ট্রাম্পের গাজা খালি করার প্রস্তাবকে ‘কেলেঙ্কারি’ আখ্যায়িত করল জার্মানি
Published: 11th, February 2025 GMT
ফিলিস্তিনের গাজা যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেওয়া এবং উপত্যকাটি থেকে বাসিন্দাদের অন্যান্য দেশে পাঠিয়ে সেখানে উন্নয়নকাজ চালানোর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবকে এক ‘কেলেঙ্কারি’ বলে আখ্যায়িত করেছেন জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ।
(গাজার) জনগণকে অন্যত্র স্থানান্তর করা হবে অগ্রহণযোগ্য ও আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।ওলাফ শলৎজ, জার্মানির চ্যান্সেলরগত রোববার নির্বাচন-পূর্ব একটি বিতর্কে চ্যান্সেলর শলৎজ এ মন্তব্য করেন। তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীও ট্রাম্পের পরিকল্পনা নিয়ে অস্বস্তি প্রকাশ করেছেন। তবে ওয়াশিংটন থেকে ‘অনেক বাগাড়ম্বর’ করা হচ্ছে, এমন ইঙ্গিত দেন তিনি।
মধ্যবাম শলৎজ ও মধ্যডান ফ্রেডরিক মার্জ বিতর্কে জার্মানির অর্থনৈতিক টানাপোড়েন ও অভিবাসনের মতো শীর্ষস্থানীয় অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আলোচনা করেন। বিতর্কে ট্রাম্পের গত তিন সপ্তাহের শাসনকালে তাঁর গৃহীত পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কেও আলোকপাত করেন তাঁরা।মধ্যবাম শলৎজ এবং ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী অগ্রবর্তী প্রার্থী মধ্যডান ফ্রেডরিক মার্জ বিতর্কে জার্মানির অর্থনৈতিক টানাপোড়েন ও অভিবাসনের মতো শীর্ষস্থানীয় অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আলোচনা করেন। বিতর্কে ট্রাম্পের গত তিন সপ্তাহের শাসনকালে তাঁর গৃহীত পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কেও আলোকপাত করেন তাঁরা।
গাজা পুনর্গঠন করে এটিকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের সমুদ্রসৈকতে’ পরিণত করার ট্রাম্পের প্রস্তাব সম্পর্কে জানতে চাইলে চ্যান্সেলর বলেন, ‘এটি একটি কেলেঙ্কারি। পাশাপাশি এটি সত্যিকারেই এক ভয়ানক অভিব্যক্তি।’
আমিও (ট্রাম্পের প্রস্তাবকে) একই রকম মূল্যায়ন করি। এটি মার্কিন প্রশাসনের কাছ থেকে আসা একগুচ্ছ প্রস্তাবের একটি, যা নিশ্চিতভাবে হতাশাজনক। তবে অপেক্ষা করতে হবে ও দেখতে হবে, (ওই প্রস্তাব দিয়ে) প্রকৃতপক্ষে কী বোঝানো হয়েছে এবং কীভাবে এটি কার্যকর হয়, সম্ভবত এতে অনেক বাগাড়ম্বর রয়েছে।ফ্রেডরিক মার্জ, জার্মান চ্যান্সেলরের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীএআরডি ও জেডডিএফ টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এ বিতর্ক অনুষ্ঠানে ওলাফ শলৎজ আরও বলেন, ‘(গাজার) জনগণকে অন্যত্র স্থানান্তর করা হবে অগ্রহণযোগ্য ও আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।’ এ বিষয়ে মিসর ও জর্ডানের অবস্থানের প্রতি ইঙ্গিত (সমর্থন প্রকাশ) করেন তিনি।
আরও পড়ুনজার্মানিতে আস্থা ভোটে হারলেন চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪এদিকে মার্জ বলেন, ‘আমিও (ট্রাম্পের প্রস্তাবকে) একই রকম মূল্যায়ন করি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটি মার্কিন প্রশাসনের কাছ থেকে আসা একগুচ্ছ প্রস্তাবের একটি, যা নিশ্চিতভাবেই হতাশাজনক। তবে অপেক্ষা করতে হবে ও দেখতে হবে যে, (ওই প্রস্তাব দিয়ে) প্রকৃতপক্ষে কী বোঝানো হয়েছে এবং কীভাবে এটি কার্যকর হয়। সম্ভবত এতে অনেক বাগাড়ম্বর রয়েছে।’
আরও পড়ুনডানপন্থীদের সাফল্যে উদ্বিগ্ন জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ২৪ জুন ২০২৪.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
প্রধান উপদেষ্টা একটি দলের প্রতি বিশেষ অনুরাগ প্রকাশ করেছেন: জামায়াতে ইসলামী
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠককে স্বাভাবিক বললেও, দুইজনের যৌথ বিবৃতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে জামায়াতে ইসলামী।
শনিবার জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের বৈঠকের পর বিবৃতিতে দলটি বলেছে, ‘যৌথ বিবৃতি প্রদান বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির ব্যত্যয় বলে আমরা মনে করি। এর মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা একটি দলের প্রতি বিশেষ অনুরাগ প্রকাশ করেছেন, যা তার নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন করেছে।’
দলের আমির ডা. শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে বিবৃতিতে বলা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, ‘১৩ জুন লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মাদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে, তাকে জামায়াত খুবই স্বাভাবিক মনে করে। ইতোমধ্যে প্রধান উপদেষ্টা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে পৃথক পৃথকভাবে এবং যৌথভাবে বৈঠক করেছেন।’
লন্ডন বৈঠকের যৌথ বিবৃতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে জামায়াত বলেছে, ‘গত ৬ জুন জাতির উদ্দেশে ভাষণে ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেন প্রধান উপদেষ্টা। তার এই ঘোষণার পর লন্ডন সফরে একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিদেশে যৌথ প্রেস ব্রিফিং এবং বৈঠকের বিষয় সম্পর্কে যৌথ বিবৃতি প্রদান করা বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির ব্যত্যয় বলে জামায়াত মনে করে। এর মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা একটি দলের প্রতি বিশেষ অনুরাগ প্রকাশ করেছেন, যা তার নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন করে।’
লন্ডন বৈঠকের যৌথ বিবৃতিতে মধ্য ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে। জামায়াত এ প্রসঙ্গে বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা মনে করি দেশে ফিরে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে এ ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টার অভিমত প্রকাশ করাই সমীচীন ছিল।’
জামায়াত ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের বিরোধী নয় বিবৃতিতে স্পষ্ট করা হয়। এতে বলা হয়েছে, ‘গত ১৬ এপ্রিল জামায়াত আমির দলীয় দৃষ্টিভঙ্গী তুলে ধরে জানিয়েছিলেন ২০২৬ সালের রসজানের পূর্বে ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হতে পারে।’
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘জামায়াত মনে করে সরকার প্রধান হিসেবে কোনো একটি দলের সঙ্গে যৌথ প্রেস ব্রিফিং নৈতিকভাবে কিছুতেই যথার্থ নয়। প্রধান উপদেষ্টা একটি দলের সঙ্গে বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতি দেওয়ায় আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হওয়ার বিষয়ে জনগণের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। যেখানে বাংলাদেশে অনেকগুলো রাজনৈতিক দল সক্রিয়ভাবে বিদ্যমান, সেখানে শুধু একটি দলের সঙ্গে আলাপে দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সঠিক বলে বিবেচিত হতে পারে না। জামায়াত আশা করে, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকার নিরপেক্ষ থেকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করবে এবং বিচার ও সংস্কারের ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত করবে। সরকারের নিরপেক্ষতা এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিয়ে যে সংশয় দেখা দিয়েছে তা নিরসনে প্রধান উপদেষ্টার ভূমিকা জাতির সামনে স্পষ্ট করার জন্য বাংলাদেশ জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।’
এর আগে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের দিন জামায়াত আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া না জানালেও দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতারা সমকালকে বলেছিলেন, ‘জামায়াতই প্রথম বলেছে, রমজানের আগে নির্বাচন হওয়া উচিত। তাই নির্বাচনের যে নতুন সময়সীমা বলা হচ্ছে, এ নিয়ে আপত্তির কিছু নেই। কিন্তু সরকার যেভাবে শুধু বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করে সময়সীমা নির্ধারণ করেছে, তা অগ্রহণযোগ্য।’
জামায়াত নেতারা শুক্রবার রাতেই সমকালকে বলেছিলেন, যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে বোঝানো হচ্ছে– সরকার এবং বিএনপি সমশক্তি। এর পর আর সরকারের নিরপেক্ষতা থাকে না। এ বক্তব্য ড. ইউনূসকে জানাবে জামায়াত।