গাজীপুরের শ্রীপুরে বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তার কার্যালয়, বিট কর্মকর্তার অফিস ও বনকর্মীদের ব্যারাকে প্রকাশ্যে দফায় দফায় তাণ্ডব চালিয়েছে বনখেকো ও স্থানীয় ভূমিদস্যুরা। 

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে শ্রীপুর উপজেলার রাজেন্দ্রপুর বাজার এলাকার রেঞ্জ কর্মকর্তার কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। বনখেকো ও ভূমিদস্যুরা ওই দুই অফিসের চেয়ার-টেবিল, আলমারির কাচ, ল্যাপটপ, প্রিন্টার, জানালার কাচসহ বিভিন্ন আসবাব ভাঙচুর করে। ভেঙে ফেলা হয় বনকর্মীদের ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেলও। তাদের হামলায় আহত হয়েছেন আক্তার হোসেন নামে বন বিভাগের এক ব্যারাক চৌকিদার। এ ঘটনায় জড়িত মামুন আলম রুবেল নামে একজনকে আটক করেছে পুলিশ।
বনকর্মীরা জানান, সম্প্রতি অবৈধভাবে দখল করে নেওয়া বন বিভাগের জায়গা উদ্ধার করা হয়েছে। এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে বনখেকো ও ভূমিদস্যুরা প্রকাশ্যে এমন তাণ্ডব চালিয়েছে। 

বনকর্মী সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় যুবদল নেতা নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে ৪০-৫০ জনের একদল যুবক হঠাৎ করেই রেঞ্জ কর্মকর্তার কার্যালয়ে ঢুকে পড়ে। তাদের প্রত্যেকের হাতে ছিল লাঠিসোটা ও ধারালো অস্ত্র। নজরুল ইসলাম শ্রীপুর উপজেলার রাজাবাড়ী ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে। তিনি গাজীপুর জেলা যুবদলের সাবেক তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। 

আহত চৌকিদার আক্তার হোসেন বলেন, কিছু বুঝে ওঠার আগেই সন্ত্রাসীরা তাঁর কলার চেপে ধরে মারধর করতে থাকে। পরে তাঁর ব্যবহৃত মোবাইলটি হাত থেকে নিয়ে ভেঙে ফেলে। এরপর কার্যালয়ে ঢুকে তাণ্ডব চালাতে থাকে। তছনছ করে ফেলে ভেতরে থাকা সব কাগজপত্র। ভেঙে ফেলে আসবাব। লুটপাটের ঘটনাও ঘটায় তারা। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দফায় দফায় তাণ্ডবের সময় বনকর্মীরা আতঙ্কে ছোটাছুটি করে নিজেকে রক্ষা করেন। পুলিশ ও বন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন। 

রাজেন্দ্রপুর বিট অফিসের ফরেস্ট গার্ড সেলিম মিয়া বলেন, রাজেন্দ্রপুর রেঞ্জ কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে আড়াইশ গজ দূরে রাজেন্দ্রপুর বিট কর্মকর্তার কার্যালয়। এই দুই অফিসের পাশেই বনকর্মীদের বসবাসের ব্যারাক। প্রতিটিতেই হামলা চালায় তারা। 

বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক নাসিমা আক্তার বলেন, তারা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

অভিযুক্ত নজরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। খুদে বার্তা দিলেও সাড়া মেলেনি।

শ্রীপুর থানার ওসি জয়নাল আবেদীন মণ্ডল বলেন, তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। বিষয়টি জেলা পুলিশ সুপারও জেনেছেন। হামলার ঘটনায় জড়িত মামুন আলম রুবেল নামে একজনকে আটকও করা হয়েছে। তবে রাত ৮টা পর্যন্ত বন বিভাগের কেউ মামলা করতে থানায় আসেননি। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বন ব ভ গ র

এছাড়াও পড়ুন:

মানবাধিকারের প্রতিশ্রুতি দিল র‍্যাব, চায় সাইবার ইউনিট

অপরাধের ধরন বদলে যাচ্ছে। অভিনব কৌশলে সক্রিয় সাইবার অপরাধীরা। প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ মোকাবিলা করা নতুন চ্যালেঞ্জ। এ জন্য স্বতন্ত্র সাইবার ইউনিট চেয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

পুলিশ সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন গতকাল বুধবার কর্মপরিকল্পনার সারসংক্ষেপ তুলে ধরে বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট। সেখানে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), র‍্যাবসহ একাধিক ইউনিট একুশ শতকের জটিল অপরাধ ও তা নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তিগত প্রস্তুতির বিষয়টি সামনে আনে। গতকাল পুলিশের যে ইউনিটগুলো পরিকল্পনা তুলে ধরেছে, তা হলো হাইওয়ে পুলিশ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), নৌ পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), শিল্প পুলিশ, র‍্যাব, অ্যান্টিটেররিজম ইউনিট, রেলওয়ে পুলিশ ও সিআইডি।

কীভাবে প্রত্যন্ত এলাকার ভুক্তভোগী র‍্যাবের সহযোগিতা পেতে পারেন, সে বিষয়টি উপস্থাপন করেন বাহিনীর মহাপরিচালক (ডিজি) এ কে এম শহিদুর রহমান। তিনি দ্রুত গুজব প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থার ওপর জোর দেন। র‍্যাবের জন্য আলাদা একটি সাইবার ইউনিটের প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেন। র‍্যাব জনবান্ধব হওয়ার চেষ্টা করছে বলে জানান তিনি।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে র‌্যাবের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে ডিজি বলেন, ‘কার্যক্রমে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও মানবাধিকার বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ র‌্যাব। অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে তদন্ত সেলকে শক্তিশালী করা হয়েছে। একটি মানবাধিকার সেলও গঠন করা হয়েছে।’
রুদ্ধদ্বার বৈঠকে উপস্থিত সূত্রের মতে, র‍্যাব ডিজির উপস্থাপনায় মূলত বাহিনীর অর্জনগুলো তুলে ধরা হয়। 

সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিআইডি ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত কার্যক্রমের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়। সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি (ভারপ্রাপ্ত) গাজী জসীম অনুষ্ঠানে জানান, জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী মামলার অনুসন্ধানে সিআইডি বিশেষ টিম গঠন করেছে। সাবেক মন্ত্রী, প্রভাবশালীদের সন্দেহজনক সম্পদের উৎস ও প্রকৃতি নিয়ে নিবিড়ভাবে চলছে তদন্ত। এস আলম, বেক্সিমকো, বসুন্ধরা, নাবিল, ইউনিক, সিকদার গ্রুপসহ কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা ও অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। এ সময় প্রায় ৫ হাজার ৮০০ শতাংশ জমি ও হাজার কোটি টাকা মূল্যের সম্পদ শনাক্ত করা হয়েছে। কক্সবাজারের টেকনাফের একটি মামলায় ১০ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ করা হয়েছে।

সিআইডির উপস্থাপনায় আরও বলা হয়, ফরেনসিক শাখা দিন দিন অপরাধ বিশ্লেষণের নির্ভরযোগ্য কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। জনবল, সরঞ্জাম এবং অর্থের সীমাবদ্ধতার পাশাপাশি সিআইডিতে আছে কাঠামোগত ও প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ। কোনো জেলা ইউনিটে একটিও অপারেশনাল যানবাহন নেই। এ ছাড়া অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে অনিয়মিত বদলি আতঙ্ক রয়েছে। সাইবার পুলিশ সেন্টারে রয়েছে সরঞ্জামের অভাব। ফরেনসিক ল্যাবে সফটওয়্যারের জন্য বাজেট-স্বল্পতার কথা তুলে ধরেন তারা।

হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে পণ্য ও যাত্রী পরিবহনে নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দেওয়া হয়। মহাসড়কে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই প্রতিরোধে চলমান কার্যক্রম তুলে ধরা হয়েছে। বর্তমানে মহাসড়কের সিসিটিভি থেকে হাইওয়ে পুলিশ ডিজিটাল অটো ফাইন সিস্টেম, ট্রাফিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, ক্লোন নাম্বারপ্লেট শনাক্ত, হাইস্পিড ডিটেকশন করে থাকে।

এর আগে মঙ্গলবার পুলিশ সপ্তাহের প্রথম দিন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পক্ষ থেকে তাদের কর্মকাণ্ড ও পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়। সেখানে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ৩(২) ধারায় তালিকাভুক্ত ব্যক্তিকে ডিটেনশনে (নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিনা বিচারে আটক রাখা) নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং পরিস্থিতির অবনতি যেন না ঘটে, সে জন্য তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের ডিটেনশনে নেওয়া উচিত। সরকারের অনুমতি পেলে এসবির পক্ষ থেকে তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের বিস্তারিত জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হবে। ডিটেনশনে নেওয়ার জন্য যাদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে, তাদের কেউ কেউ পেশাদার অপরাধী।

সম্পর্কিত নিবন্ধ