Samakal:
2025-08-01@05:01:32 GMT

প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় বেতার

Published: 13th, February 2025 GMT

প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় বেতার

বেতার বর্তমান বিশ্বের যোগাযোগের একটি নির্ভরযোগ্য মাধ্যম। সমাজ উন্নয়ন, দুর্যোগ, শিক্ষা, সংবাদ ও বিনোদনের বিশেষ বাহন হিসেবে কাজ করে বেতার। তথ্য সরবরাহকে গণমানুষের কাছে আরও দ্রুত ও বিস্তৃতি ঘটাতে প্রতিবছর ১৩ ফেব্রুয়ারি দিবসটি পালিত হয়। স্পেনের অনুরোধে এবং জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ইউনেস্কো ২০০৮ সাল থেকে দিবসটি পালন করছে। 

বাংলাদেশেও যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে দিবসটি পালিত হবে। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার ও বিভিন্ন কেন্দ্র দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। বেতারের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, বেতারের মাধ্যমে অবাধ তথ্য পাওয়ার সুবিধা এবং ব্রডকাস্টারদের মধ্যে যথাযথ সংযোগ বাড়ানোই এ দিবসের মূল লক্ষ্য।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে সামাজিক যোগাযোগের পাশাপাশি মানসম্মত বেতার এখনও বেশ জনপ্রিয়।

২০২৫ সাল জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি বছর। প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী যদি বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ১.

৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখতে হয়, তবে গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ অবশ্যই আটকাতে হবে এবং ধীরে ধীরে তা কমাতে হবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ বিশ্ব বেতার দিবসের প্রতিপাদ্য হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে ‘বেতার ও জলবায়ু পরিবর্তন’।

পরিবেশ রক্ষার ধারণা জনপ্রিয় করার পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন এবং এর গুরুত্ব সম্পর্কে শ্রোতাদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রভাবিত করতে পারে বেতার মাধ্যম। জলবায়ু পরিবর্তনের বাস্তবতা এবং সম্ভাব্য সমাধান সম্পর্কে শ্রোতাদের অসীম জ্ঞান রয়েছে। বিশেষ করে গ্রামীণ মানুষ এবং আদিবাসী, যারা নির্দিষ্ট অঞ্চলে পরিবেশগত দুর্যোগের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নিত্যনতুন সমস্যা মোকাবিলা করছেন, তাদের কথা বেতারে আরও যত বেশি তুলে ধরা যাবে ততই বেতার এগিয়ে যাবে। বিশেষ করে দুর্যোগ-দুর্বিপাকে যখন অন্য সব মিডিয়া স্থবির, তখনও বেতার নিরবচ্ছিন্নভাবে সেবা দেয়। বিশেষত দুর্গম এলাকায় এখনও বেতার তথ্য আদান-প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ গণমাধ্যম হিসেবে স্বকীয়তা বজায় রেখেছে। 

দুর্যোগ-দুর্বিপাকে বেতারের বিরামহীন সম্প্রচার মানুষকে সঠিক দিকনির্দেশনা দেয়। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বেতারের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা সম্পর্কে আমাদের সবারই জানা। সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে এবং উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণে গণমানুষকে উদ্বুদ্ধ ও উৎসাহিত করতে বেতার শক্তিশালী হাতিয়ার। এ ছাড়াও জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগ সম্পাদন এবং দুর্যোগের ঝুঁকি মোকাবিলায় বেতারের ভূমিকা অনন্য। সিডর, আইলা, নার্গিস, মহাসেন, রোয়ানুর মতো বিভিন্ন দুর্যোগের সময় কমিউনিটি বেতারের কর্মী বাহিনী নিরবচ্ছিন্নভাবে তথ্য প্রদান করে দেশ ও জাতির সেবায় নিয়োজিত থেকেছে।

শুধু কি তাই? মানুষের যাপিত জীবনে বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, মহামারিসহ নানা প্রকৃতিক দুর্যোগে প্রকৃত বন্ধুর মতো পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ বেতার। এখনও অবিরাম তথ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ বেতার দেশের ১৮ কোটি মানুষের জন্য, সব সময় সব কাজে। আর কমিউনিটি রেডিওগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে গ্রামবাংলার তৃণমূল কার্যক্রমকে তুলে ধরছে। 

বেতারকে বিশেষ করে কমিউনিটি রেডিওগুলোকে দক্ষতা ও যোগ্যতা দিয়ে আরও বেশি সক্ষম করতে পারলে অভাবনীয় সফলতা এনে দেবে এসব কমিউনিটি রেডিও।

বহির্বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে গেলে বেতারের এখনও অনেক আধুনিকায়ন প্রয়োজন। এ ছাড়া বাজারের অবস্থা বুঝে শিল্পী ও কলাকুশলীদের সম্মাননা বৃদ্ধি করতে না পারলে ভালোমানের শিল্পী পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। তাই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করে বাংলাদেশ বেতারসহ কমিউনিটি রেডিওগুলো এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশ বেতার তার সক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতকে মোকাবিলা করার জন্য আরও বেশি মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাবে। এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

ড. তাজুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন: অধ্যাপক, কৃষি রসায়ন বিভাগ, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জলব য়

এছাড়াও পড়ুন:

গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও

রংপুরের গংগাচড়ায় ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ঘিরে সহিংসতার শিকার হিন্দু পরিবারের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। তবে ঘটনার তিন দিন পরেও এলাকায় ফেরেনি অনেক পরিবার। আতঙ্কে এখনো আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে অনেকে।

গত ২৭ জুলাই রাতে ওই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলার আগে এলাকায় মাইকিং করে লোকজন জড়ো করা হয়।

পুলিশ, প্রশাসন ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বলছেন, যারা হামলা করেছেন, তাদের মধ্যে অনেকে ছিলেন ‘বহিরাগত’। পাশের নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলা থেকে লোকজন এসে হামলা চালিয়ে চলে যায়। হামলার সময় ২২টি ঘরবাড়ি তছনছ ও লুটপাট করা হয়। 

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এলাকায় অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প বসানো হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে পুলিশ টহল। প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ঢেউটিন, কাঠ, চাল-ডাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করেছে এবং ঘরবাড়ি মেরামতের কাজও শুরু হয়েছে। তবু আতঙ্কিত পরিবারগুলো। 

ক্ষতিগ্রস্তদের একজন অশ্বিনী চন্দ্র মোহান্ত বলেন, “সেদিনের ঘটনা ছিল এক ভয়াবহ। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে ধর্ম অবমাননাকারী কিশোরকে থানা হেফাজতে দিয়েছি। কিন্তু তারপরও ঘরবাড়ি রক্ষা হয়নি। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি এবং কিছু মুরুব্বি আমাদেরকে অভয় দিয়েছিলেন, কিন্তু রক্ষা হয়নি।” 

তিনি আরো বলেন, “আমরা নিজেরাই অভিযুক্ত কিশোরকে থানায় সোপর্দ করেছি। তারপরও মিছিল নিয়ে এসে দুই দফায় আমাদের ২০ থেকে ২৫টি ঘরবাড়ি তছনছ করে দিয়ে লুটপাট করেছে তারা। এদের মধ্যে অধিকাংশ লোকেই অপরিচিত।” 

আরেক ভুক্তভোগী দেবেন্দ্র চন্দ্র বর্মন জানান, “প্রথমে অল্পসংখ্যক কম বয়সী কিছু ছেলে আসে। পরে হাজারো লোকজন এসে আমাদের বাড়িঘরে তাণ্ডব চালায়। অনেকেই এখনো আত্মীয়দের বাড়িতে। আমরা চরম আতঙ্কে আছি।”

রবীন্দ্র চন্দ্রের স্ত্রী রুহিলা রানী বলেন, “ছোট ছেলেটা যদি ভুল করে থাকে, আমরা তাকে থানায় দিয়েছি। কিন্তু তারপরও এমন ধ্বংসযজ্ঞ কেন? আমাদের গরু, সোনা-টাকা সব লুটে নিয়েছে। শুধু চাল-ডাল আর টিনে কি জীবন চলে?”

গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ও সদস্য সচিব আনিসুর রহমান লাকুসহ একটি প্রতিনিধি দল। তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে শাড়ি ও লুঙ্গি বিতরণ করেন এবং পাশে থাকার আশ্বাস দেন।

গংগাচড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আল এমরান বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে কিশোরটিকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনা হয় এবং পরে আদালতের মাধ্যমে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তারপরও পুলিশ প্রশাসন সর্বাত্মক নিরাপত্তায় নিয়োজিত।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহামুদ হাসান মৃধা বলেন, “অপরাধীদের ধরতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হচ্ছে সহায়তা। পুলিশ ও সেনাবাহিনী পুরো এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে।” 

উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের তথ্যমতে, হামলায় ১৫টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যাতে ২২টি পরিবার বসবাস করতেন। ঘর মেরামতের পর কিছু পরিবার ফিরলেও অভিযুক্ত কিশোর ও তার চাচার পরিবারের কেউ এখনো ফিরে আসেনি।

ঢাকা/আমিরুল/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্পের
  • মেসি বনাম ইয়ামাল: ফিনালিসিমার সময়-সূচি ঘোষণা
  • গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও