সুরা মাউনে মানুষদের মধ্যে দুটি দলের কথা বলা হয়েছে
Published: 6th, February 2025 GMT
সুরা মাউন (নিত্যপ্রয়োজনের সামগ্রী) পবিত্র কোরআনের ১০৭ তম সুরা। ১ রুকু, ৭ আয়াত। দুর্ভোগ তাদের জন্য যারা এতিমকে ধাক্কা দিয়ে তাড়িয়ে দেয়, অভাবগ্রস্তকে অন্নদান করে না, লোক দেখানো নামাজ পড়ে এবং সংসারের ছোটখাটো জিনিস দিয়ে অপরকে সাহায্য করে না।
এ সুরায় আল্লাহর হক নামাজ ও বান্দার হকের জাকাত, সদকা, পরোপকারের ব্যাপারে সতর্কীকরণ করা হয়েছে। হজরত মুহাম্মদ (সা.
প্রথম আয়াতে বলা হয়েছে ‘তুমি কি দেখেছ তাকে যে ধর্ম (বিচার)-কে অস্বীকার করে’,প্রশ্ন করে আল্লাহ নিজেই উত্তর দিয়েছেন। এখানে ‘ইউকাযযিবু’ মানে যে জেনে বুঝে অস্বীকার করার পাশাপাশি এটাকে মিথ্যা হিসাবে প্রচার করে ।
দ্বিতীয় আয়াতে আছে ‘যে এতিমকে ধাক্কা দিয়ে তাড়িয়ে দেয়’ সমাজের সবচেয়ে দুর্বল ও করুণা পাওয়ার যোগ্য ব্যক্তি এতিমের প্রতি তার খারাপ ব্যবহারের স্বভাবটি তুলে ধরা হয়েছে। এখানে ইয়াদু অর্থ গলাধাক্কা দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়।
তৃতীয় আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘আর অভাবগ্রস্তকে অন্নদানে উৎসাহিত করে না?’ তোয়ামিল মিসকিন মানে দরিদ্রের খাবার বোঝানো হয়েছে।
সুরার চতুর্থ ও পঞ্চম আয়াতে ‘সুতরাং দুর্ভোগ সেসব নামাজ আদায়কারীর, যারা তাদের নামাজ সম্বন্ধে উদাসীন,’নামাজের ব্যাপারে গাফিলতির বিষয়টি আল্লাহ বলেছেন। ‘ফি সলাতিহিম সাহুন’ অর্থাৎ নামাজের মধ্যে উদাসীন । নামাজের মধ্যে কারও কারও বিভিন্ন চিন্তা ঢুকে যায়, অন্যদিকে মন চলে যায়।
ষষ্ঠ আয়াতে ‘যারা তা পড়ে লোকদেখানোর জন্য’ বলা হয়েছে। লোক দেখানো কাজ করে তাদের কথা বলা হয়েছে। কাউকে দেখানোর জন্য কোনো কাজ করলে সে কাজটি যে করে তা তার জন্য কল্যাণ বয়ে আনে না।
সুরার শেষ আয়াতে ‘আর যারা অপরকে (সংসারের ছোটখাটো) জিনিস দিয়ে সাহায্য করতে চায় না ।’ মানুষের প্রতি অন্যায় করার বিষয়টি ওঠে এসেছে।
আরও পড়ুনঅনাথ ও দরিদ্রের প্রতি কোমলতা সুরা দোহার শিক্ষা১২ এপ্রিল ২০২৩মানুষদের মধ্য দুটি দলের কথা
সুরা মাউনে মানুষদের দুটি দলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথম দল যারা কেয়ামত দিবসের ওপর বিশ্বাস রাখে না। এতিমের সম্পদ আত্মসাৎ করে। তাদের সঙ্গে কঠোর আচরণ করে। গরিব-মিসকিনদেরকে নিজেরা খাওয়ায় না, অন্যদেরও খাওয়ানোর প্রতি উৎসাহিত করে না। অর্থাৎ আল্লাহ ও বান্দা কারও সঙ্গেই তাদের আচরণ সঠিক নয়।
দ্বিতীয় দল হচ্ছে মুনাফেক। এখানে তাদের তিনটি নিকৃষ্ট দোষের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথমত তারা নামাজের ব্যাপারে উদাসীন। তাদের উদাসীনতা আবার দুভাবে হতে পারে। হয়তো তারা নামাজ আদায় করে না বা নামাজ পড়ে কিন্তু নামাজ পড়ার সময় নামাজের কোনো বিষয়ের প্রতি লক্ষ রাখে না। দ্বিতীয়ত তারা লোক-দেখানোর জন্য ইবাদত করে থাকে। তৃতীয়ত, তারা এতটাই কৃপণ যে, প্রয়োজনীয় ছোটখাটো খরচ করতেও তারা অস্বীকার করে। (সুরা মাউন , আয়াত ১–৭, কোরানশরিফ: সরল বঙ্গানুবাদ, অনুবাদ: মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, প্রথমা প্রকাশন)
আরও পড়ুনসুরা বুরুজে বিশ্বাসীর পুরস্কার, অবিশ্বাসীর শাস্তি০৮ এপ্রিল ২০২৩উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের উদ্দেশ্যে ‘ভুয়া-ভুয়া’ স্লোগান পছন্দ হয়নি স্যামির
চট্টগ্রামের সাগরিকায় উপস্থিত থাকা দর্শকরা গতকাল ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সাপোর্ট করেছে এমন কথা শুনলে অবাক হবেন নিশ্চিয়ই? অবাক হওয়ার কিছু নেই। সত্যিই এমন কিছুই হয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে।
ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ বাংলাদেশ দল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন দর্শকরা আপাতদৃষ্টিতে এমনটাই মনে হয়েছে। লাল-সবুজের পতাকা গ্যালারিতে উড়তে দেখা যায়নি তেমনটা নয়। কিন্তু ম্যাচ যত গড়িয়েছে সেই পতাকা উড়ানোও তত কমেছে। টিকিটের মূল্য একেবারে হাতের নাগালে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন। তবুও ভরেনি গ্যালারি।
লিটন, জাকের, তাসকিন, শরিফুল, সাইফদের পারফরম্যান্স এমন গড়পড়তা যে সমর্থকরা প্রতিপক্ষের ব্যাটিং-বোলিং দেখেই বেশি আনন্দিত হচ্ছেন। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের যে নিবেদন, যে চাহিদা তা রোস্টন চেজ, আকিম আগাস্তের ব্যাটে পাওয়া গেলে সমর্থকদের দোষ কোথায়? তাদের চার-ছক্কায় গ্যালারিতে তালির ঝড় উঠে। উল্লাস, উদ্দীপনায় মাততে দেখা যায়।
আর স্বাগতিক দলের জন্য উড়ে আসে দুয়ো ধ্বনি। ‘ভুয়া-ভুয়া’ স্লোগান চললো পুরো ম্যাচ জুড়েই। বিশেষ করে সীমানায় থাকা ক্রিকেটাররা দর্শকদের রোষানলে পড়লেন বেশি। শুধু তা-ই নয়, স্টেডিয়ামের যাওয়া-আসার পথেও সেই সমর্থকরাই ‘ভুয়া-ভুয়া’ স্লোগানে এলোমেলা করে দেন ক্রিকেটারদের।
বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের উদ্দেশ্যে এসব স্লোগান একেবারেই পছন্দ হয়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোচ ড্যারেন স্যামির। ক্যারিয়ারে নানা সময় বাংলাদেশে আসায় কিছুটা বাংলা শব্দ তারও জানা। তবে ভুয়া অর্থটা জেনেছেন এবারই। তাইতো তার হৃদয়ে কিছুটা দহনও হচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য, “তারা (দর্শকরা) ক্রিকেটারদের সঙ্গে যেভাবে আচরণ করেছে, সেটা আমার ভালো লাগেনি। আমি শুনেছি তারা ‘ভুয়া, ভুয়া’ বলছে। এর অর্থও আমি জেনেছি। কিন্তু আমি মনে করি না, হোম টিমের দর্শক হিসেবে এমন করা উচিত। কারণ আপনারা তখন সমর্থক। প্রত্যেক ক্রিকেটারই মাঠে আসে তাদের সেরাটা দেওয়ার জন্য। তাই আপনাদের উচিত, তাদের সমর্থন করা।”
ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দুইবার বিশ্বকাপ জেতানো স্যামি কঠিন সময়ে ক্রিকেটারদের পাশে থাকার কথা বললেন, ‘‘তবুও তারা (দর্শকরা) ভালো। তারা নিজেদের দলকে পারফর্ম করতে দেখতে চায়। তবে যত বেশি সমর্থন ও উৎসাহ দেবেন, তারা তত দূর যেতে পারবে। ক্রিকেটারদের অযথা চাপে ফেলবেন না। ফ্যানদের বলব, তাদের (ক্রিকেটারদের) সঙ্গে সুন্দর আচরণ করুন।”
চট্টগ্রাম/ইয়াসিন