বইমেলায় আফরোজা খাতুনের ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’
Published: 3rd, February 2025 GMT
অমর একুশে গ্রন্থমেলায় পাওয়া যাচ্ছে আফরোজা খাতুনের বই ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’। বইটি মেলায় এনেছে শোভা প্রকাশ। প্রচ্ছদ করেছেন আদনান আহমেদ রিজন। বইমেলার ৩ নম্বর প্যাভিলিয়নে পাওয়া যাচ্ছে বইটি।
বইটির মুদ্রিত মূল্য ৩৭৫ টাকা। বইমেলায় ২৫ শতাংশ ছাড়ে ২৮০ টাকায় পাওয়া যাবে এটি।
জুলাই গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে যুগান্তকারী অধ্যায়। ছাত্র-জনতার অদম্য শক্তি, গণতন্ত্রের জন্য লড়াই এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার অনন্য উদাহরণ হয়ে উঠেছে এই অভ্যুত্থান। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের বিক্ষোভ, সরকারবিরোধী আন্দোলনের তীব্রতা, গণমানুষের অংশগ্রহণ এ ঘটনাকে অনন্য করে তুলেছে।
আরো পড়ুন:
বইমেলার দ্বিতীয় দিনে ১৩ নতুন বই প্রকাশিত
বইমেলায় ‘সেরা লেখক’ স্বীকৃতির আয়োজনের প্রস্তাব প্রধান উপদেষ্টার
‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ বইয়ে গণঅভ্যুত্থানের ধারণা, ইতিহাস, পটভূমি, টাইমলাইন এবং তার পরিণতির বিস্তৃত চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এতে উঠে এসেছে আন্দোলনের প্রেক্ষাপট, সুশীলসমাজের ভূমিকা, ছাত্র-জনতার অগ্রণী ভূমিকা এবং সাধারণ জনগণের দৃঢ় প্রতিরোধ। বইটির অন্যতম দিক হলো— এতে জুলাই গণঅভ্যুত্থান-২০২৪ এর শহীদদের গেজেট সংযুক্ত করা হয়েছে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মূলে ছিল রাজনৈতিক দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মানের ক্রমাবনতি। নানাবিধ বৈষম্য এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের অভাব জনগণের ক্ষোভকে তীব্র করে তোলে।
বইয়ে দেখানো হয়েছে, কীভাবে জনগণ তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য রাস্তায় নেমে আসে। উঠে এসেছে গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন—কেন রাষ্ট্রীয় কাঠামো এত দুর্বল হয়ে পড়েছিল যে, জনগণকে এমন গণঅভ্যুত্থানর দিকে এগিয়ে যেতে হলো?
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে তরুণসমাজের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষিত তরুণ-তরুণীরা তাদের সোচ্চার কণ্ঠ, প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষতা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাহায্যে আন্দোলনকে সুসংহত করেছিল। তারা নেতৃত্ব দিয়েছিল এমন এক আন্দোলনে, যেখানে প্রতিটি শ্রেণি-পেশার মানুষ একত্র হয়েছিল।
এছাড়াও বইয়ে রাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া, প্রশাসনিক দমন-পীড়ন এবং গণমাধ্যমের ভূমিকা বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
বইটি কেবল ইতিহাস নয়; এটি একটি প্রামাণ্য দলিল। এতে ব্যবহৃত হয়েছে সরাসরি অংশগ্রহণকারীদের অনেকের বক্তব্য, সংবাদ প্রতিবেদন এবং সমসাময়িক গবেষণার তথ্য।
জুলাই গণঅভ্যুত্থান আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, যখন মানুষ একত্রিত হয়, তাদের চাহিদা এবং অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগঠিত হয়, তখন ক্ষমতার কাঠামো কেঁপে ওঠে।
আফরোজা খাতুনের ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ বইটি শুধু ঘটনার প্রামাণ্য বিবরণ নয়; এটি ভবিষ্যতের জন্য একটি শিক্ষা। এতে প্রজন্মের কাছে একটি বার্তা রয়েছে—মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য, স্বাধীনতার জন্য এবং ন্যায়বিচারের জন্য সংগ্রাম সব সময় প্রাসঙ্গিক।
ঢাকা/রফিক
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বইম ল জ ল ই গণঅভ য ত থ ন র জন য বইম ল
এছাড়াও পড়ুন:
গণঅভ্যুত্থানে শহীদ রিজভীর ভাইকে কুপিয়ে জখম, গ্রেপ্তার ৩
নোয়াখালী জেলায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ মাহমুদুল হাসান রিজভীর ছোট ভাই স্কুলছাত্র শাহরিয়ার হাসান রিমনকে (১৬) এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে আহতের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। রবিবার (২৮ এপ্রিল) রাতে সুধারাম মডেল থানায় রিমনের মা বাদী হয়ে দায়ের করেন। পুলিশ এ ঘটনায় তিন কিশোরকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম ও ছবি প্রকাশ করেনি।
এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে রিমনের স্কুলের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেছে।
আহত শাহরিয়ার হাসান রিমন জেলা শহরের বসুন্ধরা কলোনি বাসিন্দা মো. জামাল উদ্দিন ও ফরিদা ইয়াছমিন দম্পত্তির ছেলে। সে স্থানীয় হরিনারায়ণপুর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
আরো পড়ুন:
কুমিল্লায় বজ্রপাতে ৪ জনের মৃত্যু
ধর্ষণের অভিযোগে গণপিটুনি, কারাগারে ইমামের মৃত্যু
বিদ্যালয় থেকে ফেরার পথে রোববার (২৮ এপ্রিল) বিকেলে কিশোর গ্যাং সদস্যরা শাহরিয়ার হাসান রিমনকে ধারালো ছুরি এলোপাতাড়ি আঘাত করে। এতে সে গুরুতর আহত হয়। পরে স্থানীয়রা তাকে নোয়াখালী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। তবে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়।
এ ঘটনায় রাতে আহত রিমনের মা ফরিদা ইয়াছমিন ২১ জনকে এজহারভুক্ত ও ১০-১২ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করেন। পুলিশ রাতেই অভিযান পরিচালনা করে তিন কিশোরকে গ্রেপ্তার করে।
রিমনের মা ফরিদা ইয়াছমিন জানান, রিমনের পিঠে, মাথায়সহ মোট ছয়টি ছুরির আঘাত করা হয়। তার অপারেশন ঢাকা মেডিকেল কলেজে করানো হয়েছে। বর্তমানে সেখানে চিকিৎসা চলছে। তার পিঠের আঘাতগুলো ফুসফুস পর্যন্ত চলে গেছে বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন।
তিনি আরো জানান, হামলাকারীরা ভেবেছিল রিমন মারা গেছে। যখন জানতে পারে সে বেঁচে আছে, তখন তারা ফের হামলা করতে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল পর্যন্ত যায়। রিমনের অপরাধ দুই দল কিশোরের মাঝে চলমান দ্বন্দ্ব মিমাংসা করে দেওয়া। একপক্ষ মানলেও অপরপক্ষ মিমাংসার বিষয়টি মন থেকে মানতে পারেনি। তারাই আমার ছেলের উপর হামলা করেছে।
রিমনের বাবা জামাল উদ্দিন বলেন, রিমনকে ধারালো ছুরি দিয়ে মোট ছয়টি আঘাত করা হয়েছে। নোয়াখালী জেনারেল হাসপতালে নেওয়া হলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তিনি রিমনের সুস্থতার জন্য দোয়া চেয়েছেন।
ঢাকায় রিমনের সঙ্গে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা নাহিদা সুলতানা ইতু জানান, রাতেই রিমনের সিটিস্ক্যান করা হয়েছে। এরপর তার অপারেশন হয়েছে। চিকিৎসকরা বলেছেন, রিমনের পিঠের আঘাতগুলো গুরুতর। ছুরির আঘাত প্রায় ফুসফুস পর্যন্ত চলে এসেছে। তার সুস্থ হতে অনেক সময় লাগবে।
রবিবার (২৮ এপ্রিল) বিকেলে স্কুল থেকে বাসায় ফেরার পথে জেলা শহরের বার্লিংটন মোড়ে একদল কিশোর রিমনকে ছুরিকাঘাত করে গুরুতর আহত করে।
স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, নোয়াখালী পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের বার্লিংটন এলাকাটি কিশোর গ্যাংয়ের আখড়া। এই এলাকা দিয়ে প্রতিদিন সরকারি বালিকা বিদ্যালয়, হরিনারায়ণপুর স্কুল, সরকারি মহিলা কলেজসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীরা যাতায়াত করে। প্রতিদিন তাদের উত্ত্যক্ত করা হয়। কিন্তু ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করে না। প্রশাসনেরও নজরদারি নেই।
এদিকে, রিমনকে ছুরিকাঘাত করে আহত করার প্রতিবাদে তার স্কুলের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে স্কুলের সামনে প্রধান সড়কে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে রিমনের স্কুলের শিক্ষার্থী ছাড়াও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মী, স্কুলের শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় বক্তারা অবিলম্বে রিমনের উপর যারা হামলা করেছেন, তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) আবু তৈয়ব মো. আরিফ হোসেন জানান, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলা দায়েরের পর সিসিটিভি ফুটেজ ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এজহারভুক্ত একজনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনায় আমাদের আরো অনুসন্ধান চলছে। সিসি ক্যামেরা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। অপরাধীদের খুব দ্রুতই আইনের আওতায় আনতে পারবেন বলে আশা করেন তিনি।
ঢাকা/সুজন/বকুল