প্রত্যাখ্যানের আঘাত কীভাবে সামলে উঠবেন
Published: 9th, February 2025 GMT
প্রেমে হাবুডুবু খাওয়া একজন মানুষের কথা ভাবুন। প্রত্যাখ্যানের আঘাতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়তে পারে তাঁর জীবন। সামাজিকভাবেও যে তিনি কখনো কখনো হাসির পাত্র হয়ে উঠতে পারেন, সেটিও অস্বীকার করার উপায় নেই। সবকিছুর ভেতর দিয়েই অবশ্য জীবন এগিয়ে যেতে থাকে। তবে প্রত্যাখ্যানের সেই আঘাতে কারও কারও মনোজগতে বেশ গভীর ছাপ পড়ে। মনোবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে ‘রিজেকশন ট্রমা’।
একপাক্ষিক ভালোবাসায় প্রত্যাখ্যানের আঘাতের ঝুঁকি থাকে মারাত্মক। আবার কেউ প্রেমের সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে এলেও প্রত্যাখ্যানের আঘাতে জর্জরিত হতে পারেন অপরজন। বিবাহবিচ্ছেদেও এমনটা ঘটতে পারে। প্রত্যাখ্যানের আঘাত পাওয়া একজন মানুষের বিশ্বাসের ভিত নড়ে যাওয়াটা খুব স্বাভাবিক। একদিকে আত্মবিশ্বাসের অভাবে ভুগতে পারেন তিনি, নিজেকে ভাবতে পারেন ‘অযোগ্য’। অন্যদিকে আবার অন্যের প্রতিও বিশ্বাস হারাতে পারেন তিনি। এমনটাই বলছিলেন স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী শারমিন হক।
প্রত্যাখ্যানের কারণে নিজেকে তাঁর মনে হতে পারে অসুন্দর ও অপাঙ্ক্তেয়। নিজের ওপর রাগও হতে পারে। বিষণ্নতায় ভুগতে পারেন তিনি। কোনো কিছুই ভালো না লাগা বা কোনো কাজেই আগ্রহ না পাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। মন খারাপের এক অনুভূতিতে ডুবে থাকতে পারেন। নিজেকে দুর্বল মনে হতে পারে। ঘুম, খাওয়াদাওয়া ও রোজকার অন্যান্য স্বাভাবিক কাজও এলোমেলো হয়ে পড়তে পারে। কাজকর্মে মনোযোগ দিতে অসুবিধা হতে পারে। আবেগীয় ভারসাম্য এলোমেলো হয়ে পড়তে পারে। কেউ কেউ নিজের ক্ষতি করতেও উদ্যত হন।
আরও পড়ুনআম্মার ভয়ে প্রেম করিনি, এখন আম্মাই বলে, তুমি খুঁজে আনো৫ ঘণ্টা আগেঅন্যের প্রতি…প্রত্যাখ্যানের অভিজ্ঞতা হওয়ার পর একজন মানুষের মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। মানুষকে বিশ্বাস করতে না পারাটাই হয়ে দাঁড়াতে পারে বিশাল এক সমস্যা। অনেকে নতুন কোনো সম্পর্কে জড়াতে ভয় পান। এমনকি পেশাদার কাজেও অন্যরা তাঁকে প্রত্যাখ্যান করবেন, এমন একটা ধারণা জন্মে যেতে পারে তাঁর মধ্যে।
এমন হলে কী করবেনএমন পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে কারও কারও দীর্ঘ সময় লেগে যায়। যন্ত্রণাময় দিনে মনে রাখা প্রয়োজন, জীবন যেমন সুন্দর, তেমনি কঠিনও বটে। পাওয়া না–পাওয়ার এক জটিল সমীকরণই তো জীবন। স্মৃতিতে কষ্ট থাকতেই পারে। কিন্তু পৃথিবীর বুকে আপন অস্তিত্বকে অপাঙ্ক্তেয় মনে করবেন না। যেকোনো কারণেই আপনার ভালোবাসা প্রত্যাখ্যান করতে পারেন একজন ব্যক্তি। তাতে আপনি ‘অযোগ্য’ প্রমাণিত হলেন, ব্যাপারটা একেবারেই তা নয়। নিজের ওপর বিশ্বাস রাখুন। নিজের জীবনের ইতিবাচক দিকগুলোর কথা ভুলে যাবেন না। এগুলোর মাধ্যমেই নিজের নেতিবাচক ভাবনাগুলোকে নিজেই ‘চ্যালেঞ্জ’ করতে পারেন। যাঁরা আপনাকে ভালোবাসেন, যাঁরা আপনার আপনজন, তাঁদের ভালোবাসাকে অসম্মান করবেন না। তাঁদের ভালো রাখতে হলে কিন্তু নিজের যত্ন নেওয়ার বিকল্প নেই। খুব কাছের কোনো মানুষের সঙ্গে কষ্টের কথা ভাগ করে নিতে পারেন। পেশাগত ও শখের কাজে সময় দিন। বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটান। শিথিলায়নের ব্যায়াম করতে পারেন। পেশাদার সাহায্যের জন্য প্রয়োজনে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হোন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: করব ন
এছাড়াও পড়ুন:
সব্যসাচী কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন
প্রথিতযশা অধ্যাপক ও পরিসংখ্যানবিদ কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন একজন সব্যসাচী মানুষ। তিনি নিজের কাজের মাধ্যমে বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। তাঁর ঐতিহ্য শিক্ষার্থীদের ধারণ করতে হবে।
জ্ঞানতাপস কাজী মোতাহার হোসেনের ১২৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।
অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তৃতা, বৃত্তি, পদক, পুরস্কার ও সনদ দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের যৌথ আয়োজক কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ এবং পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউট।
অনুষ্ঠানে ‘যুগলের বন্ধন: কাজী নজরুল ইসলাম-কাজী মোতাহার হোসেন’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতা দেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী। তিনি দুই বন্ধুর সম্পর্কের রসায়নের নানা দিক তুলে ধরেন।
প্রধান অতিথি বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, এই অনুষ্ঠানের দুটো প্রাপ্তি আছে। প্রথমত, মানুষের অবদান ও মেধাকে স্বীকার করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, এই উপমহাদেশের একজন প্রথিতযশা সব্যসাচী মানুষের ঋণ স্বীকার করা হচ্ছে।
কাজী মোতাহার হোসেন যেকোনো বিবেচনায় একজন দার্শনিক বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। প্রথম সারির পরিসংখ্যানবিদ, বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ছাড়াও তিনি অনেকগুলো সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, প্রভাব বিস্তার করেছেন। একজন মানুষের ছোট জীবদ্দশায় এত গুণ সন্নিবেশিত করা কঠিন। কিন্তু তিনি তা করে দেখিয়েছেন।
সবাইকে নিয়ে চলা, প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, নিজের জগতের বাইরে নানা কিছুতে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মতো ঐতিহ্য কাজী মোতাহার হোসেন করে গেছেন বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, তাঁর সম্মানে যাঁরা আজ স্বীকৃতি পেলেন, তাঁরা এই ঐতিহ্যকে ধারণ করবেন। এটা (বিশ্ববিদ্যালয়) যে সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সে বার্তা দেবেন। যেসব শিক্ষার্থী সম্মাননা পাচ্ছেন, তাঁদের ছোট প্রোফাইল তৈরি করে ওয়েবসাইটে তুলে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মাজেদ বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন একজন সব্যসাচী মানুষ ছিলেন। বিজ্ঞানের এমন কোনো দিক নেই, যেখানে তাঁর পদচারণা ছিল না। তিনি দাবা খুব পছন্দ করতেন। দাবা খেলার কথা শুনলে তিনি ছুটে যেতেন। কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে তাঁর শোনা নানা গল্প তিনি স্মৃতিচারণা করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জাফর আহমেদ খান বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন পরিসংখ্যান চর্চার পথিকৃৎ ছিলেন। বিজ্ঞান, দাবাচর্চারও পথিকৃৎ ছিলেন। এমন কোনো পুরস্কার নেই যে, তিনি পাননি। তাঁর দেখানো পথে যেন শিক্ষার্থীরা নিজেদের আলোকিত করতে পারেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রওনাক হোসেন। এই আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের সেরা শিক্ষার্থীদের বই, নগদ অর্থ ও সনদ তুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়া কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।