দুদক কর্মকর্তাদের নামে ভুয়া আইডি: হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা
Published: 12th, February 2025 GMT
অনেক দিন ধরে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তা পরিচয়ে মামলা-মোকদ্দমা থেকে বাঁচানোর কথা বলে ও ভয় দেখিয়ে প্রতারণা করে আসছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। এবার অভিনব পন্থায় প্রতারণায় নেমেছে তারা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুদকের চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের নামে খুলেছে একাধিক আইডি। এসব আইডি ব্যবহার করে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
সম্প্রতি এ প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে চিহ্নিত করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাওয়া গেছে লাখ লাখ টাকা। তারা দুদক চেয়ারম্যান ও কমিশনারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নামে হোয়াটসঅ্যাপসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আইডি খুলে প্রতারণা করে মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
দুদক জানিয়েছে, দুদকের নামে প্রতারণায় লিপ্ত তিন জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তারা হলেন—রংপুরের পীরগঞ্জের আল আমিনের ছেলে রেজোয়ানুল হক। তার সহযোগী ইয়াসমিন আকতার ও জরিনা বেগম।
রেজোয়ানুল হক তার সহযোগী ইয়াসমিন আক্তারের নামে রংপুরের নবাবগঞ্জ বাজারের আজহার প্লাজায় অবস্থিত ডাচ-বাংলা ব্যাংকে সঞ্চয়ী হিসাব খোলেন, যার নম্বর—7017413367520। ওই অ্যাকাউন্টে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে লাখ লাখ নেওয়া হয়েছে। গোয়েন্দা কার্যক্রমের মাধ্যমে তা নিশ্চিত হওয়া গেছে। রেজোয়ানুলের অপর সহযোগী জরিনা বেগমের নগদ অ্যাকাউন্টে (01898611674) অবৈধ অর্থ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।
দুদকের উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) আকতারুল ইসলাম জানিয়েছেন, প্রতারক চক্র অপকর্মের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করাসহ দুদকের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা করছে। সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র থেকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে দুদক।
দুর্নীতি দমন কমিশন কারো বিরুদ্ধে অনুসন্ধান বা তদন্ত শুরু করলে চিঠি দিয়ে তাকে জানানো হয়; টেলিফোনে যোগাযোগ করা হয় না। চিঠি ভুয়া কি না, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য দুদকের প্রধান কার্যালয় অথবা নিকটস্থ বিভাগীয়/জেলা কার্যালয়ে যোগাযোগের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
অন্য কোনো প্রতারণা বা অনিয়মের তথ্য পাওয়া গেলে অথবা উল্লিখিত প্রতারক চক্রের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে কোনো তথ্য থাকলে দুদকের টোল ফ্রি হটলাইন নম্বরে (১০৬) জানানো অথবা নিকটস্থ দুদক কার্যালয় বা স্থানীয় থানার মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/রফিক
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
নড়াইলে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা
নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নে সড়কের পাশে সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে শাহবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন।
মামলায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানসহ ১৩ জন আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকা ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন ও প্রশিকার গঠিত সংগঠন প্রভাতী যুব সংঘের সভাপতি নড়াইল সদর উপজেলার তুজরডাঙ্গা এলাকার মুজিবুর রহমান, সদস্য একই এলাকার জরিনা বেগম, রজব আলী, মো. আজিবর, মো. ইলিয়াছ, ইমান আলী, মো. ওমর, মো. হায়দার, আবু সাঈদ, মো. এনামুল ও মো. শরিফুল।
এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মামলার এজহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, গত ২৯ এপ্রিল নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ বাজার থেকে হাজির বটতলা পর্যন্ত সরকারি রাস্তার জায়গা থেকে গাছ কাটা ও চুরি করে বিক্রির সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। উপস্থিত হয়ে দেখেন, কাটা গাছবোঝাই একটি ট্রাক এবং নছিমন জব্দ করেছেন নড়াইল সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার দেবাশীষ অধিকারী। তখন ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মামলার আসামিরা কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই খাসজমি থেকে গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। এর আগেও একবার তাঁরা ওই জমি থেকে গাছ বিক্রি করেছিলেন। জব্দ করা গাছের লগ, ডালপালা এবং আগে কাটা গাছের অবশিষ্ট ভূমিসংলগ্ন গুঁড়ি পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেছে, ওই স্থান থেকে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার অধিক গাছ চুরি করে কাটা ও বিক্রি হয়েছে।
প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকার ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০০৯ সালে প্রশিকা, ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রভাতী যুব সংঘের যৌথ উদ্যোগে একটি চুক্তির মাধ্যমে সড়কের পাশে গাছগুলো রোপণ করেছিল। সে সময় সড়কটি খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল না। বর্তমানে তা সরকারের আওতায় পড়ায় গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে ইউএনওর কাছে আবেদন করা হয়েছিল, তবে প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। কিছুদিন আগে ইউপি সদস্য ইব্রাহিম তাঁকে ফোনে জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালা বিক্রি করতে চান চেয়ারম্যান। বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালাগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হবে ভেবে তিনি বিক্রিতে সম্মতি দেন। পরে গাছ কীভাবে বা কারা কেটেছে, তা তিনি জানেন না।
মামলা করার আগে অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগের ব্যাপার জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, প্রশিকার সঙ্গে চুক্তির একটি পক্ষ ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। সেই হিসেবে গাছ কাটার অনুমতি নিতে ইউএনও বরাবর প্রশিকার আবেদন তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে সুপারিশ করেছিলেন। তবে গাছ কেটেছে প্রশিকা আর তাদের সংগঠন। এখানে চেয়ারম্যান-মেম্বরের কিছু নেই।
নড়াইল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী বলেন, প্রশিকার চুক্তির সময় সড়কটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ছিল, পরে ২০১৫ সালে এটি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। খাসজমি থেকে গাছ কাটা বেআইনি। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।