গোপালগঞ্জের ৩ পরিবারের স্বপ্ন ডুবল ভূমধ্যসাগরে
Published: 6th, February 2025 GMT
ছোটবেলায় মা-বাবার মৃত্যুর পর চাচা জয়নাল শেখের কাছে বড় হন রফিকুল ইসলাম শেখ (২৫)। চাচার সংসারে অভাব থাকায় তিনি পড়াশোনায় বেশি দূর এগোতে পারেননি। এক সময় সিদ্ধান্ত নেন ইতালি যাওয়ার। ভাতিজা রফিকুলের জন্য ভিটেবাড়ি, সহায়-সম্বল বিক্রি করে দালালের হাতে ২০ লাখ টাকা তুলে দেন জয়নাল শেখ। ভূমধ্যসাগরে থেমে গেছে তাঁর স্বপ্নযাত্রা।
রফিকুলের বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলায়। তিনি রাঘদী ইউনিয়নের মোল্লাদী গ্রামের প্রয়াত আব্দুল মজিদ শেখের ছেলে। সম্প্রতি অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে নৌকা ডুবে রফিকুলের সঙ্গে এ উপজেলার আরও দুই যুবক প্রাণ হারিয়েছেন। তারা হলেন– চরপ্রসন্নদী গ্রামের ওহাব খন্দকারের ছেলে সাত্তার খন্দকার (৪০) ও মেহেদী শেখের ছেলে আরাফসান ইসলাম আশিক (১৮)। তাদের মৃত্যুতে তিন পরিবারে মাতম চলছে।
সম্প্রতি ভূমধ্যসাগরের লিবিয়া উপকূল থেকে ২০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। তাদের মধ্যে অনেকেই বাংলাদেশি বলে ধারণা স্থানীয় রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির। গত শনিবার লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের বরাতে এই আশঙ্কার কথা জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের বার্তায় বলা হয়, নিহত ২০ জনেরই দাফন হয়েছে। লাশগুলো পচে যাওয়ার অবস্থায় ছিল। কেউই তাদের পরিচয় কিংবা জাতীয়তা নিশ্চিত করতে পারেনি। স্থানীয় উদ্ধারকারী কর্তৃপক্ষের মতে, অভিবাসনপ্রত্যাশীদের একটি নৌকা ভূমধ্যসাগরে ডুবে যাওয়ার পর এসব লাশ ব্রেগা তীরে ভেসে আসে।
এর মধ্যে খোঁজ-খবর নিয়ে জানা যায়, ওই ২০ জনের মধ্যে রয়েছেন সাত্তার খন্দকার, রফিকুল ইসলাম ও আরাফসান ইসলাম আশিক। তাদের লাশ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন স্বজনরা।
রফিকুলের চাচা জয়নাল শেখ বলেন, ভাতিজাকে ইতালি পাঠাতে নিজের ভিটেবাড়ি ও সহায়-সম্বল বিক্রি করেছি। কিন্তু ভূমধ্যসাগর তাকে কেড়ে নিয়েছে। দ্রুত লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানাই।
আশিকের বাবা মেহেদী শেখ বলেন, ছেলেকে ইতালি পাঠানোর জন্য ঋণ ও আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ধার করে ১৭ লাখ টাকা জোগাড় করি। পরে পাশের শ্রীজিতপুর গ্রামের রকমান হাওলাদারের ছেলে বাবু হাওলাদারের হাতে সেই টাকা তুলে দিই। লিবিয়া পৌঁছানোর পর ছেলের সঙ্গে তিন থেকে চারবার কথা হয়েছে। পরে জানতে পারি, ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে আমার ছেলে মারা গেছে। দালাল চক্রের কারণে আমি সন্তানহারা হলাম।
সাত্তার খন্দকারের স্ত্রী লাবনী খন্দকার বলেন, লিবিয়া পৌঁছানোর পর আমার কাছ থেকে তিন দফা টাকা নিয়েছে দালাল চক্র। ইতালি পৌঁছে দিতে ২৪ লাখ টাকা দেওয়ার মৌখিক চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু তারা আমার কাছ থেকে ২৬ লাখ টাকা নিয়েছে। আমি দ্রুত আমার স্বামীর লাশ দেশে ফেরত আনার দাবি জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে দালালদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।
জনশক্তি ও কর্মসংস্থান ব্যুরোর গোপালগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ষষ্ঠীপদ রায় বলেন, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর ও মাদারীপুরে দালাল চক্রের একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক রয়েছে। এ চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ নির্বাহী বিভাগের কাছে সুপারিশ করে প্রতিবেদন পাঠিয়েছি। কিন্তু চক্রের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। দালালদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হলে তারা এ কাজ থেকে বিরত হবে।
মুকসুদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাসনীন আক্তার বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ দিলে তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গ প লগঞ জ গ প লগঞ জ ব যবস থ ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
র্যাংকিংয়ে মিরাজ-জাকেরদের অগ্রগতি
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সদ্য সমাপ্ত টেস্ট সিরিজে দারুণ পারফর্ম করলেও এখনও টেস্ট র্যাংকিংয়ের শীর্ষ ২০-এ জায়গা হয়নি কোনো বাংলাদেশি ক্রিকেটারের। তবে দলগতভাবে বেশ কিছু ইতিবাচক অগ্রগতি দেখা গেছে। ব্যাটিংয়ে উন্নতি করেছেন জাকের আলী, শান্ত ও মুমিনুল, বোলিংয়ে বড় ধাপ এগিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
বাংলাদেশের হয়ে সিরিজ সেরা মেহেদী হাসান মিরাজ ছিলেন দুর্দান্ত ফর্মে। ব্যাটে সেঞ্চুরির পাশাপাশি দুই ম্যাচে ১৫ উইকেট তুলে নিয়ে ৪ ধাপ এগিয়ে এখন তিনি বোলিং র্যাংকিংয়ে ২৬তম স্থানে। অলরাউন্ডার র্যাংকিংয়ে তিনি এখন আছেন তিন নম্বরে।
ব্যাটিংয়ে ব্যক্তিগত উন্নতি হয়েছে জাকের আলী, শান্ত ও মুমিনুল হকের। দুটি ইনিংসে ৫৬ ও ৪৭ রান করে মুমিনুল এগিয়েছেন ৫ ধাপ, এখন অবস্থান ৪৮তম। জাকের আলী এগিয়েছেন ১০ ধাপ, অবস্থান ৫০তম। শান্ত ৪ ধাপ এগিয়ে উঠেছেন ৫৩তম স্থানে।
অন্যদিকে সিরিজে অসাধারণ পারফর্ম করে জিম্বাবুয়ের পেসার ব্লেসিং মুজারাবানি উঠে এসেছেন র্যাংকিংয়ের সেরা ১৫ বোলারের তালিকায়। প্রয়াত হিথ স্ট্রিকের পর তিনিই প্রথম জিম্বাবুইয়ান বোলার হিসেবে টেস্ট রেটিংয়ে ছুঁয়েছেন ৭০০ পয়েন্টের মাইলফলক। বাংলাদেশ সফরেই তার এই অর্জন। অন্যদিকে জিম্বাবুয়ের ব্রায়ান বেনেট দুই ইনিংসে ৫৭ ও ৫৪ রান করে প্রথমবারের মতো ব্যাটিং র্যাংকিংয়ের শীর্ষ ১০০-র মধ্যে ঢুকেছেন।
বাংলাদেশের শীর্ষ ব্যাটসম্যান হিসেবে এখনও তালিকায় আছেন লিটন দাস, যদিও সিরিজে না থাকায় তিনি এক ধাপ পিছিয়ে যৌথভাবে এখন ৩৭তম। ফর্মহীনতায় ভোগা মুশফিকুর রহিম নেমে গেছেন ৪০তম স্থানে। বোলিং র্যাংকিংয়ে মিরাজের আগেই আছেন বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম, যার অবস্থান ২৩তম। এছাড়া সাকিব আল হাসান এখনো শীর্ষ ৫০-এ আছেন, তাসকিন আহমেদ রয়েছেন ৫১ নম্বরে।
অলরাউন্ডারদের তালিকায় শীর্ষ পাঁচে জায়গা ধরে রেখেছেন সাকিব আল হাসান, যিনি দীর্ঘদিন ধরেই এই তালিকার নিয়মিত মুখ।