সিরামিক টাইলস ও স্যানিটারি পণ্যের ওপর আরোপিত সম্পূরক শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহারসহ তিনটি দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমইএ)। জ্বালানি গ্যাসের দাম পুনরায় না বাড়িয়ে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার দাবিও জানিয়েছে সংগঠনটি।

সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানিয়েছে বিসিএমইএ।

বিসিএমইএর প্রেসিডেন্ট (ভারপ্রাপ্ত) মইনুল ইসলাম বলেছেন, “সিরামিক অত্যন্ত সম্ভাবনাময় আমদানি বিকল্প শিল্প খাত। অনেক প্রতিকূলতা পেরিয়ে উদ্যোক্তাদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় রপ্তানি এবং আমদানি বিকল্প পণ্য হিসেবে দেশে ইতোমধ্যেই ৮০টির বেশি সিরামিক টেবিলওয়্যার, টাইলস ও স্যানিটারিওয়্যার শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সিরামিক পণ্য রপ্তানি করে যেমন মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে, তেমনই ধীরে ধীরে আমদানি হ্রাস পাওয়ায় বছরে অন্তত ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় রোধ হচ্ছে।”

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, “বর্তমানে সকল দেশীয় টাইলস উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ হারে সম্পূরক শুল্ক এবং দেশীয় স্যানিটারি পণ্য উৎপাদন পর্যায়ে ১০ শতাংশ হারে সম্পূরক শুল্ক আরোপিত আছে। সিরামিক টাইলস ও স্যানিটারি পণ্য এখন আর বিলাসদ্রব্য হিসেবে বিবেচিত হয় না, ভবন নির্মাণে অত্যাবশ্যকীয় সামগ্রী হিসেবে বিবেচিত হয়। পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেলে সাধারণ লোক স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশনের ব্যবহারের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন। এটি সরকারের ঘোষিত ‘সকলের জন্য স্যানিটেশন’ কার্যক্রম বাস্তবায়নে বাধাগ্রস্ত করবে। তাই, দেশীয় টাইলস উৎপাদন পর্যায়ে আরোপিত ১৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং দেশীয় স্যানিটারি পণ্য উৎপাদন পর্যায়ে আরোপিত ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করার দাবি জানাচ্ছি।”

বিসিএমইএর প্রেসিডেন্ট বলেন, “গ্যাসনির্ভর এই শিল্পে ক্রমাগত গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়া প্রধান সমস্যা। ২০১৫ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত শিল্প খাতে গ্যাসের মূল্য প্রায় ৩৪৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিগত ২০২৩ সালে শিল্প খাতে প্রায় ১৫০ শতাংশ গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির ফলে কেজি-প্রতি সিরামিক পণ্যের গড় উৎপাদন ব্যয় ১৮ থেকে ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির সাথে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই তৈরি পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পায়। কিন্তু, বিদেশি পণ্যের সাথে মূল্য প্রতিযোগিতার কারণে দেশীয় তৈরি পণ্যের মূল্য ইচ্ছেমতো বৃদ্ধি করা যায় না। ফলে, প্রতিযোগী বাজারে উৎপাদককে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়।”

তিনি বলেন, “সম্প্রতি বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে জানা গেছে, সরকার আরেক দফায় গ্যাসের মূল্য গড়ে ১৫২ শতাংশ বৃদ্ধির পরিকল্পনা করেছে। এতে পণ্যের উৎপাদন ব্যয় আরো ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ বেড়ে যাবে, যেন মরার ওপর খাঁড়ার ঘা। গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে সিরামিক শিল্প। এতে দেশীয় পণ্য বিদেশি পণ্যের সাথে মূল্য প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবে না। এ কারণে উদ্যোক্তা, বিনিয়োগকারী আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং সর্বোপরি দেশ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সময়মতো ব্যাংক ঋণ পরিশোধে ব্যর্থতায় ঋণখেলাপি বৃদ্ধি পাবে। এতে একদিকে যেমন শিল্প বিরোধ সৃষ্টি হবে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মামলা বৃদ্ধি পাবে, মূল্যস্ফীতির কারণে আয়-ব্যয়ের ভারসাম্যহীনতাসহ অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। তাই, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি না করার আহ্বান জানাই।”

মইনুল ইসলাম বলেন, “সিরামিক গ্যাসনির্ভর প্রসেস ইন্ডাস্ট্রি। সিরামিক শিল্পে গ্যাস কাঁচামালের উপকরণ হিসেবে গণ্য হয়। এই শিল্পে গ্যাসের বিকল্প কোনো জ্বালানি ব্যবহারের সুযোগ নেই। পণ্য প্রস্তুত করতে নির্দিষ্ট মাত্রার চাপে কারখানায় ২৪ ঘণ্টাই নিরবচ্ছিন্নভাবে গ্যাস সরবরাহ থাকতে হয়। নির্দিষ্ট মাত্রার চাপে গ্যাসের সরবরাহের ঘাটতি হলে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় থাকা সকল পণ্য সঙ্গে সঙ্গে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে, কোম্পানির বিপুল আর্থিক ক্ষতি হয়। কারখানায় নিরবচ্ছিন্নভাবে গ্যাস সরবরাহ না থাকা সত্ত্বেও আমাদেরকে গ্যাসের বিল দিতে হচ্ছে। বিগত বছরগুলোতে প্রয়োজনীয় গ্যাসের চাপের অভাবে সময়মতো পণ্য সরবরাহ করতে না পারায় বিশ্ববাজারে নামি-দামি কোম্পানি আমাদের থেকে অর্ডার বাতিল করেছে। প্রায় ১ বছর যাবৎ ঢাকা জেলার মিরপুর, সাভার, ইসলামপুর, ধামরাই ও কালামপুর; নারায়ণগঞ্জ জেলার রুপগঞ্জ ও মেঘনাঘাট; গাজীপুর জেলার টঙ্গী, কাশিমপুর, ভবানীপুর, ভাওয়াল মির্জাপুর, শ্রীপুর ও মাওনা; নরসিংদী জেলার পাঁচদোনা এবং ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা ও ত্রিশাল এলাকায় অবস্থিত ২২ থেকে ২৫টি সিরামিক তৈজসপত্র, টাইলস, স্যানিটারিওয়্যার সিরামিক ব্রিকস কারখানায় তীব্র গ্যাস সংকটে উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। সিরামিক কারখানায় যেখানে গ্যাসের ১৫ পিএসআই প্রেসার প্রয়োজন হয়, সেখানে গ্যাসের প্রেসার কখনো কখনো ২-৩ পিএসআই থেকে শূন্যের কোটায় পর্যন্ত নেমে আসছে। এতে প্রতিদিন ক্ষতি হয় ২০ কোটি টাকার বেশি। ফলে, উৎপাদকরা ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। তাই, দেশের সিরামিক শিল্পকে অগ্রাধিকার খাত হিসাবে বিবেচনায় নিয়ে গ্যাসের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার প্রস্তাব করছি।”

ঢাকা/এনএফ/রফিক

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সরবর হ আর থ ক আর প ত ট ইলস

এছাড়াও পড়ুন:

হাসপাতালে ডায়রিয়ার প্রকোপ শয্যা ও স্যালাইন সংকট

আক্কেলপুরে ডায়রিয়ার প্রকোপ ক্রমেই বাড়ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর ভিড় বেড়েছে। শয্যাসংকটে রোগীদের মেঝে ও বারান্দায় থাকতে হচ্ছে। এদিকে হাসপাতালে খাওয়ার স্যালাইনের সংকট দেখা দিয়েছে। বাইরে থেকে বেশি দামে রোগীদের স্যালাইন কিনতে হচ্ছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে শয্যা রয়েছে ৫০টি। গতকাল সোমবার পর্যন্ত এখানে ভর্তি ছিলেন ৭৫ জন রোগী। এর মধ্যে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী ২৯ জন। শয্যা না পেয়ে তাদের অনেককেই বারান্দায়, মেঝেতে ঠাঁই নিতে হয়েছে। এ সময় কথা হয় রামশালা গ্রামের আসমা খাতুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, রাতে ডায়রিয়া ও বমি শুরু হলে হাসপাতালে ভর্তি হই। রোগী বেশি থাকায় শয্যা পাইনি। বারান্দার মেঝেতে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছি। হাসপাতাল থেকে একটি স্যালাইন পেলেও ৪টি স্যালাইন বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে। একই অভিযোগ করেন তেমারিয়া গ্রামের নুর বানু। তিনি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ১০ মাস বয়সী মেয়েকে রোববার হাসপাতালে ভর্তি  করেছেন। এদিকে রোগীর চাপ বাড়লেও এ হাসপাতালে রয়েছে চিকিৎসক সংকট। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ ২৬টি পদের বিপরীতে মাত্র ৩ জন চিকিৎসক সেবা দিচ্ছেন। রয়েছে তীব্র স্যালাইন সংকট। রোগীদের বাইরে থেকে স্যালাইন কিনতে হচ্ছে। 
হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কলেরা স্যালাইনের জন্য সর্বশেষ ফেব্রুয়ারি মাসে চাহিদা দেওয়া হয়েছিল চার হাজার পিস। এর মধ্যে এক হাজার মি.লি. স্যালাইন ২ হাজার পিস ও ৫০০ মি.লি. স্যালাইন ২ হাজার পিস। পাওয়া গেছে মাত্র ৬০০ পিস। ইতোমধ্যে ৩০০ পিস রোগীদের মধ্যে সরবরাহ করা হয়েছে। 
আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. আসিফ আদনান জানান, হঠাৎ করে আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। অন্য সময়ের তুলনায় ৩ গুণ বেশি ডায়রিয়া রোগী হাসপাতালে আসছে। রোগীর চাপ বাড়লেও চিকিৎসক সংকট রয়েছে। স্যালাইনের সরবরাহও কম। রোগীদের বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। নানা সীমাবদ্ধতায় সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম অবস্থা আমাদের। তিনি ডায়রিয়া হলে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন থেকে কিছু নিয়ম মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন। 
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শফি মাহমুদ বলেন, চিকিৎসক সংকটের বিষয়ে কয়েকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সরকারিভাবে নিয়োগ না হওয়ায় আমরাও প্রয়োজনীয় চিকিৎসক পাচ্ছি না। স্যালাইনের সরবরাহ বাড়াতে চাহিদাপত্র দেওয়া হয়েছে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাস্তবায়িত হোক শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ
  • আদানির সঙ্গে চুক্তি ক‌রে শুল্ক ফাঁকি
  • শিল্প খাতের উৎপাদন যেন ব্যাহত না হয়
  • কারাগারে গাঁজা সরবরাহ করতে গিয়ে নিজেই কারাগারে
  • ‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা কী
  • ডিইপিজেডে বিদ্যুৎ নেই, ৯০ কারখানায় ছুটি
  • মঙ্গলবার ৭ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না যেসব জায়গায়
  • পাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যে আরও ২৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান কিনছে ভারত
  • পর্তুগাল ও স্পেনে নজিরবিহীন বিদ্যুৎ বিপর্যয়, পর্যুদস্তু জনজীবন
  • হাসপাতালে ডায়রিয়ার প্রকোপ শয্যা ও স্যালাইন সংকট