‘আমাকে তো প্রদর্শনীর জন্য বছরখানেক আগে চিঠি দিয়েছিল। আমি সময় নিয়ে কাজগুলো করেছি। এগুলো আমার বাসায় তৈরি শিল্পকর্ম। এবারের প্রদর্শনীতে বিমূর্ততা ফুটিয়ে তুলেছি। এদের গ্যালারিটা খুবই সুন্দর। তারা আমাকে সহায়তা করেছে এ প্রদর্শনী করার জন্য।’ এভাবেই নিজের ৪৭তম একক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী বিষয়ে বলছিলেন ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান। গত ৩১ জানুয়ারি সন্ধ্যায় রাজধানীর বেঙ্গল শিল্পালয়ের কামরুল হাসান প্রদর্শনশালায় এই গুণী ভাস্করের নানান মাধ্যমে তৈরি শিল্পকর্ম নিয়ে শুরু হয় এ প্রদর্শনী।
বিভিন্ন রং কিংবা এক রং, দুই রঙে আঁকা একটি আকৃতি। একজন দর্শকের কাছে সেটি ভয় বা আতঙ্ক, অন্যজনের কাছে সুখের প্রতীক। মানবমস্তিষ্কে অনবরত ঘুরতে থাকা এই রহস্যের একটি অংশ হলো বিমূর্ততা। এই বিমূর্ততাকেই শিল্পী তাঁর কাজে তুলে এনেছেন। তিনি বলেন, ‘অনেক সময় নিয়ে কাজগুলো করেছি। আমি মনে করি, আমার জীবনের সবচেয়ে ভালো প্রদর্শনী এটি। এ প্রদর্শনীতে বিভিন্ন মাধ্যমে তৈরি কাজ থাকলেও আমি ভাস্কর্যকে মনেপ্রাণে ধারণ করি। এ প্রদর্শনীতে আমার কাজগুলো দর্শক কীভাবে গ্রহণ করবে, সেটি তাদের বিষয়। একটি বস্তুর মধ্যে থাকা বিমূর্ততা আমি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি এই শিল্পকর্মের মাধ্যমে। যেখানে কোনো চিত্র না থাকা সত্ত্বেও কাজগুলোর অর্থ বুঝতে সমস্যা হয় না। ভাস্কর্যের পাশাপাশি আমার কিছু পেইন্টিং রয়েছে। পেইন্টিং হলো কালচারের রূপক।’ তরুণদের উৎসাহ দিয়ে তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি শিল্পকলায় ভাস্কর্য নিয়ে একটি এক্সিবিশন হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন শিল্পীর নানা মাধ্যমে কাজ ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। একটা উন্নতি বাংলাদেশে হয়েছে ভাস্কর্য শিল্পের ক্ষেত্রে। বিভিন্ন মাধ্যমে আধুনিক নিরীক্ষামূলক শিল্পকর্ম নিজে কাজ করে যাচ্ছি বহু বছর ধরে। এই পথচলা সব সময় মসৃণ ছিল না। তবে সঙ্গে পেয়েছি অনেককেই। তাদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা।’
বিভিন্ন মাধ্যমে তৈরি ভাস্কর্যের সামনে দর্শককে বেশ কিছু সময় দাঁড়িয়ে বুঝতে হয় আসলে কী বলছে এই শিল্পকর্মগুলো। আবার অনেক সময় নিজেরাই নিজেদের মতো করে বোঝার আগ্রহ প্রকাশ করেন। এ রকম দোদুল্যমান মনের জায়গা থেকে ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান মূর্ত ও বিমূর্তের মাঝখানের সূক্ষ্ম জায়গাটা ফুটিয়ে তুলেছেন। শিল্পী হামিদুজ্জামান খানের ভাস্কর্যের সঙ্গে পরিচিত সবাই। পাথর, ব্রোঞ্জ বা বিভিন্ন ধাতবে তিনি ফুটিয়ে তোলেন শৈল্পিক আভা। ভাস্কর্যের পাশাপাশি রং-তুলির ক্যানভাসেও মগ্ন দেশের প্রখ্যাত এই ভাস্কর।
এই প্রদর্শনীতে স্থান পাওয়া বিভিন্ন কাজ দেখে দর্শকের মাঝে থাকা দ্বিধাদ্বন্দ্বের অন্তর্গত দিক প্রতিফলিত হয়েছে। বিশাল লাল রঙের একটি উল্টো ‘এক’-এর পেইন্টিংটি কারও কাছে জুলাই আন্দোলনের এক দফা; অন্যদিকে এটিকেই কেউ মাতৃগর্ভ ভাবছেন মাংসপিণ্ডের মাঝে। সাদা রঙের বিভিন্ন আকৃতির অঙ্গভঙ্গির কাটআউট গোল করে ডিসপ্লে বেইজে রাখা আছে। অন্যদিকে নীল রঙেও বিভিন্ন আকৃতি সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করানো আছে প্রদর্শনীতে। এ ছাড়াও সাদাকালো বিভিন্ন আকৃতির পেইন্টিং দেয়ালজুড়ে রয়েছে।
হামিদুজ্জামানের কাজ নিয়ে এই আয়োজনের কিউরেটর মোস্তফা মিঠু বলেন, ‘স্যারের সঙ্গে আমি অনেকদিন ধরেই কাজ করছি। বস্তুর রূপ এবং গুণ নিয়ে কাজ করেন হামিদুজ্জামান স্যার। নিজস্ব ধরন, বস্তুর আকার রূপান্তর করার যে প্রক্রিয়া, তা প্রশংসনীয়। বহু বছরের অভিজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ এ প্রদর্শনী। কিউরেট করতে গিয়ে আমি চেষ্টা করেছি স্যারের সৃষ্টি ভাবনা এবং এত বছরের পথচলা তুলে ধরতে এ প্রদর্শনীতে।’
ভাস্কর হামিদুজ্জামান প্রসঙ্গে চিত্রশিল্পী মনিরুল ইসলাম বলেন, স্কাল্পচার একটি লিভিং এভিডেন্স। এই কাজ বহু বছর সবার সামনে থাকে। ভালো-খারাপ মতামতের সম্মুখীন হয়। তাই সবাই এখানে কাজ করতে পারে না। কিন্তু হামিদুজ্জামান নিষ্ঠার সঙ্গে বহু বছর ধরে এই মাধ্যমে নিজের মুনশিয়ানার ছাপ রেখে যাচ্ছেন। একই সঙ্গে অন্যান্য মাধমেও শিল্পী কাজ করে গেছেন। এর মূলে ছিল নিজের সৃজনসত্তার প্রতি বিশ্বস্ততা। আজকের দিনে এ রকম প্রতিভা বিরল।
রোববার ছাড়া প্রদর্শনীটি আগামী ১৫ মার্চ পর্যন্ত
চলবে বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। প্রদর্শনী সবার
জন্য উন্মুক্ত।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ভ স কর য র শ ল পকর ম ক জ কর প ইন ট
এছাড়াও পড়ুন:
ইউটিউবে ভুয়া ‘টক শো’র ছড়াছড়ি, বিভ্রান্ত মানুষ
এক পাশে বেগম খালেদা জিয়া, অন্য পাশে শেখ হাসিনা, মাঝখানে খালেদ মুহিউদ্দীন—ইউটিউবে একটি ‘টক শো’তে তিনজনকে এভাবেই দেখা যায়। যদিও বিষয়টি পুরোটাই ভুয়া।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা কখনোই সুপরিচিত উপস্থাপক খালেদ মুহিউদ্দীনের টক শোতে (আলোচনা অনুষ্ঠান) যাননি; কিন্তু ইউটিউবে কারসাজি করে ভুয়া টক শো তৈরি করা হয়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে খণ্ড খণ্ড ভিডিও চিত্র (ক্লিপ)। মনে হয়, যেন টক শোর অতিথিরাই কথা বলছেন।
সুপরিচিত নবীন ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ, আলোচিত ব্যক্তিত্ব, জনপ্রিয় বিশ্লেষক, সাংবাদিক, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ‘ইনফ্লুয়েন্সার’দের নিয়ে এ ধরনের ভুয়া টক শো তৈরি করা হচ্ছে। তথ্যব্যবস্থায় প্রযুক্তির প্রভাব নিয়ে গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান ডিজিটালি রাইটের তথ্য যাচাইয়ের উদ্যোগ ডিসমিসল্যাব বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছে, ইউটিউবে এমন ভুয়া টক শো অনেক রয়েছে।
ইউটিউবে কারসাজি করে ভুয়া টক শো তৈরি করা হয়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে খণ্ড খণ্ড ভিডিও চিত্র (ক্লিপ)। মনে হয়, যেন টক শোর অতিথিরাই কথা বলছেন।ডিসমিসল্যাব ২৮৮টি ভিডিও পর্যালোচনা করেছে। তারা বলছে, অধিকাংশ ভিডিওতে মূল সাক্ষাৎকারগুলোকে প্রাসঙ্গিকতার বাইরে গিয়ে কাটাছেঁড়া করে এমনভাবে বানানো হয়েছে, যা আদতে ঘটেনি। এসব ভিডিও গড়ে ১২ হাজারবার দেখা হয়েছে।
‘ভুয়া টক শোকে উসকে দিচ্ছে ইউটিউব, যেখানে আসল কনটেন্ট জায়গা হারাচ্ছে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন গতকাল বুধবার প্রকাশ করে ডিসমিসল্যাব। এতে বলা হয়, ভুয়া টক শোতে বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হয়। অর্থাৎ সেখান থেকে অর্থ আয়ের সুযোগের সম্ভাবনাও রয়েছে। ইউটিউবের নিজস্ব নীতিমালা ভঙ্গ করে বানানো এ ধরনের ভিডিও প্রচার করে ইউটিউব নিজেও লাভবান হচ্ছে।
ডিজিটালি রাইটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিরাজ আহমেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, এ ধরনের ভুয়া টক শো অনেকে বিশ্বাস করেন, যার ফলে সমাজে বিভাজন তৈরি হয় এবং রাজনীতি ও গণতন্ত্রের ওপর প্রভাব পড়ে।
খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে বানানো ভিডিওটি পর্যালোচনা করে ডিসমিসল্যাব বলেছে, ভিডিওতে দেখা যায়, ক্যামেরার দিকে মুখ করে দুই নেত্রী অনলাইনে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ‘ভার্চু৵য়াল টক শো’তে অংশ নিয়েছেন। যেখানে সঞ্চালক খালেদ মুহিউদ্দীন শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানান, ২০২৪ সালের আগস্টে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে; কিন্তু কিছুক্ষণ যেতেই দর্শক বুঝবেন, ভিডিওটি ভুয়া। খালেদা জিয়ার নড়াচড়া স্বাভাবিক না। শেখ হাসিনার কণ্ঠস্বর তাঁর মুখভঙ্গির সঙ্গে মিলছিল না। খালেদার ভিডিও ফুটেজ বিকৃত বা টেনে লম্বা করা হয়েছে। উপস্থাপকের হাতের অঙ্গভঙ্গি বারবার একই রকম দেখা যাচ্ছিল। বিভিন্ন উৎস থেকে ক্লিপ কেটে জোড়া লাগিয়ে কথোপকথন তৈরি করে এই ভুয়া টক শো বানানো হয়েছে।
এ ধরনের ভুয়া টক শো অনেকে বিশ্বাস করেন, যার ফলে সমাজে বিভাজন তৈরি হয় এবং রাজনীতি ও গণতন্ত্রের ওপর প্রভাব পড়ে।ডিজিটালি রাইটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিরাজ আহমেদ চৌধুরীডিসমিসল্যাব জানায়, ভুয়া টক শোটি চলতি মাসের শেষ নাগাদ ফেসবুকে দুই লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে। ভিডিওটির ওপর একটি লোগো ছিল ‘টক শো ফার্স্ট নিউজ’ নামে, যা একই নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে মিলে যায়। সেখানে একই ভিডিওটি আরও ১ লাখ ৩৫ হাজারবার দেখা হয়েছে। ওই চ্যানেলে এমন বেশ কিছু ক্লিপ ছিল, যা একইভাবে বিকৃত বা সাজানো হয়েছিল।
প্রবাসী সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীন ইউটিউবে ‘ঠিকানায় খালেদ মুহিউদ্দীন’ নামে একটি চ্যানেলে টক শো উপস্থাপনা করেন। সম্প্রতি তাঁর ছবি, ফুটেজ ব্যবহার করে বিভিন্ন ক্লিপ যুক্ত করে প্রচুর ভুয়া টক শো তৈরি করে প্রচার করা হয়েছে। ডিসমিসল্যাব এ বিষয়ে গবেষণা করেছে। তারা ইউটিউবে ‘খালেদ মুহিউদ্দীন টক শো’ লিখে খোঁজ করে অন্তত ৫০টি চ্যানেল চিহ্নিত করেছে। খালেদ মুহিউদ্দীন ছাড়াও এসব চ্যানেলে অন্যান্য উপস্থাপক ও রাজনৈতিক বক্তাদের বিভিন্ন বক্তব্যের ক্লিপ জুড়ে দিয়ে ভুয়া টক শো তৈরি করা হয়েছে। গত ২৫ মার্চ থেকে ৩১ মার্চে খুঁজে পাওয়া এসব চ্যানেলের মধ্যে ২৯টি চ্যানেল অন্তত একটি বিকৃত টক শো প্রচার করেছে।
ডিসমিসল্যাব বলছে, চিহ্নিত ২৯টির মধ্যে ২০টি চ্যানেল তৈরি হয়েছে ২০২৪ সালের আগস্টে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর। বাকি চ্যানেলগুলো ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে তৈরি। পর্যালোচনার আওতায় আসা ভিডিওগুলোর মধ্যে অন্তত ৫৮ জন রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও টক শো উপস্থাপকের ছবি, ফুটেজ বা বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) সমালোচনা করে তৈরি করা হয়েছে ২০ শতাংশ ভুয়া টক শো। বিএনপি ও আওয়ামী লীগকে নিয়ে সমালোচনামূলক বক্তব্য রয়েছে ১০ শতাংশ করে ভুয়া টক শোতে।পর্যালোচনা করা ভিডিওগুলোতে ‘ব্যাকগ্রাউন্ড’ (নেপথ্যের দৃশ্য) বদলানো, ফুটেজ কাটাছেঁড়া বা জুম করা এবং মূল প্রসঙ্গ বিকৃত করা হয়েছে। অধিকাংশ ভিডিও ইউটিউব, টেলিভিশন শো, ফেসবুক লাইভ এবং অডিও রেকর্ডিং থেকে ক্লিপ জোড়া লাগিয়ে তৈরি। অনেক ক্ষেত্রে, মূল বক্তার ফুটেজে এমন ভয়েসওভার (কথা) জুড়ে দেওয়া হয়েছে, যা ভিন্ন প্রেক্ষাপট থেকে নেওয়া এবং যার সঙ্গে কথোপকথনের কোনো সম্পর্ক নেই; কিন্তু বাস্তব ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
ডিসমিসল্যাবের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৫ সালের ২৭ মার্চ প্রকাশিত একটি ভিডিওর শিরোনাম ছিল, ‘ড. ইউনূস চীন সফরের পরপরই পদত্যাগ করলেন’। যেখানে যমুনা টিভির লোগো ব্যবহার করা হয়। যমুনা টিভির সঙ্গে ডিসমিসল্যাব যোগাযোগ করে জানতে পারে যে তাদের অনুমতি ছাড়া লোগো ব্যবহার করা হয়েছে। ভিডিওটিতে উপস্থাপক খালেদ মুহিউদ্দীন এবং রাজনীতিবিদ গোলাম মাওলা রনির আলাদা আলাদা ফুটেজ জোড়া লাগানো হয়েছে।
ডিসমিসল্যাব বলছে, রাজনীতিবিদদের মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, দলের নেতা ফজলুর রহমান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না, এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমের ফুটেজও এসব ভুয়া টক শোতে ব্যবহার করা হয়েছে।
পর্যালোচনার আওতায় আসা ভিডিওগুলোর মধ্যে অন্তত ৫৮ জন রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও টক শো উপস্থাপকের ছবি, ফুটেজ বা বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে।ভুয়া টক শোর বিষয়ে ডিসমিসল্যাবকে খালেদ মুহিউদ্দীন বলেন, তিনি দর্শকদের তাঁর ভেরিফায়েড ইউটিউব চ্যানেলের আধেয়র ওপর আস্থা রাখার আহ্বান জানান।
ডিসমিসল্যাব বলেছে, ভুয়া টক শোগুলোতে বক্তব্য তুলে ধরা হয় মূলত রাজনৈতিক দল ও সরকারকে নিয়ে। ভুয়া টক শোগুলোর ৪০ শতাংশেই অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনামূলক বক্তব্য রয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) সমালোচনা করে তৈরি করা হয়েছে ২০ শতাংশ ভুয়া টক শো। বিএনপি ও আওয়ামী লীগকে নিয়ে সমালোচনামূলক বক্তব্য রয়েছে ১০ শতাংশ করে ভুয়া টক শোতে।
বেশিবার দেখা হয়েছে, এমন পাঁচটি ভুয়া টক শো খুঁজে বের করেছে। এসব টক শোতে প্রচার করা হয়েছে অশনিবার্তা, আলোর রাজনীতি ও রাজনৈতিক আলোচনা নামের ইউটিউব চ্যানেল থেকে। পাঁচটি টক শো দুই থেকে ছয় লাখ বার দেখা হয়েছে।
নিজের নিয়মই মানছে না ইউটিউবইউটিউবের স্প্যাম ও প্রতারণামূলক আচরণ নীতিমালায় বলা হয়েছে, এমন শিরোনাম, থাম্বনেইল বা বিবরণ ব্যবহার করা যাবে না, যার সঙ্গে ভিডিওর প্রকৃত বিষয়বস্তুর মিল নেই এবং যা দর্শকদের বিভ্রান্ত করে। এসব ভুয়া টক শোতে এ নীতি মানা হয়নি।
ইউটিউবের ছদ্মবেশ ধারণ নিষেধাজ্ঞা নীতিমালায় বলা আছে, অন্য কারও আসল নাম, ব্যবহারকারী নাম, ছবি, ব্র্যান্ড, লোগো বা ব্যক্তিগত কোনো তথ্য ব্যবহার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করা যাবে না। ডিসমিসল্যাবের প্রতিবেদনে বলা হয়, অনুমতি ছাড়া সাংবাদিক, টক শো উপস্থাপক ও কনটেন্ট (আধেয়) নির্মাতাদের ফুটেজ ব্যবহার করায় এগুলো ইউটিউবের কপিরাইট নীতিমালাও লঙ্ঘন করতে পারে।
ডিজিটাল মিডিয়া–বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নিজস্ব নীতিমালা থাকলেও ইউটিউব এ ধরনের ভুয়া ভিডিওকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে দিচ্ছে। এতে গুণগত সাংবাদিকতা পিছিয়ে পড়ে।
২০২২ সালে একটি খোলাচিঠিতে ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাক্টচেকিং নেটওয়ার্ক অভিযোগ করেছিল, ইউটিউব তাদের প্ল্যাটফর্মকে অপব্যবহারের সুযোগ দিচ্ছে—যেখানে অসাধু ব্যক্তি ও গোষ্ঠী বিভ্রান্তি ছড়ানো, মানুষকে প্রতারিত করা, এমনকি সংগঠিত হয়ে অর্থ সংগ্রহ পর্যন্ত করছে।
মিরাজ আহমেদ চৌধুরী বলেন, এ ধরনের ভুয়া কনটেন্ট বা আধেয় বন্ধ করতে প্ল্যাটফর্মগুলোর নিজস্ব নীতি মনে করিয়ে দিয়ে তাদের ওপর চাপ তৈরি করতে হবে। নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে উদ্যোগী হতে হবে।