জলা, জংলার লংলায় প্রজ্বলিত জ্ঞানদীপ
Published: 8th, February 2025 GMT
টিলা, জংলা আর জলা-হাওরের সমতল; প্রকৃতির ত্রিবেণি সঙ্গমস্থল- মৌলভীবাজার কুলাউড়া উপজেলা। সুলতানি জমানা থেকে পরগনা- কালে কালে সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের অর্জনে সমৃদ্ধ এই প্রান্তিক জনপদ।
কুলাউড়ার প্রতিটি প্রান্তে ইতিহাসের ইতিকথা লেখা। এর প্রাণে সভ্যতার আলোকবর্তিকা ধারণ করে সগৌরবে নিজের পরিচয় ধারণ করে আছে লংলা পরগনা তথা আজকের লংলা। কুলাউড়ার এই অঞ্চলে উচ্চশিক্ষা বিস্তারের ইতিহাসে এক অনন্য নাম, জয়ন্তীজয়ী বাতিঘর লংলা আধুনিক ডিগ্রি কলেজ।
১৯৯৮ সালে পথচলা শুরু করে লংলা কলেজ। মাত্র ১৭ জন শিক্ষার্থী নিয়ে কলেজের যাত্রা শুরু হলেও ২৬ বছরের এই পথচলায় লংলা তার বুকে আগলে নিয়েছে সহস্র বিদ্যার্থীর স্বপ্ন আর তার সার্থকতার গল্প। বর্তমানে উচ্চ মাধ্যমিকের পর স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষালাভের সুযোগ দিয়েছে এই কলেজ।
উপজেলার দক্ষিণ লংলায় প্রতিষ্ঠিত এই কলেজের প্রাঙ্গণ মাড়িয়ে দেশ-বিদেশে সুনামের সঙ্গে কুলাউড়া ও বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন বহু শিক্ষার্থী। জুলাই বিপ্লবের পটভূমিতে লংলার উজ্জীবিত জেন-জি প্রজন্মের অন্যতম দুর্গ ছিল এই কলেজ।
এই অঞ্চলের শিক্ষা বিস্তারে অমরত্বে সম্মানিত, জমিদার নওয়াব আলী আমজদ খান ও সৈয়দ শামসুদ্দিন হোসেন। সেই তালিকায় আছেন লংলার বিদ্যাবেদি প্রতিষ্ঠায় প্রথম ভূমিদাতা সুশীল চন্দ্র দাস। তাঁর হাত ধরে স্থানীয় শিক্ষাবিদদের অক্লান্ত পরিশ্রম আর নিবেদনে লংলা আজ উচ্চশিক্ষার এক শক্তিমান প্রাঙ্গণ। যে প্রাঙ্গণ অপেক্ষমাণ, অতীতের মতো আগামী প্রজন্মের অর্জন আর স্বপ্নপূরণের আরও বহু গল্প লিখবে বলে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহীতে প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া কমল ৭৫ পয়সা
রাজশাহীতে হিমাগারে আলু সংরক্ষণে নতুন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। আজ সোমবার আলুচাষি, ব্যবসায়ী ও হিমাগারমালিকদের উপস্থিতিতে এ সিদ্ধান্ত হয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, হিমাগারে প্রতি কেজি আলু রাখার জন্য ভাড়া দিতে হবে ৫ টাকা ৫০ পয়সা। এর সঙ্গে যুক্ত হবে শ্রমিকের খরচ ৫০ পয়সা। সেই হিসাবে প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া কমেছে ৭৫ পয়সা।
এর আগে গত মার্চে সরকার প্রতি কেজি আলু রাখার ভাড়া ৬ টাকা ৭৫ পয়সা নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এর পর থেকে এ নিয়ে রাজশাহীর আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা বাড়তি ভাড়ায় আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন। এ নিয়ে কয়েক দফা তাঁরা রাজপথে আন্দোলনও করেছেন। অন্যদিকে হিমাগারমালিকদের দাবি ছিল, প্রতি কেজি আলুর ভাড়া ৮ টাকা করা হোক।
রাজশাহী কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন এবং রাজশাহী জেলা আলুচাষি ও আলু ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজশাহীতে হিমাগার থেকে বাড়তি ভাড়া না দিলে আলু ছাড়া হবে না। এর প্রতিবাদে ঈদের পর নতুন করে আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা আন্দোলন করে আসছেন। তাঁদের দাবি, আলু রাখার খরচ আগের বছরের মতো চার টাকা করতে হবে। এ নিয়ে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তাঁরা। হিমাগার মালিকপক্ষ এ নিয়ে আলোচনায় বসার তাগিদ দিয়ে আসছিল।
এরই মধ্যে আলুচাষিনেতারা ১৪ জুন সেনাবাহিনীর কাছে এ নিয়ে একটি অভিযোগ দেন। পরে বিষয়টি আমলে নিয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আজ দুপুরে সভা ডাকা হয়। সভায় সব পক্ষের সম্মতিতে সিদ্ধান্ত হয় যে এ বছর সরকার নির্ধারিত প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া ৬ টাকা ৭৫ পয়সার বদলে ৫ টাকা ৫০ পয়সা ও শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা রাখা হবে। আর পেইড বুকিংয়ের ক্ষেত্রে শুধু শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা দিতে হবে আলু রাখা চাষি ও ব্যবসায়ীদের। পরে বিকেলে ক্যান্টনমেন্টে হওয়া এই সিদ্ধান্ত প্রশাসনিকভাবে পাস করার জন্য রাজশাহী জেলা প্রশাসকের দপ্তরে সভা হয়।
সভায় আলুচাষি ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি, হিমাগার মালিক সমিতি, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি, পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামীকাল মঙ্গলবার রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পক্ষ থেকে নতুন ভাড়ার বিজ্ঞপ্তি সব হিমাগারে প্রচার করা হবে।
এ ব্যাপারে সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এবার আলুর দাম কম। আবার এ নিয়ে দুই পক্ষের সংঘাতের আশঙ্কা ছিল। এ নিয়ে একটি অভিযোগ পান তাঁরা। পরে দুই পক্ষকে নিয়ে সভা হয়। সভায় সবার সম্মতিতে সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্ত বিকেলে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে আরেকটি সভার মাধ্যমে পাস হয়েছে।
রাজশাহীর আলুচাষি ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মিঠু আহমেদ বলেন, শুরু থেকেই তাঁরা বাড়তি ভাড়ার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন। কয়েক দিন ধরে তাঁরা হিমাগার থেকে আলু নিতে পারছিলেন না। হিমাগারগুলোয় বাড়তি ভাড়া দিতে হচ্ছিল। এ নিয়ে আন্দোলনের পাশাপাশি সেনাবাহিনীকেও অবহিত করেন তাঁরা। শেষ পর্যন্ত একটি ভালো সিদ্ধান্ত হয়েছে।
রহমান সিডস স্টোরেজের ব্যবস্থাপক আবদুল হালিম বলেন, সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতি কেজি আলু রাখতে খরচ পড়বে ৫ টাকা ৫০ পয়সা আর শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা। এ ছাড়া যাঁরা আগে থেকেই টাকা দিয়ে অগ্রিম বুকিং দিয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে আলুর কেজিপ্রতি শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা দিতে হবে।
রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান বলেন, নতুন সিদ্ধান্ত সব হিমাগারমালিকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানানো হবে।
আরও পড়ুনরাজশাহীতে হিমাগারে ভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদে বিক্ষোভ-সমাবেশ১৫ জুন ২০২৫