বাদ্য-নৃত্য-মন্ত্রে দেবী সরস্বতীর আরাধনায় শিক্ষার্থীরা
Published: 3rd, February 2025 GMT
সারা দেশে বাদ্য, নৃত্য ও মন্ত্রে মাধ্যমে বিদ্যা ও সংগীতের দেবী সরস্বতীর আরাধনা করছেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। বাদ যায়নি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও। সরস্বতী পূজা উপলক্ষে সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারী) সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দিনব্যাপী নানা আয়োজন করেছেন শিক্ষার্থীরা। গানের তালে তালে নেচে তারা পূজার আনন্দ ভাগ করে নেন সবার সঙ্গে। রাইজিংবিডির বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতাদের পাঠানো খবরে থাকছে বিস্তারিত-
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জগন্নাথ হলে প্রতিমা স্থাপনের মাধ্যমে এ বছরের শ্রীশ্রী সরস্বতী পূজার অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবার ঢাবির ৭৩টি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের ব্যবস্থাপনায় সরস্বতী পূজা আয়োজিত হয়েছে। হল প্রশাসনের পূজা হলের উপাসনালয়ে এবং বিভাগ ও ইনস্টিটিউটগুলোর পূজামণ্ডপ হলের মাঠে স্থাপন করা হয়েছে।
এদিকে, সরস্বতী পূজা উপলক্ষে সকালে মণ্ডপ পরিদর্শন করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো.
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)
সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দিনব্যাপী নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৭টি মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হয় পূজা, অঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সকল ধর্মের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে পূজা হয়ে উঠেছিল বর্ণিল ও উৎসবমুখর। গানের তালে তালে নেচে শিক্ষার্থীরা পূজার আনন্দ ভাগ করে নেন।
সকাল থেকেই শিক্ষার্থীরা তাদের বিভাগীয় মণ্ডপে এসে পূজার বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নেন। পুরোহিতদের মন্ত্রোচ্চারণ, অঞ্জলি প্রদান এবং দেবীর আশীর্বাদ কামনার মাধ্যমে পূজার মূল কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। এরপর চলে প্রসাদ বিতরণ ও পূজাকে ঘিরে আনন্দঘন সময় কাটানোর পালা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ ব্যাচের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী পায়েল সরকার বলেন, “আমরা সকাল থেকেই একত্রে সরস্বতী পূজা উদযাপন করছি। ক্যাম্পাসে এত মানুষ একসাথে নাচ গান করে পূজা উদযাপন সত্যি অন্যরকম অনুভূতি। সরস্বতী মায়ের কাছে আমাদের একটাই প্রার্থনা আমরা সম্মিলিতভাবে একটি সুন্দর দেশ যেন গড়তে পারি। আমাদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ না রেখে সকলে মিলে উৎসব উদযাপনের মাধ্যমে আজকের দিনটা শেষ হোক।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. রবীন্দ্রনাথ মণ্ডল রাইজিংবিডিকে বলেন, “খুবই সুন্দর ও সুষ্ঠু ভাবে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ পূজা সম্পন্ন হয়েছে। পূজার কার্যক্রম সকালে শেষ হলেও রাত ৮ পর্যন্ত আমেজ করবে শিক্ষার্থীরা। আমরা চাই এ সম্প্রীতি ও ঐক্যের আবহ আগামীতেও বজায় থাকুক।”
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি)
সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে এ পূজা উদযাপন শুরু হয়। এ নিয়ে ক্যাম্পাসে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।
সকাল ৯টায় দেবীর বন্দনা শুরু হয়। সাড়ে ১০টায় পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করা হয়। দুপুর ১টায় প্রসাদ বিতরণের মাধ্যমে পূজা শেষ হয়।
শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাসুদা কামাল, পরিসংখ্যান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. দুলাল চন্দ্র নন্দী, একাউন্টটিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস্ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিন ও অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ্র দেব, কলা ও মানবিক অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. বনানী বিশ্বাস প্রমুখ।
কুবি পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সৌরভ বিশ্বাস বলেন, “প্রতিবছরের ন্যায় এবারো পূজা উদযাপন পরিষদের আয়োজনে সুষ্ঠুভাবে সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমাদের আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতার প্রশংসা করছি। আশা করি, প্রশাসনের সহযোগিতার ধারাবাহিকতা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।”
এছাড়াও বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে নবীন বরন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি)
পূজা উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতায় হাবিপ্রবির পূজা উদযাপন কমিটি ও সনাতন বিদ্যার্থী সংসদের আয়োজনে সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আয়োজনের মধ্যে ছিল প্রতিমা স্থাপন, অঞ্জলি প্রদান, ধর্মসভা, মহাপ্রসাদ বিতরণ, আলোচনা সভা, বৈদিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও সন্ধারতি ইত্যাদি।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হাবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. এনামউল্যা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শফিকুল ইসলাম সিকদার, কৃষি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. বিধান চন্দ্র হালদার, প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. শামসুজ্জোহা, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. নিজাম উদ্দীন প্রমুখ।
অধ্যাপক ড. শ্রীপতি সিকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন অধ্যাপক ড. বিকাশ চন্দ্র সরকার। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ফিসারিজ ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কৃষ্ণ চন্দ্র রায়।
ঢাকা/মেহেদী
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
শ্রম আইনের সংশোধন কবে হবে, তা বলছে না শ্রম মন্ত্রণালয়
শ্রম আইন সংশোধনের অধ্যাদেশ কবে হবে, সে বিষয়ে আর সময়সীমার কথা বলছে না শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। গত নভেম্বর মাসে এই মন্ত্রণালয় বলেছিল, ২০২৫ সালের মার্চ মাসের মধ্যে এ অধ্যাদেশ হবে। মার্চ শেষে এপ্রিলও শেষ হচ্ছে আজ বুধবার।
সচিবালয়ে আজ ‘মহান মে দিবস এবং জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি দিবস ২০২৫’ উপলক্ষে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আইন সংশোধনীর ক্ষেত্রে সময়সীমা থাকার পক্ষে নন তিনি। শ্রমিক–মালিকদের স্বার্থ রক্ষাসহ শিগগিরই তা করা হবে। বিষয়টি এখন কোন প্রক্রিয়ায় আছে, তা বলতে রাজি হননি শ্রম উপদেষ্টা।
শ্রম উপদেষ্টা বলেন, এবারের দিবসের প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক-মালিক এক হয়ে, গড়ব এ দেশ নতুন করে’। তিনি আরও বলেন, ‘একসময় স্লোগান ছিল দুনিয়ার মজদুর, এক হও।’ এখন তা বদলে গেছে। এখন হবে ‘দুনিয়ার মালিক-শ্রমিক, এক হও’। এখন ভালো মালিকেরা শ্রমিকদের সন্তানের মতো মনে করেন।
প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে ১০১টি ধারা ও উপধারা সংশোধন হবে। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ১০ থেকে ২০ মার্চ অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) গভর্নিং বডির বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।
আইএলওর বৈঠকে যোগ দিতে শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেনের নেতৃত্বে যে দলটি জেনেভা সফর করে, সেখানে শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. হুমায়ুন কবীর, যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ হোসেন সরকার ও শ্রম উপদেষ্টার একান্ত সচিব মো. জাহিদুল ইসলাম ছিলেন।
এর আগে গত বছরের ১০ নভেম্বর তৎকালীন শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান আইএলওর গভর্নিং বডির বৈঠক থেকে দেশে ফিরে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, মার্চের মধ্যে শ্রম আইন সংশোধন হবে। উপদেষ্টা তখন এ–ও বলেছিলেন, আগের সরকারের আইনমন্ত্রীর (আনিসুল হক) নেতৃত্বাধীন দলকে আইএলও পর্ষদে অপদস্থ করা হয়েছিল। অথচ এবারের চিত্র ছিল ভিন্ন। বাংলাদেশের পদক্ষেপগুলো নিয়ে বরং প্রশংসা করা হয়েছে। কয়েকটি দেশ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলো তুলে নেওয়ার কথাও বলেছিল।
জানা গেছে, শ্রম অধিকার বাস্তবায়নে ঘাটতির অভিযোগ এনে জাপানসহ ছয়টি দেশের পক্ষ থেকে আইএলওতে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। মামলাগুলো চলমান।
আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক খাত মিলিয়ে দেশে ৭ কোটি ৬৫ লাখ শ্রমিক রয়েছে। এদিকে ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদকে (টিসিসি) শ্রমিকপক্ষ জানিয়েছে, আইন সংশোধনের সময় সব শ্রমিকের কথা মাথায় না রেখে প্রধানত পোশাক খাতের শ্রমিকদের কথা বিবেচনা করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মে দিবস আর জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি দিবস উপলক্ষে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীতে শোভাযাত্রাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ–স্কুল পর্যায়ে রচনা ও প্রবন্ধ লেখার ওপরে বিজয়ীদের পুরস্কার দেওয়া হবে।
এ ছাড়া শ্রম অধিকার বিষয়ে প্রকাশিত বা প্রচারিত মানসম্মত সংবাদ বা স্থিরচিত্র যাচাই করে সাংবাদিক ও চিত্রগ্রাহকদের দেওয়া হবে পুরস্কার।