হাদীসের ভাষায় ‘শবে বরাত’কে বলা হয় ‘লাইলাতুন নিসফে মিন শা‘বান’। বাংলা অর্থ হলো: শা‘বান মাসের মধ্য রজনী। এ রজনীর মর্যাদা ও তাৎপর্য সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সা. এর পবিত্র জবানীতে যা পাওয়া যায় তাতে বুঝা যায়, এ রাত্রি অত্যন্ত মহিমান্বিত ও মর্যাদাপূর্ণ। রজনীটির মর্যাদা ও তাৎপর্যের দিকে লক্ষ্য করে অনারবরা এ রাতের নাম দিয়েছেন ‘শবে বরাত’ বা ‘মহিমান্বিত রজনী’। গুরুত্বের বিবেচনায় প্রকৃত অর্থেই এ রাতটি অত্যন্ত মহিমান্বিত ও মর্যাদাপূর্ণ। 

এ রজনী সম্পর্কে হাদীসে অনেক বর্ণনা পাওয়া যায়। বর্ণনাকারীদের তারতম্যের কারণে কিছু বর্ণনার মান নিয়ে প্রশ্নের উদ্রেক হলেও গ্রহণযোগ্য বর্ণনাও কিন্ত কম নয়। এর মধ্যে সর্বজন গ্রহণযোগ্য হাদীসটি আলোচিত হয়েছে সুনানে ইবনে মাজাহ এ। হযরত মু‘আয ইববে জাবাল রা.

থেকে বর্ণিত তিনি নবীজি সা. থেকে বর্ণনা করেন, আল্লাহ তা‘আলা মধ্য শা‘বানের রাতে তাঁর বান্দা-বান্দিদের প্রতি বিশেষ মনোযোগী হন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যক্তি ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৩৯০, সহীহ ইবনে হিব্বান, হা. নং ৫৬৬৫, শুআবুল ঈমান হা. নং ৬২০৪)। 

অত্যন্ত সাবলীল ভাষায় আলোচিত বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা. এর এ হদীসটির মধ্যে বিশেষভাবে লক্ষ্যনীয় বিষয় হলো: নবীজি সা. বলেছেন: ‘আল্লাহ তা‘আলা মধ্য শা‘বানের রাতে তাঁর সৃষ্টির প্রতি বিশেষ মনোযোগী হন’। এ কথাটি বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, আমরা জানি আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সমস্ত মাখলুকাতের যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে জ্ঞাত। তিনি সর্ববিষয়ে কুদরাতীভাবে বিশেষভাবে মনোযোগী। যেমনটা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে: অর্থ: আপনি কি লক্ষ্য করেন না যে, আসমানসমূহ ও যমীনে যা কিছু আছে আল্লাহ তা জানেন? তিন ব্যক্তির মধ্যে এমন কোনো গোপন পরামর্শ হয় না যাতে চতুর্থ জন হিসেবে তিনি থাকেন না এবং পাঁচ ব্যক্তির মধ্যেও হয় না যাতে ষষ্ঠ জন হিসেবে তিনি থাকেন না। তারা এর চেয়ে কম হোক বা বেশী হোক তিনি তো তাদের সঙ্গেই আছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন।  তারপর তারা যা করে, তিনি তাদের কিয়ামতের দিন তা জানিয়ে দেবেন। নিশ্চয় আল্লাহ্ সব কিছু সম্পর্কে সম্যক অবগত। (সূরা মুজাদালাহ: ০৭) । এরপরও উল্লেখিত হাদীসে রাসূল সা. যে বলেছেন: ‘আল্লাহ তা‘আলা মধ্য শা‘বানের রাতে তাঁর বান্দা-বান্দীর প্রতি বিশেষ মনোযোগী হন’। 

আরো পড়ুন:

ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে সারা দেশে পবিত্র শবে বরাত পালিত

আজ পবিত্র শবে বরাত

এর অর্থ দাড়ায়, তিনি এ রাতে তাঁর বান্দার প্রতি বিশেষ মনোযোগী হন বিশেষ কোনো কারণে। আর সে কারণটি হলো: যে আল্লাহর কাছে বিশেষ কিছু চাইবে তিনি তাকে তা প্রদান করবেন। এ প্রত্যাশিত বিষয়াবলীর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো: বান্দার পাপ-পঙ্কিলতা থেকে তাঁর নিকট ক্ষমা পাওয়া। 

হাদীসটির পরবর্তী অংশে নবীজি সা. সেটাই বলেছেন: মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যক্তি ছাড়া যারা আল্লাহ তা‘আলার নিকট ক্ষমা চাইবে তাদের সবাইকে তিনি ক্ষমা করে দেবেন। মানব জাতির জন্য এটি এক মহা সুযোগ। এ সুযোগ যারা কাজে লাগাতে পারবে না তারা হতভাগা ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না। এ কারণে রসূল সা. এ মহিমান্বিত রজনীতে বেশি বেশি ইবাদত করার কথা বলেছেন। উম্মতকে শিখানোর জন্য তিনি নিজে আমল করে দেখিয়েছেন। 

উম্মাহাতুল মুমীনিন “হযরত আয়েশা ছিদ্দিকা রা. বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সা. এ রাতে নামাজ পড়ছিলেন এবং সিজদায় দীর্ঘ অবস্থানের কারণে আমি মনে করলাম যে, তিনি ইন্তিকাল করেছেন। তাঁর অবস্থা জানার জন্য আমি তাঁকে নাড়া দিলে তিনি নড়ে ওঠেন। এরপর সিজদাহ থেকে মাথা উত্তোলন করেন। অতঃপর নামাজ শেষ করে আমাকে বললেন, হে আয়েশা, তমি কি ধারণা করেছ যে, আল্লাহর রাসূল তোমার সাথে খিয়ানত করেছেন? আমি বললাম, আল্লাহর শপথ করে বলছি, এ ধরনের কোনো কিছু নয়; বরং সিজদায় আপনাকে দীর্ঘকাল অবস্থানের কারণে আমি মনে করেছি যে, আপনি ইন্তিকাল করেছেন। এ কথা শুনে তিনি বললেন, তুমি কি জানো এটি কোন রাত? আমি বললাম, আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল ভালো জানেন। এরপর তিনি বললেন, আজ শাবান মাসের মধ্য রজনী। এ রাতে মহান রাব্বুল আলামীন ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করে দেন। রহমত প্রার্থনাকারীদের রহমত প্রদান করেন এবং বিদ্বেষীদের অবকাশ দেন।” (শুয়াবুল ঈমান লিল ইমাম বায়হাকী রহ., আব্দুর রহমান মুবারক পুরী, তুহফাতুল আহওয়াযী, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়্যাহ, বৈরুত, খ: ৩, পৃ: ৩৬৬)

বুঝার বিষয় হলো: এ মহাসুযোগ পেয়ে লাভবান হবে কারা? যারা লাভবান হতে চাইবে। যারা চেষ্টা করবে। বিশেষভাবে ইবাদত করবে, ক্ষমা প্রার্থনা করবে। 

এ রাতে করণীয় আমল সমূহ: 
১. বেশি বেশি তওবা করা। এ রাতে অসংখ্য মানুষকে ক্ষমা করার ঘোষণা হাদীসের মাধ্যমে বিশ্বনবী জানিয়ে দিয়েছেন। তিরমিজি শরীফের ৭৩৯ নং হাদিসে আয়েশা রা. বর্ণনা করেন, নবীজি সা. বলেছেন: ‘শা‘বান মাসের পনেরতম রজনীতে আল্লাহ তা‘আলা প্রথম আসমানে কুদরতীভবে আগমন করেন এবং আরবের বিখ্যাত কালব গোত্রের বকরীগুলোর পশম পরিমান মানুষকে ক্ষমা করে দেন’। কাজেই এ রাতে বেশি বেশি পরিমান নিজ পাপের কথা স্মরণ করে আল্লাহর কাছে মাফ চাইতে হবে।

এছাড়াও উপরের হাদীসগুলো এবং অন্যান্য অসংখ্য হাদীস থেকে এ রজনীতে যেসব আমলের কথা পাওয়া যায় তাহলো: ২. দু‘আ করা ৩. দীর্ঘ নফল নামাজ আদায় করা ৪. পরের দিন রোজা রাখা ৫. কবর জেয়ারত করা। তাবে কবর জেয়ারতের নামে কবর পূজা হয়ে যেন না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। ৬. অন্তরের সমস্ত হিংসা-বিদ্বেষ দূর করা।

এ রাতে নিষিদ্ধ কাজসমূহ: ইসলামে নিষিদ্ধ সকল কাজই এ রাতে নিষিদ্ধ। তবে এ রাতে আমাদের দেশে ইবাদতের নামে যে সব রীতি-রেওয়াজ আছে ইসলামে সেগুলোর কোনো ভিত্তি নেই। যেমন: ১. কবরে সেজদা করা ২. হালুয়া রুটির আয়োজন করা ৩. সন্ধ্যার পরে গোসল করা ৪. আলোকসজ্জা করা ৫. সিরনি তবারকের আয়োজন করা ৬. গোরস্তানে মেলার আয়োজন করা ৭. মাসজিদে হৈ চৈ করা ৮. মাইকে খতমে কুরআন করা ৯. আতশ বাজি ফোটানো ইত্যাদি। 

এখানে উল্লেখিত কাজগুলোর মধ্যে কিছু কাজ এমন আছে যেগুলো অন্য সময়ে করলে সমস্যা নেই বরং উত্তম। যেমন: খাবারের আয়োজন করা। এটা শবে বরাতে রেওয়াজ হওয়ার কারণে এটা এ সময় নিষেধ করা হয়েছে।

আল্লাহ তা‘আলা আমাদের শবে বরাতে বেশি বেশি নেক আমল করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার তৌফিক দান করুন, আমীন।

শাহেদ//

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসল ম ব শ ষ মন য গ আল ল হ ত বল ছ ন ন কর ন

এছাড়াও পড়ুন:

চেন্নাইয়ের বিদায়, অবসরের ইঙ্গিত দিলেন ধোনি!

আইপিএল ২০২৫-এর প্লে-অফে জায়গা হলো না চেন্নাই সুপার কিংসের। ঘরের মাঠ এম চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে পাঞ্জাব কিংসের কাছে ৪ উইকেটে হেরে এবারের আসর থেকে ছিটকে গেছে মহেন্দ্র সিং ধোনির দল। ম্যাচ শেষ হওয়ার পর শুধু চেন্নাইয়ের বিদায়ই নয়, আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছেন ‘ক্যাপ্টেন কুল’ ধোনি। শুরু হয়েছে জোর গুঞ্জন—এটাই কি তার শেষ আইপিএল?

ম্যাচ শুরুর আগেই টসের সময় ধোনিকে ঘিরে তৈরি হয় রহস্য। ধারাভাষ্যকার ড্যানি মরিসনের সরাসরি প্রশ্ন ছিল, ধোনি কি আগামী মৌসুমেও আইপিএলে দেখা যাবে? জবাবে হেসে ধোনি বলেন, ‘আমি তো জানি না পরের ম্যাচেই খেলব কি না।’ এই মন্তব্যেই ধোনির ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে শুরু হয়েছে জল্পনা-কল্পনা। যদিও ম্যাচ শেষে নিজের ক্রিকেট ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি ধোনি। তাকেও সে ব্যাপারে আর প্রশ্ন করেননি সঞ্চালক।

ধোনির মন্তব্যে সাবেক অস্ট্রেলিয়ান উইকেটকিপার অ্যাডাম গিলক্রিস্ট বলেন, ‘ধোনি একজন চিরস্মরণীয় কিংবদন্তি। তার আর কিছু প্রমাণের নেই। সম্ভবত এবার সরে দাঁড়ানোর সময় এসেছে। যদিও ভক্তদের জন্য তা কষ্টদায়ক হবে।’

 চেন্নাই প্রথমে ব্যাট করে ১৯১ রান তোলে। স্যাম কারানের ৮৮ রানের ইনিংস ছাড়া ব্যাট হাতে কেউই তেমন জ্বলে উঠতে পারেননি। শেষ দিকে যুজবেন্দ্র চাহালের হ্যাটট্রিকে মাত্র ৪ বল বাকি থাকতে গুটিয়ে যায় ইনিংস। চাহাল ৪ উইকেট নেন, জানসেন ও আর্শদীপ নেন ২টি করে।

জবাবে পাঞ্জাবের হয়ে ঝড়ো সূচনা এনে দেন প্রিয়াংশ আর্য ও প্রভসিমরান সিং। প্রভসিমরান খেলেন ৩৬ বলে ৫৪ রানের দারুণ ইনিংস। এরপর শ্রেয়াস আইয়ারের ৭২ রানের অনবদ্য ইনিংস এবং শশাঙ্ক সিংয়ের শেষের ২৩ রানের ক্যামিওতে দুই বল বাকি থাকতেই জয় তুলে নেয় পাঞ্জাব। এই জয়ে তারা উঠে এসেছে পয়েন্ট টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ