প্রতিদিনকার মতো একমাত্র ছেলে ও তার মামাতো বোনকে বাইসাইকেলে বসিয়ে বিদ্যালয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন আবুল কালাম (৩৫)। বিদ্যালয়ের কাছাকাছি যেতেই বিপরীত দিক থেকে আসা বালুবাহী ট্রাকের ধাক্কায় তিনজনই ছিটকে পড়েন পাকা সড়কে। গুরুতর আহত আবুল কালামকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান স্থানীয় লোকজন। চিকিৎসাধীন কালাম এখনো জানেন না, তাঁর সাত বছর বয়সী ছেলে আরাফাত ও সমবয়সী আরাফাতের মামাতো বোন আসমা বেঁচে নেই। আর কখনো সাইকেলে চড়বে না তারা।

আজ মঙ্গলবার সকালে নোয়াখালী সদর উপজেলার চরমটুয়া ইউনিয়নের বৈকণ্ঠপুর বাজারের পশ্চিমে মাইজদী-উদয় সাধুরহাট সড়কে এ ঘটনা ঘটে। নিহত আছমা আবুল কালামের শ্যালক সাদ্দাম হোসেনের মেয়ে। আরাফাত ও আসমা বৈকণ্ঠপুর এলাকার কোয়ালিটি এডুকেশন স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ত। পেশায় কাঠের কারিগর কালাম প্রতিদিন নিজের ছেলে এবং শ্যালকের মেয়েকে বাইসাইকেলযোগে বিদ্যালয়ে পৌঁছে দিতেন। ছেলেসহ দুই শিশুর মৃত্যুর শোকে বাড়িতে কালামের স্ত্রী পূর্ণিমা আক্তার মূর্ছা যাচ্ছেন বারবার।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ সকাল ৯টার দিকে আরাফাত ও আছমাকে নিয়ে বৈকণ্ঠপুর গ্রামের বাড়ি থেকে বাইসাইকেলযোগে বৈকণ্ঠপুর বাজার এলাকার বিদ্যালয়ে যাচ্ছিলেন আবুল কালাম। পথে মাইজদী থেকে উদয়সাধুরহাট অভিমুখী একটি বালুবাহী ট্রাক তাদের চাপা দেয়। এতে সড়কের ওপর সাইকেল থেকে ছিটকে পড়ে যান তিনজন। ঘটনাস্থলেই দুই শিশুর মৃত্যু হয়।

চর মটুয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আলী হাছান বলেন, ট্রাকটি বেপরোয়াভাবে চলছিল। ট্রাকের চাপায় দুই শিশুর মাথা থেঁতলে যায়। ঘটনাটি দেখে আশপাশের কয়েকজন নারীও অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁরা ট্রাকটি আটক করেছেন। কিন্তু তার আগেই চালক ও সহকারী পালিয়ে যান। পরে পুলিশ গিয়ে লাশ দুটি উদ্ধার করে। গুরুতর আহত আবুল কালামকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন স্থানীয় লোকজন। তাঁর ডান পা ভেঙে গেছে। ডান হাতেও গুরুতর আঘাত পেয়েছেন। তিনি হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগে চিকিৎসাধীন।

কালামের সঙ্গে হাসপাতালে আছেন তাঁর ফুফা আবু সায়েদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কালাম জানেন না তাঁর ছেলে মারা গেছে। তিনি কিছুই মনে করতে পারছেন না। কিছুক্ষণ পরপরই ব্যথায় চিৎকার দিয়ে ওঠেন। আবুল কালামের দুই সন্তান। এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলেটি বড়। নিজে তেমন পড়ালেখা করতে পারেননি। তাই এই ছেলেকে নিয়ে তার অনেক স্বপ্ন ছিল।

এ বিষয়ে সুধারাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, নিহত দুই শিশুর লাশ আইনিপ্রক্রিয়া সম্পন্নের পর স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। দুর্ঘটনাকবলিত ট্রাকটি আটক করা হয়েছে। চালক ও সহকারী পালিয়ে গেছেন। নিহত দুই শিশুর পরিবারের অভিযোগের আলোকে পরবর্তী সময়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আর ফ ত

এছাড়াও পড়ুন:

সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের

সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বিশ্বের সব দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে তিনি এ আহ্বান জানান। বিশ্বব্যাপী ২ নভেম্বর দিবসটি পালিত হয়।

জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মহাসচিবের বিবৃতিতে বলা হয়, সত্যের সন্ধানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা ক্রমবর্ধমান বিপদের মুখে পড়ছেন। এর মধ্যে রয়েছে মৌখিক নিপীড়ন, আইনি হুমকি, শারীরিক আক্রমণ, কারাবাস ও নির্যাতন। এমনকি অনেককে জীবনও দিতে হচ্ছে।

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের এই আন্তর্জাতিক দিবসে আমরা ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছি। বিশ্বজুড়ে সাংবাদিক হত্যার প্রায় ১০টি ঘটনার মধ্যে ৯টির বিচারই এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।’

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘বর্তমানে যেকোনো সংঘাতের মধ্যে (ফিলিস্তিনের) গাজা সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ জায়গায় পরিণত হয়েছে। আমি আবারও এই ঘটনাগুলোর স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি।’

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যেকোনো জায়গায় বিচারহীনতা শুধু ভুক্তভোগী এবং তাঁদের পরিবারের প্রতিই অন্যায় নয়, বরং এটি সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ, আরও সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার শামিল এবং গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি।’ তিনি বলেন, সব সরকারের উচিত প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করা, প্রত্যেক অপরাধীর বিচার করা এবং সাংবাদিকেরা যাতে সর্বত্র স্বাধীনভাবে তাঁদের কাজ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করা।’

জাতিসংঘ মহাসচিব আরও বলেন, ‘নারী সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে অনলাইনে উদ্বেগজনকভাবে বাড়তে থাকা হয়রানিমূলক আচরণ অবশ্যই আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। এ ধরনের অপরাধের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাজা হয় না এবং এটি প্রায়শই বাস্তব জীবনে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যাঁরা সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের জন্য ডিজিটাল দুনিয়াকে নিরাপদ রাখতে হবে।’

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যখন সাংবাদিকদের কণ্ঠ রুদ্ধ হয়, তখন আমরা সবাই আমাদের কণ্ঠস্বর হারাই। আসুন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায়, জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবিতে এবং যাঁরা ক্ষমতার বিপরীতে সত্য তুলে ধরেন, তাঁরা যেন ভয় ছাড়াই তা করতে পারেন তা নিশ্চিত করতে আমরা সম্মিলিত অবস্থান নিই।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ