দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম কৃষি বিদ্যাপীঠ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) প্রতিষ্ঠার ঠিক দু’বছর পরই ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (বাকৃবিসাস)।
বাংলাদেশে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাংবাদিক সংগঠনের মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী এই সংগঠনটি ৬২ বছরের দীর্ঘ যাত্রায় বহু শিক্ষার্থীর সাংবাদিকতার দক্ষতা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে। বাকৃবিসাস সদস্যদের নিবেদিতপ্রাণ লেখনীর মাধ্যমে শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠনপ্রণালি ও গবেষণা কার্যক্রম নয়, দেশের কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিষয়ক সামগ্রিক উন্নয়নও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিতি লাভ করেছে এবং প্রশংসিত হয়েছে।
৬২ বছরের এই যাত্রাপথে, ২০২৫ সালের শুরুতেই নবজাগরিত বাংলায় তথা বাকৃবি প্রাঙ্গণে বাকৃবিসাস আয়োজন করে এক বর্ণাঢ্য পুনর্মিলনীর। প্রাক্তন ও বর্তমান সদস্যদের মিলনমেলায় পুনর্মিলনীর এই আয়োজন হয়ে ওঠে অনন্য। পুনর্মিলনী উপলক্ষে বাকৃবির শিক্ষক ছাত্র মিলনায়তন (টিএসসি) চত্বরে বৃহস্পতিবার রাত থেকেই শুরু হয় পুনর্মিলনী আয়োজনের প্রাণোচ্ছল উদযাপন। টিএসসির ৪ নম্বর কক্ষ ও সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ের সামনে অঙ্কন করা হয় বর্ণিল আল্পনা। পুর্নমিলনী অনুষ্ঠান উপলক্ষে বাকৃবির ছাত্র শিক্ষক মিলনায়তনের ৪ নম্বর কক্ষের (বাকৃবিসাস কার্যালয়) সামনে বৃহস্পতিবার রাত থেকেই আনন্দ উদযাপনের রোল পড়ে গিয়েছিল। কার্যালয়ের সামনে বর্ণিল আল্পনা অঙ্কন, আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয় পুরো টিএসসি চত্বরকে। এই আনন্দ উদযাপনকে পূর্ণাঙ্গ করে তুলতে এবং বাকৃবিসাসের সদস্যদের উজ্জীবিত করে রাখতে বিভিন্ন সংগীত বাজিয়ে পরিবেশকে আনন্দমুখর করে তোলা হয়। উৎসবে সবার এক হয়ে হৈ-হুল্লোড় ছিল পুনর্মিলনী উদযাপনেরই একটি মজাদার অংশ।
পুনর্মিলনীর মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় পরদিন সকাল ৯টায়, সদস্যদের রেজিস্ট্রেশন পর্ব সম্পন্নের মাধ্যমে। বেলা ১১টায় বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সেমিনার কক্ষে শুরু হয় এক বিশেষ সেমিনার। প্রাক্তন ও বর্তমান সদস্যদের পরিচিতি পর্বের মাধ্যমে শুরু হওয়া সেমিনারে পরিচিতি পর্ব শেষে প্রদর্শিত হয় সংগঠনের সোনালি অতীতের কিছু স্মরণীয় মুহূর্ত। প্রাক্তন সদস্যরা তাদের স্মৃতি ও অভিজ্ঞতা বাকৃবিসাসের বর্তমান সদস্যদের সঙ্গে ভাগ করে নেন। স্মৃতিচারণ ও অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়ার পর্বে বাকৃবিসাসের সাবেক সভাপতি নাজিব মুবিন বলেন, বাকৃবি সাংবাদিক সমিতি ছিল আমার পরিবার। সুখে-দুঃখে এ পরিবার পাশে ছিল। আজও আমার কর্মজীবনে সমিতির অভিজ্ঞতা প্রতিফলিত হচ্ছে। বাকৃবিসাসের সাধারণ সম্পাদক তানিউল করিম জীম বলেন, 'পুনর্মিলনী শুধু স্মৃতিচারণ নয়, এটি বর্তমান ও ভবিষ্যতের মধ্যে এক সেতুবন্ধন।
বাকৃবিসাসের অন্যতম সাবেক সভাপতি শাহীদুজ্জামান সাগর বলেন, পুরোনো প্রজন্মের সদস্যদের সঙ্গে দেখা ও অভিজ্ঞতা বিনিময় ছিল অন্যরকম। তাদের হাতের লেখা সংবাদপাঠের গল্প আমাদের নতুনভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। স্মৃতিচারণ পর্ব শেষে প্রাক্তন ও বর্তমান সদস্যরা একত্রিত হয়ে একটি গ্রুপ ছবি ধারণ করে। এরই মধ্য দিয়ে সেমিনার পর্বের সমাপ্তি ঘটে। সেমিনারের পর মধ্যাহ্নভোজ শেষে শুরু হয় খেলাধুলার আয়োজন। বল নিক্ষেপ, হাঁড়ি ভাঙা এবং ফুটবল প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সবাই দিনটিকে আনন্দঘন করে তোলে। খেলাধুলা পর্ব শেষে সবাই বেরিয়ে পড়ে ব্রহ্মপুত্র নদের উদ্দেশে। সেখানে নৌবিহার পর্বের আয়োজন করা হয়েছিল।
সন্ধ্যায় আয়োজিত বারবিকিউ পার্টি এবং ব্যাডমিন্টন টুর্ণামেন্টে অংশগ্রহণকারীদের মাঝে সৃষ্টি হয় এক প্রাণবন্ত পরিবেশ। রাতের পুরস্কার বিতরণ পর্বে বিজয়ীদের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয়। v
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আনন দ শ ভ য ত র র পর ব পর ব শ পর ব র আনন দ
এছাড়াও পড়ুন:
দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে হিন্দু নেতাদের সাক্ষাৎ
আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিভিন্ন পূজা উদ্যাপন পরিষদের নেতারা সাক্ষাৎ করেছেন। তাঁরা এ সময় প্রধান উপদেষ্টাকে পূজামণ্ডপ পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানান।
আজ সোমবার বিকেলে হিন্দু নেতারা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় যান। এ সময় তাঁদের কাছে দুর্গাপূজার প্রস্তুতি ও সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি তাঁদের বলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে সব সময় দেখা করার ইচ্ছা থাকলেও সুযোগ হয় না। পূজা উপলক্ষে বছরে একবার সামনাসামনি দেখা হয়, কথা বলার সুযোগ হয়।’
হিন্দুধর্মীয় নেতারা জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর এক হাজারের বেশি পূজামণ্ডপ বেড়েছে। সারা দেশে পূজামণ্ডপ তৈরির কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে।
নেতারা বলেন, ধর্ম উপদেষ্টা নিয়মিতভাবে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন, মন্দির পরিদর্শন করেন। দুর্গাপূজা উৎসবমুখর করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হচ্ছে। গতবারের মতো এবারও নির্বিঘ্নে পূজা উদ্যাপন হবে বলে তাঁরা আশা করছি।
এ সময় স্থায়ী দুর্গামন্দিরের জন্য রেল মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জায়গা বরাদ্দ দেওয়ায় প্রধান উপদেষ্টাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান মহানগর পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব। তিনি বলেন, ‘এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এ জন্য আপনাকে বিশেষ ধন্যবাদ। আপনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে নিয়মিত আমাদের খোঁজখবর রেখেছেন। গত বছরের মতো এ বছরও পূজায় আমরা দুই দিন ছুটি পেয়েছি। এ জন্যও আপনাকে বিশেষ ধন্যবাদ। গত বছর ৮ আগস্ট দেশে ফেরার পরপরই আপনি ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন করে বলেছিলেন, আমরা সবাই এক পরিবার। আপনার বক্তব্য আমাদের মনে গভীরভাবে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।’
বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর বলেন, ‘গত বছর দুর্গাপূজায় ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শনে গিয়ে আপনি বলেছিলেন, নিরাপত্তা বাহিনী দিয়ে কড়া পাহারা বসিয়ে পূজা হবে এমন দেশ আমরা চাই না। আমরা প্রথমবারের মতো কোনো সরকারপ্রধানের কাছে এমন বক্তব্য শুনেছি। আমরাও আপনার বক্তব্যের সঙ্গে একমত, আমরাও চাই এ আয়োজনে সবাই সহযোগিতা করুক, দেশের সবার মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক থাকুক।’
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের মহাসচিব এস এন তরুণ দে বলেন, ‘আপনি দায়িত্বে থাকাকালীন দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজির স্থাপন করেছেন। আমরা লক্ষ করেছি, এক বছর ধরে, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচুর মিথ্যা কথা, ফেক নিউজ ছড়ানো হচ্ছে। আপনার নেতৃত্বে ধর্ম–বর্ণ–জাতিনির্বিশেষে বাংলাদেশের সব মানুষের কল্যাণ হবে, আমরা সেটাই কামনা করি।’
বৈঠকে ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, ‘ধর্ম মন্ত্রণালয় সব ধর্মের প্রতিনিধিত্ব করে। কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে আমরা কল্যাণকর কর্মসূচিগুলো নিশ্চিত করি।’ এ সময় তিনি বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সহযোগিতার কথা তুলে ধরেন।
প্রধান উপদেষ্টা সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও পূজার অগ্রিম শুভেচ্ছা জানান এবং দুর্গাপূজা ঘিরে যাতে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রের সুযোগ তৈরি না হয়, সে জন্য সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান।
বৈঠকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার, হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান তপন চন্দ্র মজুমদার ও সচিব দেবেন্দ্র নাথ উঁরাও, রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী পূর্ণানন্দ (একক), বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু সমাজসংস্কার সমিতির সভাপতি অধ্যাপক হীরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, শ্রীশ্রী গীতা হরি সংঘ দেব মন্দিরের সভাপতি বিমান বিহারী তালুকদার, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন ফ্রন্টের আহ্বায়ক অপর্ণা রায় দাস, শ্রীশ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দিরের সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ চন্দ্র দত্ত ও সিদ্ধেশ্বরী সর্বজনীন পূজা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রণীতা সরকার উপস্থিত ছিলেন।