন নেইমার। তাঁকে দেখার জন্য স্টেডিয়ামের বাইরেও হাজারখানেক মানুষ ভিড় করেন, যা দেখে পুরোনো সেই দিনে ফিরে গিয়েছিলেন ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার নেইমার।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

‘ভালোবাসার আসল রূপটাই যেন ছিলেন আব্বা’

এবারের বাবা দিবস আমার কাছে একটু অন্যরকম। চারপাশ যেন কিছুটা বেশি নিস্তব্ধ, হৃদয়ের ভেতর যেন একটু বেশি শূন্যতা। কারণ এবার প্রথমবারের মতো আমার আব্বাকে ছাড়াই কাটছে দিনটি। আব্বা চলে গেছেন গত জানুয়ারিতে। ফলে বাবা দিবস এখন আর কেবল উদযাপনের দিন নয়– এটি হয়ে উঠেছে স্মরণ, অনুধাবন ও আমার জীবনের সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের উপলক্ষ। আব্বা না থেকেও আছেন, তবে এক ভিন্ন অনুভবে– আমার নীরব নিঃশব্দ অভিভাবক হয়ে।    

আমাদের সমাজে কিংবা বলা যায় পারিবারিক সংস্কৃতির বাবারা সবসময় প্রকাশের ভাষায় ভালোবাসা বোঝান না। তাদের স্নেহ, দায়িত্ববোধ ও নিবেদন অনেক সময়েই নীরব থাকে, তবে গভীরভাবে অনুভব করা যায়। আমার আব্বাও ছিলেন তেমনই একজন। আব্বা ছিলেন আমার দিকনির্দেশক, আমার রক্ষাকবচ, আমার জীবনপথের চুপচাপ ভরসা। 

আব্বার অ্যাজমা ছিল, তা সত্ত্বেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত স্বাস্থ্যসচেতন। নিজের শরীরের প্রতি যত্ন নিতেন, আমাদের প্রতিও ছিল তাঁর সজাগ দৃষ্টি। আমি কিংবা আমার মেয়ে সামান্য অসুস্থ হলেই তিনি অস্থির হয়ে যেতেন। তাঁর যখন ৭৯ বছর বয়স, তখনও আমি ডাক্তারের কাছে একা যেতে গেলে বলতেন, ‘তুমি একা যাবে কেন? আমি যাচ্ছি।’ এই কথা বলার মানুষটাকে প্রতি পদে পদে আমার মনে পড়ে, যেন দূর থেকে দেখছেন সবই। আর আমিও তাঁর কনুই-আঙুল ধরে হেঁটে যাচ্ছি জীবনের পথে।    

আব্বা ছিলেন একজন পুরোদস্তুর ধার্মিক মানুষ। শৈশব থেকে নামাজের গুরুত্ব তিনি আমার মধ্যে গভীরভাবে বপন করার চেষ্টা করে গেছেন। কখনও নরম সুরে, আবার কখনও খুব জোর গলায়। তখন মনে হতো তিনি চাপ দিচ্ছেন; কিন্তু এখন তাঁর অনুপস্থিতির নিস্তব্ধতায় আমি সেই কণ্ঠস্বরের জন্য আকুল হই।

অফিস থেকে ফিরতে দেরি করলে কিংবা আত্মীয়ের বা বন্ধুর বাসায় গেলে বাবার ফোন আসত, ‘কোথায়? কখন ফিরবি?’ সেসব ফোন একসময় মনে হতো আব্বার বাড়াবাড়ি। এখন মনে হয়, একটাবার হলেও যদি ফোনে তাঁর নামটা দেখতাম! ছোট ছোট এসব প্রশ্ন– এই উদ্বেগই তো ছিল নিঃশব্দ ভালোবাসা। এগুলোই ছিল বাবার নিজের মতো করে যত্ন নেওয়ার ভাষা। সেই ভাষাটাই আজ আর শোনা যায় না। আব্বা নেই, এখন জীবনযাপনে এক অদ্ভুত শূন্যতা ঘিরে থাকে।

আব্বা ছিলেন একজন ব্যাংকার। হয়তো চেয়েছিলেন আমি তাঁর পেশার ধারাবাহিকতা বজায় রাখি। কিন্তু কোনোদিন চাপ দেননি। বরং নিজের ইচ্ছেমতো পথ বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা দিয়েছিলেন; ছায়ার মতো পাশে ছিলেন। আব্বাই আমাকে নিজের ওপর আস্থা রাখতে শিখিয়েছেন। বিয়ে করেছি, বাবা হয়েছি, নিজস্ব ক্যারিয়ার গড়েছি– তবুও বাবার সেই গাইডেন্স কখনও ফুরায়নি। আব্বা কখনও অর্থ বা অন্য কোনো সহায়তার কথা বলেননি; বরং সবসময় নিজে থেকেই পাশে থেকেছেন। মনে পড়ে, একবার মেয়ের অসুস্থতার সময় আমি অর্থকষ্টে ছিলাম, কিছু বলিনি তাঁকে। কিন্তু তিনি ঠিকই বুঝে গিয়েছিলেন, পাশে থেকেছেন।

এখন অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় মনে হয়, ‘বাবা হলে কী করতেন?’ তাঁর শিক্ষা, অভ্যাস, স্নেহ– সবকিছু এখন আমার আচরণে, আমার সিদ্ধান্তে, আমার ভালোবাসায় প্রতিফলিত হয়। তাঁকে ছুঁতে না পারলেও আমি প্রতিদিন তাঁর উপস্থিতি অনুভব করি– স্মৃতিতে, নৈঃশব্দ্যে, নানা রকম ছোট ছোট মুহূর্তে।

এই বাবা দিবসে আব্বার কোনো ফোন আসবে না, থাকবে না কোনো উপহার বা আলিঙ্গনের মুহূর্ত; যা আছে সেটি হলো আব্বার প্রতি একরাশ কৃতজ্ঞতা, শ্রদ্ধা আর অপার ভালোবাসা। যিনি জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে সন্তানদের শুধু দিয়েছেন, বিনিময়ে কিছু চাননি কখনোই। তাঁর জীবনদর্শন আর মানুষের প্রতি ভালোবাসা, সহানুভূতি– এগুলোই নিজের জীবনে ধারণ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি, হয়তো পুরোপুরি পারছি না; কিন্তু আমার মনে হয় এ চেষ্টাটাই আমার জীবনে শৃঙ্খলা এনেছে।

বাবাকে হারানোর শোক যেমন গভীর, তেমনি গভীর তাঁর রেখে যাওয়া ভালোবাসা। নিজের অনুভবকে চাপা না দিয়ে, বরং বাবাকে নিজের ভেতরে জায়গা দিন। বাবার কথা বলুন, তাঁর শেখানো পথে হাঁটুন। কারণ প্রিয় মানুষরা চলে যান বটে, কিন্তু তাঁদের ভালোবাসা থেকে যায় সবসময়।

লেখক: কমিউনিকেশনস প্রফেশনাল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘ভালোবাসার আসল রূপটাই যেন ছিলেন আব্বা’
  • বর্ষার শুরুতেই সপ্তাহব্যাপী বৃষ্টির বার্তা
  • টানা সাত দিন সারাদেশে বৃষ্টি ঝরবে
  • অর্ধশত বছরের চামড়ার মোকাম রাজারহাট
  • সিদ্ধিরগঞ্জে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে সোর্স ইকবালের ডাকাতি