পটুয়াখালী আইনজীবী সমিতির নির্বাচন ঘিরে সংঘর্ষে পিপিসহ আহত ৩
Published: 11th, February 2025 GMT
পটুয়াখালী আইনজীবী সমিতি নির্বাচন ঘিরে বিএনপি-জামায়াতপন্থি আইনজীবীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি অ্যাডভোকেট মো. রুহুল আমিনসহ তিন আইনজীবী আহত হয়েছেন। নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলকে কেন্দ্র করে আজ মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
আহত বাকি দুজন হলেন- পৌর জামায়াতের ৬নং ওয়ার্ডের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট মো.
আহত জামায়াতপন্থি আইনজীবী রুহুল আমিন বলেন, ‘আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন। নির্বাচনী তপশিল অনুযায়ী আজ সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ছিল ৯টি পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও দাখিলের শেষ দিন। এতে জামায়াত সমর্থিত জেলা ‘ল’ ইয়ার্স কাউন্সিল সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ৯টি পদে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেয়। সে মোতাবেক মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে গেলে ৬টি পদে মনোনয়নপত্র বিক্রি করে নির্বাচন কমিশন। তবে বাকি তিনটি পদ সভাপতি, সহ-সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনয়নপত্র চাইলে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা বাধা দেন। একপর্যায়ে আমাদের ওপর হামলা করে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের একাংশ।’
তিনি আরও বলেন, ‘পটুয়াখালী আইনজীবী সমিতি নির্বাচন নিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করা হয়নি। তাই জামায়াত আলাদাভাবে ৯টি পদেই প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং জেলা জামায়াতের আমির অ্যাডভোকেট নাজমুল আহসান সভাপতি ও অ্যাডভোকেট মো. মহিউদ্দিন সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীসহ ৯টি পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও ও দাখিলের জন্য গেলে তারা এ হামলা চালান।’
জামায়াতপন্থি এ আইনজীবী আরও অভিযোগ করেন, ‘নির্বাচন কমিশনের প্রধান অ্যাডভোকেট মোহসীন উদ্দিন। তিনি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি এবং অন্য দুই নির্বাচন কমিশনও বিএনপি সমর্থিত আইনজীবী। নির্বাচন কমিশনাররা এ সময় নীরব ভূমিকা পালন করেন।’
এ প্রসঙ্গে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শরীফ মো. সালাহউদ্দিন বলেন, ‘এ অভিযোগ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। এ ধরণের কোনো ঘটনা ঘটেনি আইনজীবী সমিতি চত্বরে। বিএনপির ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য তারা এসব রটাচ্ছেন।’
এ ব্যাপারে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট এটিএম মোজাম্মেল হক তপন বলেন, ‘এটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী অ্যাডভোকেট মহিউদ্দিন ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের ছিলেন। এখন জামায়াতের কাঁধে ভর করেছেন। তাই তাকে দেখে আইনজীবীদের মধ্যে কিছুটা উত্তেজনা দেখা দেয়। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক এবং জামায়াতের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।’
জেলা আইনজীবী সমিতি নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার অ্যাডভোকেট মো. মোহসীন উদ্দিন বলেন, ‘জেলা জামায়াতের আমির নিজে উপস্থিত থেকে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এ ঘটনায় আমার কাছে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ দেননি তারা। তিনটি পদে মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেনি এমন অভিযোগও সত্য নয়।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আইনজ ব ব এনপ আইনজ ব ন বল ন ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
এনায়েত করিম ও গোলাম মোস্তফা পাঁচ দিন রিমান্ডে
রাজধানীর রমনা থানায় করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিম ও এস এম গোলাম মোস্তফা আজাদকে পাঁচ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত।
পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ ফারজানা হক আজ বুধবার এ আদেশ দেন।
প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী।
পিপি ওমর ফারুক ফারুকী প্রথম আলোকে বলেন, সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত এনায়েত করিম চৌধুরী ও এস এম গোলাম মোস্তফাকে আদালতে হাজির করে সাত দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার আবেদন করে পুলিশ। আসামিপক্ষ থেকে জামিনের আবেদন করা হয়। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত মাসুদ ও মোস্তফাকে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে এনায়েত করিম ওরফে মাসুদ করিমকে গত সোমবার দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বলা হয়, এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিম মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। বাস্তবে তিনি র-এর (ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা) এজেন্ট। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল করার মিশন নিয়ে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। বর্তমান সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত। তাঁর দুটি মুঠোফোন জব্দ করা হয়েছে। সেটির ফরেনসিক পরীক্ষা করা হলে তাঁর ষড়যন্ত্রের বিষয়ে আরও অনেক নতুন তথ্য জানা যাবে। এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিমসহ আর কারা ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত, সেটি জানার জন্য তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি।
অপরদিকে এনায়েত করিম চৌধুরীর পক্ষে তাঁর আইনজীবীরা আদালতের কাছে দাবি করেন, তিনি ৬ সেপ্টেম্বর দেশে এসেছেন, তাঁর আমেরিকায় ফিরে যাওয়ার কথা ১৪ সেপ্টেম্বর। তিনি বাংলাদেশে এসে গুলশানে অবস্থান করছিলেন।
এনায়েত করিম চৌধুরীর আইনজীবী ফারহান এমডি আরাফ বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে তাঁর মক্কেল কোনোভাবেই জড়িত নন। তিনি একজন মার্কিন নাগরিক। সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে তিনি কোনোভাবে যুক্ত নন।
এর আগে গত শনিবার এনায়েত করিম চৌধুরীকে (৫৫) সন্দেহভাজন হিসেবে আটকের পর ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত শনিবার সকালে রাজধানীর মিন্টোরোড থেকে এনায়েত করিম চৌধুরীকে আটক করা হয়। তাঁর কাছ থেকে জব্দ করা পাসপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, তিনি মার্কিন নাগরিক।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্র প্রথম আলোকে জানিয়েছে, এনায়েত করিম নিজেকে মাসুদ করিম নামে পরিচয় দেন। তিনি নিজেকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের প্রধান বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন। এই পরিচয়ে তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতাদের রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখান। ২০১৮ সালের ভোটের আগেও তিনি একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে দেশের বাইরে বৈঠক করেন।
পুলিশ বলছে, গত শনিবার এনায়েত করিম চৌধুরী প্রাডো গাড়িতে করে মিন্টোরোড এলাকায় সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করছিলেন। গাড়ি থামিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে ওই এলাকায় ঘোরাঘুরি করার বিষয়ে সদুত্তর দিতে পারেননি। পরে তাঁকে আটক করে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠিয়ে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পাশাপাশি সোমবার রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করেন।
সংশ্লিষ্ট একজন পুলিশ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেছেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এনায়েত করিম বলেছেন, বর্তমান সরকার পরিবর্তন করে নতুন জাতীয় সরকার গঠনে কাজ করতে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। তাঁর দাবি, তিনি বিশেষ একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার খুব নাজুক অবস্থায় আছে। সেনাবাহিনীর সঙ্গেও এই সরকারের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এই সুযোগে বর্তমান সরকারকে পরিবর্তন করতে বাংলাদেশে এসেছেন। সরকারি উচ্চ ও নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন।