যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ একটি ছোট উড়োজাহাজ ফিলিপাইনে বিধ্বস্ত হয়ে চারজন নিহত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের মিন্দানাও দ্বীপের আম্পাতুয়ানের কৃষি পৌরসভার কাছে উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়। পুলিশ ও কর্তৃপক্ষ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

পুলিশ বলেছে, এখনো উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের কারণ নিশ্চিত হওয়া যায়নি। নিহত ব্যক্তিদের পরিচয়ও শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।

আঞ্চলিক পুলিশের মুখপাত্র জোপি ভেনচুরা এএফপিকে বলেন, উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়ে একটি জল মহিষকে আঘাত করে। এতে মহিষটি গুরুতর আঘাত পেয়েছে।

পৌরসভার উদ্ধারকারী রিয়া মার্টিন বলেছেন, ‘দুর্ঘটনাস্থল থেকে আমরা চারজনের মরদেহ উদ্ধার করেছি। কর্তৃপক্ষ দুর্ঘটনাস্থল ঘিরে রেখেছে।’

এই উদ্ধারকর্মী আরও বলেন, ‘মরদেহগুলো বিধ্বস্ত উড়োজাহাজটির পাশে পাওয়া গেছে। উড়োজাহাজটি ভেঙে দুই টুকরা হয়ে গেছে।’

ফিলিপাইনের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ দুর্ঘটনার কথা নিশ্চিত করেছে। তবে তারা এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি।

সংবাদ সংস্থা এপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিধ্বস্ত উড়োজাহাজটি যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ছিল। ফিলিপাইনে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের মুখপাত্র কনিষ্ক গঙ্গোপাধ্যায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কমান্ড এ বিষয়ে একটি বিবৃতি দেবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

ফিলিপাইনের মাগুইন্দানাও দেল সুর প্রদেশের নিরাপত্তা কর্মকর্তা আমির জেহাদ টিম আম্বোলোদতো বলেন, ধ্বংসস্তূপ থেকে চারজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, যাঁদের বিদেশি নাগরিক বলে মনে হচ্ছে।

ফিলিপাইনে স্বল্প সময়ের জন্য নিয়মিত পালা করে যুক্তরাষ্ট্রের অল্প কিছু সেনা মোতায়েন করা হয়। মিন্দানাও দ্বীপে ইসলামিক স্টেট (আইএস) সংশ্লিষ্ট সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যদের সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর লড়াইয়ে তাদের গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী।

ফ্লাইট চলাচলের তথ্য সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠান ফ্লাইটঅ্যাওয়্যারের তথ্যমতে, বিধ্বস্ত উড়োজাহাজটির রেজিস্ট্রেশন নম্বর এন৩৪৯সিএ। এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠান মেট্রিয়ার নামে নিবন্ধিত। উড়োজাহাজটির নাম ও মডেল নম্বর বিচক্রাফট সুপার কিং এয়ার বি৩০০।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

শিক্ষার্থীর গবেষণাপত্রের অংশ অনুমতি না নিয়ে প্রকাশের অভিযোগ, শিক্ষক বলছেন ‘ভিত্তিহীন’

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ইসরাত জাহানের বিরুদ্ধে তাঁর আগের কর্মস্থলের এক শিক্ষার্থীর তৈরি করা গবেষণাপত্রের অংশ নিজের নামে প্রকাশ করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ওই শিক্ষার্থী কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

লিখিত অভিযোগ দেওয়া ওই সাবেক শিক্ষার্থীর নাম রিফাত সুলতানা। তিনি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। বর্তমানে তিনি ফেনী শহরের বাসিন্দা এবং সেখানে একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। ২০১৯ সালে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন ইসরাত জাহান। ওই সময়ের শিক্ষার্থী রিফাত সুলতানার থিসিসের সুপারভাইজার ছিলেন তিনি। প্রায় আড়াই বছর আগে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছেন ইসরাত জাহান।

জানতে চাইলে ইসরাত জাহান মঙ্গলবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সেই শিক্ষার্থী আমাকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলবে, কখনো ভাবিনি। আমার সঙ্গে ওই শিক্ষার্থীর দীর্ঘদিনের সম্পর্ক এবং সে নিজেই একাধিকবার আমার সঙ্গে যৌথভাবে জার্নাল প্রকাশের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমি দীর্ঘদিন তাকে পড়িয়েছি, আমিই তাকে সব সময় উৎসাহিত করেছি থিসিসে। কিন্তু অভিযোগে এবং গণমাধ্যমে সে যেসব কথা বলেছে, তার সবই ভিত্তিহীন। আমি তার সঙ্গে অসংখ্যবার আলোচনা করেই জার্নালে প্রবন্ধ জমা দিয়েছি। আমার কাছে সব প্রমাণ রয়েছে। কিন্তু কেন সে অভিযোগ করল, এটাই বুঝতে পারছি না।’

২০১৯ সালে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক ইসরাত জাহানের অধীন রিফাত সুলতানা একটি থিসিস করেন। যার শিরোনাম ‘সাবজুগেশন, মার্জিনালাইজেশন অ্যান্ড ডাবল কলোনিজেশন: আ রিডিং অব দ্য অবরোধবাসিনী, দ্য ডার্ক হোল্ডস নো টেররস অ্যান্ড দ্য গড অব স্মল থিংস’। ওই থিসিসের বিষয়বস্তুর ওপর ভিত্তি করে গত ৩১ ডিসেম্বর ‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ইংলিশ লিটারেচার অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্সেস’ জার্নালে ‘ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স: আ কোয়েস্ট ফর সেলফ ইন শশী দেশপান্ডে’স দ্য ডার্ক হোল্ডস নো টেররস’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেন ইসরাত জাহান। এই প্রবন্ধে রিফাত সুলতানাকে দ্বিতীয় লেখক হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

এরপর গত ১৩ মার্চ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর অভিযোগ পাঠান রিফাত সুলতানা। যার পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
রিফাত সুলতানা অভিযোগ করেন, ইসরাত জাহান তাঁর অনুমতি ছাড়া এমএ থিসিসের ৩ নম্বর অধ্যায় থেকে সরাসরি অনুলিপি করেছেন। এ ছাড়া থিসিসের অন্যান্য অংশও, যেমন ৬ জানুয়ারি ২০১৯ এবং ২৩ আগস্ট ২০১৯ তারিখে পাঠানো থিসিসের খসড়া নমুনা এবং থিসিস প্রেজেন্টেশন থেকেও তিনি উদ্ধৃতি এবং প্যারাফ্রেজিং ব্যবহার করেছেন। তা ছাড়া ইসরাত জাহান থিসিসের মৌলিক লেখকের নাম প্রকাশে তাঁর সম্মতি নেননি। গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর ইসরাত জাহান তাঁর মুঠোফোনে কল করলেও তিনি ব্যস্ততার কারণে ধরতে পারেননি। এরপর তাঁর সঙ্গে শিক্ষকের আর কোনো যোগাযোগ হয়নি।

রিফাত সুলতানা প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গত ২২ এপ্রিল আমার সাক্ষাৎকার নিয়েছে। তবে সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় তদন্ত কমিটি পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করেছে এবং নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। তদন্ত চলাকালীন আমার অভিযোগের তদন্ত না করে আমাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছে তারা। তদন্ত কমিটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাকে মানসিকভাবে হেনস্তা করেছে।’

তদন্ত কমিটির সদস্যরা তাঁদের মত চাপিয়ে দিতে চেয়েছেন উল্লেখ করে রিফাত সুলতানা আরও বলেন, ‘তাঁরা মনে করেন, থিসিস থেকে শিক্ষার্থী এবং সুপারভাইজার দুজনেই নাকি একক লেখক হিসেবে গবেষণা আর্টিকেল প্রকাশ করতে পারেন এবং কোনো সুপারভাইজার চাইলেই শিক্ষার্থীর থিসিস থেকে প্রথম লেখক হিসেবে আর্টিকেল প্রকাশ করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে থিসিসকারী শিক্ষার্থী অনুমতি না নিয়ে আর্টিকেল প্রকাশ করাকে তাঁরা অন্যায় বলে মনে করেন না।’

জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির সদস্য কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (চলতি দায়িত্ব) অধ্যাপক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এগুলো সব মিথ্যা ও বানোয়াট কথাবার্তা। ইসরাত জাহান এই গবেষণা দিয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো প্রকার সুবিধা নেননি। এটি তাঁদের ব্যক্তিগত বিষয়। কারণ, পূর্বের প্রতিষ্ঠানে এটি তাঁদের যৌথ কাজ ছিল। ইসরাত যে গবেষণা জার্নালে প্রকাশ করেছেন, সেখানে তিনি শিক্ষার্থীর নামও দিয়েছেন। এরপরও আমাদের কাছে অভিযোগ করায় আমরা এ নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছি এবং অভিযোগকারীর কাছ থেকে বিস্তারিত জানান চেষ্টা করেছি। কিন্তু তিনি যেসব কথা বলছেন সেগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ