বন বিভাগ কার্যালয় ও ব্যারাকে তাণ্ডব ভূমিদস্যুদের
Published: 7th, February 2025 GMT
গাজীপুরের শ্রীপুরে বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তার কার্যালয়, বিট কর্মকর্তার অফিস ও বনকর্মীদের ব্যারাকে প্রকাশ্যে দফায় দফায় তাণ্ডব চালিয়েছে বনখেকো ও স্থানীয় ভূমিদস্যুরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে শ্রীপুর উপজেলার রাজেন্দ্রপুর বাজার এলাকার রেঞ্জ কর্মকর্তার কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। বনখেকো ও ভূমিদস্যুরা ওই দুই অফিসের চেয়ার-টেবিল, আলমারির কাচ, ল্যাপটপ, প্রিন্টার, জানালার কাচসহ বিভিন্ন আসবাব ভাঙচুর করে। ভেঙে ফেলা হয় বনকর্মীদের ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেলও। তাদের হামলায় আহত হয়েছেন আক্তার হোসেন নামে বন বিভাগের এক ব্যারাক চৌকিদার। এ ঘটনায় জড়িত মামুন আলম রুবেল নামে একজনকে আটক করেছে পুলিশ।
বনকর্মীরা জানান, সম্প্রতি অবৈধভাবে দখল করে নেওয়া বন বিভাগের জায়গা উদ্ধার করা হয়েছে। এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে বনখেকো ও ভূমিদস্যুরা প্রকাশ্যে এমন তাণ্ডব চালিয়েছে।
বনকর্মী সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় যুবদল নেতা নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে ৪০-৫০ জনের একদল যুবক হঠাৎ করেই রেঞ্জ কর্মকর্তার কার্যালয়ে ঢুকে পড়ে। তাদের প্রত্যেকের হাতে ছিল লাঠিসোটা ও ধারালো অস্ত্র। নজরুল ইসলাম শ্রীপুর উপজেলার রাজাবাড়ী ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে। তিনি গাজীপুর জেলা যুবদলের সাবেক তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।
আহত চৌকিদার আক্তার হোসেন বলেন, কিছু বুঝে ওঠার আগেই সন্ত্রাসীরা তাঁর কলার চেপে ধরে মারধর করতে থাকে। পরে তাঁর ব্যবহৃত মোবাইলটি হাত থেকে নিয়ে ভেঙে ফেলে। এরপর কার্যালয়ে ঢুকে তাণ্ডব চালাতে থাকে। তছনছ করে ফেলে ভেতরে থাকা সব কাগজপত্র। ভেঙে ফেলে আসবাব। লুটপাটের ঘটনাও ঘটায় তারা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দফায় দফায় তাণ্ডবের সময় বনকর্মীরা আতঙ্কে ছোটাছুটি করে নিজেকে রক্ষা করেন। পুলিশ ও বন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন।
রাজেন্দ্রপুর বিট অফিসের ফরেস্ট গার্ড সেলিম মিয়া বলেন, রাজেন্দ্রপুর রেঞ্জ কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে আড়াইশ গজ দূরে রাজেন্দ্রপুর বিট কর্মকর্তার কার্যালয়। এই দুই অফিসের পাশেই বনকর্মীদের বসবাসের ব্যারাক। প্রতিটিতেই হামলা চালায় তারা।
বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক নাসিমা আক্তার বলেন, তারা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
অভিযুক্ত নজরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। খুদে বার্তা দিলেও সাড়া মেলেনি।
শ্রীপুর থানার ওসি জয়নাল আবেদীন মণ্ডল বলেন, তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। বিষয়টি জেলা পুলিশ সুপারও জেনেছেন। হামলার ঘটনায় জড়িত মামুন আলম রুবেল নামে একজনকে আটকও করা হয়েছে। তবে রাত ৮টা পর্যন্ত বন বিভাগের কেউ মামলা করতে থানায় আসেননি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বন ব ভ গ র
এছাড়াও পড়ুন:
পঞ্চগড়ে সীমান্ত এলাকা থেকে যুবকের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার
পঞ্চগড়ে ভারতীয় সীমান্তঘেঁষা বাড়ি থেকে রাজু ইসলাম (৩৫) নামের এক যুবকের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তিনি ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে মারা গেছেন বলে ধারণা করছেন স্থানীয় লোকজন ও জনপ্রতিনিধিরা। তবে ওই সীমান্তে বিএসএফের গুলির কোনো খবর এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
রোববার দুপুর পৌনে ১২টায় লাশের সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায় সদর থানা-পুলিশ। নিহত রাজু ইসলামের বাড়ি সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের ভারতীয় সীমান্তঘেঁষা ঝুলিপাড়া এলাকায়। তিনি বিবাহিত এবং তাঁর তিন ছেলেমেয়ে আছে।
নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসীর বরাত দিয়ে হাড়িভাসা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সাইয়েদ নূর-ই-আলম বলেন, রাজু গতকাল শনিবার রাত ১২টা পর্যন্ত বাড়িতেই ছিলেন। এরপর তিনি কখন বাইরে গেছেন, স্বজনদের কেউ জানেন না। রাত তিনটার দিকে তাঁকে কে বা কারা বাড়ির বাইরে আহত অবস্থায় ফেলে যায়। এ সময় তাঁর চিৎকারে স্বজনেরা ঘুম থেকে উঠে আহত অবস্থায় তাঁকে দেখে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলেন। পথে দেবীগঞ্জ উপজেলার কাছাকাছি গেলে তিনি মারা যান। পরে লাশ বাড়িতে আনা হয়।
ইউপি চেয়ারম্যান সাইয়েদ নূর-ই-আলম বলেন, প্রথম দিকে পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, রাজু স্ট্রোক (মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ) করে মারা গেছেন। পরে তিনি গিয়ে দেখেন, তাঁর দুটি পায়ের হাঁটু ও আশপাশে গুলির চিহ্ন। ভারত সীমান্তে গিয়ে বিএসএফের গুলিতে তিনি মারা গেছেন বলে তাঁরা ধারণা করছেন। কারণ, তাঁর পায়ে স্পষ্ট গুলির চিহ্ন দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন, সকালে বিষয়টি জানাজানির পর বাড়িতে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। খবর পেয়ে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে গেছে।
নীলফামারী ৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শেখ মো. বদরুদ্দোজা মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল দিবাগত রাতে ওই এলাকায় বিজিবির দুটি টহল দল দায়িত্বরত ছিল। তখন সীমান্তে গুলির কোনো ঘটনা ঘটেনি। বিএসএফও গুলি করেনি বলে জানিয়েছে। এমনকি পরিবার থেকে প্রথম দিকে তাঁদের জানানো হয়, তিনি হৃদ্রোগে মারা গেছেন। তবে তিনি যে আহত হয়েছেন, সেটা সীমান্ত এলাকায় হয়েছেন নাকি বাংলাদেশের ভেতরে হয়েছেন, সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. শইমী ইমতিয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, নিহত ব্যক্তির লাশ বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। লাশের দুই পায়ে গুলির চিহ্ন আছে, সেটি তাঁরা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছেন। তবে গুলি কারা করেছে বা কী ধরনের অস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে, সেটা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে জানা যাবে। এ ঘটনায় থানায় একটি হত্যা মামলার প্রক্রিয়া চলছে।