রেসে হেরে যাওয়া ঘোড়াদের প্রশান্ত জলাধার
Published: 7th, February 2025 GMT
কবি নিজাম বিশ্বাসের প্রথম কবিতার বই ‘জলমাকড়ের নৌকাবাইচ’ প্রকাশিত হয়েছে বইমেলায়। ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকেই বৈতরণী প্রকাশনার ৪৫১ নম্বর স্টলে বইটি পাওয়া যাচ্ছে। প্রথম কবিতার বই হলেও নিজাম বিশ্বাস একেবারে নবীন কবি তো নন, বরং বিগত দেড় দশকে
বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের সাহিত্য সাময়িকীতে বহুল মুদ্রিত নামগুলোর একটি। তাহলে বই প্রকাশে এত দেরি কেন? এ প্রশ্নটিই পাঠকের মনে ঘুরেফিরে আসবে কবিতাগুলোর অনুপম সৌকর্যে ডুবে যেতে যেতে।
বইজুড়ে কবির প্রকৃতি-বীক্ষণ, সবুজ ও সহজের সঙ্গে একাত্মতা প্রথমেই পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। মাটি, নদী, বৃক্ষকে একান্ত আপন করে নিতে না পারলে এমন মিথস্ক্রিয়া অসম্ভব। এই প্রকৃতিময়তা ছড়িয়ে আছে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠাজুড়ে; অক্ষরগুলোকে ছাড়িয়ে মাঝেমধ্যে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে ব্যক্তিগত পাহাড়। নগরের বুকের ভেতর বসে থেকে এভাবে মাটি পেরিয়ে নদীর গভীরে, সমুদ্রের অতলে শিকড় মেলে দেওয়ার জন্য যে অনুপম কবিত্বশক্তি প্রয়োজন, নিজাম বিশ্বাসে তা নিতান্তই উপস্থিত। অনেকটা সাদামাটা ভঙ্গিতে। ফলে নিজস্ব সব নদীতে তিনি তরঙ্গায়িত হয়েছেন নিস্তরঙ্গ থেকেই। জল হয়ে গিয়ে, সেই জল টলমল করা কোনো এক পাখির চোখে, আর সেই পাখিটা হয়তো তার স্মৃতির ডানা মেলে উড়ে গিয়ে বসে ঢাকা নগরীর এক শ্যাওলা ধরা বাড়ির চারতলার ছাদে, যাকে ঘিরে ঈর্ষাকাতর রেষারেষি চলে চাঁদ ও সূর্যের মধ্যে, আর এসব দেখে একটা মনমরা পেঁচা নখ থেকে ফেলে দেয় তার আধখাওয়া ইঁদুর ওই ছাদের ওপর। কিন্তু দিনশেষে ওই ছাদ নয়; কবির প্রেয়সী হয় এক দেমাগি বারান্দা।
কবিতাগুলোয় মানুষের উপস্থিতি রহস্যময় রকমের কম। কোনো এক তুমি ছাড়া কবিতায় মানুষের দেখা প্রায় পাওয়াই যায় না। বরং কবিতা ভরতি ব্যাঙাচি, শোল মাছ, পিঁপড়া, ইঁদুর, জোনাক, ঝিঁ ঝিঁ, সোনাব্যাঙ, বাঘ, চিতা, নেকড়ে, নাগিনী, হরিণী, বক, কাছিম, সরীসৃপ, শুশুক। বিড়াল, চড়ুই, রাজহাঁস, বল্গা ফড়িং (কাল্পনিক?), মারমেইডসহ আরও নানান উপাদানে। আবার কিছুটা অপরিচিত ঢঙেও এসেছে আমাদের চেনাজানা প্রাণীরা– জুনিপোক, উড়োপোক, কাঠুরে পাখি, ঝুল বাদুড় এমন সব শব্দের মায়াজালে।
বইটির মূল সুর যদি ধরতে যাই, তাহলে বিষণ্নতা ও স্মৃতিকাতরতাই প্রধান হয়ে ওঠে। ছন্দ কবির প্রধান আগ্রহের বিষয় নয়, এবং তার প্রয়োজনও খুব বেশি অনুভূত হয় না। বাংলা সাহিত্যের বিষণ্ন সৌন্দর্যের বরপুত্র জীবনানন্দের মতো নিজাম বিশ্বাসের জন্মও বরিশালে। সে জন্যই হয়তো প্রকৃতির অপরূপ সুষমা ব্যবহারেও দু’জনের মধ্যে সাযুজ্য খুঁজে পাওয়া যায়। তবে অতটুকুই। এ ছাড়া নিজাম বিশ্বাস জীবনানন্দকে অনুসরণ করেননি, বরং সচেষ্ট থেকেছেন ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, নিজস্ব সময় আর সেই সময়ের ভাষাকে ব্যবহার করেই একটি একান্ত নিজস্ব জগৎ তৈরি করতে। তাই প্রকৃতির বুকের ভেতরে বসেও তিনি একুশ শতকীয়, নাগরিক, বিচ্ছিন্নতাবোধের যন্ত্রণায় আকীর্ণ। বরিশালের সুগন্ধা নদীর মতো তাঁর ঢাকার শহরতলি-বাসের অভিজ্ঞতাজাত বাড়িঘর, ছাদ, বারান্দার আলাপ এক দ্বৈতসত্তার উপস্থিতিকেও দৃশ্যমান করে তোলে।
সব কবিতা যে একটা সুখানুভূতি বা বিষণ্ন পরিতৃপ্তির মধ্যে গিয়েই সফল সম্পন্ন– এমন বলা যাবে না। কয়েকটি কবিতার ক্ষেত্রে মনে হয়েছে, আরেকটু আগে শেষ হলেই বেশি সংহত থাকত। কিন্তু এই রকম অল্প কিছু অতি সম্পূর্ণতাকে ছাড়িয়ে বইজুড়েই মূলত কবির আলতো নরম পায়ের ছাপ। চিৎকারের চেয়ে স্বগতোক্তি, বিক্ষোভের চেয়ে বিষণ্ন নীরবতাই কবিতাগুলোকে বাঙ্ময় করে তুলেছে। একটা বিষণ্ন সুন্দর চিরন্তন বোধ ভর করে আছে দুই মলাটের ভেতরে। কিছু শব্দ, শব্দবন্ধ, রূপক চমকে দেওয়ার মতো– ‘সূর্যমুখী মানুষ’, ‘শীতে কোঁচকানো পুকুরের জল’, ‘নদীর কঙ্কাল’, ‘নিমফুলের ঘ্রাণের মতো অন্ধকার’, ‘মূর্ছা যাওয়া নারীর মতো বিকেলের রোদ’, ‘পলেস্তারার স্তন’, ‘শ্যাওলার শাড়ি’, ‘ইরানের কম্বলের মতো নরম বুক’, ‘বিস্তীর্ণ মাঠের মতো অন্ধকার নদী’ বোধের দরজা খুলে অন্য এক জগতের এক পশলা দমকা বাতাসের মুখোমুখি করে দেয় পাঠককে।
কবি নিজাম বিশ্বাস প্রণীত জলমাকড়ের নৌকাবাইচ একুশ শতকের অস্থিরতা আর সফলতার অন্তহীন রেসে হেরে যাওয়া ঘোড়াদের জন্য এক শীতল সবুজ ও একান্ত জলাধার।
জলমাকড়ের নৌকাবাইচ।।নিজাম বিশ্বাস।। কবিতা।। প্রচ্ছদ: রাজীব দত্ত।। প্রকাশক: বৈতরণী।। পৃষ্ঠা: ৮০।। মূল্য: ৩৩০ টাকা
–আদনান আলী, কবি
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ম্যাচ রেফারি পাইক্রফ্ট ক্ষমা চাওয়ার পরই খেলতে রাজি হয়েছিল পাকিস্তান
সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে বাঁচা-মরার ম্যাচে টসের আগ পর্যন্ত দারুণ নাটকীয়তায় ঘেরা ছিল পাকিস্তানের ড্রেসিং রুম। ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফ্টকে দায়িত্ব থেকে সরানোর দাবি তোলে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। তবে আইসিসি সে দাবি আমলে নেয়নি। শেষ পর্যন্ত নিজের ভুল স্বীকার করে পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান আলী আগা ও দলের ম্যানেজারের কাছে ক্ষমা চান পাইক্রফ্ট। এরপরই মাঠে নামতে রাজি হয় পাকিস্তান দল।
ঘটনার সূত্রপাত ১৪ সেপ্টেম্বরের ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ থেকে। টসের সময় দুই অধিনায়কের করমর্দন হয়নি। আরও বড় বিতর্ক তৈরি হয় ম্যাচ শেষে। জয়ী ভারতের ক্রিকেটাররা করমর্দন এড়িয়ে দ্রুত ড্রেসিং রুমে ফিরে যান। সালমান আলী আগার নেতৃত্বে পাকিস্তানের খেলোয়াড়রা দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করলেও সূর্যকুমার যাদব, শিভাম দুবেসহ পুরো ভারতীয় দল সেই শিষ্টাচার মানেনি।
আরো পড়ুন:
আজ মুখোমুখি শ্রীলঙ্কা-আফগানিস্তান, যে ম্যাচে ঝুলছে বাংলাদেশের ভাগ্য
আমিরাতকে হারিয়ে সুপার ফোরে পাকিস্তান
এমন ঘটনার প্রতিবাদে পাকিস্তান অধিনায়ক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান বর্জন করেন। পরে আইসিসির কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জানায় পিসিবি। তাদের দাবি ছিল, ম্যাচ রেফারি পাইক্রফ্ট ইচ্ছাকৃতভাবেই দুই অধিনায়কের হাত মেলানো আটকান, যা আইসিসির আচরণবিধি ও ক্রিকেটের স্পিরিটের পরিপন্থী।
যদিও আইসিসির ব্যাখ্যা ছিল ভিন্ন। তারা জানায়, এসিসির কর্মকর্তাদের নির্দেশেই কাজ করেছেন পাইক্রফ্ট। কিন্তু পাকিস্তান নড়েচড়ে বসে। এমনকি জানিয়ে দেয়, পাইক্রফ্ট দায়িত্বে থাকলে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে মাঠে নামবে না তারা। এই হুমকির কারণে ম্যাচের শুরুর সময় এক ঘণ্টা পিছিয়ে দিতে বাধ্য হয় আয়োজকরা।
লাহোরে রমিজ রাজা, নাজাম শেঠিসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন পিসিবি চেয়ারম্যান মহসিন নাকভি। পরে সমঝোতার পথ খোঁজা হয়। অবশেষে পাইক্রফ্ট স্বীকার করেন, ভুল বোঝাবুঝির কারণেই পরিস্থিতি এতদূর গড়ায়, এবং তিনি পাকিস্তান অধিনায়ক ও ম্যানেজারের কাছে ক্ষমা চান। তাতেই সন্তুষ্ট হয়ে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নেয় পাকিস্তান দল।
বুধবার রাতে ‘এ’ গ্রুপে নিজেদের সেই শেষ ম্যাচে আরব আমিরাতকে ৪১ রানের ব্যবধানে হারিয়ে সুপার ফোরে ভারতের সঙ্গী হয় সালমান-শাহীনরা। দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান সংগ্রহ করে ৯ উইকেটে ১৪৯ রান। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৭.৪ ওভারে ১০৫ রানেই গুটিয়ে যায় আরব আমিরাত।
ঢাকা/আমিনুল