‘হঠাৎ দেখি, লাইনে দাঁড়ানো একটা মেয়ে পড়ে গেল। এর পর কয়েকজন নারী দ্রুত ধরাধরি করে তাকে তুলে ভ্যানগাড়িতে শুইয়ে দিয়েছে। তার কানের মধ্যে একটি শলা ঢুকিয়ে জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করলাম। দেখলাম, কোনো সাড়াশব্দ নেই। মেয়েটি পুরোপুরি অজ্ঞান।’ 

কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে গেলেন ভাসমান ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হারুন শেখ। ঘটনাটি গতকাল সোমবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ের বেগুনবাড়ী এলাকার দীপিকার মোড়ের। সরকারি সংস্থা টিসিবি গতকাল সোমবার সেখানে সাশ্রয়ী দরে ট্রাকের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করেছে। ট্রাকের পাশেই তিনি ভ্যানে করে বিভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়াজাত খাদ্য বিক্রি করছিলেন। 
সমকালকে এই ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী বলেন, মেয়েটি পড়ে গেছে দেখে আমি আর লাইনে দাঁড়ালাম না। তাকে তোলার চেষ্টা করলাম। ট্রাক থেকে কয়েক ফুট দূরে একটি ভ্যানগাড়ির ওপর মুখে মাস্ক পরে বসে থাকা এক নারীকে হাতের ইশারায় দেখিয়ে হারুন শেখ বললেন, এটিই সেই মেয়ে। 

তাঁর কথার সূত্র ধরে আলাপ হয় ওই নারীর সঙ্গে। তাঁর নাম সানজিদা বেগম। বয়স হবে ২০-২২ বছর। পশ্চিম নাখালপাড়ার বাসিন্দা এই নারী তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা। নাখালপাড়া থেকে দীপিকার মোড়ের দূরত্ব প্রায় তিন কিলোমিটার। ভরদুপুরে তপ্ত রোদে এই পথ হেঁটে এসে আধঘণ্টা লাইনে দাঁড়ান তিনি। এর পরই সড়কে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান। 
সানজিদা বলেন, আমার স্বামী একটি বেসরকারি কোম্পানিতে ছোট চাকরি করতেন। মাসখানেক আগে চাকরি চলে গেছে। এখন বেকার। এ জন্য বাধ্য হয়ে ফুফুর কাছ থেকে টাকা ধার করে টিসিবির পণ্য কিনতে এসেছি। রোদের কারণে মাথা ঘুরে পড়ে গেছি। এর পর আর কিছু মনে নেই।

দীপিকার মোড়ে দেখা মিলেছে আবদুল করিম নামে আরেক ক্রেতার। এই বৃদ্ধ প্রায় চার ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনতে পেরেছেন। কিন্তু বয়সের ভারে ন্যুব্জ আবদুল করিমের যেন সাত কেজি পণ্য বহন করার ক্ষমতা নেই। তাই পণ্য নিয়ে বসে পড়েন একটি ভ্যানের ওপর। তিনি জানান, বাসায় তাঁর মেয়ে আছে। আয়-রোজগার বলতে মেয়েটি বাসাবাড়িতে কাজ করে যা পায় তা-ই। তার স্বামীও ছোট চাকরি করে। দু’জনের এই আয়ে সংসার চলে না। তাই তিনি পণ্য কিনতে এসেছেন। 
টিসিবির ট্রাকের পেছনে থাকা নারীদের মধ্যে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাওয়ার আরও একটি ঘটনা ঘটেছে মিরপুরের কালশী এলাকায়। দীর্ঘ সময় লাইনে থাকার পর সেখানেও এক বৃদ্ধ নারীকে রাস্তায় পড়ে যেতে দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন সমকালের ফটো সাংবাদিক। 

অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাওয়ার পাশাপাশি ধাক্কাধাক্কির ঘটনাও ঘটেছে। দুপুর দেড়টার দিকে কারওয়ান বাজারে টিসিবির সামনে থাকা ট্রাকের পেছনে নারীদের সারিতে কে কার আগে পণ্য নেবেন, তা নিয়ে ঠেলাঠেলি লেগে যায়। এক পর্যায়ে এক নারী আরেক নারীকে ধাক্কা দিয়ে ট্রাকের নিচে ফেলে দেন। পড়ে যাওয়া রাহেলা বেগম জানান, তিনি মগবাজার থেকে এসেছেন। স্বামী নেই। আয়ের একমাত্র ভরসা ছিল ছেলে। কিন্তু ছেলে ভরণপোষণ দেয় না। তাই কম দামের পণ্যই তাঁর ভরসা। 

নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য পরিবার কার্ডের পাশাপাশি গত ২৪ অক্টোবর থেকে ঢাকা মহানগর ও চট্টগ্রাম মহানগরে ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম শুরু করে টিসিবি। ৩১ ডিসেম্বরের পর এই কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। এক মাস ৯ দিন বন্ধ থাকার পর গতকাল থেকে আবারও ঢাকা শহরের ৫০টি এবং চট্টগ্রামের ২০টি স্থানে ট্রাকে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম শুরু করেছে সংস্থাটি। বিক্রির প্রথম দিনেই ভোক্তার ব্যাপক চাপ লক্ষ্য করা গেছে।

ট্রাক থেকে একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ দুই লিটার ভোজ্যতেল (সয়াবিন বা কুঁড়ার তেল), দুই কেজি করে মসুর ডাল ও ছোলা, এক কেজি চিনি ও ৫০০ গ্রাম খেজুর কিনতে পারছেন। প্রতি লিটার ভোজ্যতেলের দাম ১০০ টাকা, প্রতি কেজি মসুর ডাল ৬০ টাকা, চিনি ৭০ টাকা, ছোলা ৬০ টাকা ও আধা কেজি খেজুর ৭৮ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। মূলত আসন্ন রমজান উপলক্ষে বিক্রির তালিকায় ছোলা ও খেজুর যুক্ত করা হয়েছে।

টিসিবির ট্রাক থেকে এ পাঁচটি পণ্য কিনতে একজন ভোক্তার লাগবে ৫৮৮ টাকা। একই পরিমাণ পণ্য বাজার থেকে কিনতে খরচ হবে প্রায় ১ হাজার ২০ টাকা। সেই হিসাবে একজন ক্রেতার সাশ্রয় হয় ৪৩২ টাকার মতো। এই অর্থ সাশ্রয়ের জন্যই ক্রেতাদের মধ্যে রীতিমতো যুদ্ধ চলে। 

গতকাল রাজধানীতে সরেজমিন দেখা গেছে, শিশু থেকে বৃদ্ধ– প্রায় সব বয়সের নারী-পুরুষ পণ্য কেনার জন্য ট্রাকের পেছনে ভিড় করছেন। এই লাইনে যেমন রয়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ, তেমনি রয়েছেন মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রেতাও। কোনো কোনো এলাকায় চাকরিজীবীদেরও লাইনে দাঁড়াতে দেখা গেছে। কেউ কেউ সংকোচে নিজেকে আড়াল করারও চেষ্টা করেছেন। 
ক্রেতার কেউ কেউ ট্রাকের সংখ্যা বাড়ানোর অনুরোধ করেছেন। কাঁঠালবাগান এলাকায় পণ্য কিনতে আসা হাবিবুর রহমানে নামের এক ক্রেতা বলেন, ট্রাকের পেছনে দীর্ঘ লাইন থাকে। চার-পাঁচ ঘণ্টা দাঁড়িয়েও অনেকে পণ্য কিনতে পারছেন না। ট্রাকের সংখ্যা ও পণ্যের পরিমাণ বাড়ালে আমাদের উপকার হতো। 
টিসিবি জানিয়েছে, আসন্ন রমজান উপলক্ষে আগামী ২৮ মার্চ পর্যন্ত ট্রাকের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করা হবে। পাশাপাশি বিক্রি কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনতে স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ডও বিতরণ চলছে। উপকারভোগীরা নিকটতম ওয়ার্ড কাউন্সিলর বা ইউএনও অফিস থেকে এসব কার্ড সংগ্রহ করতে পারবেন।
টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ুন কবির বলেন, আপাতত পণ্যের সংখ্যা বাড়বে না। ক্রেতার চাপ সামলাতে বড় ও বিভাগীয় শহরে ট্রাকের সংখ্যা বাড়ানো হতে পারে। এ বিষয়ে পর্যালোচনা চলছে। 

 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

সরকারে এলে ৫০ লাখ নারীকে ফ্যামিলি কার্ড দিবে বিএনপি : সজল

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কেন্দ্রীয় যুবদলের নির্দেশনা অনুযায়ী ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের মাধ্যমে আমরা সাধারণ মানুষকে ফ্রি চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি বিনামূল্যে ঔষধ বিতরণ করছি।

আমাদের দলে যে সিদ্ধান্ত সবাইকে মানবিক কর্মকান্ডে থাকতে হবে সেই সিদ্ধান্তর মোতাবেকি কিন্তু আমরা মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছি। যুবদলের নেতাকর্মীরা সবসময় মানুষের সেবায় তাদের পাশে থাকতে চায়। বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনগুলো মানুষের কল্যাণেই আগামী দিনে কাজ করবে।

‎যুবদলের ৪৭তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের আওতাধীন নারায়ণগঞ্জ সদর থানা যুবদলের উদ্যোগে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ও বিনামূল্যে ঔষধ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথাগুলো বলেন।

‎শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) সকাল দশটায় শহরের ১৩নং ওয়ার্ডস্থ গলাচিপা রুপার বাড়ি মোড়ে দিনব্যাপী মহানগর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসেন কমলের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

‎তিনি বলেন, আমাদের নেতা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান ৩১ দফার আলোতে আগামীতে যে দেশ পরিচালনা করার যে পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে আগামী দিনের যদি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসতে পারে তাহলে প্রথমেই ৫০ লাখ নারীদের জন্য ফ্যামিলি কার্ডের ব্যবস্থা করা হবে।

যে পরিবারের প্রধান তার নামেই সে ফ্যামিলি কার্ড হবে এবং নারীরা রাষ্ট্রের সকল ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। 

সকল পণ্যের উপরে রাষ্ট্রীয়ভাবে ভর্তুকি দিয়ে সকলের জন্য খাদ্য নিশ্চিত করবে। ইনশাল্লাহ যদি বিএনপি ক্ষমতা আসে তাহলে এর সুফল আপনারা পাবেন। শুধু তাই না হেল্প কার্ডেরও ব্যবস্থা করা হবে। বিনামূল্যে মানুষের দোরগোড়ায় চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেওয়া হবে । যাতে করে এদেশের মানুষ হাসপাতালে গেলে তাদের সঠিক চিকিৎসাটি পায়। 

এই হেল্প কার্ডের মাধ্যমে সকলের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা হবে। সুতরাং আপনারা সবাই আমাদের নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা যে অসুস্থ তার জন্য দোয়া করবেন দোয়া করবেন আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের জন্য দোয়া করবেন। 

‎এছাড়াও অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, মহানগর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরে এলাহী সোহাগ, যুগ্ম, যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুর রহমান, যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল আলম সজিব, আহ্বায়ক কমিটির সদস্য রাফি উদ্দিন রিয়াদ,ওয়াদুদ ভূইয়া সাগর, মোঃ আরমান হোসেন, সাইফুল ইসলাম আপন, আশিকুর রহমান অনি, বাদশা খান, শাহীন শরীফ, ফয়েজ উল্লাহ সজল, ফয়সাল আহমেদ, আরিফ খান, হাবিবুর রহমান মাসুদ প্রমুখ।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুবলারচরে পুণ্যার্থীদের যাত্রা শুরু
  • বর্ণিল আয়োজনে ১৯তম সিকৃবি দিবস উদযাপন
  • জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির 
  • মিথ্যা প্রচার দিয়ে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির প্রক্রিয়া চলছে: মির্জা ফখরুল
  • বাংলাদেশের শত্রুতারা আবার মাথা মাথাচারা দিয়ে উঠতে শুরু করেছে: মির্জা ফখরুল
  • বেস্ট রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ড পেলেন রাইজিংবিডির রুমন চক্রবর্তী
  • ৭ নভেম্বর উপলক্ষে বিএনপির কর্মসূচি ঘোষণা
  • ইসমাইল হোসেন (মুরুব্বী) এর মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া 
  • যুবদলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে সিদ্ধিরগঞ্জে বর্ণাঢ্য র‌্যালি
  • সরকারে এলে ৫০ লাখ নারীকে ফ্যামিলি কার্ড দিবে বিএনপি : সজল