কৃষিতে সার বরাদ্দ ও বেচাবিক্রিতে অনিয়ম চলতে থাকবে, এটিই যেন রেওয়াজ হয়ে গেছে। অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য চলছেই। একটি স্বৈরাচারী সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে দেশের রাজনীতিতে বিশাল একটা পরিবর্তন ঘটে গেল। কিন্তু সিন্ডিকেট আছে সিন্ডিকেটের জায়গাতেই। দেশের কৃষি ও কৃষক এখনো জিম্মি হয়ে আছেন তাদের কাছে। সরকার আসে সরকার যায়, এই সিন্ডিকেটের গায়ে টোকাটিও কেন পড়ে না?
দেশের সবচেয়ে বড় সার বিপণনকেন্দ্র যশোরের নওয়াপাড়া। এখান থেকে দেশের দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলে অন্তত ৩৫টি জেলায় সার যায়। তার মানে অর্ধেক দেশের কৃষি উৎপাদনের সার যায় এখান থেকে। সারের এ বিপণনকেন্দ্র ঘিরে দুই শতাধিক ক্ষুদ্র সার ব্যবসায়ী আছেন। বেশির ভাগ সারের পরিবেশক নওয়াপাড়ায় না গিয়ে এই ক্ষুদ্র সার ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে কাগজে-কলমে সার উত্তোলন দেখিয়ে বরাদ্দের অধিকাংশ সার আমদানিকারক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করে দেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) অনেক পরিবেশক কাগজে-কলমে বরাদ্দের সার উত্তোলন দেখিয়ে অধিকাংশ সার বিএডিসির কিছু অসাধু কর্মকর্তার কাছে বিক্রি করছেন।
কৃষি কর্মকর্তাদের ভাষায়, কোনো এলাকার বরাদ্দ করা সার বন্যা বা অন্য কারণে সেখানে কাজে না লাগলে যদি অন্য এলাকায় ঢোকে, তখন সেই সারকে ‘বরাদ্দবহির্ভূত’ সার বলা হয়। অথচ নিয়মানুযায়ী বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি), বিএডিসির পরিবেশক ও নির্ধারিত খুচরা সার বিক্রেতা ছাড়া কোনো ব্যবসায়ী সার বিক্রি করতে পারবেন না। সরকার–নির্ধারিত পরিবেশক ও বিক্রেতারা ছাড়া কেউ অনুমোদিত উৎস ছাড়া অন্য কোনো উৎস থেকে সার সংগ্রহ কিংবা ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবেন না। কিন্তু এসব নিয়ম আছে কাগজে–কলমে।
রাজশাহী ও যশোরে যত্রতত্র খুচরা বিক্রেতারা বরাদ্দবহির্ভূত সারের নামে বেশি দামে চাষিদের কাছে নন-ইউরিয়া (টিএসপি, ডিএপি, এমওপি) সার বিক্রি করছেন। পরিবেশকের কাছে সার না পাওয়ায় চাষিরাও সেই সার বেশি দামে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। এটি এ বছরই ঘটছে তা নয়। প্রতিবছরই কমবেশি এমন চিত্র আমরা দেখে থাকি।
অভিযোগ আছে, সার ঘিরে বিশাল দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তাও জড়িত। তাঁদের অনেকে বিপণনকেন্দ্র পরিদর্শন করে এমন সব সিদ্ধান্ত দেন, যা মূলত সার ঘিরে অনিয়মকে ন্যায্যতা দেয়। বিপণনকেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে সিন্ডিকেট গোষ্ঠী ও অসাধু কর্মকর্তাদের দ্বারা তাঁরা আপ্যায়িত হন বলেও অভিযোগ আছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আমাদের আশা থাকবে, সারের এই সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া হবে। অসাধু কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সার ঘিরে যাবতীয় অনিয়ম দূর করতে না পারলে কৃষি ও কৃষকের মুক্তি নেই।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবস য় বর দ দ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলের আবাসিক ব্লক পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে
ইসরায়েল বরাবরই বলে আসছিল তাদের অত্যাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে এবং এই ব্যবস্থা বিদেশি আক্রমণ ঠেকাতে কার্যকর। তবে শুক্রবার রাতে ইরানের পাল্টা আক্রমণে ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শতভাগ কাজ করেনি। ইসরায়েলের বেশ কয়েকটি শহরের আবাসিক ব্লক ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
রবিবার ভোরে ইরানের গুলিবর্ষণের পর ইসরায়েলের একটি মধ্যাঞ্চলীয় শহরে ধ্বংসযজ্ঞ প্রত্যক্ষ করেছে সিএনএন-এর একটি দল।
স্থানীয় সময় ভোর আড়াইটার দিকে বাত ইয়াম এলাকায় ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। ক্ষেপণাস্ত্র একটি আবাসিক ব্লকে আঘাত হেনেছে এবং ব্লকটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
ইসরায়েল পুলিশের আন্তর্জাতিক মুখপাত্র ডিন এলসডুন জানিয়েছেন ব্যাপক উদ্ধার প্রচেষ্টা এখনো চলছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে বহু মানুষ আটকা পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তিনি বলেছেন, “আমাদের বেসামরিক জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে আরোএকটি রকেট হামলার ফলাফল এটি।”
পুলিশের মুখপাত্র শহরে হতাহতের সংখ্যা সম্পর্কে সঠিক তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তবে জানিয়েছেন, ‘অনেকে’ আহত হয়েছেন এবং পুলিশ আরো ব্যক্তিদের খুঁজে বের করছে। হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে।
এদিকে রবিবার টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, ইরানের হামলায় ইসরায়েলে এ পর্যন্ত ১৩ জন নিহত হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছে দুই শতাধিক মানুষ।
ঢাকা/শাহেদ