পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের আমন্ত্রণে দুই দিনের সরকারি সফরে ইসলামাবাদে পৌঁছেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন ঊচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল। খবর জিও নিউজ, সামা টিভির
গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে রাওয়ালপিন্ডির নূর খান এয়ারবেসে অবতরণ করেন এরদোগান। বিমানবন্দরে তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান পাকিস্তানের শীর্ষ কর্মকর্তারা। এ সময় সেখানে ছিলেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি, প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, ফার্স্ট লেডি আসিফা ভুট্টো, উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার, প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফ, তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারারসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
তুরস্কের প্রেসিডেন্টের আগমন উপলক্ষে ২১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে সম্মাননা জানানো হয়। এর আগে পাকিস্তানের আকাশসীমায় প্রবেশের সময় তার বিমানকে এসকর্ট করে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর জেট ফাইটার। প্রেসিডেন্ট এরদোগানের সঙ্গে তার স্ত্রী, তুরস্কের ফার্স্ট লেডি এমিনে এরদোগানসহ উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন।
দুই শিশু ঐতিহ্যবাহী পোশাকে সজ্জিত হয়ে প্রেসিডেন্ট এরদোগান ও ফার্স্ট লেডিকে ফুলের তোড়া উপহার দেন। বিমানবন্দরের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সামরিক ব্যান্ডের পরিবেশনা এবং পাকিস্তান ও তুরস্কের জাতীয় পতাকা হাতে শিশুদের উচ্ছ্বাস ছিল, যা দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের প্রতীক হয়ে ওঠে।
দুই দিনের সফরে প্রেসিডেন্ট এরদোগান ও প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদারে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেবেন। সফরের মূল অংশ হিসেবে পাকিস্তান-তুরস্ক উচ্চ পর্যায়ের কৌশলগত সহযোগিতা পরিষদের (এইচএলএসসিসি) সপ্তম বৈঠকে সহ-সভাপতিত্ব করবেন প্রেসিডেন্ট এরদোগান ও প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ।
এই বৈঠকের পর একটি যৌথ ঘোষণা দেওয়া হবে এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়নে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে। দুই নেতা এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনেও বক্তব্য রাখবেন। প্রেসিডেন্ট এরদোগান পৃথকভাবে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট পাকিস্তান-তুরস্ক বিজনেস অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ফোরামেও ভাষণ দেবেন। এতে উভয় দেশের শীর্ষ বিনিয়োগকারী, করপোরেট সংস্থা ও ব্যবসায়ী নেতারা অংশ নেবেন।
প্রসঙ্গত, এইচএলএসসিসি পাকিস্তান ও তুরস্কের মধ্যে সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী প্ল্যাটফর্ম, যা কৌশলগত দিকনির্দেশনা প্রদান করে এবং যৌথ কমিটিগুলোর কার্যক্রম তদারকি করে। এই পরিষদ বাণিজ্য, বিনিয়োগ, ব্যাংকিং, সংস্কৃতি, পর্যটন, জ্বালানি, প্রতিরক্ষা, কৃষি, যোগাযোগ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন খাতে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করে।
এর আগে ছয়টি এইচএলএসসিসি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সর্বশেষ ১৩-১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ সালে ইসলামাবাদে আয়োজিত হয়েছিল।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ত রস ক চ পর য য় র
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলে ইরানের নতুন হামলায় নিহত আরও ৩, আহত ২৯
ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে অন্তত চার জায়গায় হামলা চালিয়েছে ইরান। এ হামলায় তিনজন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জেরুজালেম পোস্ট।
আজ সোমবার আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের অ্যাম্বুলেন্স ও ব্লাড ব্যাংক সংস্থাগুলো বলছে, এসব হামলায় ২৯ জন আহত হয়েছেন।
এর আগে সিএনএন ইসরায়েলের ১৫ জন নিহত হওয়ার খবর দেয়। ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কানের খবর বলছে, ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে হামলায় একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। এছাড়াও বন্দরনগরী হাইফায় অন্তত দুইজন আহত হয়েছেন। এছাড়াও সেখান আরও তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন।
এর আগে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছিল, ইরান থেকে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে। একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে ইসরায়েল। বর্তমানে হামলা প্রতিহত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।
আজ সিএনএনের এক খবরে বলা হয়েছে, তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে জরুরি সতর্ক সংকেত (সাইরেন) বাজতে শুরু করেছে। আইডিএফ সতর্ক করে বলেছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি অভেদ্য নয়।
সিএনএনের একজন প্রযোজক জেরুজালেমে সাইরেন এবং একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তার তোলা ভিডিওতে আকাশে বহু ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে যেতে দেখা গেছে।
ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড আদোম জানিয়েছে, তাদের দলগুলো আক্রান্ত এলাকার দিকে রওনা দিয়েছে।
সারা দেশের নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রে ঢুকতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, বর্তমানে বিমানবাহিনী হামলা প্রতিহত করার পাশাপাশি পাল্টা হামলা চালানোর কাজ করছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট নিউজ জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের পেতাহ টিকভা শহরের একটি ভবনে একটি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে। হামলার ফলে ওই স্থানে আগুন ধরে যায়। তবে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে মধ্য ইরানে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর দাবি, বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সফলভাবে মধ্য ইরানে অবস্থিত একাধিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। আমাদের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, এসব স্থাপনা থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছিল।’
তবে ইসরায়েলের এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান এখনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।
এদিকে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।
বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক। হামলায় ১ হাজার ২৭০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
এপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১৩ জুন ইরানে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ওই হামলায় ইরানের নাতাঞ্জ ও ইসফাহান অঞ্চলের পারমাণবিক স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। ইরানে বর্তমানে মসজিদ ও মেট্রো স্টেশনগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের তিন শিশুসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। রোববার ইসরায়েল সরকারের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ বলেছে, এছাড়া ইরানের হামলায় কমপক্ষে ৩৮৫ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে সাত জনের অবস্থা গুরুতর।
এদিকে ইসরায়েলি পুলিশের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, তেল আবিবের দক্ষিণে অবস্থিত বাত ইয়াম শহরে ৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। এছাড়া সাতজন এখনও নিখোঁজ। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন জরুরি সেবাদানকারীরা।