‘আমার মনে হয় এটা বলা নিরাপদ যে, আজ রাতে আমি পৃথিবীর সবচেয়ে গর্বিত মা।’

কথাটি স্যান্ডি নোনানের। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ছেলের ছবিসহ শার্মক রোভার্সের পোস্ট রি-পোস্ট করে কথাটি লিখেছিলেন বৃহস্পতিবার রাতে। তাঁর ছেলে সেদিন রাতে উয়েফা কনফারেন্স লিগ নকআউট রাউন্ড প্লে-অফ প্রথম লেগে দলের হয়ে অভিষেকেই গোল করে ইতিহাসে গড়ে। নরওয়ের ক্লাব মোলদের বিপক্ষে শার্মকের (১-০) জয়ে একমাত্র গোলটি স্যান্ডির ১৬ বছর বয়সী ছেলে মাইকেল নোনানের।

আরও পড়ুনইংল্যান্ডে সব রেকর্ড সিটির—মনে করিয়ে দিলেন গার্দিওলা১ ঘণ্টা আগে

১৬ বছর ১৯৭ দিনে করা নোনান সেই গোল দিয়ে কনফারেন্স লিগে এখন সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা। উয়েফার অধীনে ইউরোপের সব ক্লাব প্রতিযোগিতা মিলিয়েও দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা নোনান। এমন একটা রাতের পর স্বাভাবিকভাবেই নোনানের পরিবারে গর্বের ঢেউ লাগার কথা। কিন্তু নোনানের শান্তি নেই। নরওয়ে থেকে সেদিন রাতেই তাঁকে বিমান ধরে ফিরতে হয়েছে জন্মভূমি আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে। কেন? স্কুল কামাই দেওয়া যাবে না। পরদিন সকালেই তো স্কুল!

কাল নোনানের স্কুলে যাওয়ার সেই ছবিও পোস্ট করেছেন স্যান্ডি। কালো জ্যাকেট পরে কাঁধে স্কুলব্যাগ নিয়ে নোনানের হেঁটে যাওয়ার ছবিটি পোস্ট করে ক্যাপশনে স্যান্ডি লিখেছেন, ‘এখন স্কুলে ফিরে যাচ্ছে সে।’ আয়ারল্যান্ডের অনূর্ধ্ব-১৭ দলে খেলা এই সেন্টার ফরোয়ার্ডকে নিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘দ্য সান’কে স্যান্ডি বলেছেন, ‘সে স্কুলে ফিরেছে। যেতে চেয়েছিল। ভাই-বোনদের সঙ্গে খুশিমনেই গিয়েছে। আর ক্লাস হয়েছে অর্ধদিবস। দিনটা তাই খারাপ কাটেনি। (দুপুর) একটার দিকেই ছুটি পেয়েছে।’

গোল করে যেহেতু ইতিহাস গড়েছেন, স্বাভাবিকভাবেই স্কুলে নোনানকে বাকিদের একটু তোয়াজ করার কথা। স্যান্ডি অবশ্য সেসব নিয়ে কিছু না বললেও মজা করতে ছাড়েননি, ‘আমি নিশ্চিত তারা তাকে হোমওয়ার্ক দেয়নি। আশা করি তারা দেবে।’

আরও পড়ুননেইমারের আবার বার্সায় ফেরার গুঞ্জন, সম্ভাবনা কতটা৪ ঘণ্টা আগে

আয়ারল্যান্ডের কাউন্টি কিলদেয়ারে নোনানের পরিবারের বসবাস। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় রাত ২টার দিকে বাসায় ফেরেন নোনান। স্যান্ডি জানিয়েছেন, তাকে স্বাগত জানাতে প্রতিবেশীরা থালা-বাসন বাজিয়ে অভ্যর্থনা জানান। স্যান্ডির ভাষায়, ‘ঘরে ফিরতে তার রাত দুটো বেজেছে। প্রতিবেশীরা বাসন-কোসনে বাদ্য বাজনা করেছে। ঘরে ফেরার দারুণ অভ্যর্থনা ছিল এটি।’

নোনান বাসায় ফিরে কি করেছেন, সেটাও জানিয়েছেন স্যান্ডি, ‘গোলটি সে দেখতে চেয়েছে। সেটা দেখে নানা বিশ্লেষণ করে তবে ঘুমোতে গিয়েছে। এরপর সকালে স্কুলে। আমাদের খুব ভালো লাগছে। তাকে নিয়ে আমরা খুব গর্বিত ও সুখী।’

নোনানের কোনো ম্যাচ এমনিতে মিস করেন না তাঁর মা স্যান্ডি এবং বাবা অ্যান্ড্রু। কিন্তু কনফারেন্স লিগের ম্যাচে তাঁদের সন্তান আইরিশ ক্লাবটির একাদশে সুযোগ পাবে, সেটা তাঁরা ভাবতে পারেননি। এ কারণে ম্যাচটি দেখতে আর নরওয়েতে যাওয়া হয়নি স্যান্ডি ও অ্যান্ড্রুর। স্যান্ডির ভাষায়, ‘গত ডিসেম্বরেই সে রোভার্সে সই করেছে। এত দ্রুত একাদশে সুযোগ পেয়ে যাবে ভাবিনি.

..আমরা আসলে সে খেলবে আশা করিনি। সেটাও একাদশে। তাই নরওয়েতে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।’

আরও পড়ুন৭১৭ পাস খেলেও পোস্টে শট নেই, ১৫০ কোটি পাউন্ড খরচের এই ফল৬ ঘণ্টা আগে

শার্মকের একাদশে নোনান জায়গা পাওয়ার পর স্থানীয় এক পানশালায় ‘ওয়াচ পার্টি’র আয়োজন করা হয় তার পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবের জন্য। দুটি টিভি ছিল খেলা দেখার জন্য। একটিতে ২০ সেকেন্ড আগে খেলা দেখানো হচ্ছিল, সেই টিভির সামনে বসেছিল নোনানের বন্ধুরা। অন্য টিভির সামনে বসেছিলেন নোনানের মা-বাবা। স্যান্ডির ভাষায়, ‘উদ্‌যাপনটা দুবার হয়েছে। সবাই কাঁদছিল এবং একে অপরকে জড়িয়ে ধরেছে। আনন্দে কেউই চোখে জল আটকে রাখতে পারেনি।’

আয়ারল্যান্ডের প্রথম দল হিসেবে এবারই প্রথম কোনো ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতার নকআউট পর্বে খেলছে শার্মক। ফিরতি লেগ আগামী বৃহস্পতিবার।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

লবণ শ্রমিকদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়

“প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠে কাজ করি। লবণ তুলি, বস্তা ভরি। কিন্তু যে মজুরি পাই, তা দিয়ে এক বেলার চাল-ডালও কেনা যায় না। লবণ চাষের কাজ করলেও আমাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়।” 

এ কথা কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার তাবলেরচর এলাকার লবণ শ্রমিক জাহেদ আলমের। হাজারো লবণ শ্রমিক দিনভর কড়া রোদে ঘাম ঝরালেও মিলছে না ন্যায্য মজুরি। নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাত করছেন জাহেদ আলমের মতো শত শত লবণ শ্রমিক। 

উত্তর ধুরুংয়ের লবণ চাষি রশীদ আহমদ বলেন, “এবার সাড়ে ৫ কানি জমিতে লবণ চাষ করেছি। এই বছর আবহাওয়া ভালো ছিল, উৎপাদনও হয়েছে। কিন্তু দাম পড়ে যাওয়ায় আমরা লোকসানে যাচ্ছি। প্রতিমণ লবণের উৎপাদন খরচ পড়ে ৩৫০ টাকার মতো, অথচ বিক্রি হচ্ছে ১৮০-১৮৫ টাকায়। এই লোকসান শ্রমিকদের মজুরিতেও প্রভাব পড়েছে।”

তিনি জানান, মজুরি দিতে না পারায় একদিকে শ্রমিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, অন্যদিকে চাষিরাও হতাশ হয়ে পড়ছেন।

আরমান হোসেন নামে আরেক শ্রমিক বলেন, “লবণের কাজ করেই জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। লবণের দাম কম পেলেই চাষিরা আমাদের পারিশ্রমিকের ওপর লোকসান চাপিয়ে দেয়। এতে আমরা ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হই। এই অনিয়ম দূর হোক।” 

চাষিরা বলছেন, একদিকে জমির ইজারা, পলিথিন, লবণ পরিবহন, শ্রমিক মজুরি-সব খরচ বেড়েছে। অন্যদিকে বাজারে সিন্ডিকেট করে দাম নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে প্রতি মণ লবণে তারা ১৭০ টাকার মতো লোকসান গুণছেন। এই লোকসানের কারণে লবণ শ্রমিকরাও দিশেহারা হয়ে পড়ছেন।

লেমশীখালীর চাষি বেলাল উদ্দিন আকাশ বলেন, ‘‘গত বছর এই সময় প্রতি মণ লবণ বিক্রি করেছি ৪৫০ টাকায়। এখন পাই ১৮৫ টাকা। এতে শ্রমিকের মজুরি দিতেও আমরা হিমশিম খাচ্ছি।” 

চাষি আবুল বশর ও সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘‘সিন্ডিকেট করেই দাম নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে যাতে লবণ উৎপাদন কমে যায়। পরে বিদেশ থেকে লবণ আমদানি করার সুযোগ তৈরি হয়। অথচ এতে মাঠের হাজারো শ্রমিকের জীবিকা হুমকির মুখে পড়ছে।”

মহেশখালী লবণ চাষি ঐক্য সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘‘মজুরি না পেয়ে অনেক শ্রমিক লবণের মাঠ ছাড়ছেন। এইভাবে চলতে থাকলে শ্রমিক সংকট হবে।”

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) কক্সবাজার লবণশিল্প উন্নয়ন প্রকল্পের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভূঁইয়া বলেন, “চাষিদের ন্যায্য দাম না পাওয়ার কারণে উৎপাদনে অনীহা দেখা দিচ্ছে। এর ফলে শ্রমিকদেরও চাহিদা কমে যাচ্ছে। বাজারে দাম কমে যাওয়ার পেছনের কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” 

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে কক্সবাজার জেলার সদর, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া, চকরিয়া, ঈদগাঁও, টেকনাফ এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় প্রায় ৬৮ হাজার একর জমিতে লবণ চাষ হচ্ছে। গত ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত এসব অঞ্চলে উৎপাদিত হয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার মেট্রিক টন লবণ। মৌসুম শেষে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৬ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন, যা দেশের বার্ষিক চাহিদার সমান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ