কবি নিজাম বিশ্বাসের প্রথম কবিতার বই ‘জলমাকড়ের নৌকাবাইচ’ প্রকাশিত হয়েছে বইমেলায়। ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকেই বৈতরণী প্রকাশনার ৪৫১ নম্বর স্টলে বইটি পাওয়া যাচ্ছে। প্রথম কবিতার বই হলেও নিজাম বিশ্বাস একেবারে নবীন কবি তো নন, বরং বিগত দেড় দশকে 

বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের সাহিত্য সাময়িকীতে বহুল মুদ্রিত নামগুলোর একটি। তাহলে বই প্রকাশে এত দেরি কেন? এ প্রশ্নটিই পাঠকের মনে ঘুরেফিরে আসবে কবিতাগুলোর অনুপম সৌকর্যে ডুবে যেতে যেতে।

বইজুড়ে কবির প্রকৃতি-বীক্ষণ, সবুজ ও সহজের সঙ্গে একাত্মতা প্রথমেই পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। মাটি, নদী, বৃক্ষকে একান্ত আপন করে নিতে না পারলে এমন মিথস্ক্রিয়া অসম্ভব। এই প্রকৃতিময়তা ছড়িয়ে আছে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠাজুড়ে; অক্ষরগুলোকে ছাড়িয়ে মাঝেমধ্যে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে ব্যক্তিগত পাহাড়। নগরের বুকের ভেতর বসে থেকে এভাবে মাটি পেরিয়ে নদীর গভীরে, সমুদ্রের অতলে শিকড় মেলে দেওয়ার জন্য যে অনুপম কবিত্বশক্তি প্রয়োজন, নিজাম বিশ্বাসে তা নিতান্তই উপস্থিত। অনেকটা সাদামাটা ভঙ্গিতে। ফলে নিজস্ব সব নদীতে তিনি তরঙ্গায়িত হয়েছেন নিস্তরঙ্গ থেকেই। জল হয়ে গিয়ে, সেই জল টলমল করা কোনো এক পাখির চোখে, আর সেই পাখিটা হয়তো তার স্মৃতির ডানা মেলে উড়ে গিয়ে বসে ঢাকা নগরীর এক শ্যাওলা ধরা বাড়ির চারতলার ছাদে, যাকে ঘিরে ঈর্ষাকাতর রেষারেষি চলে চাঁদ ও সূর্যের মধ্যে, আর এসব দেখে একটা মনমরা পেঁচা নখ থেকে ফেলে দেয় তার আধখাওয়া ইঁদুর ওই ছাদের ওপর। কিন্তু দিনশেষে ওই ছাদ নয়; কবির প্রেয়সী হয় এক দেমাগি বারান্দা। 

কবিতাগুলোয় মানুষের উপস্থিতি রহস্যময় রকমের কম। কোনো এক তুমি ছাড়া কবিতায় মানুষের দেখা প্রায় পাওয়াই যায় না। বরং কবিতা ভরতি ব্যাঙাচি, শোল মাছ, পিঁপড়া, ইঁদুর, জোনাক, ঝিঁ ঝিঁ, সোনাব্যাঙ, বাঘ, চিতা, নেকড়ে, নাগিনী, হরিণী, বক, কাছিম, সরীসৃপ, শুশুক। বিড়াল, চড়ুই, রাজহাঁস, বল্গা ফড়িং (কাল্পনিক?), মারমেইডসহ আরও নানান উপাদানে। আবার কিছুটা অপরিচিত ঢঙেও এসেছে আমাদের চেনাজানা প্রাণীরা– জুনিপোক, উড়োপোক, কাঠুরে পাখি, ঝুল বাদুড় এমন সব শব্দের মায়াজালে।

বইটির মূল সুর যদি ধরতে যাই, তাহলে বিষণ্নতা ও স্মৃতিকাতরতাই প্রধান হয়ে ওঠে। ছন্দ কবির প্রধান আগ্রহের বিষয় নয়, এবং তার প্রয়োজনও খুব বেশি অনুভূত হয় না। বাংলা সাহিত্যের বিষণ্ন সৌন্দর্যের বরপুত্র জীবনানন্দের মতো নিজাম বিশ্বাসের জন্মও বরিশালে। সে জন্যই হয়তো প্রকৃতির অপরূপ সুষমা ব্যবহারেও দু’জনের মধ্যে সাযুজ্য খুঁজে পাওয়া যায়। তবে অতটুকুই। এ ছাড়া নিজাম বিশ্বাস জীবনানন্দকে অনুসরণ করেননি, বরং সচেষ্ট থেকেছেন ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, নিজস্ব সময় আর সেই সময়ের ভাষাকে ব্যবহার করেই একটি একান্ত নিজস্ব জগৎ তৈরি করতে। তাই প্রকৃতির বুকের ভেতরে বসেও তিনি একুশ শতকীয়, নাগরিক, বিচ্ছিন্নতাবোধের যন্ত্রণায় আকীর্ণ। বরিশালের সুগন্ধা নদীর মতো তাঁর ঢাকার শহরতলি-বাসের অভিজ্ঞতাজাত বাড়িঘর, ছাদ, বারান্দার আলাপ এক দ্বৈতসত্তার উপস্থিতিকেও দৃশ্যমান করে তোলে।

সব কবিতা যে একটা সুখানুভূতি বা বিষণ্ন পরিতৃপ্তির মধ্যে গিয়েই সফল সম্পন্ন– এমন বলা যাবে না। কয়েকটি কবিতার ক্ষেত্রে মনে হয়েছে, আরেকটু আগে শেষ হলেই বেশি সংহত থাকত। কিন্তু এই রকম অল্প কিছু অতি সম্পূর্ণতাকে ছাড়িয়ে বইজুড়েই মূলত কবির আলতো নরম পায়ের ছাপ। চিৎকারের চেয়ে স্বগতোক্তি, বিক্ষোভের চেয়ে বিষণ্ন নীরবতাই কবিতাগুলোকে বাঙ্ময় করে তুলেছে। একটা বিষণ্ন সুন্দর চিরন্তন বোধ ভর করে আছে দুই মলাটের ভেতরে। কিছু শব্দ, শব্দবন্ধ, রূপক চমকে দেওয়ার মতো– ‘সূর্যমুখী মানুষ’, ‘শীতে কোঁচকানো পুকুরের জল’, ‘নদীর কঙ্কাল’, ‘নিমফুলের ঘ্রাণের মতো অন্ধকার’, ‘মূর্ছা যাওয়া নারীর মতো বিকেলের রোদ’, ‘পলেস্তারার স্তন’, ‘শ্যাওলার শাড়ি’, ‘ইরানের কম্বলের মতো নরম বুক’, ‘বিস্তীর্ণ মাঠের মতো অন্ধকার নদী’ বোধের দরজা খুলে অন্য এক জগতের এক পশলা দমকা বাতাসের মুখোমুখি করে দেয় পাঠককে।

কবি নিজাম বিশ্বাস প্রণীত জলমাকড়ের নৌকাবাইচ একুশ শতকের অস্থিরতা আর সফলতার অন্তহীন রেসে হেরে যাওয়া ঘোড়াদের জন্য এক শীতল সবুজ ও একান্ত জলাধার।

জলমাকড়ের নৌকাবাইচ।।নিজাম বিশ্বাস।। কবিতা।। প্রচ্ছদ: রাজীব দত্ত।। প্রকাশক: বৈতরণী।। পৃষ্ঠা: ৮০।। মূল্য: ৩৩০ টাকা

–আদনান আলী, কবি

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বইম ল প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

রাজশাহীতে জুলাই শহীদদের স্মরণে মিনি ম্যারাথন

রাজশাহীতে জুলাই শহীদদের স্মরণে মিনি ম্যারাথন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শুক্রবার সকাল ছয়টার দিকে নগরের বিনোদপুর এলাকা থেকে এ দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু হয়। আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) রাজশাহী মহানগর শাখা এ ম্যারাথনের আয়োজন করে।

ম্যারাথনে অংশ নিতে প্রতিযোগীরা আজ ভোর সাড়ে পাঁচটার পর থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়–সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারে জমায়েত হতে থাকেন। সকাল ছয়টার পর শুরু হয় পাঁচ কিলোমিটারের ম্যারাথন প্রতিযোগিতা।

অংশগ্রহণকারীরা বিনোদপুর থেকে শুরু হয়ে নগরের তালাইমারী মোড় হয়ে আবার বিনোদপুর হয়ে চৌদ্দপায় ফায়ার সার্ভিস মোড় হয়ে আবার বিনোদপুরে ফিরে আসেন।পরে সেখানে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। প্রথম পুরস্কার ১০ হাজার টাকা, দ্বিতীয় পুরস্কার ৮ হাজার টাকা, তৃতীয় পুরস্কার হিসেবে ৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অংশগ্রহণকারী তিন নারীসহ আরও ১০ জনকে পুরস্কৃত করা হয়।

ম্যারাথন উপলক্ষে আগে থেকেই মেডিকেল টিমসহ একটি অ্যাম্বুলেন্স ছিল। এ ছাড়া সবার জন্য টি-শার্ট, গ্লুকোজ পানিসহ বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হয়। ম্যারাথনে অংশ নেওয়াদের বেশির ভাগই ছিল তরুণ। তাঁদের মধ্যে বেশি বয়সী নারীরাও অংশ নেন।

প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া ৫৮ বছর বয়সী পিয়ারুল ইসলাম বলেন, এ উদ্যোগ খুবই ভালো হয়েছে। অসুস্থমুক্ত জীবন গড়তে হলে দৌড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। শারীরিক বিভিন্ন অ্যাকটিভিটিসের মধ্যে থাকলে সুস্থ জীবন গড়া যায়। এ বয়সে তাঁর কোনো ওষুধ লাগে না। তাঁরও অনেক সিনিয়র আছেন, কারও বয়স ৭৫, তাঁদেরও ওষুধ লাগে না। তাই এ ধরনের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হবে। সবাইকে উদ্ধুব্ধ করতে হবে। যাতে নিজেদের শরীরকে সব সময় উপযুক্ত রাখে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, অনেক দিন পর তিনি দৌড়াবেন। সাধারণত দৌড়ানো হয় না। আজকের পর থেকে তিনি প্রতিদিন সকালে উঠে দৌড়াবেন।

স্থানীয় বাসিন্দা নাঈম হাসান বলেন, জুলাই গণ–অভ্যুত্থান শুধু সরকারের পতন নয়। এর মাধ্যমে এ দেশের মানুষ একটি নতুন নিশ্বাস নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। সেই নতুন নিশ্বাস নিয়ে ম্যারাথনে তিনি অংশ নিয়েছেন।

ম্যারাথন প্রতিযোগিতায় ১৩ জনকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে রাজশাহী নগরের বিনোদপুর এলাকায়

সম্পর্কিত নিবন্ধ