রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে বেপরোয়াভাবে গুলি করেছে পুলিশ। তিনি বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন। ভুক্তভোগী ব্যক্তি ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা এবং ভিডিও ফুটেজের ভিত্তিতে আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডে পুলিশের সরাসরি জড়িত থাকার যথেষ্ট যুক্তিসংগত কারণ রয়েছে।

২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত সংঘটিত ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের (ওএইচসিএইচআর) তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।

ওএইচসিএইচআর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে পাওয়া আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের বিভিন্ন ভিডিও ও ছবি পরীক্ষা করেছে। এসব ছবি ও ভিডিও মানোন্নয়নের কাজ করেছে ওএইচসিএইচআরের ডিজিটাল ফরেনসিক। এরপর তারা প্রত্যক্ষদর্শীদের দেওয়া বক্তব্যের সঙ্গে ছবি ও ভিডিও মিলিয়ে দেখে এবং হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি পুনর্নির্মাণের চেষ্টা করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন ২৩ বছর বয়সী আবু সাঈদ। পরিবারের মধ্যে তিনিই ছিলেন প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া। শুরু থেকেই তিনি কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ১৬ জুলাই স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারো শিক্ষার্থী (পুলিশের অনুমান অনুযায়ী ৩ থেকে ৪ হাজার) রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে বিক্ষোভ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেটে শিক্ষার্থীদের বড় একটি দল জড়ো হওয়ার পর উত্তেজনা বেড়ে যায়।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওএইচসিএইচআরকে দেওয়া পুলিশের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিক্ষোভকারীরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট দিয়ে জোর করে ঢোকার চেষ্টা করেন, তখন ছাত্রলীগ (বর্তমানে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রসংগঠন) সমর্থকদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশ ‘শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে গ্যাসের শেল এবং ফাঁকা গুলি ছুড়তে শুরু করে। পুলিশ বিশেষভাবে আবু সাঈদের প্রতি সম্মান জ্ঞাপন করে জানিয়েছে, তিনি গুরুতর আহত হন এবং পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান। তাঁর মৃত্যুর কারণ হিসেবে ‘মাথায় আঘাত ও গুলির চিহ্নের’ কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

ওএইচসিএইচআর বলেছে, নির্ভরযোগ্য একাধিক ভুক্তভোগী ব্যক্তি ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা ও ভিডিও চিত্রের ভিত্তিতে আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডে পুলিশের সরাসরি জড়িত ও দায়ী থাকার বিষয়টি যথেষ্ট বিশ্বাসযোগ্য এবং এর পক্ষে যুক্তিসংগত কারণ রয়েছে।

জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ছাত্রলীগ সমর্থকদের সহযোগিতায় পুলিশ লাঠিসোঁটা দিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণ করে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, আবু সাঈদও মারধরের শিকার হয়েছিলেন। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর কাঁদানে গ্যাস এবং প্রাণঘাতী মেটাল প্যালেটসে ভরা শটগান দিয়ে গুলি করে। গুলিতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন, তাঁদের মধ্যে একজনের চোখ অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

পুলিশ যখন গুলি চালাতে শুরু করে, তখন আবু সাঈদ তাঁর দুই হাত প্রসারিত করেন। ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, এক হাতে বাঁশের লাঠি ধরে থাকা আবু সাঈদ ১৪ থেকে ১৫ মিটার দূরে অবস্থানরত পুলিশ কর্মকর্তাদের জন্য কোনো হুমকি তৈরি করেননি। ওএইচসিএইচআরের সাক্ষাৎকার নেওয়া প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, যখন তিনি পুলিশের সামনে চিৎকার করে বলছিলেন ‘আমাকে গুলি করো’, তখন দুই পুলিশ সদস্য সরাসরি তাঁর শরীর লক্ষ্য করে শটগান দিয়ে একাধিকবার গুলি করেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ওএইচসিএইচআরের ফরেনসিক চিকিৎসক আবু সাঈদের মামলার মেডিকেল রেকর্ড পরীক্ষা করেছেন। তাতে তিনি দেখতে পেয়েছেন, আন্তর্জাতিক ফরেনসিক মান অনুযায়ী তাঁর (আবু সাঈদ) ময়নাতদন্ত করা হয়নি। চিকিৎসকের নিজস্ব পরীক্ষায় মরদেহের ছবিসহ মেডিকেল তথ্যপ্রমাণে আবু সাঈদের শরীরে শটগানের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, তলপেটসহ তাঁর বুকের ডান পাশে ৪০টি মেটাল প্যালেট এবং বাঁ পাশে ৫০টি মেটাল প্যালেটের আঘাত ছিল। ফরেনসিক বিশ্লেষণে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া গেছে যে আবু সাঈদকে প্রায় ১৪ মিটার দূর থেকে প্রাণঘাতী মেটাল প্যালেটসে ভরা শটগান দিয়ে অন্তত দুবার গুলি করা হয়েছিল।

ভিডিও ফুটেজের ফরেনসিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গুলি করার ফলে আবু সাঈদের ঘাড়, বুক ও বাহু থেকে দৃশ্যমান রক্তপাত হচ্ছিল। এরপর হাইপোভোলেমিয়া (রক্ত ও শরীরের অন্যান্য তরলের শূন্যতা) এবং মাথা ঘোরার লক্ষণ দেখা গিয়েছিল। বিশ্লেষণে মাথায় কোনো গুরুতর আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি, যা মৃত্যুর বিকল্প কারণকে সমর্থন করে। যেমন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় আবু সাঈদের মাথা মাটি বা অন্য কিছুর সঙ্গে জোরে আঘাত পেয়েছিল।

যথাযথ ময়নাতদন্ত না হওয়া সত্ত্বেও নথিভুক্ত ক্ষত ও সংশ্লিষ্ট ভিডিও ফুটেজ এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে যে কমপক্ষে দুবার গুলির ফলে প্রাণঘাতী মেটাল প্যালেটের আঘাতে আবু সাঈদের মৃত্যু হয়েছে। বিশ্লেষণ করা তথ্যের ভিত্তিতে এটা বিশ্বাস করার যথেষ্ট যুক্তিসংগত কারণ রয়েছে, আবু সাঈদকে লক্ষ্য করে পুলিশ বেপরোয়াভাবে গুলি চালিয়েছে। আবু সাঈদ বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন।

আরও পড়ুনশেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘ২ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

শনি গ্রহের একাধিক চাঁদে কার্বন ডাই–অক্সাইডের সন্ধান

জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের মাধ্যমে শনি গ্রহের আটটি মাঝারি আকারের চাঁদে কার্বন ডাই–অক্সাইড শনাক্ত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার বিজ্ঞানীরা। বর্তমানে মিমাস, এনসেলাডাস, ডায়োন, টেথিস, রিয়া, হাইপেরিয়ন, লাপেটাস ও ফিবি নামের চাঁদগুলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের পরিবর্তনের তথ্য টেলিস্কোপের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হচ্ছে। তথ্য বিশ্লেষণ করার পাশাপাশি চাঁদগুলোর ওপরে নিয়মিত নজরও রাখছেন বিজ্ঞানীরা।

বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, ডায়োন ও রিয়া চাঁদে থাকা কার্বন ডাই–অক্সাইড শনির প্রধান বলয়ের বরফের অনুরূপ। ফিবি চাঁদে কার্বন ডাই–অক্সাইড জৈব পদার্থের বিকিরণের মাধ্যমে উৎপন্ন হয়ে থাকে। লাপেটাস ও হাইপেরিয়নের অন্ধকার অঞ্চলে কার্বন ডাই–অক্সাইড দেখা যায়। বরফযুক্ত এসব চাঁদে কার্বন ডাই–অক্সাইডের অবস্থা সম্পর্কে আরও জানতে আগ্রহী বিজ্ঞানীরা।

ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির বিজ্ঞানী মাইকেল ব্রাউন ও তাঁর সহকর্মীরা এক গবেষণাপত্রে লিখেছেন, কঠিন কার্বন ডাই–অক্সাইড সৌরজগতের প্রান্তসীমার বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায়। যদিও সেই অবস্থানে কার্বন ডাই–অক্সাইড স্থিতিশীল নয়। আমরা শনির উপগ্রহে কার্বন ডাই–অক্সাইডের অবস্থান জানার মাধ্যমে ভিন্ন পরিবেশ বোঝার চেষ্টা করছি। বিভিন্ন গ্রহে কার্বন ডাই–অক্সাইড কীভাবে আটকে আছে, তা জানার সুযোগ আছে এখানে।

বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, শনির চাঁদে আটকে থাকা কার্বন ডাই–অক্সাইড থেকে আদর্শ ল্যাবের মতো তথ্য পাওয়া যাবে। ধারণা করা হচ্ছে, শনি গ্রহের বিভিন্ন চাঁদে কমপক্ষে দুটি পৃথক উৎস থেকে কার্বন ডাই–অক্সাইড তৈরি হয়েছে।

সূত্র: এনডিটিভি

সম্পর্কিত নিবন্ধ